
বোর্ড অব ট্রাস্টিজে দ্বন্দ্ব, অননুমোদিত ক্যাম্পাস খোলার অভিযোগ ও আদালতে কয়েকটি মামলা বিচারাধীন থাকায় চট্টগ্রামভিত্তিক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সাদার্ন ইউনিভার্সিটির সব ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থী ভর্তি কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)। কিন্তু নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনা করছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। এমনকি দৈনিক পত্রিকায় ভর্তিসংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তিও প্রচার করে প্রতিষ্ঠানটি।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি সূত্র জানায়, বিশ্ববিদ্যালয়টির সব ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ করতে গত ৩০ নভেম্বর ইউজিসির কাছে এক চিঠি পাঠায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। চিঠিতে সাদার্ন বিশ্ববিদ্যালয় ঘিরে উদ্ভূত বিষয়াবলি নিয়ে তদন্ত করে এ বিষয়ে প্রতিবেদন জমা দেয়ার জন্য মঞ্জুরী কমিশনকে নির্দেশনা দেয়া হয়। একই সঙ্গে তদন্ত কার্যক্রম ও মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়টিকে শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ রাখার নির্দেশনা প্রদানেরও অনুরোধ করা হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৩ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়টির রেজিস্ট্রারের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে ভর্তি কার্যক্রম বন্ধ রাখার নির্দেশনা জারি করে ইউজিসি। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়টি ইউজিসিকে চিঠি দিয়ে জানায়, নির্দেশনা অনুযায়ী ভর্তি কার্যক্রম বন্ধ করা হয়েছে।
কিন্তু নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই সম্প্রতি একটি জাতীয় দৈনিকে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়টি। এটি ইউজিসির নজরে এলে বিশ্ববিদ্যালয়টিকে নির্দেশ উপেক্ষার জন্য কারণ দর্শানোর নোটিস পাঠানো হয়েছে। গতকাল ইস্যুকৃত ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী কমিশন থেকে চিঠি মারফত সাদার্ন ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের সব ক্যাম্পাসে ভর্তি কার্যক্রম বন্ধ রাখার নির্দেশনা প্রদান করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে আপনাদের বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক ছাত্রছাত্রী ভর্তি বন্ধ রাখা হয়েছে মর্মে কমিশনকে অবহিত করা হয়েছে। কিন্তু পত্রিকায় আপনাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রী ভর্তিসংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি প্রচার করা হয়েছে। বর্ণিত অবস্থায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসির নির্দেশনা উপেক্ষা করে শিক্ষার্থী ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রচার করা বিষয়ে আগামী ১১/০১/২০১৮ তারিখের মধ্যে কমিশনকে জানানোর জন্য আদিষ্ট হয়ে অনুরোধ করা হলো।’
এ প্রসঙ্গে ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী চিঠি দেয়া হয়েছে। তদন্ত কমিটি বিষয়গুলো যাচাই-বাছাই করে একটি প্রতিবেদন জমা দেবে। সে অনুযায়ী পরবর্তী নির্দেশনা আসবে। কিন্তু নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই তারা ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রচার করেছে। তাই এ বিষয়ে ব্যাখ্যা চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
নিষেধাজ্ঞার মধ্যে ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনার এটি স্বীকার করেছেন সাদার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা সরওয়ার জাহান। এ বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পত্তির মালিকানা ও আউটার ক্যাম্পাসসহ বেশকিছু বিষয়ে মামলা রয়েছে। উচ্চ আদালতে বিচারাধীন ওইসব মামলার কারণেই ইউজিসি আমাদের ভর্তি কার্যক্রম বন্ধ করে। যে সমস্যার কারণে ভর্তি বন্ধ করা হয়, সে সমস্যা এখন আর নেই। তাই ভর্তি কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।
এদিকে সাদার্ন ইউনিভার্সিটি নিয়ে তদন্ত করতে ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক আকতার হোসেনকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ইউজিসি প্রকাশিত সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, সাদার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে তিনটি অনুষদের অধীনে ১৯টি বিভাগ চালু রয়েছে। এসব বিভাগে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী রয়েছেন ৪ হাজার ৮ জন। এর মধ্যে ছাত্রীর সংখ্যা ৯৯৪। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে শিক্ষক রয়েছেন ১৮৪ জন।
আরো পড়ুন: