পদত্যাগ করতে চাইলেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, কিন্তু সায় দিলেন না প্রধানমন্ত্রী

পদত্যাগ করতে চাইলেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, কিন্তু সায় দিলেন না প্রধানমন্ত্রী

পদত্যাগ করতে চাইলেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। কিন্তু সায় দিলেন না প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পদত্যাগ না করে প্রশ্ন ফাঁসসহ সব ইস্যুতে শক্ত হাতে কার্যক্রম পরিচালনার জন্য শিক্ষামন্ত্রীকে পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সার্বিক পরিস্থিতি আমি পর্যবেক্ষণ করছি-এমন মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শিক্ষামন্ত্রীকে বলেছেন, ১০০ অর্জন আছে, দু’একটি ঘটনায় সর্ব অর্জন নষ্ট হতে দেয়া যাবে না। শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরের কাজে কঠোর হোন। প্রশ্ন ফাঁসের মতো সরকারের মর্যাদাক্ষুন্নকারী তৎপরতার বিষয়ে যাতে সঠিক তথ্য জনগণের কাছে যায় তা নিশ্চিত করতে হবে। প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ পাল্টা অভিযোগ নিয়ে হতাশ হয়ে শেষ পর্যন্ত মঙ্গলবার শিক্ষামন্ত্রী পদত্যাগের ইচ্ছা ব্যক্ত করলে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেছেন।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তাসহ নিশ্চিত করেছেন, প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগের ঘটনা সামাল দিতে না পারায়  অনেকটাই হতাশ শিক্ষামন্ত্রী। এসএসসি পরীক্ষায় ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ নিয়ে চলছে নানামুখী সমালোচনা। এমন অবস্থার মধ্যেই সর্বশেষ সোমবার জাতীয় সংসদে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুর শিক্ষামন্ত্রীর পদত্যাগ দাবির প্রেক্ষাপটে হতাশ হিন মন্ত্রী। মঙ্গলবার সিলেটের এমপি সেলিম উদ্দীনও নহিদের পদত্যাগ চাইলেন। এমন প্রেক্ষাপটে হতাশ হয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পদত্যাগের ইচ্ছা পোষণ করেন শিক্ষামন্ত্রী। শিক্ষামন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বলেন, ‘আমি পদত্যাগ করতে চাই। সম্মান নিয়ে যদি কাজ না করতে পারি তবে এ পদে থাকতে চাই না।’ এ সময় প্রধানমন্ত্রী শিক্ষামন্ত্রীকে শান্ত হওয়ার পরামর্শ দিয়ে বলেন, ‘পাগলামি করবেন না। পদত্যাগ করলেই তো সমস্যার সমাধান হবে না বরং কঠোরভাবে মন্ত্রণালয়ের কাজ-কর্ম পরিচালনা করেন। কর্মকর্তাদের শক্ত হয়ে কাজ করতে হবে। পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস বন্ধে সরকার কী কী কাজ করছে। কারা কোথায় অপরাধ করছে। তাদের খুঁজে বের করতে হবে। জনগণের কাছে কর্মকর্তাদের মাধ্যমে সঠিক মেসেজটা যেতে হবে।’

একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা মন্ত্রীকে বলেন, ‘১০০ অর্জন আছে, দু’একটি ঘটনায় সর্ব অর্জন নষ্ট হতে দেয়া যাবে না। প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ, কারা কোথা থেকে কী করছে, কোন কোন দফতর কী করছে। কীভাবে সমস্যার সমাধান করা যায় সার্বিক বিষয় আমি নজর রাখছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, কাজ করেন গিয়ে। মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট দফতরের কর্মকর্তাদের নিয়ে বসেন। প্রতিমন্ত্রী, দুই সচিবসহ অন্যদের নিয়ে শক্তভাবে সব কিছু দেখেন। সংসদে জাতীয় পার্টির সাংসদদের দাবির প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একজন দুজন বললেই সব শেষ হবে না। অনেক অর্জন আছে। কাজ করতে হবে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সূত্রগুলো বলছে, প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শের পরপরই শিক্ষামন্ত্রী সোজা চলে আসেন মন্ত্রণালয়ে। এসে প্রতিমন্ত্রী কাজী কেরামত আলী, দুই সচিব মোঃ সোহরাব হোসাইন, মোহাম্মদ আলমগীর, মন্ত্রণালয়ের সকল অতিরিক্ত সচিব, যুগ্ম সচিবসহ অন্য কর্মকর্তাদের নিয়ে জরুরী বৈঠকে বসেন শিক্ষামন্ত্রী। বৈঠকে মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী সকলের উদ্দেশে দিক নির্দেশনামূলক বক্তব্য রাখেন।

দুজনেই বলেন, পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ তৈরি করে সরকারবিরোধী গোষ্ঠী যে কোন মূল্যে সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে। সুতরাং প্রশ্ন ফাঁসসহ যে কোন ইস্যূতে কঠোরভাবে কাজ করতে হবে। কোন কাজে গাফিলতি সহ্য করা হবে না। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, পরীক্ষার কয়েক মিনিট আগে যারা প্রশ্নের কথা বলে ফেসবুকে অপপ্রচার চালাচ্ছে। কিংবা সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন তাদের কেউ রেহাই পাবে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর হস্তে সকল অপরাধ বন্ধ করবে।

এর আগে সোমবার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় সংসদে ক্ষোভ প্রকাশ করে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের পদত্যাগ দাবি করেন বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সাবেক মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, প্রশ্নপত্র ফাঁস এখন মহামারি রূপ নিয়েছে। তাই শিক্ষামন্ত্রীকে বলব ব্যর্থতা স্বীকার করে পদত্যাগ কর। নতুবা প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করব তাকে বরখাস্ত করে নতুন মন্ত্রী নিয়োগ কর।<

কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারির ডেস্ক বদল:

মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারীর ডেস্ক বদল করা হয়েছে। তারা হলেন মন্ত্রীর দপ্তরের অফিস সহায়ক মোক্তার হোসেনকে হিসাব শাখায় দেয়া হয়েছে। আর মন্ত্রীর দপ্তরের প্লেইন পেপার কপিয়ার মোহাম্মদ আলীকে গবেষণা শাখায় বদলি করা হয়েছে। তাছাড়া সিনিয়র ডাটা এন্ট্রি অপারেটর রাশেদ আলীকে আইসিটি শাখা থেকে বদলি করে কলেজ শাখার উপ-সচিবের দপ্তরে, যুগ্ম প্রধানের অফিস সহায়ক সজীব চাকমাকে মন্ত্রীর দপ্তরের আনা হয়েছে। অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা শাখার অফিস সহায়ককে মন্ত্রীর একান্ত সচিবের দপ্তরে আনা হয়েছে। আর বেগম হোসনে আরা আখতারকে গবেষণা শাখা থেকে অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা শাখায় নেয়া হয়েছে।  মন্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা করা হয়েছে মোহাম্মদ রুবায়েত হোসাইনকে। প্রশাসনিক কর্মকর্তা আলমগীর হোসেনকে দুটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তাছাড়া আবু জাহের, আবু আলম খান, আবু শাহীন, আনছার আলী, আজিম আহমদ এবং গোলাম মোস্তফাকে তাদের ডেস্ক থেকে বদলি করা হয়েছে।

সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় প্রশ্ন ফাঁসের জন্য সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাই দায়ী বলে অভিযোগ করেছেন দুদকের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ড. নাসিরউদ্দীন আহমেদ। তিনি বলেন, প্রশ্নপত্র ফাঁসের জন্য শিক্ষাবোর্ড, সরকারি বিজি প্রেস, বিভিন্ন ট্রেজারি এবং পরীক্ষা কেন্দ্রের অসাধু কর্মকর্তারাই দায়ী। সারাদেশে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন পরীক্ষায় যত জায়গায় প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে তার সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা জড়িত। আমরা কিছু শনাক্তও করেছি। আমাদের শক্ত অস্ত্র আছে। কিন্তু আমরা তো সেই কাজে আসিনি। আমরা চাই, এ দেশের বিশেষ করে ভবিষ্যত প্রজন্ম যাতে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে পারে। পাশাপাশি মানসম্মত শিক্ষা যেন হয়।

তবে শিক্ষামন্ত্রী প্রশ্ন ফাঁসের জন্য সব সময়েই দায়ী করেছেন কেবল শিক্ষকদেরই। তিনি বলেছেন, কিছু শিক্ষই প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে জড়িত। প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে শিক্ষকরা জড়িত থাকার কারণে নানা পদক্ষেপ নিয়েও প্রশ্ন ফাঁস ঠেকানো যাচ্ছে না। ওই অনুষ্ঠানে বুয়েটের প্রসঙ্গ টেনে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, বুয়েটে কেবল একটি কেন্দ্রে পরীক্ষা হয় তার পরেও প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ ওঠে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কেবল শিক্ষকদের দায়ী করলে তা সঠিক হবেনা। কারণ পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র বিতরণের সঙ্গে শিক্ষকের অংশগ্রহণ ১০ ভাগের বেশি নয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ট্রেজারিতে থাকে প্রশ্ন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, জেলা প্রশাসন ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের দায়িত্ব থাকে সবচেয়ে বেশি।

 

 

আরো পড়ুন:

পদত্যাগ না করে প্রশ্ন ফাঁসসহ সকল ইস্যুতে কঠোর হওয়ার জন্য শিক্ষামন্ত্রীকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী

শিক্ষামন্ত্রীর প্রশংসা করেছে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া

Leave a Reply

স্যার, কিভাবে আপনাকে সাহায্য করতে পারি?

Click one of our representatives below

Customer Support
Customer Support

Syeda Nusrat

I am online

I am offline

Technical Support
Technical Support

Ariful Islam Aquib

I am online

I am offline