
উচ্চশিক্ষার জন্য শ্রীলংকা হতে পারে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের পরবর্তী পছন্দের অন্যতম গন্তব্য। দুদেশের সংস্কৃতি, আবহাওয়া, জলবায়ুতে অনেকটা মিল রয়েছে। পড়ালেখার খরচের দিক থেকেও ব্যয় মধ্যবিত্তদের নাগালের মধ্যে।শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনার ঢাকা সফরকালে দুই দেশের মধ্যে উচ্চশিক্ষা কমিশনের একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। এতে তাদের শিক্ষার্থীদের বাংলাদেশে বাড়তি সুবিধা চাওয়ার পাশাপাশি বাংলাদেশিদের জন্য শ্রীলংকায় বিশ্ব র্যাংকিংভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখার সুযোগ দিতে আগ্রহ প্রকাশ করা হয়েছে। যদিও প্রতিবছর শ্রীলংকান অনেক শিক্ষার্থী পড়ালেখার জন্য বাংলাদেশে আসছে। বিশেষ করে এদেশে মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বেশি আসছে তারা।
জানা গেছে, শ্রীলংকার প্রেসিডেন্টের সফরের আগে দেশটির একটি শিক্ষাবিষয়ক প্রতিনিধি দল ঢাকা সফর করে। সফরকালে রাজধানীর হোটেল ওয়েস্টিনে বাংলাদেশ-শ্রীলংকার উচ্চশিক্ষাবিষয়ক কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়। এতে দুদেশের উচ্চশিক্ষার ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোকপাত করা হয়। কনফারেন্সে সভাপতিত্ব করেন ঢাকায় নিযুক্ত শ্রীলংকান হাইকমিশনার ইয়াসোজা গুনাসেকেরা।শ্রীলংকায় উচ্চশিক্ষা সম্পর্কে হাইকমিশনার সাংবাদিকদের জানান, ২০২০ সালের মধ্যে শ্রীলংকাকে উচ্চশিক্ষার আন্তর্জাতিক কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে এগোচ্ছে তার সরকার।
বাংলাদেশের আবহাওয়া, জলবায়ু এবং এখানকার সংস্কৃতির সঙ্গে শ্রীলংকার অনেকটা মিল রয়েছে উল্লেখ করে ইয়াসোজা গুনাসেকেরা বলেন, দুদেশের শিক্ষার্থীরা সহজে নিজেদের দেশের মতো করে পরিবেশ মানিয়ে নিতে পারবে। এ ছাড়া শ্রীলংকায় বাংলাদেশিদের জন্য ইউরোপ কিংবা এশিয়ার অন্য দেশগুলোর মতো ভিসা সংক্রান্ত কোনো জটিলতা নেই। অন-অ্যারাইভাল ভিসা রীতি প্রচলিত আছে।এক প্রশ্নের জবাবে এই কূটনীতিক জানান, বাংলাদেশ ও শ্রীলংকার মধ্যে মুদ্রা বিনিময়ের হারেও বেশি তফাত নেই। শ্রীলংকান সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে ইউরোপীয় সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ বিনিময়ের সুযোগ রয়েছে। পছন্দের বিষয়ে উচ্চশিক্ষা-গবেষণার জন্য শ্রীলংকা থেকে ইউরোপীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে সহজে স্থানান্তর হতে পারে শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষণ, গবেষণা, জ্ঞান স্থানান্তর এবং আন্তর্জাতিক মানদ-ে টাইমস উচ্চশিক্ষা ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি র্যাংকিংয়ে ২০১৬-১৭ প্রতিবেদনে শ্রীলংকান সরকারি ও বেসরকারি বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থান পেয়েছে। এর মধ্যে কলম্বো বিশ্ববিদ্যালয়, ইউনিভার্সিটি অব পারাদেনিয়া, ইউনিভার্সিটি অব মোরাতুওয়া, ইউনিভার্সিটি অব শ্রী জয়ওয়ার্দিনপুরা, ইউনিভার্সিটি অব রুহুনা, ইউনিভার্সিটি অব কেলানিয়া অন্যতম।শ্রীলংকার সংবিধানে ‘শিক্ষা’ মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃত। দেশটির জনসংখ্যার সাক্ষরতার হার ৯২ শতাংশ। এটি দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ সাক্ষরতার হার এবং সর্বোপরি এশিয়ার সর্বোচ্চ সাক্ষরতার হারের মধ্যে একটি।উল্লেখ্য, ইউনেস্কোর তথ্যানুযায়ী বাংলাদেশ থেকে বিদেশে শিক্ষার্থীদের গমন বেড়েছে। এক বছরেই তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৭ শতাংশের বেশি। ২০১৫ সালে মোট ৩৩ হাজার ১৩৯ জন বাংলাদেশি শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে যান। আগের বছর এই সংখ্যা ছিল ২৪ হাজার ১১২ জন। দুই বছরের হিসাবে দেখা যায়, ২০১৪ সালের তুলনায় ২০১৫ সালে ৩৭ দশমিক ৪৩ শতাংশ বেশি শিক্ষার্থী বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য পাড়ি জমিয়েছেন। এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মালয়েশিয়ায় ৬ হাজার ৫৩৪ জন, এরপর যুক্তরাষ্ট্রে ৫ হাজার ৪৪১ জন এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতে ৬৪৪ জন। এ ছাড়া যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া এমনকি ভারতেও যাচ্ছেন অনেক শিক্ষার্থী।
আরো পড়ুন: