
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২ জন বিশিষ্ট শিক্ষক হুমকিতে রয়েছেন।
বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক অধ্যাপক হাসান আজিজুল হকসহ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২ জন বিশিষ্ট শিক্ষক জঙ্গি হামলার হুমকিতে রয়েছেন। এজন্য রাজশাহী মহানগর পুলিশ (আরএমপি) তাঁদের নিরাপত্তায় বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
আরএমপি কমিশনার মো. মাহাবুবর রহমান জানান, নিরাপত্তা পাওয়া শিক্ষকদের কাছে বিভিন্ন হুমকির তথ্য রয়েছে। তাই তাঁদের ব্যাপারে বিশেষভাবে নজর রাখা হচ্ছে। বিশেষ নিরাপত্তার আওতায় থাকা ১২ শিক্ষক হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক অধ্যাপক হাসান আজিজুল হক, ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক মো. আবুল কাশেম, সহকারী অধ্যাপক গোলাম সারওয়ার, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মুহাম্মদ হাসান ইমাম, অধ্যাপক মুহম্মদ মিজানউদ্দিন, ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক মলয় কুমার ভৌমিক, দর্শন বিভাগের অধ্যাপক এস এম আবুবকর, বাংলা বিভাগের অধ্যাপক সরকার সুজিত কুমার, সমাজকর্ম বিভাগের অধ্যাপক সাদেকুল আরেফিন মাতিন, আইন বিভাগের অধ্যাপক হাসিবুল আলম প্রধান, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সেলিম রেজা নিউটন এবং ফোকলোর বিভাগের শিক্ষক আমিরুল ইসলাম কনক।
পুলিশসূত্রে জানা গেছে, এই শিক্ষকদের মধ্যে অধ্যাপক হাসান আজিজুল হক ও অধ্যাপক মুহাম্মদ হাসান ইমাম বাড়ির বাইরে গেলে তাদের নিরাপত্তায় পোশাকধারী ও সাদা পোশাকে পুলিশ মোতায়েন থাকছে। ক্যাম্পাসে অবস্থানের সময়ও হাসান ইমামের জন্য পুলিশ পাহারা রাখা হচ্ছে। এ ছাড়া বাকি শিক্ষকদের সঙ্গে পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের সদস্যরা সরাসরি যোগাযোগ রাখছেন এবং খোঁজখবর নিচ্ছেন।
তাদের কেউ চাইলে সব ধরনের নিরাপত্তা দেওয়ার কথাও ভাবছে পুলিশ। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর দফতরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিশেষ নিরাপত্তা পাওয়া এসব শিক্ষকের অনেককেই ২০১৫ সাল থেকে নানাভাবে ‘ইসলামী মৌলবাদী গোষ্ঠী’, ‘লাল বাহিনী’, ‘চরমপন্থি গ্রুপের নেতা’, ‘পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টি’ ও ‘জনযুদ্ধের কমান্ডার মেজর জিয়া’ পরিচয়ে হুমকি দেওয়া হয়েছে। এর বাইরে আরও অন্তত ৩০ জন শিক্ষককে বিভিন্ন সময় প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়েছে।
এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় ও নগরীর মতিহার থানায় একাধিক সাধারণ ডায়েরি (জিডি) হয়েছে। এরই ভিত্তিতে পুলিশ তাঁদের ব্যাপারে নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। তবে এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সেলিম রেজা নিউটন বলেন, ‘পুলিশ কোথা থেকে এসব তথ্য পায়, আমি বুঝতে পারি না।’
ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক মলয় কুমার ভৌমিক বলেন, ‘হলি আর্টিজানের ঘটনার পর থেকেই এ ধরনের নিরাপত্তায় আমাকে রাখা হয়েছে। আমি কখন কোথায় যাচ্ছি, কী করছি তার সবকিছুই সিটিএসবিকে জানাতে হচ্ছে।’ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক লুত্ফর রহমান বলেন, ‘জাফর ইকবালের ওপর হামলার পর পুলিশের পক্ষ থেকে বাড়তি নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য আমাদের কাছে শিক্ষকদের একটি তালিকা চাওয়া হয়েছিল।
কিন্তু পরে তা আর নেয়নি পুলিশ। এখন তারা নিজেরাই তালিকা করে নিরাপত্তা বাড়িয়েছে। ক্যাম্পাসের সার্বিক নিরাপত্তা অন্য সময়ের থেকে এখন অনেক বেশি। বিশ্ববিদ্যালয়, পুলিশ ও গোয়েন্দা প্রশাসন সামগ্রিকভাবে তত্পর আছে।’ এ বিষয়ে আরএমপি কমিশনার মো. মাহাবুবর রহমান বলেন, ‘কয়েকজনকে নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে। কেননা তাদের জন্য থ্রেট (হুমকি) আছে। আমরা মনে করছি যে, তাদের সতর্কভাবে চলা উচিত। তারা বাইরে যখন যাচ্ছেন আমাদের জানাচ্ছেন, আমরা জাস্ট ফলো করছি।’