পরিসংখ্যান অনুযায়ী বর্তমানে সারা বিশ্বজুড়ে প্রায় ১৫ লক্ষ ছাত্রছাত্রী বিদেশে পড়াশুনা করছে। এর মধ্যে ১৩৮০৭৫ (১ মে, ২০১২ অনুযায়ী) জন ছাত্রছাত্রী জাপানে পড়াশোনা করছে। অর্থাৎ বৈদেশিক ছাত্রছাত্রীদের প্রায় ৯.৫ শতাংশই জাপানে অধ্যয়নরত জাপানে উচ্চ শিক্ষা গ্রহনের এই ব্যাপক চাহিদার কারণ হচ্ছে জাপানে ছাত্রছাত্রীরা যুগোপযোগী সর্বাধুনিক প্রযুক্তি এবং জ্ঞান অর্জন করতে পারে যেটি ২য় বিশ্বযুদ্ধোত্তর জাপানের বিস্ময়কর অর্থনৈতিক উন্নতির মুল হাতিয়ার হিসাবে কাজ করেছে। ইলেকট্রনিক্স থেকে শুরু করে মেডিসিন, সাহিত্য থেকে শুরু করে ব্যবসা প্রশাসন যেকোন বিষয়েই জাপানী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়াশুনার বিস্তৃত সুযোগ রয়েছে। তাই অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশ থেকেও প্রতিবছর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ছাত্রছাত্রী জাপানে পড়াশুনা করতে যাচ্ছে।
জাপানে শিক্ষা ব্যবস্থা : জাপানে পাঁচ ধরনের উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নের সুযোগ রয়েছে। এগুলো হচ্ছে-
গ্র্যাজুয়েট বিশ্ববিদ্যালয়
আন্ডার গ্র্যাজুয়েট বিশ্ববিদ্যালয়
কলেজ অব টেকনোলজি
জাপানীজ ষ্টাডিজ
প্রফেশনাল ট্রেইনিং স্কুল
কোর্সের মেয়াদ:
আন্ডারগ্র্যাজুয়েট পর্যায়ে বেশীরভাগ কোর্সের মেয়াদ ৪ বৎসর। তবে মেডিসিন, ডেন্টিস্ট্রি ও ভেটেরেনারী সায়েন্সের ক্ষেত্রে এর মেয়াদ ৬ বৎসর।
পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কোর্সের মেয়াদ ২ বৎসর।
ডক্টরেট ডিগ্রীর কোর্সের মেয়াদ ৩ বৎসর। তবে মেডিসিন, ডেন্টিস্ট্রি ও ভেটেরেনারী সায়েন্সের ক্ষেত্রে এর মেয়াদ ৪ বৎসর হয়ে থাকে।
শিক্ষাবর্ষ:
জাপানী উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে শিক্ষাবর্ষ শুরু হয় এপ্রিল মাস থেকে যেটি পরবর্তী মার্চে শেষ হয়। সাধারনত ১টি শিক্ষাবর্ষ ২টি সেমিস্টারে বিভক্ত থাকে- এপ্রিল-সেপ্টেম্বর এবং অক্টোবর থেকে মার্চ।
আবেদন প্রক্রিয়া:
প্রথমত: আগ্রহী শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বরাবর আবেদন করতে হয় এজন্য তাকে তার পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়টিতে বেছে নিতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট থেকে আবেদন প্রক্রিয়া এবং ন্যূনতম যোগ্যতা সম্পর্কিত তথ্যগুলো পাওয়া যাবে। সময়মতো ক্লাস শুরু করতে হলে কোর্স শুরু হওয়ার অন্তত ২/৩ মাস পূর্বে আবেদন প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। বাংলাদেশের শিক্ষার্থীগন ঢাকায় অবস্থিত জাপান অ্যাম্বেসীর সংশ্লিষ্ট শাখায় যোগাযোগ করে স্টাডি পারমিটের আবেদন করবেন।
শিক্ষাগত ন্যূনতম যোগ্যতা:
আন্ডার গ্র্যাজুয়েট পর্যায়ে ভর্তির জন্য একজন শিক্ষার্থীকে ন্যূনতম ১২ বৎসর স্কুলিং অর্থাৎ উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট থাকতে হবে।
মাষ্টার্সে ভর্তির জন্য অন্তত ১৬ বৎসরের স্কুলিং থাকতে হবে।
বেশীরভাগ জাপানী উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জাপানী ভাষায় পাঠদান করা হয়। কাজেই জাপানে উচ্চ শিক্ষার জন্য যেতে চাইলে অবশ্যই একজন শিক্ষার্থীকে জাপানী ভাষায় দক্ষতা অর্জন করতে হবে।
জাপানী ভাষা শেখার জন্য বাংলাদেশী শিক্ষার্থীগন ঢাকায় অবস্থিত জাপান অ্যাম্বেসীতে যোগাযোগ করতে পারেন। তাছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও বিভিন্ন মেয়াদের জাপানী ভাষা শিক্ষা কোর্স রয়েছে।
যেসব বিষয়ে পড়ানো হয়:
জাপানী বিশ্ববিদ্যালয় এবং অন্যান্য উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অসংখ্য বিষয়ে পাঠদান করা হয়। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য বিষয়গুলো হচ্ছে:
মেডিসিন
ডেন্টিস্ট্রি
ভেটেরেনারী সায়েন্স
বায়োকেমিষ্ট্রি
অ্যাপ্লায়েড ফিজিক্স
বায়োফার্মাসিউটিক্যাল সায়েন্স
ম্যাথমেটিক্স
ফিজিক্স
কেমিষ্ট্রি
এনভায়রোনমেন্টাল সায়েন্স
মলিকিউলার সায়েন্স
বিজনেস অ্যাডমিনিষ্ট্রেশন
মার্কেটিং
ইকোনোমিক্স
ইন্টারন্যাশনাল রিলেশন
ল
সোশিওলজি
ম্যানেজমেন্ট
ফিন্যান্স
এম বি এ
জাপানের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো:
জাপান বর্তমান পৃথিবীর সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক শক্তি। তাই সারা জাপান জুড়ে তারা অসংখ্য প্রথম শ্রেণীর বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করেছে। এখানে জাপানের শীর্ষস্থানীয় ৩০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা দেয়া হলো:
ইউনিভার্সিটি অব টোকিও
কিয়োটো ইউনিভার্সিটি
ওসাকা ইউনিভার্সিটি
টোকিও ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি
তোহুকু ইউনিভার্সিটি
কেইও ইউনিভার্সিটি
কিয়ুশু ইউনিভার্সিটি
নাগোয়া ইউনিভার্সিটি
হোক্কাইডো ইউনিভার্সিটি
সুকুবা ইউনিভার্সিটি
কোবে ইউনিভার্সিটি
চিবা ইউনিভার্সিটি
ওয়াসেদা ইউনিভার্সিটি
হিরোশিমা ইউনিভার্সিটি
কানাজাওয়া ইউনিভার্সিটি
ওকায়ামা ইউনিভার্সিটি
টোকিও ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স
টোকিও মেট্রোপলিটান ইউনিভার্সিটি
টোকিও মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল ইউনিভার্সিটি
ওসাকা সিটি ইউনিভার্সিটি
নিগাতা ইউনিভার্সিটি
কুমামোতো ইউনিভার্সিটি
তোকুশিমা ইউনিভার্সিটি
ওসাকা প্রিফেকচুয়াল ইউনিভার্সিটি
গিফু ইউনিভার্সিটি
টোকিও ইউনিভার্সিটি অব এগ্রিকালচার এন্ড টেকনোলজি
ইয়োকো হামা ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি
নাগোয়া সিটি ইউনিভার্সিটি
কাগোশিমা ইউনিভার্সিটি
ভিসার জন্য আবেদন প্রক্রিয়া:
আগ্রহী শিক্ষার্থীগন জাপান দূতাবাস থেকে ভিসা ফর্ম সংগ্রহ করবেন
ভিসা ফর্ম সংগ্রহের সময় অবশ্যই পাসপোর্ট সাথে আনতে হবে। একটি পাসপোর্টের বিপরীতে কেবলমাত্র একটি ফর্মই দেওয়া হবে।
ছুটির দিন ছাড়া দূতাবাসে রবিবার, সোমবার, বুধবার এবং বৃহস্পতিবার দুপুর ১১:৩০ থেকে ০১:০০ পর্যন্ত আবেদনপত্র গ্রহন করা হয়।
আবেদনের সাথে সকল প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট অবশ্যই সংযুক্ত করতে হবে
আবেদনপত্র জমা দেয়ার সময় প্রার্থীকে একটি রশিদ দেয়া হয় সেখানে সাক্ষাৎকারের সময় উল্লেখ থাকে।
প্রয়োজনীয় কাগজপত্র:
পাসপোর্ট (ন্যূনতম ৬ মাস মেয়াদ আছে এমন)
দুই কপি ছবি, সাইজ ৩.৫×৪.৫ (ছবি বিগত ৬ মাসের ভেতর তোলা এরকম হতে হবে)
ভিসার আবেদনপত্র (যথাযথভাবে পূরণকৃত)
শিক্ষাগত যোগ্যতার মূল সনদ (এসএসসি থেকে সর্বশেষ ডিগ্রী পর্যন্ত; সকল পরীক্ষার্থীর প্রবেশ পত্র ও প্রশংসা পত্র, বাংলা অথবা ইংরেজী)
জাপানের যে প্রতিষ্ঠানে পড়তে যাবেন তার Letter of Acceptance.
জাপানের বিচার মন্ত্রণালয় থেকে ইস্যুকৃত Certificate of Eligibility.
জাপানে অধ্যয়ন করতে যাওয়ার কারন সমূহ বর্ণনা করে একটি কভার লেটার
আপনাকে অবশ্যই দূতাবাসে যোগাযোগ করে জেনে নিতে হবে আরো কোন কাগজপত্র লাগবে কিনা। এই কাজটি অবশ্যই যেদিন ডকুমেন্টগুলো জমা দিবেন সেদিনই দুপুর ৩:০০ থেকে ৪:৪৫ এর মধ্যে করতে হবে।
সাক্ষাৎকার পর্ব:
দূতাবাস থেকে প্রদানকৃত রশিদে যে তারিখ উল্লেখ থাকবে সেদিন সকাল ৯:৩০ থেকে ১১:৩০ এর মধ্যে আপনার সাক্ষাৎকার নেয়া হবে।
যদি নির্দিষ্ট দিনে আপনি কোন কারনে দূতাবাসে পৌছাতে অসমর্থ হন তবে পরবর্তী যে কোন কর্মদিবসে আপনি আসতে পারেন।
প্রয়োজনীয় সব ডকুমেন্ট সাক্ষাৎকারের সময় জমা দিতে হবে। অন্যাথায় সাক্ষাৎকার নেয়া হবে না।
ভিসা প্রদান:
পরবর্তী কর্মদিবসে সাধারণ ভিসা প্রদান করা হয়।
কোন কোন ক্ষেত্রে আপনাকে আরো কিছু কাগজপত্রসহ পুনরায় সাক্ষাৎকারের জন্য ডাকা হতে পারে।
অ্যাম্বেসী বরাবর প্রদানকৃত ডকুমেন্ট ছাড়া অন্য সব ডকুমেন্ট আপনাকে পাসপোর্টের সাথে ফেরত দেয়া হবে।
টিউশন ফি (বাৎসরিক)
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর (সকল বিভাগের জন্য) টিউশন ফি ৭১৩৮০০ ইয়েন
স্থানীয় পাবলিক বিশ্ববিদ্যায়ের জন্য প্রায় ৮৩৩১৩৩ থেকে ৯৯৫৪৬৫ ইয়েন।
গ্র্যাজুয়েট স্কুলগুলোতে এই ফি ৮৯১৪৬৯ থেকে ১১৩৬৪৯২ ইয়েন পর্যন্ত হয়ে থাকে।
বাসস্থান সুবিধা ও খরচ : জাপানে বিদেশী ছাত্রছাত্রীরা ৪ ধরনের বাসস্থানে বসবাস করতে পারে। এগুলো হচ্ছে-
স্টুডেন্ট ডরমিটরী
স্থানীয় সরকারি সংগঠন কর্তৃক বরাদ্দকৃত পাবলিক হাউজিং
জাপানীজ বিভিন্ন সংস্থার স্টাফ ডরমিটরী
ব্যক্তিগত ভাড়া বাসা
এলাকাভেদে বাসস্থানের খরচে পার্থক্য দেখা যায়। যেমন- টোকিওতে একজন ছাত্রের বাসস্থান খরচ মাসিক প্রায় ১৫৮০০০ ইয়েন আর শিকোকুতে এটা প্রায় ১১৭০০০ ইয়েন।
উপরোক্ত প্রয়োজনীয় তথ্যগুলো জানা থাকলে একজন আগ্রহী শিক্ষার্থী সহজেই উচ্চশিক্ষার জন্য চেষ্টা করতে পারে।