শিক্ষার মানোন্নয়নে পাবলিক পরীক্ষা কমিয়ে ক্লাসের সময় বাড়ানোর দিকে গুরুত্ব দিচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
এ ক্ষেত্রে জেএসসিতে ১০টির পরিবর্তে সাতটি এবং এসএসসিতে ১৪টি থেকে কমিয়ে ১০টি বিষয়ে পরীক্ষা নেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ জন্য মাধ্যমিকের শ্রেণিভিত্তিক পাঠ্যবিষয় পুনর্বিন্যাস হতে পারে। মন্ত্রণালয়ের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, লেখাপড়ায় পরীক্ষানির্ভরতা কমিয়ে ক্লাসে শিক্ষণ-শিখনের সময় বাড়ানোর পরামর্শ শিক্ষাবিদদের। তাদের মতে, পাবলিক পরীক্ষার ধরন পরিবর্তন করে স্বল্প সময়ে শেষ করা উচিত। এই সময় বণ্টন করে ক্লাসে বাড়াতে হবে। মাসব্যাপী পরীক্ষা নিতে শিক্ষকদের ব্যস্ত থাকতে হবে না। শিক্ষার্থীরা পাঠদান থেকে বঞ্চিত হবে না। কারণ পাঠ্যবইয়ের তত্ত্ব ও তথ্য আয়ত্ত হলো কিনা, যাচাই করতে পাবলিক পরীক্ষার মূল উদ্দেশ্য হওয়া উচিত নয়। পাঠ্যপুস্তকের বিষয় জানা মূলত স্কুলভিত্তিক অর্ধবার্ষিক, বার্ষিক পরীক্ষা ও ধারাবাহিক মূল্যায়নের ক্ষেত্র। এ জন্য প্রয়োজন ক্লাসের সময় বৃদ্ধি করা। যাতে করে ক্লাসে শিক্ষণ-শিখনে সময় পান শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
মাধ্যমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে পরামর্শ দিতে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদদের নিয়ে গঠিত কমিটি এসব সুপারিশ করেছে বলে জানা গেছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানান, শিক্ষাবিদরা শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের ৪০ মিনিটের পরিবর্তে সময় বাড়িয়ে ৬০ মিনিট করার প্রস্তাব করেছেন। আবশ্যিক বিষয়ের জন্য যথেষ্ট সময় নির্ধারণ করে সাপ্তাহিক ও বার্ষিক সময়বিন্যাস, পরীক্ষা অনুষ্ঠানের সময় কমিয়ে বছরব্যাপী পাঠদানের সময় বাড়ানোর পরামর্শ তাদের। এ ছাড়া শ্রেণিভিত্তিক পাঠ্যবিষয় পুনর্বিন্যাসের মাধ্যমে উচ্চমাধ্যমিক থেকে বিভাগ চালুর সুপারিশ করেছেন।
এ ছাড়া জেএসসিতে ১০টির পরিবর্তে সাতটি বিষয়ে পরীক্ষা রাখার সুপারিশ করেছে কমিটি। অন্যদিকে এসএসসি পরীক্ষায় ১৪টি থেকে চারটি বিষয় কমবে। অর্থাৎ ঐচ্ছিক বিষয়সহ ১০টি বিষয়ে পরীক্ষা নেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।
এই কমিটির সদস্যরা সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে একটি বৈঠক করে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলামের কাছে তাদের সুপারিশ তুলে ধরেন। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন পরামর্শক কমিটির সদস্য অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ, ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন, অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী, ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবাল, অধ্যাপক ড. মঞ্জুর আহমেদ, অধ্যাপক এমএম আকাশ, অধ্যক্ষ কাজী ফারুক আহমদ, শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী, অধ্যাপিকা তাসলিমা বেগম, বেগম তানজিল আশ্রাফ, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব চৌধুরী মুফাদ আহমেদ, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ড. অরুণা বিশ্বাস, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. এসএম ওয়াহিদুজ্জামান এবং জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর নারায়ণ চন্দ্র সাহা প্রমুখ।
কমিটির আরও সুপারিশ হচ্ছে, ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষাক্রমের বিষয়বস্তু গুরুত্ব অনুসারে তিন গুচ্ছে ভাগ করা। ‘ক’ গুচ্ছেÑ বাংলা, ইংরেজী ও গণিত। ‘খ’ গুচ্ছেÑ বিজ্ঞান ও সমাজপাঠ (ইতিহাস, পৌরনীতি ও ভূগোল)। ‘ক’ ও ‘খ’ গুচ্ছ বাধ্যতামূলক। আর ‘গ’ গুচ্ছেÑ তথ্যপ্রযুক্তি, চারুকারুকলা, শরীরচর্চা ও খেলা, ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা, কৃষি ও গার্হস্থ্য, নৃগোষ্ঠীর ভাষা ও সংস্কৃতি। এগুচ্ছে প্রকৌশল প্রযুক্তি (বিদ্যুৎ, যন্ত্র, কাঠ, ধাতু ইত্যাদির ব্যবহারিক জ্ঞান ও প্রয়োগ) যুক্ত করার নতুন প্রস্তাব এসেছে।
অষ্টম শ্রেণির সমাপনী বা জেএসসি পরীক্ষায় সাতটি বিষয়ে পরীক্ষা নিয়ে, বাকিগুলো অর্থাৎ চারুকারুকলা, ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা, কৃষি, গার্হস্থ্য বিজ্ঞান, শরীরচর্চা ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়গুলো বিদ্যালয়ভিত্তিক মূল্যায়ন করা। ‘গ’ গুচ্ছের বিষয়ে জ্ঞান ও তত্ত্বের চেয়ে চর্চা, আগ্রহ বৃদ্ধি, মনোভাবের পরিবর্তন ও সৃজনশীলতার প্রকাশ এবং প্রায়োগিক দক্ষতা বেশি প্রয়োজন।
এ ছাড়া ভবিষ্যতের কর্ম ও পেশা নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসেবে নবম ও দশম শ্রেণিতে আগের শ্রেণির গুচ্ছের সঙ্গে ‘ঘ’ গুচ্ছে, পদার্থ, রসায়ন, জৈববিজ্ঞান, উচ্চতর গণিত, হিসাব, বিপণন, ব্যবস্থাপনা ও অর্থনীতি। এ থেকে যে কোনো দুটি বিষয় শিক্ষার্থীরা নিতে পারবে।
ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণিতে ৫টি বিষয় বাধ্যতামূলক ও দুটি ঐচ্ছিক বিষয় থাকবে। যদি ধর্ম ও তথ্যপ্রযুক্তি বাধ্যতামূলক বিষয় করা হয়, এক্ষেত্রে ঐচ্ছিক বিষয় একটি কমানো যেতে পারে। নবম-দশম শ্রেণিতে ৫টি বাধ্যতামূলক বিষয় ছাড়া ‘গ’ গুচ্ছ থেকে দুটি ও ‘ঘ’ গুচ্ছ থেকে দুটি বা তিনটি বিষয় নিতে হবে। ফলে এসএসসি পরীক্ষায় ১৪টি থেকে চারটি বিষয় কমবে। অর্থাৎ ঐচ্ছিক বিষয়সহ ১০টি বিষয়ে পরীক্ষা নেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।
আরো পড়ুন:
0 responses on "পাবলিক পরীক্ষা কমিয়ে ক্লাসের সময় বাড়ানোর দিকে গুরুত্ব দিচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়"