
সেশনজটে পড়েছেন ৫ হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী এবং শিক্ষক ও শ্রেণীকক্ষসহ নানা সংকটের মধ্য বিশ্ববিদ্যালয়টি, ক্ষুব্ধ অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা।
ময়মনসিংহের ত্রিশালে অবস্থিত জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সেশনজটে পড়েছেন সাড়ে পাঁচ হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী। তাছাড়া শিক্ষক ও শ্রেণীকক্ষসহ নানা সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। এ অবস্থায় জীবন থেকে গুরুত্বপূর্ণ সময় হারিয়ে ক্ষুব্ধ ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা। এদিকে সেশনজট কমিয়ে আনতে চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত এ বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে চারটি অনুষদে ১৯টি বিভাগে ৫ হাজার ৫৪৭ জন শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত। শিক্ষক রয়েছেন দেড় শতাধিক। শুরুর দিকে সেশনজট না থাকলেও এখন চার বছরের স্নাতক কোর্স শেষ করতে সময় লাগছে ছয় বছর। দুই বছরে শেষ হচ্ছে এক বছরের স্নাতকোত্তর কোর্স। সঙ্গত কারণেই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা। তাদের অভিযোগ, শিক্ষকরা ক্লাস নিলেও পরীক্ষার ফল দিতে দেরি করেন। তাছাড়া অভ্যন্তরীণ নানা সমস্যার কারণে তারা সেশনজট থেকে মুক্তি পাচ্ছেন না।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রায় সব বিভাগেই এখন সেশনজট দেখা দিচ্ছে। ইংরেজি, নাট্যকলা, চারুকলা, ইইই, মানবসম্পদ ও অর্থনীতি বিভাগে দু-এক বছরের সেশনজট রয়েছে। এর মধ্যে লোকপ্রশাসন বিভাগে সেশনজট সবচেয়ে কম। বেশি জটে রয়েছে বিজ্ঞান ও প্রকৌশল অনুষদের বিভাগগুলো। বিজ্ঞান অনুষদের অধীনে ইইই বিভাগে এক বছরের জট রয়েছে ২০১২-১৩ সেশনে। এক বছরের জট রয়েছে ২০১৩-১৪ সেশনের মানবসম্পদ বিভাগে।
শুধু সেশনজটই নয়, শিক্ষক ও শ্রেণীকক্ষ সংকটেও ভুগছে দেশের অন্যতম এ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষার্থীরা জানান, একটি বিভাগে আটটি ব্যাচের জন্য মাত্র দুটি করে শ্রেণীকক্ষ রয়েছে। যে কারণে কোনো ব্যাচেই শিডিউল ঠিক রেখে যথাযথভাবে ক্লাস-পরীক্ষা হয় না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের চার অনুষদের বিভিন্ন বিভাগে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সেমিস্টার পদ্ধতিতে সর্বোচ্চ ৯০ দিনের মধ্যে ফল প্রকাশের বাধ্যবাধকতা থাকলেও কোনো কোনো ক্ষেত্রে নয় মাসেও তা প্রকাশ হয় না। সেমিস্টার শেষ করতে ছয় মাসের স্থলে কোনো কোনো বিভাগে সাত-আট মাস সময় লাগিয়ে দেন শিক্ষকরা। অনেক সময়ই ফাইনাল পরীক্ষার পর মিডটার্ম নেয়া হয় বলেও অভিযোগ রয়েছে।
নাম না প্রকাশ করার শর্তে অর্থনীতি বিভাগের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘সেমিস্টারের শুরুতে শিক্ষকরা নিয়মিত ক্লাস নেন না। নির্ধারিত তারিখের প্রায় দুই মাস পরে গিয়ে কেউ কেউ ক্লাস শুরু করেন। ফলে প্রথমেই জটিলতা শুরু হয়ে যায়।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রনিকস অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের বিভাগীয় প্রধান বিজয় কুমার কর্মকার বলেন, ‘আগে সেশনজট ছিল না, এখন হচ্ছে। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে শিক্ষক সংকট। এছাড়া পর্যাপ্ত শ্রেণীকক্ষ নেই। ল্যাবে জনবল সংকট থাকায় চাইলেও সময়মতো সবকিছু করা সম্ভব হয় না।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেকজন শিক্ষক জানান, আন্তরিকতা থাকলে সব সমস্যার মধ্যেও সময়মতো পরীক্ষা নেয়া ও ফল প্রকাশ করা সম্ভব। কিন্তু সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন না করার কারণেই মূলত এ সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) ড. হুমায়ুন কবীর বলেন, সেশনজটের কারণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ সমস্যা নিরসনে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। শিগগিরই সেশনজট থেকে আমরা মুক্তি পাব।
আরও পড়ুন ঃ
প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে মোবাইল নিয়ে কেন্দ্রে প্রবেশ করলে বহিষ্কার