
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন কোটা বাতিল করেছি, আর কোনো কথা নয়।
সরকারি চাকরিতে কোটা থাকছে না জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কোটা নিয়ে আর কোনো কথার দরকার নেই। যেহেতু ছেলেমেয়েরা একেবারেই কোটা চায়না তাই বাতিল করে দিয়েছি। এটা নিয়ে আর নতুন করে কোনো প্রশ্ন আসার দরকার নেই। আজ বুধবার (২ মে) গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী এ মন্তব্য করেন।সাম্প্রতিক সৌদি আরব, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়া সফর নিয়ে এ সংবাদ সম্মেলন ডেকেছেন প্রধানমন্ত্রী।
কোটা আন্দোলন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীকে প্রশ্ন করেন ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত। জবাবে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ছাত্ররা দাবি করেছে, সেটি মেনে নেওয়া হয়েছে। এখন হা-হুতাশের কী আছে?
তিনি বলেন, কোটা সংস্কার ছাত্রদের বিষয় না। এটা সরকারের নীতি-নির্ধারণী বিষয়। ছাত্ররা কোটা ব্যবস্থা বাতিল চেয়েছে, বাতিল করে দেওয়া হয়েছে-সেটি নিয়ে এখন প্রশ্ন আনার দরকার কী?
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জেলা কোটাও বাতিল হয়ে গেছে। এখন পিছিয়ে পড়া বলে কেউ অভিযোগ করতে পারবে না। আন্দোলনের সময় অনেকের ছবি সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে, এখন কেউ এসে পিছিয়ে পড়া হিসেবে চাকরি না পাওয়ার অভিযোগ করতেও পারবে না।
তিনি বলেন, আমরা আগেই নির্দেশ দিয়েছিলাম, কোটায় প্রার্থী না পাওয়া গেলে মেধা থেকে নেয়ার জন্য, সে হিসেবে প্রায় ৭৬ শতাংশ নিয়োগ মেধায় হয়েছে। তারপরও আান্দোলন করেছে তারা।
সরকারি চাকরিতে কোটা ৫৬ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের এক পর্যায়ে গত ১১ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী সংসদে কোটা বাতিলের কথা বলেন। কোটা সংস্কার নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা পেলে সঙ্গে সঙ্গে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে প্রস্তুত বলে জানিয়ে আসছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়; তবে প্রজ্ঞাপন না পেয়ে হতাশ আন্দোলনকারীরা।
এরপর গত ২৭ এপ্রিল আন্দোলনকারী নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে ক্ষমতাসীন দলের নেতা জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, প্রধানমন্ত্রী দেশে ফিরলে তার ঘোষণা কীভাবে কার্যকরে স্বল্প সময়ের মধ্যে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।
বিদেশ সফর শেষে সংবাদ সম্মেলনে আসা প্রধানমন্ত্রী চাকরিতে বিভিন্ন কোটা রাখার গুরুত্ব তুলে ধরার পর বলেন, কোটা না চাইলে আর থাকবে না। কোটা সংস্কারের আন্দোলনের পেছনে কারা রয়েছে, তাদের পরিচয় খুঁজে বের করতে বলেন শেখ হাসিনা।
আন্দোলনকারীদের মধ্য থেকে মুক্তিযোদ্ধা কোটা নিয়ে ব্যঙ্গ করার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের অসম্মান সহ্য করা আমার পক্ষে সম্ভব না। এখন জেলা কোটা না থাকলে আন্দোলনকারীদের কেউ পরে চাকরি না পেয়ে তা চাইলে তা পাবেন না বলেও ইঙ্গিত দেন তিনি।আন্দোলনে যারা যারা আছে, তাদের ছবি সংরক্ষণ করা আছে, তখন যদি কান্নাকাটি করে, তখন দেখা যাবে।
তিনি বলেন, যারা কোটাধারী তারাও তো পরীক্ষায় পাস করছে। অথচ কোটাধারীদের নিয়ে নানা কথা বলা হয়।
কোটা আন্দোলনে গণমাধ্যমের ভূমিকা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিক্ষার্থীরা যখন আন্দোলন শুরু করলো তখন কেউ তো তাদেরকে বুঝিয়ে বাড়ী পাঠিয়ে দেয়নি। গণমাধ্যম কি ভূমিকা পালন করেছে?
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সরকারি খরচে পড়াশোনা করানো প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যদিও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো স্বায়ত্ত্বশাসিত, তবুও সব খরচ সরকারই বহন করছে। বলতে গেলে তারা বিনা পয়সায়ই পড়ছে।
আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগের আসন্ন সম্মেলনে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনের প্রসঙ্গে দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, যদি সমঝোতা হয়, তবে প্রেস রিলিজের মাধ্যমে তা ঘোষণা করা হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ছাত্রলীগের নতুন নেতৃত্ব গঠনে নির্বাচনের নিয়ম আছে। সেজন্য প্রার্থীদের আবেদন নেওয়া হয়েছে। প্রথমে সমঝোতার চেষ্টা করা হয়, সেটা না হলে নির্বাচন হয়। সমঝোতা হয়ে গেলে সেভাবে (প্রেস রিলিজে ঘোষণা) হবে।
এবার নির্বাচন নয়, সিলেকশনর মাধ্যমে ছাত্রলীগের নেতৃত্ব নির্বাচন হতে পারে বলে শোনা যাচ্ছে। সিন্ডিকেটের নির্বাচনের মাধ্যমে যেন ছাত্রলীগের নেতৃত্ব অন্য কারও হাতে না যায়, সেজন্য এবার সিলেকশন হতে পারে বলেও খবর দিচ্ছে বিভিন্ন সূত্র। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কথায় সে বিষয়টিই আরও জোরালো হলো।