📣চলছে প্রো-অফার!!! ইশিখন.কম দিচ্ছে সকল অনলাইন-অফলাইন কোর্সে সর্বোচ্চ ৬০% পর্যন্ত ছাড়! বিস্তারিত

Pay with:

বিসিএস পরামর্শ -১

লিখিত প্রস্তুতি (বিসিএস + ব্যাংক)

সম্ভাব্য প্রশ্ন :
১। গোল্ডম্যান স্যাকস এর Next-11 দেশ বলতে কি বুঝেন? বাংলাদেশকে উদীয়মান অর্থনৈতিক দেশের তালিকায় বিবেচনা করার স্বপক্ষে যুক্তি উপস্থাপন কর
২। “”উদীয়মান ব্যাঘ্র, বাংলাদেশ””- ব্যাখা কর বাংলাদেশকে উদীয়মান বাজার বলার কারনসমূহ উল্লেখ কর
৩। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অর্জন ও অর্থনীতির সম্ভাবনা বিশ্লেষণ কর অর্থনৈতিক সম্ভাবনা কাজে লাগাতে করণীয় সম্পর্কে আপনার সুচিন্তিত মতামত উল্লেখ কর
৪। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার প্রয়োজনীয়তা বিশ্লেষণ কর রপ্তানি বাণিজ্য ও বিনিয়োগ পরিস্থিতির আলোকে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিকে মূল্যায়ন কর
৫। বাংলাদেশের অর্থনীতির চ্যালেঞ্জ ও চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় করণীয় সম্পর্কে মন্তব্য কর
৬। দেশের অর্থনীতিকে মজবুত করতে বৈদেশিক কর্মসংস্থানের/ প্রবাসী আয়ের ভূমিকা ও সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ উল্লেখ কর
.
বাংলাদেশ বিষয়াবলি (লিখিত) সিলেবাসে উল্লেখকৃত (Related Topics) = Economy of Bangladesh particular emphasis on developments including Poverty, Alleviation, Vision- 2021, Globalization and Bangladesh.
বাংলা ২য় পত্র = রচনা (৪০ নম্বর)
.

———-
:: উদীয়মান অর্থনৈতিক দেশের তালিকায় বাংলাদেশ :

———-
একটা সময় বৈশ্বিক অর্থনীতির ৮০ শতাংশই ছিল ইউরোপ, আমেরিকা ও জাপানের দখলে। কিন্তু বিশ্ব অর্থনীতির চেহারা এখন বদলে যাচ্ছে। এশিয়া, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার বেশ কয়েকটি দেশ পেছন থেকে সামনের কাতারে উঠে এসেছে। একসময় যে বাংলাদেশকে ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ বলা হয়েছিল, সে দেশই এখন উদীয়মান অর্থনীতির দেশ হিসাবে আত্ম প্রকাশ করতে যাচ্ছে।
.
স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের অর্থনীতি যতদূর এগিয়েছে তার চেয়ে বেশি অগ্রসর হবে সামনের দিনগুলোতে। সামনের দিনগুলো বাংলাদেশের জন্য যতটা চ্যালেঞ্জের ততটাই সম্ভাবনাময়। আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থার কিছু সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ মুহূর্তে বাংলাদেশের অর্থনীতি ইতিবাচক ধারায় রয়েছে এবং দেশটি এশিয়ার উদীয়মান অর্থনীতির দেশে পরিণত হচ্ছে। বিশেষ করে বিশ্বের অন্যান্য দেশের জন্য বাংলাদেশ একটি আকর্ষণীয় বাজার হয়ে উঠছে।
.
:: জার্মানির মিউনিখ বিশ্ববিদ্যালয় এর গবেষণা ও জরিপ :
জার্মানির মিউনিখ বিশ্ববিদ্যালয়ভিত্তিক ‘আইএফও ইনস্টিটিউট ফর ইকোনমিক রিসার্চ’ সম্প্রতি বিশ্বের ১২০টি দেশের সহস্রাধিক অর্থনীতিবিদের অনুসন্ধানী তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি করা এক জরিপে বলা হয়েছে, এশিয়ার প্রধান উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলোর সঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এতে বলা হয়, হংকং, চীন, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া ও শ্রীলঙ্কার পথে এগিয়ে যাচ্ছে সমুদ্র তীরবর্তী বাংলাদেশের অর্থনীতি। ওই জরিপে দেখানো হয়, আইএমএফের হিসাব অনুযায়ী যদি ক্রয় ক্ষমতার ভিত্তিতে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে পরিমাপ করা হয় তবে দেখা যায় বাংলাদেশের অর্থনীতি বিশ্বের ৪৪তম বৃহৎ অর্থনীতি।
.
:: কোফেস এর দশ উদীয়মান দেশের তালিকায় বাংলাদেশ :
উদীয়মান অর্থনীতির ১০টি দেশের তালিকায় বাংলাদেশকে রেখেছে ফ্রান্সের আর্থিক ও বীমা প্রতিষ্ঠান ফ্রেঞ্চ ইনস্যুরেন্স কম্পানি ফর ফরেন ট্রেড বা কোফেস। মতে, ব্রিকসভুক্ত পাঁচটি দেশের অর্থনীতির গতি কমছে। আর বাংলাদেশসহ ১০টি দেশ তাদের জায়গা দখলের পথে এগোচ্ছে। বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে বছরে ৬ শতাংশের বেশি মোট দেশজ উৎপাদনের প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে।
.
ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকা- এ পাঁচটি দেশের নামের প্রথম অক্ষর নিয়ে ব্রিকস প্রত্যয়টি তৈরি হয়েছে। এ দেশগুলো অর্থনীতিতে শক্তিশালী অবস্থান তৈরিতে সমর্থ হয়েছে। তবে উদীয়মান দেশের তালিকায় দুই ভাগে ১০টি দেশকে রেখে কোফেস বলেছে, ব্রিকসভুক্ত দেশগুলো নানা সমস্যায় ভুগছে। অন্যদিকে উদীয়মান ১০ দেশ তাদের উন্নতির গতিকে এগিয়ে রেখেছে। প্রতিষ্ঠানটি ব্রিকসের আদলে ওই দেশগুলোর নাম দিয়েছে ‘পিপিকস’। তাদের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, নতুন তালিকার উদীয়মান দেশগুলোর গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ২.৮ শতাংশ, যেটি ব্রিকসভুক্ত দেশগুলোর চেয়ে কম। তাদের রাষ্ট্রীয় ঋণও ব্রিকস দেশগুলোর চেয়ে কম। ব্রিকস দেশগুলো তাদের পণ্য রপ্তানিতে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা হারাচ্ছে। তবে নতুন উদীয়মান দেশগুলোর জনসংখ্যা ও অর্থনীতির আকার ২০০১ সালের ব্রিকস দেশগুলোর চেয়ে কম বলেও জানিয়েছে কোফেস।
.

———-
:: গোল্ডম্যান স্যাকস এর Next-11 দেশ:

———-
২০০৫ সালে আমেরিকার আর্থিক প্রতিষ্ঠান (বিনিয়োগ ব্যাংক) গোল্ডম্যান স্যাক্সের অর্থনীতিবিদ জিম ও’নেইল ব্রিকসের ধারণা দিয়ে বিখ্যাত হয়েছিলেন। ব্রিকস ছাড়াও সম্ভাবনাময় বা ব্রিকস সদস্যভুক্ত দেশের পরে অর্থনৈতিক অগ্রগতি হবে এমন ১১টি দেশকে বলা হয় ‘নেক্সট ইলেভেন’। এ দেশগুলো হচ্ছে-বাংলাদেশ, মিসর, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, মেক্সিকো, নাইজেরিয়া, পাকিস্তান, ফিলিপাইন, দক্ষিণ কোরিয়া, তুরস্ক ও ভিয়েতনাম।
.
বিশ্বব্যাংক:
* বৈশ্বিক অর্থনীতির মন্দার মধ্যেও বাংলাদেশের অর্থনীতি ছিল গতিশীল। এ কারণে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে চিহ্নিত করেছে ‘অমীমাংসিত বিস্ময়’ হিসেবে।
* বিশ্বব্যাংক মনে করে, মধ্য আয়ের দেশে পরিণত হলে বাংলাদশের মোট দেশজ উত্পাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির হার ৭ শতাংশ থেকে ৮ শতাংশ এবং প্রবাসী আয়ের প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশে উন্নীত করতে হবে।
* বিশ্বব্যাংকের বিশ্ব উন্নয়ন প্রতিবেদন এ বলা হয় বিশ্বে যে গুটিকয়েক দেশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও মানবসম্পদ উন্নয়ন উভয় ক্ষেত্রে সাফল্যের স্বাক্ষর রেখেছে, তাদের মধ্যে বাংলাদেশ অগ্রগণ্য।
.

———-
:: উদীয়মান ব্যাঘ্র, বাংলাদেশ!

———-
* সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদুত ড্যান ডব্লিউ মজীনা বলেছেন, অর্থনীতিতে এক সময় বাংলাদেশ সম্ভাবনাময় অর্থনৈতিক শক্তি হিসাবে আবির্ভুত হতে পারে। হতে পারে দক্ষিণ এশিয়ার ইমার্জিং টাইগার।
* নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনও মানবসম্পদ উন্নয়নে বাংলাদেশের সাফল্যেও ভূয়সী প্রশংসা করেছেন।
* মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন বলছে, ২০৩০ সাল নাগাদ নেক্সট ইলেভেন সম্মিলিতভাবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৭টি দেশকে ছাড়িয়ে যাবে।
* সম্প্রতি যুক্তরাজ্য ভিত্তিক বিশ্ব বিখ্যাত ‘দ্য গার্ডিয়ান’ পত্রিকার ‘নিউ ওয়েভ ইকোনমিজ গোয়িং ফর গ্রোথ’ শীর্ষক সংবাদে বলা হয়, ২০৫০ সাল নাগাদ বাংলাদেশের অর্থনীতি পশ্চিমা দেশগুলোকেও ছাড়িয়ে যাবে।
.

———-
:: উদীয়মান বাজার হবার কারন:

———-
উদীয়মান বাজার হিসেবে উঠে আসার পেছনে জরিপে উল্লেখ করা হয়েছে,
১। জ্বালানি সমৃদ্ধি
২। শ্রমবাজারে নারীর অংশগ্রহন ও শ্রমের মুল্য বৃদ্ধি
৩। তুলনামূলক শ্রমমূল্যের নিম্নহার
৪। বাণিজ্য সুবিধার বিষয়। বাংলাদশের অর্থনীতির অন্যতম ভিত্তি হচ্ছে তৈরি পোশাক রফতানি। বাংলাদশের তৈরি পোশাক রফতানি আয়েরপ্রায় ৮০ শতাংশ আসছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্রের বাজার থেকে।
৫। বাংলাদেশীদের পাঠানো রেমিটেন্স অর্থনীতিকে শক্তিশালী অবস্থানে ধরে রেখেছে। রেমিট্যান্সই বাংলাদশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার টেকসই ও শক্তিশালী করতে সাহায্য করছে।
.

———-
:: বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অর্জন:

———-
১। স্বাধীনতা পরবর্তী দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি অনেক। ৪০ বছরে কৃষিতে, শিল্প ক্ষেত্রে আমাদের ব্যাপক উন্নয়ন ঘটেছে।
২। বিশ্বমন্দার পর থেকে এ পর্যন্ত ভাল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনকারী দেশের মধ্যে শীর্ষ কাতারে রয়েছে বাংলাদেশ।
৩। তৈরি পোশাক রফতানি আয়ে চীনের পরেই আমরা অর্থাৎ দ্বিতীয় বৃহত্তম।
৪। বিগত সময়ে দেশে বিপুল পরিমাণ রেমিটেন্স এসেছে। এটা অর্থনীতির জন্য সুসংবাদ। এই অর্জন আমাদের অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক।
.

———-
:: বাংলাদেশের অর্থনীতির সম্ভাবনা:

———-
আন্তর্জাতিক সংস্থার পর্যবেক্ষণ অনুসারে অর্থনৈতিক বিবেচনায় বিশ্বের ১১টি উদীয়মান দেশের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। গত কয়েক বছরে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন বিশ্ববাসীর নজর কেড়েছে। সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনসহ কয়েকটি সূচকে ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। ফলে বিশ্ব ব্যবস্থা নানা ইস্যুতে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে মোটা দাগে ৭টি সম্ভাবনা রয়েছে। এগুলো হল-
.
১। অভ্যন্তরীণ চাহিদা:
বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার বড় কোনো প্রভাব পড়েনি বাংলাদেশের অর্থনীতিতে। কারণ বাংলাদেশে বড় একটি বাজার রয়েছে। বর্তমানে দেশে জনসংখ্যা ১৫ কোটি ছাড়িয়েছে। এসব মানুষের নিত্যপণ্যসহ বেশ কিছু পণ্যের চাহিদা রয়েছে। এটি বিবেচনায় নিয়ে দেশী-বিদেশী উদ্যোক্তারা এ দেশে বিনিয়োগ করছে। গত ১০ বছর পর্যন্ত দেশের প্রবৃদ্ধি প্রায় ৬ শতাংশ। মাথা পিছু আর্ন ৪ থেকে ৫ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ছে। অর্থাৎ প্রতিনিয়ত অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী হচ্ছে দেশ।
.
২। কর্মক্ষম জনসংখ্যা:
দেশের জনসংখ্যার বেশির ভাগই ১৫ থেকে ৬৪ বছরের মধ্যে। অর্থাৎ কর্মক্ষম লোকের সংখ্যা বেশি। এতে কমমূল্যে শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে। এ কারণে বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে সহজ হবে।
.
৩। কৃষি খাতের সাফল্য:
কৃষি খাতের সাফল্য আমাদের আশার আলো দেখায়। কৃষকরা সচেতন। কৃষিতে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে। ফলে জনসংখ্যার কারণে প্রতি বছর জমির পরিমাণ কমলেও প্রতি বছরই ফসল উৎপাদন বাড়ছে। বর্তমানে আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতার কাছাকাছি।
.
৪। শিল্প খাতের উন্নয়ন:
শিল্প খাতে প্রতি বছরই নতুন উদ্যোক্তা আসছে। এদের বেশির ভাগ তরুণ। এরা বিদেশ থেকে লেখাপড়া করে আসছে। ফলে আগের শিল্পপতিদের তুলনায় এদের দক্ষতা বেশি।
.
৫। সেবা খাতের উন্নয়ন: আমাদের সেবা খাত প্রতিদিন এগিয়ে যাচ্ছে। নতুন নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে। বিশেষ করে তথ্য-প্রযুক্তির উন্নতির কারণে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হয়েছে। ফলে মানুষের জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আসছে।
.
৬। শ্রমবাজারে নারীর অংশগ্রহণ:
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আমাদের শ্রমবাজারে নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে। একদিকে উৎপাদন বাড়ছে। অপরদিকে সামাজিক বিপ্লব সৃষ্টি হচ্ছে। শ্রমবাজারে নারী এলেই তারা সচেতন হয়ে যাচ্ছে। এতে পরিবার পরিকল্পনা গ্রহণ, বাল্যবিবাহ রোধ, যৌতুক প্রথা কমে আসাসহ একটি শৃংখলার মধ্যে চলে আসছে সমাজ।
.
৭। রেমিট্যান্সের ভূমিকা:
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে রেমিট্যান্সের বিশাল ভূমিকা রয়েছে। প্রবাসীরা প্রতি বছর প্রায় ১৫ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছে। এর ফলে জাতীয় আর্ন বৃদ্ধিসহ মুদ্রাবাজার স্থিতিশীল থাকছে।
.

———-
:: সম্ভাবনা কাজে লাগাতে করণীয়:

———-
এসব অর্থনৈতিক সম্ভাবনা কাজে লাগাতে ৪টি বিষয় অত্যন্ত জরুরি। এগুলো হল-
.
১। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা:
একটি দেশের অর্থনীতি দাঁড়াতে হলে সবার আগে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে হবে। কারণ দেশ অস্থির থাকলে কেউ বিনিয়োগ করতে আসবে না। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতা জরুরি। তাদের প্রতিশ্র“তি দিতে হবে মতামত ভিন্ন মত থাকুক, দেশের অর্থনীতির স্বার্থে সবাই একমত থাকবে।
.
২। অবকাঠামো উন্নয়ন:
বিশ্বের যে দেশই অর্থনৈতিকভাবে উন্নত হয়েছে, আগে অবকাঠামো উন্নত করা হয়েছে। অর্থাৎ শিল্পায়নের পূর্বশর্ত অবকাঠামো। রাস্তাঘাট, গ্যাস, বিদ্যুৎ এবং নীতি-সহায়তা না পেলে কেউ বিনিয়োগ করতে আসবে না।
.
৩। দুর্নীতি রোধ:
অর্থনীতিতে এগিয়ে গেলেও দুর্নীতির কারণে বাংলাদেশের ইমেজ সংকট রয়েছে। যতটুকু উন্নতি দৃশ্যমান, দুর্নীতি কমলে তা বহুগুণ বেড়ে যেত। আর দুর্নীতি রোধ করতে হলে একদিকে প্রশাসনিক দক্ষতা বাড়াতে হবে। অপরদিকে প্রশাসনকে রাজনীতি মুক্ত রাখতে হবে। কারণ দুর্নীতিবাজরা মনে করে রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার কারণে তাদের বিচার হবে না। এ ধারণা যতদিন থাকবে, ততদিন দুর্নীতি কমবে না।
.
৪। কর্মমুখী শিক্ষা:
আমাদের শিক্ষার হার বেড়েছে, কিন্তু মান বাড়েনি। অধিকাংশ ক্ষেত্রে আমাদের শিক্ষা কর্মসংস্থানে কোনো কাজে লাগছে না। ফলে দেশের বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে সিলেবাস তৈরি করতে হবে। এক্ষেত্রে বেসরকারি উদ্যোক্তাদের বলতে হবে কী ধরনের শিক্ষা চাই।
.
সামগ্রিকভাবে সরকারি এবং বেসরকারি খাতের মধ্যে আরও সমন্বয় জরুরি। সাম্প্রতিক সময়ে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার জন্য অর্থনীতিতে নতুন কিছু চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি হয়েছে। এই এটি বিবেচনায় নিলে দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, দেশের অর্থনীতি ঝুঁকিতে। তবে রাজনীতি স্থিতিশীল হলে ৬ মাস থেকে এক বছরের মধ্যে তা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব।
.

———-
:: রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও স্বল্পমেয়াদি বিশ্লেষণ :

———-
রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে বিদায়ী সালে দেশের অর্থনীতি একেবারে বিপর্যস্ত না হলেও ভালো কিছু দিতে পারেনি। এ সময়ে অর্থনীতির মৌলিক ৯টি সূচকের মধ্যে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আর আমদানিতে কিছুটা প্রবৃদ্ধি ছাড়া বাকি ৭টি সূচক ছিল নেতিবাচক। জিডিপি প্রবৃদ্ধি, রফতানি, রেমিট্যান্স, সরকারের রাজস্ব আয়, বৈদেশিক সহায়তা, বিনিয়োগ, মূল্যস্ফীতি, শেয়ারবাজার এবং আর্থিক খাতসহ সবকিছুতেই নেতিবাচক অবস্থা। শেয়ারবাজার বেশ নিম্নমুখী। নতুন কিছু কোম্পানি এলেও সূচকে তার প্রভাব পড়েনি। আমদানি বাড়লেও বিভিন্ন সূত্র থেকে বলা হচ্ছে, ওভার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে বিদেশে টাকা পাচার হচ্ছে। ইতিমধ্যে পোশাক খাতের বেশ কিছু অর্ডার ভারতে চলে গেছে। এ ছাড়া সরকারি অর্থের যে উৎস, সেখানেও সুখবর নেই। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের রাজস্ব আয়ের গতি সন্তোষজনক নয়। এ অবস্থায় তীব্র রাজনৈতিক অস্থিরতা নিয়ে নতুন বছরের পথ চলা শুরু হয়। ফলে সামগ্রিক বিবেচনায় অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়তে পারে নতুন অর্থবছরের অর্থনীতি। তাই রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অতীব প্রয়োজন।
.

———-
:: দেশের অর্থনীতিকে মূল্যায়ন:

———-
বিশ্বব্যাংক প্রকাশিত ‘বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট’ প্রতিবেদনে দেশের অর্থনীতিকে মূল্যায়ন করা হয়েছে। এ প্রতিবেদনে মূল্যস্ফীতি, রাজস্ব পরিস্থিতি, রপ্তানি, বহিঃখাতের ভারসাম্য, সুদের হার, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি), বাজেট ঘাটতিসহ বিভিন্ন খাতের মূল্যায়ন করা হয়েছে।
.
* প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ছয় শতাংশের ঘরে আটকে গেছে। এর কারণ, কর্মক্ষম উচ্চ জনসংখ্যা বা জনসংখ্যা বোনাসের যথাযথ সুবিধা নিতে পারছে না বাংলাদেশ। শ্রমশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণ মাত্র ৩৩ দশমিক ৭ শতাংশ। এটি জাপানের সমান হলে জিডিপির প্রবৃদ্ধি দশমিক ৭ শতাংশ পয়েন্ট বাড়ত।
.
* আন্তর্জাতিক বাজারে খাদ্যমূল্যের দাম কমে যাওয়ায় খাদ্য উপখাতে মূল্যস্ফীতি কমেছে। আর বিনিময় হার ও মুদ্রা ব্যবস্থাপনার কারণে খাদ্যবহির্ভূত খাতে মূল্যস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে আছে।
.
* যে রপ্তানিকারকেরা ইউরোপের বাজারে ডলারে ব্যবসা করেন, তাঁরা দাম কম পাচ্ছেন। কারণ ডলারের বিপরীতে টাকার দাম এক বছরে সাড়ে ১৭ শতাংশের বেশি বেড়েছে। এটি রপ্তানিকারকদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
.
* এ ছাড়া রাজনৈতিক অস্থিরতায় কর আদায় বিঘ্নিত হয়েছে। করপোরেট কর হার কমানো, সম্পূরক শুল্ক হার হ্রাস, তৈরি পোশাক খাত ও বেশ কিছু রপ্তানি খাতকে কর ছাড় দেওয়ায় এবার রাজস্ব আদায়ে কিছুটা শ্লথগতি রয়েছে।
.
* ২০১৬ সালের জুলাই মাস থেকে নতুন মূল্য সংযোজন কর আইন বাস্তবায়ন করা হলে কর ও জিডিপি অনুপাত ১০ থেকে সাড়ে ১০ শতাংশে উন্নীত হবে বলে মনে করছে বিশ্বব্যাংক। বর্তমানে কর ও জিডিপি অনুপাত মাত্র সাড়ে ৮ শতাংশ।
.
* আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমে যাওয়া যাওয়ায় প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) লাভের মুখ দেখেছে। এটি বাজেট ঘাটতি কমাতে সহায়তা করছে।
.
* বাংলাদেশে সুদের হার অস্বাভাবিক রকমের বেশি নয় বলে মনে করে বিশ্বব্যাংক। বাজারে যে পরিমাণ তারল্য রয়েছে, সে অনুযায়ী সুদের হার কমেনি। এ ছাড়া পরিচালন ব্যয় বিশেষ করে গ্রামে ব্যাংকের শাখা স্থাপন করলে, তুলনামূলক কম বিনিয়োগ ফিরে আসে। এটাও সুদের হার না কমার অন্যতম কারণ। সুদের হার কমাতে বিশ্বব্যাংক তিনটি সুপারিশ করেছে, যার মধ্যে রয়েছে মূল্যস্ফীতি কমানো, খেলাপি ঋণে কমাতে তদারকি বাড়ানো এবং বাজারভিত্তিক সঞ্চয়পত্রের সুদের হার নির্ধারণ করা।
.
বিশ্বব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, মধ্য আয়ের দেশ হতে বাংলাদেশ কিছুটা স্বস্তির জায়গায় আছে। তবে প্রবৃদ্ধি বাড়াতে মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) বিনিয়োগের অনুপাত ৩৩-৩৪ শতাংশে উন্নীত করতে হবে। এ ছাড়া শ্রমঘন উৎপাদনশীলতার দিকে বেশি মনোযোগী হতে হবে। বিশেষ করে নারীদের কর্মসংস্থানের দিকে জোর দিতে হবে। এখনো কর্মসংস্থানের দিক থেকে পুরুষেরা অনেক এগিয়ে আছে।
.

———-
:: রফতানি বাণিজ্য পরিস্থিতি:

———-
প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে বাংলাদেশের জন্য ২০৩০ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রই হবে রফতানির প্রধান বাজার। অক্সফোর্ড ইকোনমিকসের সহায়তায় সম্প্রতি এইচএসবিসি গ্লোবাল কানেকশন রিপোর্টে ১৮০ দেশের আমদানি-রফতানির তথ্য বিশ্লেষণ করে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের শীর্ষ পাঁচ রফতানি বাজার হলো যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও কানাডা। ২০৩০ সালে গিয়ে শীর্ষ তিনটি দেশের অবস্থান অপরিবর্তিত থাকবে।
.
বাংলাদেশ যদি রফতানির জন্য ভারতকে নতুন বাজার হিসেবে পায়, তবে তা ইতিবাচক। স্বাভাবিকভাবে আমরা ভারতে মূল পণ্যের চেয়ে আনুষঙ্গিক পণ্য বেশি রফতানি করি। বাংলাদেশের প্রধান রফতানি পণ্য তৈরি পোশাক রফতানিও চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। যদিও নিটওয়্যারের প্রবৃদ্ধি কিছুটা কমেছে। রফতানি পণ্যের মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত খবরটি হলো পাটের ব্যাগ ও বস্তার রফতানি বেড়েছে ১৪ শতাংশ। বিশ্বমন্দা সত্ত্বেও বাংলাদেশ এখনও পর্যন্ত তৈরি পোশাক রফতানির ক্ষেত্রে তার শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রেখেছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউ বাংলাদেশী তৈরি পোশাকের বড় দুটি আমদানিকারক। বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রফতানির যথাক্রমে ৫১ ও ২২ শতাংশ যায় ওই দুটি দেশে। এ দুটি দেশ ছাড়া তৈরি পোশাক রফতানির নতুন বাজার প্রসঙ্গে ইতোমধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকা, ব্রাজিল, অস্ট্রেলিয়া, জাপান, চিলি, চীন, ভারত, দক্ষিণ কোরিয়া, মেক্সিকো, রাশিয়া ও তুরস্কে তৈরি পোশাক রফতানি বেড়েছে। আগামী দিনগুলোতে তৈরি পোশাক খাত বহুদূর এগিয়ে যাবে। অন্তত শীর্ষস্থানীয় পঞ্চাশ দেশে এ বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রফতানি হবে।
.

———-
:: বিনিয়োগ পরিস্থিতি:

———-
নতুন বিনিয়োগ (গ্রীনফিল্ড ইনভেস্টমেন্ট) পরিস্থিতি ভাল করতে প্রাণপণ চেষ্টা করছে সরকার। দেশে কর্মরত পুরনো কোম্পানিগুলো তাদের ব্যবসা সম্প্র্রসারণের জন্য বিনিয়োগ করেছে বলে মোট বিদেশী বিনিয়োগ বেশি দেখা যাচ্ছে, যদিও সরকার এই মুহূর্তে বৈদেশিক বিনিয়োগ নিয়ে কিছুটা হতাশ। তারপরও সম্প্রতি পৃথিবী বিখ্যাত ব্রান্ডের বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে ১৩ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে সরকার। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির স্বার্থেই দেশে বিদেশী বিনিয়োগের প্রয়োজন আছে। তবে তারচেয়েও জরুরী দেশের বিনিয়োগ পরিবেশ ধরে রাখা। বিশেষ করে দেশের অবকাঠামোগত কিছু সমস্যার সমাধান করলে দেশী উদ্যোক্তারা বিনিয়োগে ফিরে আসবে।
.

———-
:: অর্থনীতিতে তিনটি বড় চ্যালেঞ্জ: বিশ্বব্যাংক

———-
সম্প্রতি বিশ্বব্যাংক প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ মুহূর্তে দেশের অর্থনীতিতে তিনটি বৃহৎ চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করা হয়েছে। এগুলো হলো—
১। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষা করা,
২। বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করা
৩। শ্রমশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করা।
.

———-
:: বাংলাদেশের অর্থনীতির চ্যালেঞ্জ ও করণীয় :

———-
অফুরন্ত সম্ভাবনা থাকলেও বাংলাদেশকে নানামুখী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হচ্ছে:
১। আফ্রিকার দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার পাওয়ায় ইতিমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রফতানি হ্রাস পেয়েছে।
২। অন্যান্য দেশে রফতানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে তীব্র প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। তাই এ মুহূর্তে নতুন রফতানি বাজার অনুসন্ধান ও ব্যাপক তৈরি পোশাক ও অন্যান্য দ্রব্য সামগ্রী রফতানি বৃদ্ধি করা অন্যতম চ্যালেঞ্জ।
৩। বর্তমানে বৈদিশেক রেমিট্যান্স প্রবাহে প্রবৃদ্ধি থাকলেও ক্রমেই জনশক্তি রফতানি হ্রাস পাচ্ছে। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যে জনশক্তি রফতানি ব্যাপক হারে হ্রাস পাচ্ছে। বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের জনশক্তির নতুন চাহিদা সৃষ্টি করতে না পারলে মেয়াদ পূর্তির পর শ্রমিকরা দেশে ফিরে আসলে রেমিট্যান্সও কমতে শুরু করবে। তাই নতুন জনশক্তি বাজার খুঁজে বের করা অতীব জরুরী।
৪। দেশে ব্যাপক কর্মহীন জনসংখ্যাকে কাজে লাগাতে না পারলে সামাজিক ও অর্থনৈতিক অস্থিরতা আরও বেড়ে যাবে। চাহিদা অনুযায়ী দক্ষ জনশক্তি সৃষ্টি করে জনশক্তি রফতানি বৃদ্ধি করা অন্যতম চ্যালেঞ্জ।
৫। গ্যাস, বিদ্যুত্ ও অবকাঠামোগত খাতে উন্নতি না হওয়ায় দেশে কাঙ্ক্ষিত বৈদেশিক বিনিয়োগ আসছে না। অথচ উত্পাদন ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশে ব্যাপক হারে বিনিয়োগ খুবই প্রয়োজন।
.
রাজনৈতিক অস্থিরতা, কাঠামোগত দুর্বলতা ও আন্তর্জাতিক ভঙ্গুরতা সত্ত্বেও বাংলাদেশে টেকসই প্রবৃদ্ধি ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রয়েছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে সমস্যা থাকলেও দেশটির সম্ভাবনা অফুরন্ত। ২০২১ সালে বাংলাদেশের ৫০ বছর পূর্তি হবে। সে সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ মধ্য আয়ের দেশে পরিণত হওয়া, ২০৩০ সালের মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে ছাড়িয়ে যাওয়া এবং ২০৫০ সালের মধ্যে পশ্চিমা বিশ্বকে ছাড়িয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখছে। জনসংখ্যাকে পরিকল্পিতভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে অদূর ভবিষ্যতে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে বাংলাদেশ।
.

———-
:: দেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে পারে বৈদেশিক কর্মসংস্থানে:

———-
দেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে প্রধান মাধ্যম হতে পারে বৈদেশিক কর্মসংস্থান। তাই অধিক অর্জন ও সরকারের প্রায় শূন্য বিনিয়োগের খাত জনশক্তিকে এখন সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। আর এ ক্ষেত্রে বর্তমানে আরো বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে নারী কর্মীদের।
.
বৈদেশিক সাহায্যের ওপর নির্ভর করে একসময় বসে থাকতে হতো বাংলাদেশকে। অথচ বর্তমানে দেশের জিডিপিতে বৈদেশিক সাহায্যের ৭ গুণেরও বেশি অবদান (১২ দশমিক ১৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) এখন জনশক্তি খাতের। ২০১১ সালে প্রবাসী কর্মীদের পাঠানো রেমিটেন্স জিডিপিতে ১৩ শতাংশ অবদান রেখেছে। এতে নারী কর্মীদের অংশগ্রহণ বেশি থাকলে এ অর্জন হতো দ্বিগুণেরও বেশি। এসব কারণ বিবেচনা করে সরকার জনশক্তি খাতের নারী কর্মীদের বিষয়ে বিশেষভাবে নজর দিচ্ছে।
.
প্রবাসী কর্মী পরিস্থিতি:
সরকারি হিসেব অনুযায়ী বিশ্বের ১৪৩টি দেশে প্রায় ৮০ লাখ বাংলাদেশি কর্মী রয়েছেন। যদিও কর্মী সংখ্যা এর চেয়ে বেশি। তবে এ কর্মীর মধ্যে খুব সামান্য অংশই নারী কর্মী। এসব কর্মীদের কাছ থেকে ২০১১ সালে ১২ দশমিক ১৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিটেন্স এসেছে। এই রেমিট্যান্স বৈদেশিক সাহায্যের ৭ গুণেরও বেশি।
.
নারী কর্মীদের মূল্যায়ণ:
জনশক্তি খাতের সবচেয়ে বেশি সঞ্চয় করেন প্রবাসী নারী কর্মীরা। তাদের সঞ্চয়ের বেশিরভাগ অর্থই দেশে আসে। আর তাদের এ অর্থ পরিবার ও দেশের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে অধিক বিনিয়োগ হিসেবে কাজ করে। এ কারণে প্রবাসী নারী কর্মীদের গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি।
.
প্রবাসী কর্মীদের অর্থ পাঠাতে সরকারি উদ্যোগ:
সরকার প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক খুলে এক যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অভিবাসন ব্যয় মেটাতে সহজ শর্তে ঋণ দেওয়া ও দেশে সহজে রেমিটেন্স পাঠাতে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়। তাছাড়া বিদেশে ব্যাংকের শাখা খোলা, একচেঞ্জ হাউজ স্থাপন, মোবাইল-ফোন” target=”_blank”>মোবাইল ফোনের মাধ্যমে রেমিটেন্স পাঠানো, অবৈধ পথে রেমিটেন্স পাঠানোর ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা এবং এনজিওর মাধ্যমে প্রবাসী কর্মীর রেমিটেন্স পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। অর্থ পাঠাতে উৎসাহ দিতে প্রবাসীদের ‘সিআইপি’ ও ‘বিশেষ নাগরিক সুবিধা কার্ড’ প্রদানের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
.
অনলাইনে তথ্য যাচাই:
মধ্যপ্রাচ্যের সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, সৌদি আরব, বাহারাইন ও সিঙ্গাপুরের ভিসা অনলাইনে যাচাই করার ব্যবস্থা নিয়েছে সরকার। এর ফলে এসব দেশে জাল ভিসায় বিদেশ গমন রোধ করা সম্ভব হচ্ছে।
.
প্রতারণা ঠেকাতে ব্যবস্থা:
বিদেশ গমনকারী কর্মীদের তথ্য সংগ্রহ করে কেন্দ্রীয়ভাবে ডাটাবেজ আকারে সংরক্ষণ করা হচ্ছে। ডাটা ব্যাংক থেকে সরাসরি কর্মী নিয়োগের সুবিধা দেওয়া ও দালালদের প্রতারণা রোধে জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোতে কম্পিউটার ডাটাবেজ নেটওয়ার্ক স্থাপন করা হয়েছে। বিদেশে গমনেচ্ছু কর্মীদের রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম জেলা প্রশাসকের দফতরে সম্প্রসারণের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। দেশে প্রতারণা ঠেকাতে ও প্রবাসে সম্মানের সঙ্গে কর্মী হিসেবে কাজ করতে প্রত্যেক নারী কর্মীকে ফিঙ্গার প্রিন্ট ও অন্যন্য তথ্যসহ স্মার্ট কার্ড দেওয়ার ব্যবস্থা থাকছে বৈধভাবে বিদেশ গমনের ক্ষেত্রে।
.
কর্মী প্রশিক্ষণ:
৩৫ টি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও ৫ টি মেরিন টেকনোলজি ইনস্টিটিউট নির্মাণের কাজ চলছে। প্রতিটি জেলায়ই প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলোতে এ পর্যন্ত দুই শিফটে ৬০ হাজার প্রশিক্ষণার্থী প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। তাদের বেশিরভাগই বিদেশে কর্মসংস্থান পেয়েছেন। নির্মাণাধীন ৩৫টি কেন্দ্র বাস্তায়িত হলে আগামী বছর থেকে লক্ষাধিক কর্মী প্রশিক্ষণ নিতে পারবেন।
.
নতুন শ্রমবাজার অনুসন্ধান:
প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগে প্রচলিত শ্রমবাজারের বাইরে নতুন নতুন শ্রমবাজারের অনুসন্ধান করা হচ্ছে। এ তৎপরতার অংশ হিসেবে পোল্যান্ড, সুইডেন, রাশিয়া, সুদান, গ্রীস, কঙ্গো, এসতোনিয়া, আলজেরিয়া, পাপুয়া নিউগিনি, দক্ষিণ আফ্রিকা, এ্যাঙ্গোলা, বোতসোয়ানা ও সিয়েরালিওনে কর্মী প্রেরণ শুরু করা হয়েছে।
.
সরকারের সেবা কার্যক্রম:
বিভিন্ন দেশ থেকে সরকারি খরচে কর্মীর মৃতদেহ দেশে ফেরত আনা, দাফন-কাফন বাবদ ৩৫ হাজার টাকা প্রদান, অস্বাভাবিক মৃত্যুর ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণ হিসেবে পরিবার প্রতি দুই লাখ টাকা দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আটকা পড়া ও অসুস্থ কর্মীদের দেশে ফেরতের জন্যও কল্যাণ তহবিল থেকে বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে।
.
সরকারিভাবে কর্মী প্রেরণ:
মালয়েশিয়ায় কর্মরত ২ লাখ ৬৭ হাজার কর্মীকে বৈধ করা ছাড়াও নতুন করে কর্মী পাঠাতে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আরো পাঁচ হাজার কর্মী পাঠাতে চুক্তি করা হবে শিগগিরই। সরকার টু সরকার কর্মী পাঠাতে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী জানান, আগামী বছর নতুন আরো ৭ লাখ কর্মী বিদেশে পাঠানো সম্ভব হবে। প্রধানমন্ত্রীর এ উদ্যোগে নারী কর্মীদের ব্যাপক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। পূরুষের পাশপাশি নারী কর্মীদের সংখ্যা আনুপাতিক হারে বাড়লে দেশের অর্থনীতির চিত্র পাল্টে যাবে বলে মনে করেন তিনি।
.
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই কর্মী সংগ্রহকারী ও সম্ভাবনাময় দেশগুলোতে সফর করেছেন। শ্রমবাজার সম্প্রসারিত করতে উচ্চ পর্যায়ের সরকারি প্রতিনিধি দল কুটনৈতিক সম্পর্ক সৃষ্টি ও সম্পর্ক জোরদার করতে ঘুরেছেন বিভিন্ন দেশ। প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী বিদেশে নারী কর্মীদের নিরাপদ অভিবাসন ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন ব্যবস্থা নিচ্ছেন।

 

   
   

0 responses on "বিসিএস পরামর্শ -১"

Leave a Message

Address

151/7, level-4, Goodluck Center, (Opposite SIBL Foundation Hospital), Panthapath Signal, Green Road, Dhanmondi, Dhaka-1205.

Phone: 09639399399 / 01948858258


DMCA.com Protection Status

Certificate Code

সবশেষ ৫টি রিভিউ

eShikhon Community
top
© eShikhon.com 2015-2024. All Right Reserved