একটি মজার বিষয় খেয়াল করেছ, সেই ক্লাস ওয়ান থেকে আমরা “অ-আ-ক-খ” এর সাথে সাথে “A-B-C-D” শিখেছি, এবং ক্লাস ওয়ানে উঠতে না উঠতেই গড়গড় করে বাংলা বলতে শিখে ফেলেছি কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে উঠেও দু’লাইন শুদ্ধ ইংরেজী বলতে হিমশিম খেয়ে যাই এমন মানুষের সংখ্যা কম নয়! স্কুল কলেজে বারো বছর ইংরেজী পড়ে তাহলে কি কাজে আসলো? বেশিরভাগের মানুষের ক্ষেত্রেই তেমন কোন কাজে দেয় না এই একাডেমিক পড়াশোনা। তাই বুঝতেই পারছো, গতানুগতিক পদ্ধতি ছাড়তে হবে আজই।
২. Spoken English-এর উপর জোর বাড়াও
স্কুলে আমাদের প্রতিটি পদে পদে গ্রামার শেখানো হয়, ইংরেজী ২য় পত্র বলে একটি বিষয় আছে সেটি গ্রামারের উপর গুরুত্ব দিয়েই গঠিত। গ্রামারের এত খুঁটিনাটি শিখে কি কাজে আসবে সেই তর্কে যাবো না, তবে বলবো যে শুধু গ্রামার শিখে কোনদিন কথা বলায় দক্ষ হওয়া সম্ভব নয়। আমরা যেকোন ভাষা শিখতে গেলে তার ব্যাকরণ খুঁটিনাটি পড়ে ব্যাপারটাকে অনেক জটিল করে ফেলি, অথচ ভুলে যাই যে মাতৃভাষাটা আমরা কিভাবে শিখেছি!
মজার বিষয় হচ্ছে একজন আমেরিকান, যার মাতৃভাষা ইংরেজী, তার থেকে আমরা বাংলাদেশীরা ইংরেজী গ্রামার অনেক ভাল জানি! কিন্তু স্বভাবতই আমেরিকান মানুষটি আমাদের চেয়ে ইংরেজী ঢের ভাল বলে! কারণ একটি বাক্য “Causative Verb” না কি দিয়ে গঠিত সেটা জানার চেয়ে সাধারণ কথোপকথনের মাধ্যমে ভাষা শেখা অনেক বেশি কাজে দেয়।
৩. প্রতিদিন শেখো
আমার কয়জন বন্ধু আছে, নতুন বছরের শুরুতে প্রতিবার সবাই একসাথে হয়ে গম্ভীর মুখে কিছু “new year’s resolution” ঠিক করে, গত পাঁচ বছর ধরে সেই তালিকার শুরুতে যেই বিষয়টি অপরিবর্তনীয় সেটি হচ্ছে, “ইংরেজীতে কথা বলা শিখতে হবে!” আগামী পাঁচ বছরেও তালিকা থেকে এটি বাদ পড়ার সম্ভাবনা বিরল!
সবাই নতুন বছর প্রথম কয়দিন বেশ আগ্রহ নিয়ে ইংরেজী শেখা নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করে, তারপর তাদের আগ্রহটা কেমন মরে যায়, কিছুদিনের ভেতর লক্ষ্যটি তারা বেমালুম ভুলে বসে থাকে! এজন্যই শেখা আর হয়ে ওঠে না কোনদিন। সপ্তাহে একদিন দশ ঘন্টা শেখার চেয়ে প্রতিদিন দশ মিনিট করে সময় দাও, দেখবে ফাটাফাটি উন্নতি হচ্ছে শেখায়! স্মার্টফোনে আজকাল অসাধারণ সব এপস আছে, অবসরে ফেসবুকে ঘুরাঘুরি কমিয়ে এগুলো একটু ঘেঁটে দেখার অভ্যাস করলে তরতর করে এগিয়ে যাবে অনেকদূর, গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি!
৪. ভাষার চারটি দিক
একটি ভাষা শেখার চারটি দিক রয়েছে- পড়া, লেখা, শোনা এবং বলা। স্কুল-কলেজে বই পড়তে পড়তে এবং পরীক্ষার খাতায় লিখতে লিখতে আমাদের প্রথম দুটি দিক মোটামুটি আয়ত্তে এসে যায়, বাকি দুটি দিকে আমরা এখনো তেমন পেকে উঠিনি! তোমার যদি কোন বিদেশী বন্ধু থাকে দেখবে তারা বিচিত্র সব উচ্চারণে কথা বলছে, মনে হচ্ছে যেন গলার ভেতর গড়গড়া করে শব্দগুলো অর্ধেক উচ্চারণ করছে বাকিটুকু গলার ভেতর রেখে দিচ্ছে, সেটি বুঝতে তোমার কালো ঘাম ছুটে যাচ্ছে!
সাব-টাইটেল ছাড়া মুভি দেখতে এখনও আমাদের দারুণ আপত্তি, ইংরেজী শোনা এবং বলার ব্যাপারটি আমরা এখনো রপ্ত করতে পারিনি। এই দুটি দিক সামলে নিতে প্রতিদিন অভ্যাস করো ইংরেজী খবর শোনার, নিজে নিজে বলা অভ্যাস করার। চারটি দিক একসাথে উন্নতি না হলে আসলে ভাষাটি শেখা খুব কঠিন।
৫. শব্দভান্ডার বাড়াও
নতুন নতুন শব্দ শেখা অসম্ভব যন্ত্রণাময় একটি প্রক্রিয়া, কিন্তু এটি সেই তেতো ওষুধের মতো, প্রক্রিয়াটি ভাল না লাগলেও ফলাফল অতি মধুর! সুতরাং প্রতিদিন নতুন নতুন শব্দ শেখো। “ডিকশনারি ধরে প্রতিদিন দশটি করে শিখলে বছরে এত হাজার শেখা হবে”- এই চিন্তাটি খুব একটা কাজের নয়, কারণ ডিকশনারিতে এত উদ্ভট কঠিন সব শব্দ থাকে যে তোমার উদ্যমটি একদম মাঠে মারা যাবে! সুতরাং এক কাজ করতে পারো, এই যে ফেসবুক চালাচ্ছো, খেলা দেখছো- এমন বিভিন্ন উৎস থেকে হাজার হাজার শব্দ রয়েছে শেখার মতো। স্মার্টফোনে চমৎকার সব ডিকশনারি রয়েছে, সেখানে অর্থ উচ্চারণ সব বলে দেয়।
প্রচলিত একটি কথা আছে, যে কোন কাজে দক্ষতা অর্জন করতে হলে সেই কাজটির পেছনে কমপক্ষে দশ হাজার ঘন্টা অনুশীলন করতে হয়! তুমি নাহয় প্রতিদিন এক ঘন্টা করেই সময় দিলে!
কোন শব্দ চোখে পড়লো যেটির অর্থ জানা নেই কিন্তু এখন অর্থ শেখার সময়ও নেই- আলসেমি না করে সাথে সাথে ডিকশনারিতে বুকমার্ক করে রেখে দাও, অবসর পেলেই পড়ে গেঁথে নেবে শব্দটি মনে চিরদিনের জন্য। পছন্দের উৎসগুলো থেকে শেখার আরো একটি উপকার হচ্ছে, ডিকশনারি থেকে পড়লে শুধু অর্থটিই জানা হয়, সেটির প্রয়োগ ব্যবহার ইত্যাদি আগ্রহ করে জানতে ইচ্ছা করে না যে কারণে দুই দিন পর শব্দটি একদম মাথা থেকে উধাও হয়ে যায়! কিন্তু খেলার ধারাভাষ্যে তুমি শব্দগুলো নিয়মিত শুনছো, এতদিন অর্থ জানতে না এখন সেটিও দেখে নিলে, শব্দগুলি তোমার অজান্তেই অনেক সহজে শেখা হয়ে যাবে।
SAT GRE ইত্যাদি পরীক্ষা যারা দিতে বসে তাদেরকে কয়েক হাজার শব্দের বিশাল বড় একটি ভোকাবুলারি লিস্ট ধরিয়ে দেওয়া হয়, সেটি শিখতে মানুষের একেবারে কালো ঘাম ছুটে যায়! ফরহাদ হোসেন মাসুম নামে একজন দারুণ উদ্যমী মানুষ আছেন তিনি এই শব্দগুলো খুব সহজে শেখার জন্য একটি অসাধারণ ভিডিও কোর্স বানিয়েছেন, IBA ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতিতে সেই উন্মুক্ত কোর্সটি আমার অসামান্য উপকার করেছিলো সেজন্য আমি মানুষটির কাছে চিরজীবন ঋণী থাকবো। তোমরাও দেখে নিতে পারো কোর্সটি এই লিঙ্ক থেকে, বাজি ধরে বলতে পারি জীবন বদলে যাবে একদম!
https://youtube.com/channel/UCMFzIpHqr177DuLaTR2qlyw
৬. শিশুরা কিভাবে শেখে?
আমরা বড় মানুষরা অনেক জটিল চিন্তাভাবনা করে একটি সহজ জিনিসকে অনেক ঘোরালো প্যাঁচালো করে তুলি, শিশুদের সেই চিন্তা নেই, তারা হামাগুড়ি দিয়ে সবচেয়ে সহজ পথে তরতর করে শিখে ফেলে জিনিসটি! প্রশ্ন হচ্ছে, শিশুরা একটি ভাষা কিভাবে শেখে? তারা নিশ্চয়ই নীলক্ষেত থেকে “৩০ দিনে ইংরেজী শিখুন!” বই কিনে, CNN/BBC এর খবর দেখে আর ডিকশনারি ঘেঁটে ব্যাকরণ পড়ে ভাষাটি শিখতে যায়নি! তারা যেটি করে, চারপাশের নানা উপকরণ থেকে প্রতিনিয়ত একটু একটু করে শিখে। তোমার ইংলিশ মিডিয়ামে পড়া বন্ধুটি চমৎকার ইংরেজী বলে, তাকে ইংলিশ মিডিয়ামে ধরে ধরে শেখানো হয়নি ইংরেজী বলতে, তার চারপাশে সবাই ইংরেজীতে কথা বলে, তার বইগুলো ইংরেজী, সারাক্ষণ ইংরেজী বলতে লিখতে শুনতে দেখতে সেও ধীরে ধীরে শিখে ফেলেছে ভাষাটি।
তুমিও আজকে থেকে ইংরেজীর বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে সাজিয়ে নাও নিজের চারপাশ। খেলার খবরটি নাহয় ইংরেজীতেই পড়লে, প্রিয় মুভির সাবটাইটেলগুলো মন দিয়ে দেখলে (pause করে করে দেখা বেশ বিরক্তিকর একটি ব্যাপার, কিন্তু শেখার জন্য এটি দারুণ কাজে দেয়!), আজকাল বিভিন্ন বিষয়ের উপর পোডকাস্ট রয়েছে, খেলাধুলা রাজনীতি বিজ্ঞান ভূতপ্রেত অভিনয় থেকে শুরু করে স্রেফ গালগপ্পের জন্য নানারকম পোডকাস্ট আছে, সেখানে অতিথিরা এসে দারুণ মজার সব গল্প করেন, রাস্তায় জ্যামে বসে শুনবার জন্য এরচেয়ে ভাল কিছু আর হয়না!
এই সাইটটি থেকে শুনে দেখতে পারো নানারকম পোডকাস্ট। এমন আরো বিভিন্ন সাইট রয়েছে পোডকাস্টের জন্য।
http://www.podcastone.com/mobile/
“টেড টকস” নামে চমৎকার একটি প্ল্যাটফর্ম হয়েছে সেখানে হরেকরকম পেশা এবং নেশার মানুষজন তাদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করে, সেই অভিজ্ঞতাগুলো যে জীবনের জন্য কতটা উপকারী না শুনলে বলে বুঝানো সম্ভব নয়!
https://youtube.com/user/TEDtalksDirector
অন্তর্জালে এমন অজস্র প্ল্যাটফর্ম রয়েছে শোনার, পড়ার, শেখার। খবর দেখে ফরমাল ইংরেজী শিখলে, মুভি দেখে বিভিন্ন যুগের বিভিন্ন পেশার কথার ধরণ জানলে, পোডকাস্ট টেড টকস ইত্যাদি থেকে একদম সাধারণ মানুষের কথোপকথন শিখলে। এভাবে বিভিন্ন উৎস থেকে হাঁটি হাঁটি পা পা করে শিখে একদম আকাশ ছুঁয়ে ফেলতে পারবে!
৭. লজ্জা কমাও! মুখ খোলো!
আমাদের সবার সেই চিরাচরিত অজুহাত, “এই আরেকটু শিখে নেই, তারপর বলা শুরু করবো!”
সেই ‘আরেকটু’ শেখা আর কোনদিন হয়না, বলাও শুরু করা হয়না আমাদের। তাই লজ্জার ব্যাপারটি ছাড়ো। আজকে তুমি ভুলভাল ইংরেজী বললে কেউ তোমাকে নিয়ে হাসতে পারে, কিন্তু দুইদিন পর সেটি কেউ মনে রাখবে না। ইংরেজী বলতে চাইলে বলার অভ্যাস করতেই হবে, এর কোন বিকল্প নেই। একদমই যদি আপত্তি থাকে মানুষের সামনে যাবার, তাহলে এক কাজ করতে পারো- প্রতিদিন আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে সারাদিন কি কি ঘটলো সেটি জোরে জোরে ইংরেজীতে বলো। অনেক আটকাবে, শব্দ খুঁজে পাচ্ছো না এমন হবে, কিন্তু অভ্যাসটা গড়ে উঠবে তোমার।
Accent বা উচ্চারণ নিয়ে অনেকের ভীষণ জড়তা কাজ করে, এই সমস্যাটি কেবল উপমহাদেশেই, বাকি পৃথিবীর মানুষের এটি নিয়ে কোন মাথা ব্যাথা নেই! চোস্ত ব্রিটিশ উচ্চারণে কথা বলতে পারা না পারা দিয়ে কিচ্ছু আসে যায়না, এটি নিয়ে বিন্দুমাত্র মাথা ঘামানোর কিছু নেই। চীনাদের ইংরেজী উচ্চারণের চেয়ে দুর্বোধ্য জিনিস আর হয়না, অথচ এই উচ্চারণ দিয়েই সারা পৃথিবীজুড়ে ব্যবসা করে বেড়াচ্ছে তারা, বিদঘুটে উচ্চারণ তাদের কোথাও আটকাতে পারেনি। তাহলে তোমাকে আটকাচ্ছে কিসে?
ইংরেজী কোন জুজু নয়, ভয়ঙ্কর কঠিন কোন জিনিস নয়, এটি খুব সাধারণ একটি ভাষা, এবং ইংরেজীতে ফ্লুয়েন্সি অর্জন এমন আহামরি কঠিন কোন বিষয় নয়।
প্রচলিত একটি কথা আছে, যে কোন কাজে দক্ষতা অর্জন করতে হলে সেই কাজটির পেছনে কমপক্ষে দশ হাজার ঘন্টা অনুশীলন করতে হয়!
তুমি নাহয় প্রতিদিন এক ঘন্টা করেই সময় দিলে!
আরো পড়ুন:
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি ফি কমানোর দাবিতে শিক্ষার্থীদের ধর্মঘট
1 responses on "ইংরেজিতে গড়গড় করে অনর্গল কথা বলতে পারার ৭টি টিপস"