৩৭ তম প্রিলি নিয়ে কিছু কথা—–
অনেকেই যারা প্রথমবারের মত প্রিলি পরিক্ষায় অংশ নিচ্ছে তারা অনেকেই খুব চিন্তিত থাকেন । যে যেকোনো পরীক্ষার বিষয়ে আপনাকে খুব বেশি সিরিয়াস হওয়া যাবেনা, খুব বেশি সিরিয়াস হলে পরীক্ষার হলে গিয়ে ভরাডুবির সম্ভাবনা বাড়ে, আমি এই কথাগুলো বারবার বলি কারন আমি অনেক স্টুডেন্ট দেখেছি যারা খুব ভাল স্টাডি করেও শুধুমাত্র নার্ভাস থাকার কারনে আশানুরূপ পরীক্ষা দিতে পারেনি । খুব simple ভাবে প্রস্তুতি নেয়া শুরু করে দিন, অনেকদিন ধরে দিনরাত স্টাডি করলেই যে সফল হওয়া যায় বিষয়টা কিন্তু এমন নয়, এখানে স্টাডিটা proper way তে হতে হবে এবং আপনাকে অবশই কৌশলী হতে হবে । অযথা সব স্টাডি না করে পরীক্ষাতে যে টাইপ প্রশ্নগুলো বেশি আসে সেগুলো স্টাডি করতে হবে, প্রিলির সময় একটা ভাল প্রস্তুতি এমনভাবে নেবেন যেন তা লিখিত পরীক্ষার অনেকটুকুও cover করে । প্রতিটা বিষয় ৭ দিন করে সময় নিয়ে বাংলা, ইংরেজী, বিজ্ঞান, গনিত, সাধারন জ্ঞান ইত্যাদি পরে ফেলুন । ৭ দিনের মধ্যে যেটি পারবেন পড়ে ফেলবেন এবং এরপর অন্য বিষয় শুরু করবেন । কখনোই প্রতিটা বিষয়ে আপনার প্রস্তুতি নিয়ে আপনি সন্তুষ্ট হতে পারবেন না, তবে আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে আপনি যেটি পড়েছেন এর মধ্যে থেকে যেসব প্রশ্ন আসবে তা যেন আপনার ভুল না হয় । যেকোনো পরীক্ষাতে সাধারনত সহজ প্রশ্নের সংখ্যা বেশি থাকে আর কঠিন প্রশ্ন কম থাকে । কিন্তু কঠিন প্রশ্নগুলো এমনভাবে প্রশ্নে থাকে যেন সবাই সেগুলো নিয়ে মাথা ঘামায় । আপনাদের শুধু সহজ প্রশ্নগুলোর দিকে নজর দিলেও চলবে । পরীক্ষাতে তো আর সব পারার দরকার নেই কি বলুন ? এখন আপনি প্রিলির জন্য যেভাবে শুরু করতে পারেন —–
১– শুরুতেই বিগত বছরের প্রশ্নগুলো বারবার দেখুন , বিষয়ভিত্তিক আলাদা করেও দেখুন, প্রাথমিক ধারনা হবে প্রশ্ন কেমন হয়, যেটা খুব দরকার, এতে করে আপনি কিছুটা বুঝে যাবেন কিভাবে আপনার কোন ধরনের টপিকগুলো স্টাডি করা উচিত ।
২– যেকোনো পরীক্ষার প্রস্তুতির শুরুতে আগে সকল বিষয়গুলো মোটামুটি আয়ত্তে আনার চেষ্টা করা উচিৎ, অর্থাৎ শুরুতে প্রতিটা বিষয়ের উপর minimum preparation নিয়ে ফেলা উচিৎ । পরে আবার আলাদাভাবে প্রতিটা বিষয়ের জ্ঞান যতটা বাড়ানো যায় সেই চেষ্টা করতে হবে ।
৩– শুরুতে বাংলার জন্য নবম- দশম শ্রেণীর বোর্ডের গ্রামার বই থেকে বাগধারা, প্রতিশব্দ, বিপরীত শব্দ, দেশি-বিদেশী শব্দ, সমাস, সন্ধি , কারক-বিভক্তি,বচন, লিঙ্গ এসব অর্থাৎ প্রিলির গ্রামার সিলেবাসের অংশটুকু পড়ে ফেলুন, এরপর সমিত্র শেখর স্যার এর বাংলা বই থেকে সাহিত্যের প্রাচীনযুগ মধ্যযুগ আর আধুনিকযুগ ভিত্তিক ছোট ছোট প্রশ্নগুলো পড়ে ফেলুন, এই বই থেকে গ্রামার এর ছোট প্রশ্নগুলোও পড়ে ফেলুন ।
৪– বিজ্ঞান বাজারের যেকোনো ভালো গাইড বই আগে একবার রিডিং দিন এবং পরে আপনার সায়েন্সের কোন বন্ধুর সাথে আলোচনা করে ফেলুন ।
৫– গনিত এর জন্য ক্লাস ১০ এর গনিত বই থেকে বীজগণিত , ত্রিকোণমিতি , পরিমিতি এর সুত্র এবং উদাহরণ এর math গুলো একটু দেখুন, ক্লাস ৮ এর পাটিগণিতের সুত্র এবং ছোট ছোট math গুলো দেখুন, অথবা বাজারের যেকোনো প্রচলিত গাইড বই একবার সমাধান করে তারপর মেইন বই দেখতে পারেন, গনিত বুঝে বুঝে করবেন, আগেই সমাধান দেখবেন না, আগে নিজে maximum try করবেন math problem solve করার ।
৬– ইংরেজী নিয়ে আগে যেটা বলেছি সেটাই অনুসরণ কর, ইংরেজী দৈনিক চর্চার বিষয়, প্রতিদিন গ্রামার এর যেকোনো একটি করে টপিক পড়বেন, vocabulary, idioms phrase, preposition , group verb, proverb ইত্যাদি দৈনিক কিছু কিছু করে মুখস্থ করবেন যেকোনো বই থেকে ।
৭– সাধারন জ্ঞানের জন্য গাইড বাজারে আসে সেগুলো ভালোই হেল্পফুল, আজকের বিশ্ব, নতুন বিশ্ব , আধুনিক বিশ্ব এমন যেকোনো একটা বই সাহায্য নিতে পারেন, তবে বোকার মত পুরোটা পড়তে যাবেন না । আগে এই সমস্ত বইয়ের পেছনের অংশে বিভিন্ন ভার্সিটির এবং বি সি এস এর যেসব প্রশ্ন সমাধান করা থাকে সেগুলো দেখে ফেলুন । পরবর্তীতে বাংলাদেশ অংশ থেকে ইতিহাস, ভূগোল, প্রাচীন বাংলা, পুরাকীর্তি , সাম্প্রতিক অংশ , মুক্তিযুদ্ধ ইত্যাদি যেটি পারুন শর্টকাট দেখে ফেলুন, পরে আন্তর্জাতিক অংশ দেখুন । প্রতি মাসের কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স বা কারেন্ট ওয়ার্ল্ড থেকে MCQ প্রশ্নগুলো দেখতে পারেন । এসব বই তে টপিক ভিত্তিক এক কথায় প্রশ্ন এবং উত্তর দেয়া থাকে, সেগুলো দেখে ফেলুন । সাধারন জ্ঞানের যেহেতু কোন সীমা নেই তাই এই বিষয়টা নিয়ে অতটা মাথা ঘামাবেন না, সব বিষয় প্রস্তুতি নেয়া শেষ হলে সাধারন জ্ঞান শুরু করবেন, এবং ৭ দিন সময় নিয়ে ৭ দিনের মধ্যে যেটি পারবেন দেখে নেবেন । এজন্যই বিগত বছরের প্রশ্ন গুলো নিয়ে ঘাটাঘাটি করতে বলেছি, তাহলে কিছুটা বুঝতে পারবেন যে কি টাইপ প্রশ্ন স্টাডি করতে হবে আর কোন টাইপ প্রশ্ন বাদ দিতে হবে ।
৮– স্টাডি কিন্তু কমবেশি সবাই ভালোই করে, কিন্তু পরীক্ষাটা সবার সমান না হবার প্রধান কারন পরীক্ষার প্রশ্ন নিয়ে প্ল্যান না করা । কিভাবে কোন টাইপ প্রশ্নে কিভাবে উত্তর করতে হবে সেটা না জানা । প্রিলি তে কত পেলে চান্স পাবেন এটার কোন নির্দিষ্ট সীমা নেই, এটা নির্ভর করে প্রশ্নের ওপর । প্রশ্ন কঠিন হলে কাটমার্ক কম হবে আর প্রশ্ন সহজ হলে সেটা বেশি হবে । এটাই কি স্বাভাবিক নয় ? আপনার মোটামুটি প্রস্তুতি শেষ হলে এবার বিগত বছরের প্রতিটা বছরের প্রশ্ন নিয়ে আবার ঘাটাঘাটি কর । এবার একটি খাতায় একেক বি সি এস এর প্রশ্ন গুলোতে আপনার কাছে মোটামুটি সহজ লেগেছে কয়টা প্রশ্ন আর খুব ঝামেলাপূর্ণ প্রশ্ন কয়টা সেটা আলাদা কর । দেখবেন সহজ প্রশ্নের সংখ্যাই বেশি । একটি প্রশ্নে যতগুলো প্রশ্ন পারার মত থাকে সেগুলো পারাটাই হচ্ছে মুখ্য বিষয় । অযথা uncommon টাইপের প্রশ্নগুলো common ফেলার চেষ্টা করা বা পারার চেষ্টা করার কি দরকার ?? সব পারা লাগবে এমন তো কোন কথা নেই তাইনা ? প্রস্তুতিটা নিজের মত করে নেয়া উচিত । নানান জনের সাথে পরামর্শ করলে misguided হবার, গুজব শোনার সম্ভাবনা থাকে । এমন কারো থেকে পরামর্শ নিন যিনি আপনার থেকে অভিজ্ঞ । যেকোনো গুজবে কান না দিয়ে নিজের মত স্টাডি কর । পারলে ২-৩ জন মিলিয়ে একটা স্টাডি টিম বানাতে পারেন যারা দিন শেষে একবার আড্ডার সময় কে কি পড়লেন সেটা ঝালাই করে নিতে পারেন । আপনার passion এবং dedication থাকলেই আপনার পরিস্রম করতে ইচ্ছে করবে, সবাই তো জানে পরিস্রম করলে ভালো পজিশনে যাওয়া যায় তবুও সবাই কি পারে ? যারা ধৈর্য নিয়ে পরিস্রম করে যাবে তারা সফল হয় ই, কখনও হতাশ হউয়া যাবেনা এবং প্রতিটা চাকুরীর পরীক্ষায় অংশগ্রহন করবেন প্লিজ । আপনার অভিজ্ঞতা আর কনফিডেন্স বাড়বে । কারন শুরুতে আপনার যেকোনো একটা চাকুরী খুব দরকার । পরে চেষ্টা করবেন যত বড় পজিশনে যাওয়া যায় । keep patience, try your best.you will definitely succeed.may god always bless you guys.. good luck.
বি দ্র– লেখায় কোন অনাকাঙ্ক্ষিত ভুল হলে ক্ষমাপ্রার্থী । আরেকটি কথা আপনাদের অনেকেরই দুশ্চিন্তা আছে আমাকে নিয়ে যে আমি কেন পেশা পরিবর্তন করলাম, কেন এটা করলাম কেনসেটা করলেম , নানান প্রশ্ন । দেখুন,প্রতিটা মানুষের প্ল্যান, টার্গেট, job preference ভিন্ন হতেই পারে । কাজেই আমাকে নিয়ে না ভেবে নিজেকে নিয়ে ভাবুন প্লিজ। সেই সময়টাই কাজে আসবে । আমি জাস্ট আমার সাধ্যমত আপনাদের গাইড করার চেষ্টা করছি মাত্র । ভালো থাকবেন সবাই ।
আরো পড়ুন: