
এক সপ্তাহ পর ১ নভেম্বর দেশজুড়ে শুরু হচ্ছে জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষা। অথচ চট্টগ্রামের হালিশহর আইডিয়াল হাই স্কুলের ১১৫ শিক্ষার্থী এখনও জানে না তাদের পরীক্ষা দেওয়া হবে কি-না। কারণ, পরীক্ষার জন্য এখনও তাদের রেজিস্ট্রেশন হয়নি। অথচ রেজিস্ট্রেশনের যাবতীয় ফি অনেক আগেই স্কুল কর্তৃপক্ষতাদের কাছ থেকে আদায় করে নিয়েছে। ক’মাস আগে শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম শেষ করার কথা থাকলেও ওই স্কুলের শিক্ষকরা তা করেননি। পরে রেজিস্ট্রেশন করার জন্য বোর্ড সময় বাড়ালেও রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করেনি স্কুলটির কর্তৃপক্ষ। এখন বোর্ড কর্তৃপক্ষবলছে এসব শিক্ষার্থীর এ বছর আর পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ নেই। কারণ, কেন্দ্র চূড়ান্ত করা, পরীক্ষার্থীদের আসন বিন্যাসসহ সব ধরনের প্রস্তুতি ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। অন্যদিকে স্কুল কর্তৃপক্ষবলছে, রেজিস্ট্রেশনের জন্য তারা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক শাহেদা ইসলাম বলেন, ‘কেবল একজন প্রধান শিক্ষকের গাফিলতির কারণে ১১৫ শিক্ষার্থীর পরীক্ষায় অংশ নেওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। পরীক্ষা শুরুর আগে এ সময়ে এসব শিক্ষার্থীর এখন আর পরীক্ষা নেওয়ার সুযোগ নেই। রেজিস্ট্রেশন না করা শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৫ অথবা ১০ জন হলে অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পরীক্ষা নেওয়ার ব্যবস্থা করা যেত।
নির্ধারিত সময়ের পরও বিশেষ অনুমতিতে অনেক শিক্ষালয় রেজিস্ট্রেশন করেছে। এই স্কুলটি করেনি। পরীক্ষা শুরুর আগ মুহূর্তে তাদের ঘুম ভেঙেছে। এখন বোর্ডের কিছু করার সুযোগ নেই। এমন গাফিলতির জন্য স্কুলটির প্রধান শিক্ষক দায়ী।’
চট্টগ্রাম বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ মাহবুব হাসান বলেন, ‘পরীক্ষা কেন্দ্র চূড়ান্ত, আসন বিন্যাস, পরীক্ষার্থীর সংখ্যা অনুসারে প্রশ্নপত্র ট্রাঙ্ক ভর্তি করা হয়ে গেছে। পরীক্ষার্থীদের প্রবেশপত্রও চূড়ান্ত হয়ে গেছে। এমন অবস্থায় রেজিস্ট্রেশনবিহীন ১১৫ শিক্ষার্থীকে পরীক্ষায় বসানো অসম্ভব।’
হালিশহর থানার বি ব্লকে আইডিয়াল হাইস্কুলে গেলে স্কুলে থাকা শিক্ষকসহ অন্যান্য কর্মকর্তা অন্যত্র সটকে পড়েন। স্কুলের প্রধান শিক্ষক হামিদুর ইসলামের কক্ষ খোলা থাকলেও চেয়ারে তাকে পাওয়া যায়নি। তার কক্ষে থাকা কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তারাও এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি। এ সময় অনেকে নিজের পরিচয় গোপন ও নিজের সঠিক নামও বলতে রাজি হননি। বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর স্কুলের সহকারী শিক্ষক মোহাম্মদ ইউসুফ প্রধান শিক্ষকের কক্ষে আসেন। শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন না হওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘স্কুলের সব কাজই করেন তিনি (প্রধান শিক্ষক)। শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন কখন করবেন, কীভাবে করবেন, কেন করেননি এগুলোর কিছুই আমরা জানি না; সবকিছু তিনিই জানেন। ১১৫ শিক্ষার্থীর রেজিস্ট্রেশন না হওয়ার এটি আমরা শিক্ষকরাও জানতাম না। ক’দিন আগে এটি শুনেছি। এটি শোনার পর থেকে আমরাও চিন্তায় আছি। শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা আমাদের কাছে কেন রেজিস্ট্রেশন হয়নি তার জবাবও চাইতে আসছেন।’
হিসাবরক্ষকের দায়িত্বে থাকা সায়মা সেলিম বলেন, ‘প্রধান শিক্ষক অফিসে আসেননি। কোথায় গেছেন জানি না। শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন না হওয়ার এটি শুনেছি। তবে এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারব না।’ জেএসসি পরীক্ষায় অংশ নেওয়া অনিশ্চিত শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ভর্তি, মাসিক ফিসহ কোন খাতে কী পরিমাণ টাকা আদায় করা হয়েছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি তা জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
অনেকক্ষণ অপেক্ষা করলেও প্রধান শিক্ষক হামিদুর ইসলামকে স্কুলে পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে কথা বলতে হামিদুর ইসলামের দুটি মোবাইল-ফোন” target=”_blank”>মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার একটি মোবাইল-ফোন” target=”_blank”>মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়; অপরটিতে রিং হলেও তিনি রিসিভ করেননি। তবে রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম সম্পন্ন করতে বোর্ডসহ সংশ্নিষ্টদের ম্যানেজ করতে হামিদুর ইসলাম নানা মহলে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন বলে জানা গেছে।
এদিকে রেজিস্ট্রেশনের জন্য প্রয়োজনীয় টাকা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায় করলেও তাদের যে রেজিস্ট্রেশন হয়নি সে এটি শিক্ষার্থীসহ অভিভাবকদের কাছে গোপন রেখেছিল স্কুল কর্তৃপক্ষ। এখন দুশ্চিন্তায় পড়েন ১১৫ শিক্ষার্থীসহ তাদের অভিভাবকরা। এত বড় ভুলের জন্য তারা প্রধান শিক্ষকের উদাসীনতা ও গাফিলতিকেই দায়ী করছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ক’জন শিক্ষার্থী জানায়, অন্য স্কুলের বন্ধুরা ভালো ফলাফল করতে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে ব্যস্ত। অথচ আমরা সেখানে পরীক্ষায় অংশ নিতে পারব কি-না তা নিয়েই দুশ্চিন্তায় আছি। রেজিস্ট্রেশনসহ স্কুল কর্তৃপক্ষযখন যেসব ফি’র কথা বলেছে আমরা তা তাদের পরিশোধ করেছি। অথচ পরীক্ষা শুরুর আগে শুনতে পাই এখনও আমাদের রেজিস্ট্রেশনই হয়নি। স্কুল কর্তৃপক্ষযে অনিয়ম করেছে তা ক্ষমার অযোগ্য। আমরা প্রধান শিক্ষকসহ সংশ্নিষ্টদের কঠোর শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।
শিক্ষা বোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক কাজী নাজিমুল ইসলাম বলেন, স্কুলটি একটি অনুমোদনহীন প্রতিষ্ঠান। রেজিস্ট্রেশনের জন্য কয়েক দফা সময় দিলেও তা সম্পন্ন করেনি তারা। এ বিষয়ে তারা আমাদের কিছু জানায়নি।
২০০৩ সালে হালিশহর আইডিয়াল হাইস্কুল প্রতিষ্ঠার ১৪ বছর পরও অনুমোদন নেয়নি প্রতিষ্ঠানটি। স্কুলটিতে প্রথম থেকে দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক) পর্যন্ত পাঠদান চালু থাকলেও পাঠদানের অনুমতি বা স্বীকৃতি নেই। বর্তমানে ছয় শতাধিক শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছে স্কুলটিতে। শিক্ষকের দায়িত্বে আছেন ১৪ জন।
আরো পড়ুন: