প্রশ্ন ফাঁসের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে আপন তিন ভাইকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উত্তর বিভাগ। তিন ভাইয়ের নাম আমান উল্লাহ, বরকত উল্লাহ, আহসান উল্লাহ। চাঁদপুর থেকে এসে তারা থাকতেন রাজধানী ঢাকার ইন্দিরা রোডের একটি বাসায়। এসএসসি পরীক্ষা শুরুর কয়েক দিন আগে এই তিন ভাই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘোষণা দেন। তাঁরা এমনও বলেন, তাঁদের কেউ ধরতে পারবে না, ধরার সামর্থ্যও নেই। ওই তিন ভাইসহ প্রশ্নপত্র ফাঁসকারী চক্রের মোট ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গ্রেপ্তার হওয়া বাকি ১১ জনের মধ্যে রয়েছে রাহাত ইসলাম, সালাউদ্দিন, সুজন, জাহিদ হোসেন, সুফল রায় ওরফে শাওন, আল আমিন, সাইদুল ইসলাম, আবির ইসলাম, শাহাদত হোসেন, ফাহিম ইসলাম ও তাহসিব রহমান। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে গতকাল শনিবার তাঁদের গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) উত্তর বিভাগ। গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের কাছ থেকে প্রশ্নপত্র ফাঁসের কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন ডিভাইস উদ্ধার করা হয়েছে। এসব ডিভাইসের মধ্যে রয়েছে এইচপি ল্যাপটপ, স্যামসাং, নকিয়া, সিম্ফোনি, লাভা, হুয়েই, লেনোভো, আইফোন ব্রান্ডের মোট ২৩টি মুঠোফোন ও নগদ ২ লাখ ২৪ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়।
রোববার (১১ই ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ ব্রিফিংয়ে এ কথা জানান ডিবির যুগ্ম কমিশনার আবদুল বাতেন। গ্রেপ্তার হওয়া সবাই প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে বলে তিনি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, এই উল্লাহ বাহিনীর মধ্যে আমান উল্লাহ সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের ছাত্র। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, তাঁরা মূলত মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ, ইমোতে গ্রুপ ওপেন করে অ্যাডমিন পরিচালনা করতেন। অনেক ছাত্রকে তাঁরা গ্রুপের সদস্য করতেন। যেদিন যে পরীক্ষা হবে, সেই পরীক্ষার ভিত্তিতে গ্রুপ খোলা হতো।
আবদুল বাতেন বলেন, পরীক্ষা শুরু হওয়ার সর্বোচ্চ ৩০ থেকে ৪০ মিনিট আগেই আসল প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়। পরীক্ষার এক দিন আগে ভুয়া প্রশ্নপত্র ছড়াতেন তাঁরা। প্রকৃত প্রশ্নের সঙ্গে এসব প্রশ্নের মিল নেই। তবে পরীক্ষার দিন কেন্দ্র থেকে পরীক্ষার হলে আনার সময় প্রশ্নপত্রের বান্ডেল খোলা হয়। বান্ডেল খোলার আগে এই প্রশ্ন দেখার সুযোগ কারও নেই। কেন্দ্র থেকে কক্ষে যাওয়ার সময়ে প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা ঘটে। পরীক্ষা শুরুর ৩০ থেকে ৪০ মিনিট আগে কোনো ‘দুষ্টু’ লোক মোবাইলে ছবি তুলে গ্রুপগুলোয় ছেড়ে দেয়। এমসিকিউ পরীক্ষার ক্ষেত্রে এই কাজ বেশি হয়। এই প্রশ্ন সরাসরি ছাত্রদের মধ্যে পৌঁছানো বেশ কঠিন। বেশির ভাগ সময় পরীক্ষার সকালে, কখনো কখনো পরীক্ষার আগের দিন রাতে একেক গ্রুপ একেক ধরনের প্রশ্নের সেট বিক্রি ও সরবরাহ করতে থাকে, যা ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করে। তাঁরা এসব প্রশ্ন বিকাশ বা রকেটের মাধ্যমে পাঁচ শ থেকে দুই হাজার টাকায় বিক্রি করেন।
আব্দুল বাতেন আরও জানান, প্রশ্নপত্র ফাঁসের এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কিংবা বোর্ডের কারও সম্পৃক্ততা এ পর্যন্ত তদন্তে তাঁরা পাননি।
১লা ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয়েছে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। এবার পরীক্ষায় ২০ লাখ ৩১ হাজার ৮৯৯ জন শিক্ষার্থী অংশ নিচ্ছে। কিন্তু পরীক্ষা শুরুর পর বাংলা প্রথম ও দ্বিতীয় পত্র, ইংরেজি প্রথম ও দ্বিতীয় পত্র এবং ধর্ম বিষয়ের পর গতকাল গণিতেরও প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়।
আরো পড়ুন:
0 responses on "প্রশ্ন ফাঁসের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে আপন তিন ভাইকে গ্রেপ্তার করেছে ডিবি"