উচ্চ মাধ্যমিক এইচএসসি প্রাণিবিজ্ঞান : জীনতত্ত্ব

জীনতত্ত্ব

প্রারম্ভিক আলোচনা: অধ্যায়টা গুরুত্বপূর্ণ। অধ্যায়টি উদ্ভিদবিজ্ঞানেও আছে। মূল বিষয়গুলো মোটামুটিভাবে একই। বর্ণান্ধতার ব্যাপারগুলো ভালো ভাবে বুঝে নেওয়া প্রয়োজন।

অধ্যায় সারবস্তু:

১. বাবা-মা এর থেকে সৃষ্ট সন্তানের মাঝে যে কিছুটা পরিবর্তন দেখা যায়, একে পরিবৃত্তি (Variation) বলে।

২. জীনতত্ত্বে ব্যবহৃত কিছু টার্ম:

· লোকাস: ক্রোমোসোমের পুরোটা জুড়েই কিন্তু জিন থাকে না, পুরো ক্রোমোজোমের অল্প কিছু অংশে বিচ্ছিন্নভাবে জিন অবস্থান করে। তবে এই জিনগুলোর একটা নির্দিষ্ট অবস্থান আছে ক্রোমোসোমে, একটা নির্দিষ্ট প্রজাতির জন্য। এই যে জিনের অবস্থান, বা লোকালিটি, একেই লোকাস বলে।

· অ্যালিল: অ্যালি মানে মিত্র। একটা ক্রোমোসোমের একটা নির্দিষ্ট লোকাসে কোন একটা বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণকারী জিন থাকে। এক জোড়া একই রকম ক্রোমোসোমের (মানুষের যেমন ২২ জোড়া ক্রোমোসোম ও XY বা XX ক্রোমোসোম) একই লোকাসে ঠিক একই জিন থাকতে পারে বা একটু পরিবর্তিত জিন থাকতে পারে। এই একই লোকাসে অবস্থিত জিনজোড়ার একটিকে অপরটির অ্যালিল বলে।

· হোমোজাইগাস: যদি অ্যালিল দু’টি একই হয় তাহলে হোমো।

· হেটারোজাইগাস: যদি অ্যালিল দু’টি ভিন্ন হয় তাহলে হেটারো।

· ফিনোটাইপ হল বাহ্যিক বৈশিষ্ট্য, আর জিনোটাইপ হল যে জিনের কারণে কোন ফিনোটাইপ পাওয়া যায়, সেই জিনযুগলের গঠন।

· টেস্ট ক্রস করা হয় বিশুদ্ধ প্রচ্ছন্ন বৈশিষ্ট্য থাকা পিতৃ-মাতৃ বংশীয় জীবের সাথে F1 বা F2 বংশধরদের সাথে।

· ব্যাক ক্রস হয় যে কোন এক পিতৃ-মাতৃ বংশীয় জীবের সাথে, এমন না যে শুধু হোমাজাইগাস প্রচ্ছন্ন বৈশিষ্ট্যধারীর সাথে। এজন্যই সকল টেস্ট ক্রস-ই ব্যাক ক্রস, কিন্তু সকল ব্যাক ক্রস টেস্ট ক্রস না।

৩. গিনিপিগের ক্ষেত্রে প্রকট বৈশিষ্ট্য হল কালো গায়ের রঙ ও ছোট লোম এবং প্রচ্ছন্ন বৈশিষ্ট্য হল বাদামী গায়ের রঙ ও লম্বা লোম। (মটরশুঁটি গাছের ক্ষেত্রে লম্বা কাণ্ড প্রকট বৈশিষ্ট্য, কিন্তু এক্ষেত্রে লম্বা লোম প্রচ্ছন্ন বৈশিষ্ট্য)

৪. ফরাসি জিনতত্ত্ববিদ ক্যুনো প্রথম ইঁদুরের ক্ষেত্রে লিথাল বা মারণ জীনের উপস্থিতি লক্ষ করেন।

৫. লিথাল জিনের প্রভাবে ফিনোটাইপিক অনুপাত ৩:১ এর বদলে ২:১ হয়।

৬. যে জিন অন্য জিনকে এপিস্ট্যাসিস করে, অর্থাৎ থামিয়ে দেয় বা বাধা দেয়, সেই জিনকে বলা হয় “এপিস্ট্যাটিক” জিন। অন্যদিকে যে জিনের এপিস্ট্যাসিস ঘটে তাকে বলে “হাইপোস্ট্যাটিক” জিন।

C= (Color producing) জিন হাইপোস্ট্যাটিক

I= (Inhibitory বা বাধাদানকারী) জিন এপিস্ট্যাটিক

৭. সাদা লেগহর্ণ-এর জিনোটাইপ CCII এবং সাদা ওয়াইনডট এর জিনোটাইপ ccii । (নাম বড়, কিন্তু বর্ণ ছোট)

৮. পরিপূরক জিনের ক্ষেত্রে জিনোটাইপ দুইটি জিনের-ই প্রকট অ্যালিলের প্রয়োজন হয় ফিনোটাইপিক বৈশিষ্ট্য প্রকাশিত হবার জন্য। এজন্য CCpp বা ccPP জিনোটাইপের ফুল সাদা, কিন্তু C_P_ জিনোটাইপের ফুল বেগুনি।

৯. এপিস্ট্যাসিসের ক্ষেত্রে অনুপাত = ১৩: ৩

পরিপূরক জিনের ক্ষেত্রে অনুপাত = ৯ : ৭

১০. মানুষে প্রায় ৬০ টি সেক্স-লিংকড জিন পাওয়া গেছে।

 

১১. কিছু গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যের নাম ও লক্ষণ:

বৈশিষ্ট্যের নাম

লক্ষণ

হিমোফিলিয়া (হিম হল হিমোগ্লোবিনের অংশ)

রক্ত জমাট বাধা বা তঞ্চনে অস্বাভাবিক বিলম্ব, ক্ষতস্থান থেকে অবিরাম রক্ত ক্ষরণ।

এক্টোডার্মাল ডিসপ্লেসিয়া

ঘামগ্রন্থি ও দাঁতের অনুপস্থিতি (ঘামগ্রন্থি এক প্রকার ত্বকীয় গ্রন্থি, দাঁতও এক্টোডার্মাল ভ্রূণস্তর থেকে উৎপত্তি লাভ করে)

স্প্যাজটিক প্যারাপেলাজিয়া

শরীরের নীচের দিকের অংশ আংশিক অবশ হয় ও অনিয়ত কাঠিন্য দেখা দেয়।

অপটিক অ্যাট্রফি

অপটিক স্নায়ুর ক্ষয়িষ্ণুতা

জুভেনাইল গ্লুকোমা

অক্ষিগোলকের কাঠিন্য

হোয়াইট ফোরলক

মাথার সামনে একগোছা সাদা চুল

মায়োপিয়া

দৃষ্টিক্ষীণতা

মাসকুলার ডিসট্রফি

মাসল বা পেশির জটিলতা, দশ বছর বয়সেই শিশুর চলন শক্তি লোপ পায়।

১২. কোণ কোষ তিনটি রঙের প্রতি সংবেদনশীল= লাল, সবুজ ও বেগুনি (তিনটি মৌলিক রং :লাল, হলুদ, নীল” না, খেয়াল রাখা প্রয়োজন)।

১৩. সেক্স লিংকড যে কোন রোগের ক্ষেত্রে পুরুষের আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা অনেক বেশি, কারণ একটি ত্রুটিযুক্ত X থাকলেই পুরুষ রোগে আক্রান্ত হয়।

 

১৪. বর্ণান্ধতার সম্পর্ক:

  • বর্ণান্ধ মহিলা ও স্বাভাবিক দৃষ্টিসম্পন্ন পুরুষ হলে:
  • স্বাভাবিক দৃষ্টিসম্পন্ন পুরুষের যে X ক্রোমোসোম আছে, তা ঠিক আছে, তাই মেয়েরা স্বাভাবিক হবে, তবে বর্ণান্ধতার জিন বহনকারী হবে।
  • এখানে মহিলার উভয় X ক্রোমোজোমই ত্রুটিযুক্ত, তাই XY জিনোমের ছেলে সন্তান অবশ্যই বর্ণান্ধ হবে।
  • স্বাভাবিক কিন্তু বর্ণান্ধতার জিন বহনকারী মহিলা এবং বর্ণান্ধ পুরুষ হলে ৫০% সম্ভাবনা থাকে ছেলে বা মেয়ের বর্ণান্ধ হবার। কারণ:
  • মহিলার একটি X ক্রোমোসোম ঠিক আছে, কিন্তু আরেকটি ত্রুটিযুক্ত। আর পুরুষের থাকা একমাত্র X ক্রোমোজোমটিই ত্রুটিযুক্ত। তাই দুই মেয়ের মধ্যে একজন স্বাভাবিক কিন্তু বর্ণান্ধতার জিন বহনকারী ও আরেকজন বর্ণান্ধ হবার কথা।
  • একই ভাবে দুই ছেলের মধ্যে একজন স্বাভাবিক ও একজন বর্ণান্ধ হবার কথা।
  • স্বাভাবিক কিন্তু বর্ণান্ধতার জিন বহনকারী মহিলা ও স্বাভাবিক পুরুষের ক্ষেত্রে কোন মেয়েই বর্ণান্ধ হবে না, তবে ছেলের ৫০% সম্ভাবনা থেকে যাবে, যেহেতু মহিলা বর্ণান্ধতার জিন বহন করছে।
  • সম্পূর্ণ স্বাভাবিক মহিলা ও বর্ণান্ধ পুরুষের ক্ষেত্রে সন্তানদের কেউই বর্ণান্ধ হবে না। তবে মেয়েরা সবাই বর্ণান্ধতার জিন বহনকারী হবে।

প্রাণিবিজ্ঞান সকল অধ্যায় দেখতে এখানে যান

Leave a Reply

স্যার, কিভাবে আপনাকে সাহায্য করতে পারি?

Click one of our representatives below

Customer Support
Customer Support

Syeda Nusrat

I am online

I am offline

Technical Support
Technical Support

Ariful Islam Aquib

I am online

I am offline