উচ্চশিক্ষার জন্য তরুণদের অন্যতম পছন্দের দেশ কানাডা। কানাডার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর ডিগ্রি যুক্তরাষ্ট্র এবং কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর সমতুল্য এবং সারা বিশ্বে কানাডার শিক্ষালয় থেকে নেয়া ডিগ্রিকে স্বীকৃতি দেয়া হয়। কানাডার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর ডিগ্রি বিশ্বের প্রথম সারির দেশগুলোর সাথে তুলনীয় হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি এবং থাকার খরচ যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের তুলনায় কম।

জাতিসংঘের করা সবচেয়ে বাসযোগ্য দেশগুলোর তালিকায় কানাডা সবসময়ই ওপরের দিকে থাকে। দেশটিতে পড়াশোনা করতে আসা আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরাও কানাডার নাগরিকদের মত স্বাধীনতা, মানবাধিকার, সমতা ইত্যাদি সুবিধা ভোগ করেন। বিশ্বের প্রায় সব জাতিগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব রয়েছে কানাডায়। কাজেই পৃথিবীর যেকোনো প্রান্ত থেকে মানুষ সেখানে গিয়ে নিজস্ব খাবার ও সংস্কৃতির সংস্পর্শে থাকতে পারেন আর আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের স্টুডেন্ট অ্যাডভাইজরও এ ধরনের বিভিন্ন সংগঠনের সাথে যুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে সাহায্য করেন। কানাডার শিক্ষা কার্যক্রমে ইংরেজী ও ফরাসি এই দুই ভাষা ব্যবহৃত হয়, এখানে পড়ালেখার পাশাপাশি ভাষাগত দক্ষতাও বাড়িয়ে নেয়ার সুযোগ পান শিক্ষার্থীরা।

দেশটির শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারি হলেও স্বায়ত্তশাসিত। কাজেই কোন প্রতিষ্ঠান কোন কোর্স অফার করলে আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন কোর্সটি করানোর মত অবকাঠামো তাদের আছে। কানাডার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর অধিকাংশ কোর্স একটি প্রাদেশিক বোর্ডের মাধ্যমে কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়।

কানাডার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কোর্সগুলোকে দু’টো লেভেলে ভাগ করা হয়। একটি আন্ডারগ্রাজুয়েট বা ব্যাচেলর ডিগ্রি আর অন্যটি পোস্টগ্রাজুয়েট। মাস্টার্স এবং পিএইচডি’কে পোস্টগ্রাজুয়েট লেভেলের অংশ হিসেবে দেখা হয়।

কানাডার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষাবর্ষকে সাধারণত তিনটি সেমিস্টারে ভাগ করা হয়:

১. ফল সেমিস্টার, সেপ্টেম্বর- ডিসেম্বর

২. উইন্টার, জানুয়ারি-এপ্রিল

৩. সামার, মে-আগস্ট

থাকার ব্যবস্থা ও খরচ:

কানাডার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় হলের মতই থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। সেখানে এগুলোকে বলা হয় ডর্ম। ডর্মে থাকা বেশ ব্যয়বহুল হলেও ঝামেলা এড়ানো যায়। তবে ক্যাম্পাসের বাইর বাসা ভাড়া করে শেয়ার করেও থাকা যায়। সেক্ষেত্রে খরচ অনেক কম হবে। আবার শিক্ষার্থীরা ফোন ইন্টারনেট এসব শেয়ার করেও খরচ বেশ অনেকটা কমিয়ে আনতে পারেন। এদিকে কানাডার আলবার্টা প্রদেশসহ অনেক প্রদেশে শিক্ষার্থীরা বিনা পয়সায় বাসে ভ্রমণ করতে পারেন। থাকা খাওয়ার জন্য বছরে ৭ থেকে ১৩ হাজার কানাডিয়ান ডলার প্রয়োজন হবে।

বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচন

কানাডার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বেতন বিভিন্ন রকমের হয়ে থাকে। সাধারণত একটু ছোট শহরের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে খরচ কম হয়, কিন্তু ছোট শহর হওয়ায় চাকরির সুযোগও কম থাকে।

কিছু কিছু বিশ্ববিদ্যালয় আবার আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের স্কলারশিপ দেয় না। কাজেই স্কলারশিপের আশা করলে এসব বিশ্ববিদ্যালয় এড়িয়ে চলতে হবে।

বৃত্তি বা স্কলারশিপ

আর সব দেশের মত কানাডা সরকারও শিক্ষার্থীদের জন্য নানা ধরনের বৃত্তির ব্যবস্থা করেছে। কিছু বৃত্তি কেবল কানাডার নাগরিকদের জন্য আবার কিছু বৃত্তির ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদেরও আবেদন করার সুযোগ থাকে। তবে আন্তর্জাতিক বৃত্তি হলেও সেখানে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা আবেদন করতে পারবেন সেটা নিশ্চিত করে বলা যায় না। কিছু বৃত্তি কেবল ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলোর জন্য, কিছু বৃত্তি ক্যারিবীয় দেশগুলো জন্য আবার কিছু বৃত্তির ক্ষেত্রে সবদেশের শিক্ষার্থীদেরই আবেদন করার সুযোগ দেয়া হয়। কিছু কিছু বৃত্তি আবার কানাডা এবং কানাডার বাইরের সবদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য প্রযোজ্য। কাজেই কানাডায় পড়ালেখার জন্য বৃত্তি পাওয়ার আশা করলে খোঁজখবর নিয়ে ছোটখাটো গবেষণাই করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় বাছাইয়ের ক্ষেত্রেও মাথায় রাখতে হবে সে বিশ্ববিদ্যালয়ে কি ধরনের বৃত্তির সুবিধা আছে। বলাবাহুল্য এসব বৃত্তির জন্য বেশ প্রতিযোগিতার মধ্যে পড়তে হয়। কানাডায় পড়ালেখার জন্য বৃত্তি সংক্রান্ত তথ্য পাওয়া যাবে এই সাইটটিতে: http://scholarships.gc.ca

কানাডায় পড়ালেখার জন্য বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা যেসব বৃত্তির জন্য আবেদন করতে পারেন:

Program

Managed / Funded by

Banting Postdoctoral Fellowships

Government of Canada

CIFAR Global Scholars

Canadian Institute for Advanced Research (CIFAR)

CIHR Fellowship

Canadian Institutes of Health Research

IDRC Doctoral Research Awards

International Development Research Centre (IDRC)

IDRC Research Awards

International Development Research Centre (IDRC)

Industrial Postgraduate Scholarships Program

Natural Sciences and Engineering Research Council of Canada (NSERC)

Industrial Research and Development Internship (IRDI) Program

Networks of Centres of Excellence of Canada

Mitacs Elevate

Mitacs

Mitacs Step

Mitacs

Mitacs-Accelerate

Mitacs

Research Associate Program

National Research Council Canada

Sauvé Scholars Program

Jeanne Sauvé Youth Fondation

Strategic Training Initiative in Health Research (STIHR)

Canadian Institutes of Health Research

The Bentley Cropping Systems Fellowship

International Development Research Centre (IDRC)

Trudeau Fellowships

Trudeau Foundation

Trudeau Scholarships

Trudeau Foundation

Vanier Canada Graduate Scholarships

Government of Canada

Visiting Fellowships in Canadian Government Laboratories Program

Natural Sciences and Engineering Research Council of Canada (NSERC)

যেভাবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আবেদন করবেন:

সরাসরি প্রতিষ্ঠানের এডমিশন অফিসে বিস্তারিত তথ্যের জন্য মেইল কর,
বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট থেকেও আবেদন ফরম সংগ্রহ করতে পারেন,
কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইনে আবেদন করার সুযোগ রয়েছে,
এডমিশন অফিস থেকেই আপনি প্রয়োজনীয় সব তথ্য যেমন: প্রয়োজনীয় দলিলপত্রাদি, ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ইত্যাদি সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য পাবেন,
ভর্তি প্রক্রিয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম সাধারণত ১ বছর সময় হাতে রেখে শুরু করতে হয়,
সাধারণত আবেদন করার সময়সীমা শেষ হওয়ার ৬-৮ মাসের মধ্যে প্রতিষ্ঠানের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেয়া হয়।
বিভিন্ন প্রোগ্রামে ভর্তি হওয়ার শিক্ষাগত, ভাষাগত ও অন্যান্য যোগ্যতা:

কোর্সের নাম

প্রয়োজনীয় শিক্ষাগত যোগ্যতা

ভাষাগত দক্ষতা

অন্যান্য যোগ্যতা

মেয়াদ

ব্যাচেলর ডিগ্রী

কমপক্ষে ১২ বৎসর মেয়াদী শিক্ষা

কমপক্ষে ৬-৬.৫ আইইএলটিএস স্কোর

স্যাট-II কিছু ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক

৩ থেকে ৪ বৎসর পূর্ণকালীন স্টাডি

মাস্টার্স ডিগ্রী

কমপক্ষে ১৬ বৎসর মেয়াদী শিক্ষা

কমপক্ষে ৬-৬.৫ আইইএলটিএস স্কোর

কিছু কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে GRE, GMAT ইত্যাদির প্রয়োজন হয়।

১ বৎসর মেয়াদী পূর্ণকালীন স্টাডি

Ph.D. ডিগ্রীর ক্ষেত্রে ৩ বৎসর পূর্ণকালীন গবেষণা করতে হয়।

যেসব বিষয়ে পড়তে পারেন:

কম্পিউটার সাইন্স
ফুড সাইন্স
বায়োলজি
রসায়ন
ইলেকট্রনিক্স
মেডিকেল সাইন্স
ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট
কৃষি অর্থনীতি
সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং
ইতিহাস ও ধর্ম
ইংরেজী সাহিত্য প্রভৃতি

প্রয়োজনীয় কাগজপত্র:

কানাডায় কোন বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি হতে হলে একজন শিক্ষার্থীকে নিম্নলিখিত কাগজপত্রগুলো সংগ্রহ করতে হবে:

পূরণকৃত আবেদন ফরম
মানি অর্ডার/আবেদন ফি জমা দেয়ার রশিদ
শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ ও মার্কশীটের ফটোকপির ইংরেজী ভার্সন
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাড়পত্র
টোফেল বা আইইএলটিএস এর স্কোর শীট
স্যাট, জিআরই, জি ম্যাট, (চাহিদা সাপেক্ষে) এর স্কোর শীট
আর্থিক সচ্ছলতার নিশ্চয়তাপত্র (স্পন্সর এর পক্ষ থেকে)
পাসপোর্টের ফটোকপি

শিক্ষা ব্যয়:

বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ব্যয়ের পরিমাণ বিভিন্ন। তবে গড়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আন্ডার গ্র্যাজুয়েট পর্যায়ে ৬ হাজার কানাডিয়ান ডলার থেকে ১৭,০০০ ডলার পর্যন্ত ব্যয় হয়ে থাকে। আর গ্র্যাজুয়েট পর্যায়ে ৬,০০০ থেকে ৩০,০০০ ডলার পর্যন্ত খরচ হতে পারে।

জীবনযাত্রার ব্যয়:

একজন শিক্ষার্থীর সারা বছরের থাকা খাওয়া ও অন্যান্য খরচের জন্য প্রায় ১১,০০০ থেকে ১৪,০০০ ডলার প্রয়োজন হয়।

কাজ করার সুযোগ:

কানাডায় অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা পড়ালেখার বাইরে সপ্তাহে ২০ ঘণ্টা কাজের অনুমতি পেয়ে থাকে যেটি তাদের স্টুডেন্ট ভিসার মেয়াদ পর্যন্ত কার্যকর থাকে।

যেসব ক্ষেত্রে একজন শিক্ষার্থীর কাজ করার সুযোগ রয়েছে সেগুলো হচ্ছে:

লাইব্রেরী এ্যাসিস্ট্যান্ট
হাউজ কিপিং এ্যাটেনড্যান্ট
সার্ভিস ম্যানেজার
হেয়ার ড্রেসার
বীচ লাইফ গার্ড
সিকিউরিটি গার্ড
রিটেইল ক্যানভাসর
একাউন্ট্যান্ট
ফ্রুট প্যাকিং ইত্যাদি
কানাডার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বাংলাদেশের শিক্ষার্থী সংগঠন:

পারস্পরিক যোগাযোগ রক্ষা ও সহযোগিতার জন্য কানাডার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের নিয়ে বিভিন্ন শিক্ষার্থী সংগঠন গড়ে উঠেছে। এরকম কয়েকটি শিক্ষার্থী সংগঠন:

http://www.ualberta.ca/~bsaua/
http://bsa.sa.utoronto.ca/
https://alberta.collegiatelink.net/organization/bsaua
http://blogs.ubc.ca/bsaubc/
http://www.bsamcgill.com/
পড়াশোনা শেষে কানাডা থেকে যাওয়া বা ইমিগ্রেশন

কানাডার নিয়মানুযায়ী সেখানে কাজের অভিজ্ঞতা থাকলে এবং কানাডার কারো প্রমাণপত্র পেলে পড়াশোনা শেষে কানাডা থেকে যাওয়ার সুযোগও পেতে পারেন শিক্ষার্থীরা।

Leave a Reply

স্যার, কিভাবে আপনাকে সাহায্য করতে পারি?

Click one of our representatives below

Customer Support
Customer Support

Syeda Nusrat

I am online

I am offline

Technical Support
Technical Support

Ariful Islam Aquib

I am online

I am offline