উচ্চ মাধ্যমিক এইচএসসি প্রাণিবিজ্ঞান : তেলাপোকা

তেলাপোকা

প্রারম্ভিক আলোচনা: অধ্যায়টা বড়। এবং কিছুটা বিরক্তিকরও লাগতে পারে। তবু যত্নসহকারে পড়তে হবে, কারণ এখান থেকে প্রায়ই প্রশ্ন আসে।

অধ্যায় সারবস্তু:

তেলাপোকার শ্রেণিবিন্যাস:

পর্ব = Arthodpoda

শ্রেণী = Insecta

বর্গ = Dictyoptera

গোত্র = Blattidae

গণ = Periplaneta

প্রজাতি = Periplaneta Americana

১. আরশোলা বা তেলাপোকা Arthopoda পর্বের একটি আদর্শ উদাহরণ।

২. পৃথিবীতে প্রায় ২৬০০ প্রজাতির আরশোলা পাওয়া গেছে, বাংলাদেশে ৯ প্রজাতির পাওয়া যায়।

৩. সচরাচর যে তেলাপোকা দেখা যায়, তা হল = Periplaneta americana

৪. বই-এ মূলত তিন প্রকার তেলাপোকার মধ্যে পার্থক্য দেওয়া আছে। Periplaneta americana এর পাশাপাশি Blatta orientalis (ওরিয়েন্টাল) এবং Blatella germanica (জার্মান তেলাপোকা)

 

৫. তিন প্রকার আরশোলার মাঝে পার্থক্য: (অতটা গুরুত্বপূর্ণ নয়)

তুলনীয় বিষয় P. americana B. orientalis B.germanica
লম্বা ৪ সেমি (অপেক্ষাকৃত লম্বা) ২.৫ সেমি (অপেক্ষাকৃত খাটো) বেশ ছোট
বর্ণ লালচে বাদামী (যা আমরা সচরাচর দেখে থাকি) কালচে হাল্কা হলদে-বাদামী
ডানা পুরুষ প্রাণীর ডানা লম্বা

স্ত্রী প্রাণীর ডানা ছোট

পুরুষের ক্ষেত্রে অনেক লম্বা, ৮ম দেহখণ্ডক পর্যন্ত;

কিন্তু স্ত্রী তে খুব ছোট

পুরুষের ক্ষেত্রে দেহের দৈর্ঘ্য থেকে সামান্য ছোট;

তবে স্ত্রীতে দেহের সমান

উড়বার ক্ষমতা শুধুমাত্র এর-ই আছে। নেই। নেই।

৬. তেলাপোকা নিশাচর প্রাণী।

৭. এরা সর্বভূক। উদ্ভিদ ও প্রাণিজ, উভয় ধরণের খাবারই গ্রহণ করে।

৮. তেলাপোকার সম্পূর্ণ দেহ কাইটিনযুক্ত কিউটিকল দিয়ে আবৃত।

৯. তেলাপোকার দেহখণ্ডকগুলোকে বলা হয় স্ক্লেরাইট। (স্ক্লেরেনকাইমা-এর কথা মনে করা যেতে পারে, শক্ত দেহ খণ্ড)

১০. স্ক্লেরাইটের পৃষ্ঠদেশীয় অংশকে টার্গাম এবং বক্ষদেশীয় অংশকে বলা হয় স্টার্নাম। (এখানে পাঁজরের হাড় ও স্টার্নামের কথা মনে করা যেতে পারে, বুকের দিকে স্টার্নাম থাকে)

১১. কিউটিকলের প্রস্থচ্ছেদে তিনটি স্তর দেখা যায়। এগুলো যথাক্রমে এপি, এক্সো এবং এন্ডো কিউটিকল নামে পরিচিত।

১২. আরশোলার হাইপোডার্মিস থেকে কিউটিকলের স্তর সৃষ্টি হয়।

১৩. আরশোলার দেহকে তিনটি অঞ্চলে ভাগ করা যায়:

  • মস্তক
  • বক্ষ
  • উদর

১৪. আরশোলার মাথার দু’পাশে দু’টি কালো রঙের পুঞ্জাক্ষি অবস্থিত। প্রতিটি পুঞ্জাক্ষিতে অসংখ্য বহুকোণা প্রকোষ্ঠ দেখা যায়, এদের প্রত্যেকটিকে ওমাটিডিয়াম বলে।

১৫. পুঞ্জাক্ষির দু’পাশে দু’টি সাদা দাগ থাকে, এদের ফেনেস্ট্রা বলে। এরা আদি ওসেলাস বা সরল অক্ষি-এর প্রতিনিধিত্ব করে।

১৬. ওমাটিডিয়ার মাধ্যমে পুঞ্জাক্ষি দর্শনেন্দ্রিয় এবং ফেনেস্ট্রা আলোর তীব্রতা গ্রাহীর কাজ করে।

১৭. তেলাপোকা অ্যান্টেনা ব্যবহার করে স্পর্শ, ঘ্রাণ ও শব্দ তরঙ্গ অনুভব করে।

১৮. আরশোলার মুখ-উপাঙ্গ:

· Labrum বা ঊর্ধ্ব ওষ্ঠ (Lip থেকে Labrum)

· Mandible বা চোয়াল

· প্রথম Maxilla

· দ্বিতীয় Maxilla বা Labium বা অধঃওষ্ঠ (Lip থেকে Labium)

· Hypopharynx বা উপজিহ্বা

১৯. বক্ষ তিন খণ্ডে বিভক্ত। Pro+thorax = অগ্রবক্ষ, Meso+thorax = মধ্যবক্ষ, Meta+thorax = পশ্চাৎবক্ষ

২০. মধ্য ও পশ্চাৎবক্ষের পিঠে একজোড়া করে মোট দু’জোড়া ডানা রয়েছে

২১. প্রত্যেক খণ্ডের এক জোড়া করে মোট ৩ জোড়া পা রয়েছে।

২২. পা-এর পাঁচটি অংশ রয়েছে: কক্সা, ট্রোক্যান্টার, এরপর ফিমার (মানুষের যেমন থাকে), টিবিয়া (মানুষের টিবিয়া-ফিবুলা) এবং পাঁচটি ক্ষুদ্র অংশ বিশিষ্ট টার্সাস (মানুষের ক্ষেত্রে = টার্সাল)

২৩. উদর দশটি খণ্ডকে গঠিত:

· স্ত্রী আরশোলার অষ্টম ও নবম খণ্ড দু’টি সপ্তম খণ্ডের নিচে ঢাকা থাকে।

· দশম খণ্ডে পায়ু সারকি থাকে

· পুরুষ আরশোলার নবম খণ্ডের উভয় পাশে কুর্চ বা অ্যানাল স্টাইল থাকে, যেটি দিয়ে পুরুষ আরশোলা চেনা যায়।

· ৫ম ও ৬ষ্ঠ খণ্ডের দু’পাশে একটি করে গ্রন্থি মোট ২টি গ্রন্থি আছে। এ থেকে তীব্র গন্ধ নিঃসৃত হয়।

 

২৪. পুরুষ ও স্ত্রী আরশোলার মাঝে পার্থক্য:

তুলনীয় বিষয় পুরুষ আরশোলা স্ত্রী আরশোলা
আকার অপেক্ষাকৃত লম্বা ও সরু খাটো ও চওড়া
ডানা উদর অপেক্ষা বড় উদরের পেছনে বাড়ানো নয়, বলা যায় সমান
জননরন্ধ্র নবম ও দশম খণ্ডের সংযোগস্থলে পুং জননরন্ধ্র আছে। অষ্টম খণ্ডের অঙ্কীয়দেশের মাঝখানে স্ত্রী জননরন্ধ্র থাকে।
সপ্তম খণ্ডক সাধারণ আকৃতির নৌকাকৃতি ধারণ করে জননথলি তৈরি করে।

 

আরশোলার পৌষ্টিকতন্ত্র:

২৫. আরশোলায় এক জোড়া লালা গ্রন্থি রয়েছে।

২৬. পৌষ্টিক নালী তিনটি প্রধান অংশে বিভক্ত:

· স্টোমোডিয়াম বা অগ্রান্ত্র (স্টোম্যাটা বা পত্ররন্ধ্রের কথা মনে করা যেতে পারে, স্টোমা = মুখ)

· মেসেন্টেরন বা মধ্যান্ত্র

· প্রোক্টোডিয়াম বা পশ্চাদান্ত্র

২৭. স্টোমোডিয়াম-এর অংশসমূহ:

· মুখছিদ্র

· মুখবিবর

· গলবিল

· অন্ননালী

· ক্রপ (উদরীয় ৩য় বা ৪র্থ খণ্ড পর্যন্ত বিস্তৃত)

· গিজার্ড (৬ টি করে দাঁত, অনুলম্ব ভাঁজ, প্যাড ইত্যাদি থাকে)

২৮. মেসেন্টেরন এর অংশ সমূহ:

· গিজার্ডের শেষ প্রান্ত ও মেসেন্টেরনের সংযোগস্থলে ৭-৮ টি বদ্ধ সরু হেপাটিক সিকা থাকে।

· মেসেন্টেরনের শেষ প্রান্তে অসংখ্য হলুদ রঙের মালপিজিয়ান নালিকা দেখা যায়। (মার্সেলো মালপিজি নামে এক বিজ্ঞানীর নামে নাম)

২৯. প্রোক্টোডিয়াম-এর অংশ সমূহ:

· ইলিয়াম (ইলিয়াম ও কোলনের সংযোগস্থলে ছয়টি ত্রিকোণাকার কপাটিকা থাকে।)

· কোলন

· রেকটাম (এখানে ৬ টি রেকটাম প্যাপিলা আছে)

· পায়ুছিদ্র

৩০. লালার মিউসিন খাদ্যবস্তুকে পিচ্ছিল করে এবং জাইমেজ এনজাইম খাদ্য পরিপাকে সাহায্য করে।

৩১. ক্রপে (পাকস্থলী) প্রথম পরিপাক শুরু হয়। লালার এনজাইমে অ্যামাইলেজ, মল্টেজ ও ল্যাকটেজ এনজাইম থাকে।

৩২. বিভিন্ন এনজাইমের কাজ:

· অ্যামাইলেজ = শর্করা থেকে মলটোজ

· প্রোটিয়েজ = প্রোটিন কে ভেঙ্গে এর একক অণু অ্যামাইনো এসিড

· মলটেজ = মলটোজ থেকে গ্লুকোজ

· ইনভারটেজ = সুক্রোজ থেকে গ্লকোজ

· লাইপেজ = লিপিড জাতীয় খাদ্য থেকে ফ্যাটি এসিড ও গ্লিসারল

৩৩. বেশীরভাগ খাদ্যবস্তুই মেসেন্টেরনের কোষীয় প্রাচীরে পরিশোষিত হয়। তবে গ্লুকোজ শোষিত হয় হেপাটিক সিকা (গিজার্ড ও মেসেন্টেরনের সংযোগস্থলে অবস্থিত) তে।

রক্ত-সংবহনতন্ত্র:

৩৪. চারটি প্রধান অংশে ভাগ করা যায়। যথা-

· হিমোসিল

· হিমোলিম্ফ বা রক্ত

· পৃষ্ঠীয় বাহিকা

· সহায়ক স্পন্দনশীল অঙ্গ

৩৫. হিমোসিল হল পেরিটোনিয়ামের আবরণ না থাকা গহ্বর, যাতে হিমোলিম্ফ থাকে।

৩৬. তিনটি প্রকোষ্ঠ বা সাইনাস থাকে:

· পেরিকার্ডিয়াল সাইনাস : এতে হৃদযন্ত্র অবস্থান করে। (কার্ডিয়াল)

· পেরিভিসেরাল সাইনাস : এটি পৌষ্টিকনালীকে ধারণ করে।

· পেরিনিউরাল সাইনাস : এতে স্নায়ুরজ্জু অবস্থান করে।

৩৭. তিনটি প্রকোষ্ঠের মাঝে দু’টি ছিদ্রযুক্ত পর্দা থাকে, ফলে রক্ত এক প্রকোষ্ঠ বা সাইনাস থেকে অন্য প্রকোষ্ঠ বা সাইনাসে যেতে পারে।

৩৮. পৃষ্ঠীয় পর্দার উপরে পেরিকার্ডিয়াল, পৃষ্ঠীয় পর্দার নিচে পেরিভিসেরাল এবং অঙ্কীয় পর্দার নিচে পেরিনিউরাল সাইনাস অবস্থিত।

৩৯. আরশোলার রক্ত বা হিমোলিম্ফ = বর্ণহীন প্লাজমা + নয় মিলিয়ন হিমোসাইট, আরশোলার রক্ত বর্ণহীন।

৪০. সংবহনকালে রক্ত সরাসরি দেহ কলার সংস্পর্শে আসে, তাই এদের রক্ত সংবহনতন্ত্র মুক্ত প্রকৃতির।

৪১. হিমোলিম্ফে অক্সিজেন পরিবাহিত হতে পারে না, তবে কার্বন ডাই অক্সাইড বহন করে।

৪২. আরশোলার হিমোসাইট তিন ধরনের :

· প্রো-হিমোসাইট

· ট্রানজিশনাল হিমোসাইট

· বৃহদাকার হিমোসাইট

তবে P. Americana তেলাপোকাতে কেবল দু’রকম হিমোসাইট দেখা যায়: প্লাজমোসাইট এবং কোয়াগুলোসাইট বা সিস্টোসাইট

৪৩. পৃষ্ঠীয় বাহিকা বা ডর্সাল ভেসেল : ২ টি অংশে বিভক্ত

ক) অ্যাওর্টা

খ) হৃদযন্ত্র

৪৪. হৃদযন্ত্রের বৈশিষ্ট্য:

· ১৩ টি ক্রমান্বয়ে সাজানো ফানেলাকার কুঠুরীতে বিভক্ত। ৩ টি কুঠুরী বক্ষে ও বাকী ১০ টি উদরে অবস্থিত।

· ১৩ টি সাজানো কুঠুরীর মাঝে ১২ জোড়া কপাটিকাযুক্ত ছিদ্র আছে, এদের নাম অন্তর্বাহী অস্টিয়া।

· রক্ত সংবহনে সংকোচন প্রসারণে পেরিকার্ডিয়াল সাইনাস প্রাচীরের সাথে যুক্ত “অ্যালারী পেশী” গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ১২ জোড়া কপাটিকার মত পেশীর সংখ্যাও ১২ টি।

৪৫. আরশোলার হৃদযন্ত্রের স্পন্দন প্রতি মিনিটে ১০০ থেকে ১১০ বার, দেহে একবার রক্ত সংবহন সম্পন্ন হতে ৩০-৬০ মিনিট সময় লাগে।

৪৬. রক্ত প্রবাহের ধারা:

হৃদযন্ত্র > ডর্সাল অ্যাওর্টা > মস্তিষ্ক গহ্বর > পেরিভিসেরাল এবং পেরিনিউরাল সাইনাস > পেরিকার্ডিয়াল সাইনাস > হৃদযন্ত্র

আরশোলার শ্বসনতন্ত্র:

৪৭. ট্রাকিয়া নামক এক সূক্ষ্ম শ্বাসনালীর শাখা-প্রশাখার মাধ্যমে সরাসরি দেহকোষে অক্সিজেন প্রবেশ করে।

৪৮. ট্রাকিয়ালতন্ত্র চারটি অঙ্গ নিয়ে গঠিত:

· দশজোড়া স্পাইরাক্‌ল বা শ্বাসরন্ধ্র (স্পিরিট = আত্মা, বাতাস > স্পাইরাক্‌ল)

· অসংখ্য ট্রাকিয়া বা শ্বাসনালী

· অসংখ্য ট্রাকিওল কোষ

· অসংখ্য ট্রাকিওল

৪৯. বক্ষে অগ্র ও মধ্য বক্ষ-এর সংযোগস্থলে এবং মধ্য ও পশ্চাৎ বক্ষ-এর সংযোগস্থলে দুই জোড়া স্পাইরাক্‌ল থাকে, বাকি আট জোড়া থাকে উদরীয় খণ্ডকে।

৫০. স্পাইরাক্‌ল বা শ্বাসরন্ধ্র কপাটিকা ও রোমযুক্ত, এর বেড়ে পেরিট্রিন নামক কাইটিন-এর আবরণ রয়েছে।

৫১. প্রতিটি শ্বাসরন্ধ্র বা স্পাইরাক্‌ল অ্যাট্রিয়াম নামে একেকটি থলিকার মত গহ্বরে উন্মুক্ত।

৫২. আরশোলার প্রধান শ্বসন অঙ্গ হল ট্রাকিয়া বা শ্বাসনালী। এর তিনটি স্তর রয়েছে:

· অন্তঃস্থ কাইটিনময় ইন্‌টিমা

· মধ্যস্থ এপিথেলিয়াম

· বহিঃস্থ ভিত্তি ঝিল্লী

৫৩. ইন্টিমায় টিনিডিয়া নামক সর্পিল বলয় তৈরি হয়, যার ফলে ট্রাকিয়া কখনও চুপসে যায় না।

৫৪. অনুদৈর্ঘ্য ট্রাকিয়াল কাণ্ড তিন জোড়া, এবং অনুপ্রস্থ ট্রাকিয়াল কাণ্ড আট জোড়া।

৫৫. ট্রাকিওল কোষের অন্য নাম প্রান্তীয় কোষ।

৫৬. ট্রাকিওল খুব সূক্ষ্ম (০.২ µm থেকে ০.৩ µm ব্যাস)। এর প্রাচীর কাইটিন এবং ইন্টিমা বিহীন। শেষ প্রান্তে প্রান্তীয় থলি থাকে। এটি তরলপূর্ণ।

 

৫৭. ট্রাকিয়া ও ট্রাকিওলের মাঝে পার্থক্য:

তুলনীয় বিষয় ট্রাকিয়া ট্রাকিওল
অন্তঃপ্রাচীরে ইনটিমার উপস্থিতি থাকে। থাকে না। তাই চুপসে যায়।
অভ্যন্তর ভাগ বায়ুপূর্ণ তরলপূর্ণ
ব্যাস স্বভাবতই ট্রাকিওলের চেয়ে বড় অনেক ক্ষুদ্র
বর্ণ রূপার মত চকচকে সাদাটে
অবস্থান হিমোসিলে দেহকোষে
উৎপত্তি অ্যাট্রিয়াম ট্রাকিওল কোষ থেকে
কাজ স্পাইরাক্‌ল থেকে ট্রাকিওল কোষ পর্যন্ত অক্সিজেন ও কার্বনডাইঅক্সাইডের বিনিময় ট্রাকিওল কোষ ও দেহকোষের মধ্যে ব্যাপনের মাধ্যমে গ্যাসের বিনিময়

৫৮. প্রথম বক্ষীয় এবং প্রথম উদরীয় স্পাইরাক্‌ল সবসময় খোলা থাকে, বাকীগুলো পেশীর নিয়ন্ত্রণে খোলা বা বন্ধ হয়।

আরশোলার রেচনতন্ত্র:

৫৯. আরশোলার নাইট্রোজেন জাত বর্জ্য পদার্থ “ইউরিক এসিড”

৬০. আরশোলার প্রধান রেচন অঙ্গ “মালপিজিয়ান নালিকা”।

৬১. মালপিজিয়ান নালিকার অন্তর্গাত্র ঝাড়ুর মত ব্রাশ বর্ডার সহ বড় ঘনক্ষেত্রাকার গ্রন্থিময় এপিথেলীয় কোষে আবৃত।

৬২. ইউরিকোস গ্রন্থি রেচনদ্রব্য শোষণ করে ইউরিক এসিড রূপে জমা করে।

৬৩. নেফ্রোসাইট পেরিকার্ডিয়াল সাইনাসে অবস্থান করে।

৬৪. তিনটি প্রধান অংশে বিভক্ত: ক) কেন্দ্রীয়, খ) প্রান্তীয়, গ) স্বয়ংক্রিয় স্নায়ুতন্ত্র

৬৫. আরশোলার সংবেদী অংশকে চার ভাগে ভাগ করা যায়:

ক) ফটোরিসেপ্টর (আলোক সংবেদী)

খ) মেকানোরিসেপ্টর (স্পর্শ, চপা, শব্দ, বায়ুপ্রবাহ ইত্যাদি সংবেদী)

গ) থার্মোরিসেপ্টর (তাপ সংবেদী)

ঘ) কেমোরিসেপ্টর (স্বাদ সংবেদী)

৬৬. পুঞ্জাক্ষি প্রায় দুই হাজার ষড়ভুজাকার দর্শন একক বা ওমাটিডিয়া নিয়ে গঠিত।

 

৬৭. ওমাটিডিয়াম এর বিভিন্ন অংশ:

· কর্ণিয়া : লেন্সের মত কাজ করে। (সৃষ্ট কর্ণিয়াজেন কোষ হতে)

· ক্রিস্টালাইন কোন : এটি প্রতিসরণশীল অঙ্গ হিসেবে আলো প্রবেশে সাহায্য করে। (ক্রিস্টালাইন কোন কোষ হতে সৃষ্ট)

· রঞ্জক আবরণ বা আইরিস পিগমেন্ট আবরণ : আলোর তীব্রতা অনুসারে পরিবর্তিত হয়। (মানুষের চোখের আইরিশের মত)

· র‍্যাবডোম : আলো গ্রহণ করে ( ৭ টি রেটিনুলার কোষ হতে সৃষ্ট) (মানুষের চোখের রেটিনার মত)

· রেটিনাল সিথ : ওমাটিডিয়ামগুলোকে পরস্পর থেকে পৃথক রাখে (সিথ বা sheath বলতে পৃথককারী আবরণ বোঝায়)

৬৮. আরশোলা স্তিমিত আলোয় সুপারপজিশন এবং উজ্জ্বল আলোয় এপোজিশন প্রতিবিম্ব গঠন করে দর্শন সম্পন্ন করে।

(স্তিমিত আলোতে আলোকরশ্মির পরিমাণ কম থাকে, তাই একটি ওমাটিডিয়ামের কর্ণিয়া দিয়ে তীর্যক ভাবে প্রবেশকৃত আলো ভিন্ন ওমাটিডিয়ামের র‍্যাবডোম (রেটিনার মত আলোকগ্রাহী)-এ পড়ে। এভাবে অল্প আলোকরশ্মি থাকলেও অনেক সংবেদন গ্রহণ করতে পারে। এজন্যই সুপারপজিশন। কিন্তু উজ্জ্বল আলোতে অতিরিক্ত সংবেদন দরকার নেই, সাধারণভাবে একটি কর্ণিয়া দিয়ে প্রবেশকৃত আলো শুধুমাত্র ওই ওমাটিডিয়ামের র‍্যাবডোমেই পড়ে, তাই একে এপোজিশন প্রতিবিম্ব বলে।)

৬৯. এপোজিশন প্রতিবিম্ব কে মোজাইক প্রতিবিম্ব বলা হয়, কারণ প্রতিটি ওমাটিডিয়ামে কেবল নিজস্ব কর্ণিয়া থেকে আগত আলো র‍্যাবডোমে পড়ে। পাশের কোন ওমাটিডিয়াম থেকে কোন আলো ঢুকে না, প্রতিটি ওমাটিডিয়াম আলাদা আলাদা। এজন্য মোজাইক প্রতিবিম্ব বলা হয়।

 

৭০. সুপারপজিশন ও এপোজিশন প্রতিবিম্বের মধ্যে পার্থক্য:

তুলনীয় বিষয় সুপারপজিশন এপোজিশন
আলোক তীব্রতা স্তিমিত আলোকে উজ্জ্বল আলোকে
আইরিশ পর্দার রঞ্জক পদার্থ সঙ্কুচিত হয় (এর ফলেই পাশের ওমাটিডিয়াম থেকে আগত রশ্মি প্রবেশ করতে পারে) বিস্তৃত থাকে
আলোকরশ্মির প্রকৃতি উলম্ব এবং তীর্যক উভয় ধরনের শুধুমাত্র উলম্ব রশ্মি
প্রতিবিম্বের প্রকৃতি অস্পষ্ট কিন্তু সামগ্রিক স্পষ্ট কিন্তু খণ্ডিত (মোজাইকের মত)

৭১. প্রতিটি অ্যান্টেনার গোড়ায় অবস্থিত একটি করে সাদা রঙের ক্ষুদ্র অংশকে ওসেলাস বলে। (ল্যাটিন ভাষায় ওসেলাস মানে ছোট চোখ) এটি একক প্রতিবিম্ব সৃষ্টি করে।

৭২. পুঞ্জাক্ষি ও সরলাক্ষির মধ্যে পার্থক্য:

তুলনীয় বিষয় পুঞ্জাক্ষি সরলাক্ষি
যেখানে পাওয়া যায় আর্থ্রোপোডভুক্ত প্রাণীতে উঁচু শ্রেণীর প্রাণীতে
অবস্থান মাথার পৃষ্ঠদেশে মাথার দু’পাশে
লেন্স নেই, কর্ণিয়া লেন্সের কাজ করে থাকে

৭৩. ৪র্থ ও ৫ম উদরীয় খণ্ডকের প্রতিপাশে পিঠের দিকে একটি করে শুক্রাশয় থাকে।

৭৪. ৯ম ও ১০ম উদরীয় খণ্ডকের মাঝখানে এক ক্ষুদ্র প্রকোষ্ঠ থাকে, একে জনন থলি বলে। ক্ষেপননালী দিয়ে শুক্রাণু জনন থলিতে আসে।

৭৫. মাশরুম বা ইউট্রিকুলার গ্রন্থি শুক্রাণুর পুষ্টি দানে এবং স্পার্মাটোফোর গঠনে সাহায্য করে।

৭৬. স্ত্রী আরশোলার ক্ষেত্রে ৮ম উদরীয় খণ্ডকে জনন থলি থাকে। (পুরুষদের ক্ষেত্রে ৯ম ও ১০ম এর মাঝখানে)

৭৭. কোলেটেরিয়াল গ্রন্থি স্ত্রীজননতন্ত্রের একটি গ্রন্থি, অন্যদিকে ইউট্রিকুলার বা মাশরুম গ্রন্থি এবং কংগ্লোবেট গ্রন্থি পুংজননতন্ত্রের গ্রন্থি।

৭৮. স্ত্রী আরশোলা পুরুষ আরশোলোকে আকৃষ্ট করার জন্য ফেরোমোন ক্ষরণ করে।

৭৯. নিষেকের সময় ১৬ টি ডিম জনন থলিতে আসে ও নিষিক্ত হয়।

৮০. নিষিক্ত ডিম্বাণুর উপর কোলেটেরিয়াল গ্রন্থি-র ক্ষরণ জমা হয়ে আবরণ গঠন করে, কালচে বাদামী রংয়ের উওথেকায় পরিণত হয়।

৮১. উওথেকা নির্মাণে ২৪ ঘণ্টা সময় লাগে। স্ত্রী আরশোলা উওথেকা ৪ ঘণ্টা – ৪ দিন পর্যন্ত সেটি বহন করে।

 

৮২. আরশোলার রূপান্তর :

· আরশোলার রূপান্তর হেমি-মেটাবোলাস ধরনের। নিম্ফ থেকে পূর্ণাঙ্গ আরশোলা বা ইমাগো তে রূপান্তরিত হবার আগ পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ প্রাণীর মতোই মুখোপাঙ্গ ও পুঞ্জাক্ষি থাকে, তবে ডানা ও পরিণত জননাঙ্গ থাকে না। এজন্যই এ রূপান্তর কে অসম্পূর্ণ বা ক্রমান্বয়িক রূপান্তর বলে।

· জাইগোট হতে ক্লিভেশন বা বিভাজন হয়ে হয়ে ভ্রূণ তৈরি করে। ভ্রূণ পরিণত হয়ে শিশু আরশোলা বের হয়ে আসে উওথেকা ফেটে, যার নাম নিম্ফ (Nymph)।

· নিম্ফের বৃদ্ধির জন্য খোলস মোচনের ক্ষেত্রে অগ্রবক্ষীয় গ্রন্থি-র “একডাইসন” হরমোনের প্রভাব রয়েছে।

· পরিত্যক্ত খোলসকে বলঅ হয় এক্সুভি।

· দুই খোলস মোচনের অন্তবর্তী কালকে বলে “স্টেডিয়াম”।

· আরশোলার নিম্ফ ১১-১২ বার খোলস বদলায়।

· নিম্ফ থেকে পূর্ণাঙ্গ আরশোলা বা ইমাগো হতে ৯ মাস বা তারও বেশি সময় লাগে।

 

৮৩. পূর্ণাঙ্গ তেলাপোকা ও নিম্ফ এর মধ্যে পার্থক্য:

তুলনীয় বিষয় পূর্ণাঙ্গ তেলাপোকা নিম্ফ
দেহের রং গাঢ় বাদামী হালকা বাদামী
ডানার সংখ্যা দুই জোড়া (মধ্য ও পশ্চাৎবক্ষে) নেই
প্রজননতন্ত্র উপস্থিত অনুপস্থিত

প্রাণিবিজ্ঞান সকল অধ্যায় দেখতে এখানে যান

Leave a Reply

স্যার, কিভাবে আপনাকে সাহায্য করতে পারি?

Click one of our representatives below

Customer Support
Customer Support

Syeda Nusrat

I am online

I am offline

Technical Support
Technical Support

Ariful Islam Aquib

I am online

I am offline