
এমপিওর দাবীতে আমরণ অনশনে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদকসহ অসুস্থ ছয়জন শিক্ষককে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বুধবার (৩ জানুয়ারি) অনশনের চতুর্থ দিনে তারা অসুস্থ হয়ে পড়েন। এ পর্যন্ত ৮৭ জন শিক্ষক অসুস্থ হয়েছেন। এরমধ্যে অনেকে সুস্থ্ হয়ে ফের অনশনে অংশ নিয়েছেন।
গত রোববার (৩১ ডিসেম্বর) থেকে রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অনশন শুরু করেন শিক্ষকরা। এর আগে একই দাবিতে গত ২৬ ডিসেম্বর থেকে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন তারা। শীতের রাতেও শিক্ষকরা ফুটপাতে অবস্থান করছেন।
জানা যায়, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের দুইজন কর্মকর্তা শিক্ষকদের অনশন ভেঙ্গে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাত করার অনুরোধ জানালে অনশনরত শিক্ষকরা তা প্রত্যাখান করেন।
নন-এমপিও শিক্ষালয় শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যক্ষ গোলাম মাহামুদুন্নবী ডলার বলেন, আজ বুধবারও কয়েকজন শিক্ষক অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। এরমধ্যে ২ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এই পর্যন্ত ৮৭ জন অসুস্থ হয়েছেন। তাঁদের প্রায় সবাই এখানে স্যালাইন নিয়ে শুয়ে আছে। যত অসুস্থ হচ্ছে, অনশন তত বেগবান হচ্ছে।অনেকে সুস্থ হয়ে আবার অনশনে ফিরছেন।
বুধবার(৩ জানুয়ারি) সন্ধায় দৈনিকশিক্ষার কাছে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, আমরণ অনশনের ৪র্থ দিনে ৮৭ জন শিক্ষক-কর্মচারী অসুস্থ হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ড. বিনয় ভূষণ রায় অসুস্থ হয়ে ঢাকা মেডিকেলের ৬০১নং ওয়ার্ডের ৯নং বেডে চিকিৎসাধীন আছেন। তাছাড়া ৬০২নং ওয়ার্ডের ১৯নং বেডে ঠাকুরগাঁও এর শিক্ষক তসলিম উদ্দিন, ১০নং বেডে পিরোজপুরের আব্দুস সালাম, ২০নং বেডে পটুয়াখালীর হেমায়েত উদ্দিন, ১২নং বেডে সাতক্ষীরার আঃ সালাম, ৬০১নং ওয়ার্ডের ২নং বেডে ভোলার ফজলুল হক ফিরোজ, ৪১নং বেডে রাজশাহীর শামসুল হক, সাতক্ষীরার জাহাঙ্গীর আলম ভর্তি আছেন। বাকিরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে অনশনস্থলে পুনরায় যোগ দিয়েছেন।
তিনি বলেন, মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের সঙ্গে আমরা সেই ২০১২ সাল থেকে দফায় দফায় বৈঠক করেছি। কোনো কাজ হয়নি। তিনি শুধুই সময়ক্ষেপণ করেছেন। তাই আমরা আর কাউকেই বিশ্বাস করছি না। আমরা চাই, প্রধানমন্ত্রী আমাদের কিছু বলুক। তিনি নিশ্চয় আমাদের দুঃখ বুঝবেন।
আমরণ অনশন কর্মসূচিতে সমর্থন জানিয়ে দীর্ঘ সময় শিক্ষক-কর্মচারীদের সাথে অবস্থান করেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী ও বিশিষ্ট কলামিষ্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ। এছাড়াও সারাদিন নন-এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীদের অনশনে সংহতি জানান বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও সুশীল সমাজের বিশিষ্টজনেরা। তন্মধ্যে আছেন নাগরিক ঐক্যর আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, বাংলাদেশ বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অবঃ) জাহাঙ্গীর হোসেন, বাসদের কেন্দ্রীয় নেতা রাজেকুজ্জামান রতন, বাংলাদেশ মানবাধিকার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ড. ফরিদ উদ্দীন ফরিদ প্রমুখ। তাছাড়া বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির সভাপতি মোঃ নজরুল ইসলাম রনি এবং জাতীয় সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সভাপতি মোঃ ইমরান হাবিব মিছিল সহকারে অনশনে এসে সংহতি জানান।
সরকার স্বীকৃত সব মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষালয় এমপিওভুক্ত করার দাবিতেই শিক্ষকদের এ আন্দোলন। স্বীকৃতি পেলেও নন-এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীরা সরকার থেকে কোনো আর্থিক সুবিধা পান না। সারাদেশে এমন নন-এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠান আছে ৫ হাজার ২৪২টি। এগুলোতে শিক্ষক-কর্মচারীর সংখ্যা ৭৫ থেকে ৮০ হাজার। অন্যদিকে বর্তমানে দেশে এমপিওভুক্ত শিক্ষালয় আছে প্রায় সাড়ে ২৬ হাজার। এগুলোতে শিক্ষক-কর্মচারী ৪ লাখের বেশি। সর্বশেষ ২০১০ সালে এক হাজার ৬২৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হয়েছিল।
আরো পড়ুন: