
লেখক পরিচিতি
পাঠ পরিচিতি
অনুশীলনী কর্ম
সাহিত্য বিশাল পরিধির একটি বিষয়। আমরা সামগ্রিকভাবে ‘সাহিত্য’ বলি বটে, কিন্তু বিচারের সময়ে গদ্য, পদ্য কিংবা গল্প উপন্যাস কবিতা নাটক ইত্যাদি স্বতন্ত্রভাবে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করে হৃদয়ঙ্গম করি। সার্বিকভাবে সাহিতে্যর রূপ বলতে আমরা সাহিতে্যর বিভিন্ন শাখা বুঝে থাকি, যেমন-কবিতা, মহাকাব্য, নাটক, কাব্যনাট্য, ছোটগল্প, উপন্যাস, রম্যরচনা ইত্যাদি। আর ‘রীতি’ হলো ঐ শাখাগুলো কীভাবে নির্মিত হয়েছে সে বিষয়ে র্পূযবেক্ষণ ও আলোচনা। কবিতা ছন্দোবদ্ধ ভাষায়, অর্থাৎ পদ্যে, যেটি লিখিত হয় তাকেই আমরা ‘কবিতা’ বলে থাকি। কবিতার প্রধান দুটি রূপভেদ হলো-মহাকাব্য ও গীতিকবিতা। বাংলা ভাষায় মহাকাবে্যর চষ্ফান্ত সফল রূপ প্রকাশ করেছেন মাইকেল মধুসদন দত্ত তাঁর ‘মেঘনাদন্ডবধ’ কাবে্য। মহাকাব্য রচিত হয় যুদ্ধবিগ্রহের কোনো কাহিনী অবলম্বন করে। ভারতবর্ষ উপমহাদেশের সর্বপ্রাচীন দুটি কাহিনীর একটি হলো ‘রামায়ণ’ আর অন্যটি ‘মহাভারত’। ‘মহাভারত’ সম্র্পূকে বলা হয়ে থাকে-‘যা নেই ভারতে তা নেই ভারতে’, এর অর্থ : ‘মহাভারত’ গ্রন্থে যেটি নেই তা ভারতবর্ষেও নেই অর্থাৎ ভারতবর্ষে ঘটে নি বা ঘটতে পারে না। ‘মহাভারত’ আয়তনে বিশাল। ‘রামায়ণ’ তার তুলনায় ক্ষুদধ; কাহিনী হলো : পতœী সীতাকে নিয়ে যুবরাজ রামচন্দ্রের বনবাস, তাঁদের অনুগামী হয় কণিষ্ঠ ভ্রাতা ল২ণ; বনবাসে থাকার সময়ে লঙ্কা দ্বীপের রাজা রাবণ তার বোন শর্পনখার সম্মান রক্ষার জন্য সীতাকে হরণ করে রথে চড়িয়ে আকাশপথে উড়িয়ে নিয়ে গিয়ে লঙ্কায় তার বাগান বাড়িতে বন্দী করে রাখে। সীতাকে উদ্ধারের জন্য রাম ও রাবণের মধ্যে যে যুদ্ধ হয় সেটিই রামায়ণ-কথা। অর্থাৎ এককথা, মহাকাব্য হলো অতিশয় দীর্ঘ কাহিনী-কবিতা। মহাকাবে্যর মল লক্ষ্য গল্প বলা, তবে তাকে গদ্যে না লিখে পদ্যে লিখতে হয়। এর বাইরে আছে সংক্ষিপ্ত আকারের কবিতা, যেটি ‘গীতিকবিতা’ হিসেবে পরিচিত। ঔপন্যাসিক বঙ্কিমচন্দ্র কিছু গান ও কবিতা রচনা করলেও তা তাঁর প্রধান সৃষ্টিকর্ম নয়। তিনি বলেছিলেন : ‘বক্তার ভাবোচ্ছ্বাসের পরিস্ফটন মাত্র যাহার উদ্দেশ্য, সেই কাব্যই গীতিকাব্য।’ এই মন্তব্য সর্বাংশে সত্য। গীতিকবিতা কবির অনুভতির প্রকাশ হওয়ায় সাধারণত দীর্ঘকায় হয় না। কিন্তু ক্ষেত্রবিশেষে যদি দীর্ঘও হয় তাতেও অসুবিধে নেই, যদি কবির মনের র্পূণ অভিব্যক্তি সেখানে প্রকাশিত হয়ে থাকে। বাংলা সাহিতে্য গীতিকবিতার আদি নিদর্শন বৈষ্ণব কবিতাবলি।
১৪০ মাধ্যমিক বাংলা সাহিত্য
যদি গীতিকবিতাকে শ্রেণিবিভাজনের অন্তর্গত করতেই হয়, তাহলে এ রকম শ্রেণিবিভাগ করা যুক্তিযুক্ত বলে মনে হয় : ভক্তিমলক (যেমন- রবীন্দ্রনাথ, অতুলপ্রসাদ, রামপ্রসাদ, রজনীকান্তের রচনা), স্বদেশপধীতিমলক (যেমন- বঙ্কিমচন্দ্রের ‘বন্দে মাতরম’, রবীন্দ্রনাথের অসংখ্য কবিতা-গান), প্রেমমলক, প্রকৃতিবিষয়ক চিন্ত ামলক বা দর্শনাশ্রয়ী কবিতা। শোক-গাথা বা শোক আশ্রয় করে লিখিত কবিতাও এর সমর্পূযায়ভুক্ত। বাংলা কবিতায় বিশেষ দুটি ধারার জনক কাজী নজরুল ইসলাম ও জসীম উদ্্দীন। প্রথম জন আমাদের সাহিতে্য ‘বিদ্রোহী কবি’ ও দ্বিতীয় জন ‘পল্লিকবি’ হিসেবে স্থায়ী আসন লাভ করেছেন। নজরুলের কবিতায় যে উদ্দীপ্ত কণ্ঠস্বর ও দৃপ্ত ভাবের দেখা মেলে তা র্পূবে বাংলা কাবে্য ছিল না। জসীম উদ্্দীনের ‘নকশীকাঁথার মাঠ’ ও ‘সেজনবাদিয়ার ঘাট’ জাতীয় কোনো কাব্য র্পূবে কেউ রচনা করন নি এবং এক্ষেত্রে তাঁর অনুসারীও কেউ নেই। নাটক বিশ্বসাহিতে্য নাটক সর্বাপেক্ষা প্রাচীন। তবে মনে রাখা দরকার, নাটক সেকালে পুস্তকাকারে মুদিধত হয়ে (তখন তো ছাপাখানা ছিল না) ঘরে ঘরে পঠিত হত না, নাটক অভিনীত হতো। নাটকের লক্ষ্য পাঠক নয়, নাটকের লক্ষ্য সর্বকালেই দর্শকসমাজ। তার কারণ সাহিতে্যর সকল শাখার ভিতরে নাটকই একমাত্র যেটি সরাসরি সমাজকে ও পাঠকগোষ্ঠীকে প্রভাবিত করতে চায় এবং সক্ষমও হয়। সংস্কৃত আলঙ্কারিকবৃন্দ নাট্যসাহিত্যকে কাব্যসাহিতে্যর মধ্যে গণ্য করেছেন। প্রাচীনকালে সে রকমই প্রথা ছিল। যেমন, শেক্সপীয়রও তাঁর সকল নাটক কবিতায় রচনা করেছেন। সংস্কৃত আলঙ্কারিকদের মতে কাব্য দুই ধরনের : দৃশ্যকাব্য ও শধাব্যকাব্য। নাটক প্রধানত দৃশ্যকাব্য, সেহেতু নাটকের অভিনয় মানুষজনকে দর্শন করানো সম্ভবপর না হলে নাট্যরচনার মল উদ্দেশ্যই ব্যর্থ হয়। নাটক সচরাচর পাঁচ অঙ্কে বিভক্ত থাকে : ১. প্রারম্ভ, ২. প্রবাহ (অর্থাৎ কাহিনীর অগ্রগতি), ক্ত. উৎকর্ষ বা ঈষরসধী, ৪. গ্রন্থিমোচন (অর্থাৎ পরিণতির দিকে উত্তরণ), ৫. উপসংহার। কাহিনীর বিষয়বস্তু ও পরিণতির দিক থেকে বিচার করলে নাটককে প্রধানত টধ্যাজেডি (ঞৎধমবফু বা বিয়োগান্ত নাটক), কমেডি (ঈড়সবফু বা মিলনান্ত নাটক) এবং প্রহসন (ঋড়ৎপব)- এই তিনটি বিভাগে বিভক্ত করা যায়। এদের মধ্যে টধ্যাজেডিকেই সর্বশ্রেষ্ট গণ্য করা হয়। টধ্যাজেডির ভিতরে দুইটি অংশ ক্ষিয়াশীল থাকে : প−ট (চষড়ঃ বা নাটকের আখ্যানভাগ), চরিত্রসৃষ্টি, সংলাপ, চিন্তা বা জীবনদর্শনের পরিস্ফটন, মঞ্চায়ন, সমস্ত কিছুর সমন্বয়ে সুরসঙ্গতি। গ্রিক দার্শনিক ও সাহিত্যবেত্তা আরিষ্টোটল বলতে চেয়েছেন, রঙ্গমঞ্চে নায়ক বা নায়িকার জীবনকাহিনীর দৃশ্যপরম্পরা উপস্থাপনের মাধ্যমে যে নাটক দর্শকের হৃদয়ের ভয় ও করুণা প্রশমিত করে তার মনে করুণ রসের আনন্দ সৃষ্টি করে, তাই হলো টধ্যাজেডি। কমেডি বিষয়ে আরিষ্টটলের বক্তব্য এ রকম : মানবচরিত্রের যে কৌতুকপ্রদ কি কাউকে পীড়ন করে না, ব্যথা দেয় না, হাস্যরস সৃষ্টি করে, তা-ই কমেডির উপজীব্য। এই কৌতুকের জন্ম ইচ্ছার সঙ্গে বাস্তব অবস্থার, আকাক্সক্ষার সঙ্গে প্রাপ্তিযোগের, উদ্দেশে্যর সঙ্গে উপায়ের বা কথার সঙ্গে কাজের অসঙ্গতির মধ্যে। কমেডি আমাদের মানবসুলভ ত্রুটিবিচুতি ও নির্বুদ্ধিতার পরিণাম প্রদর্শন করে অশোভন দুর্বলতার হাত থেকে মুক্তি দিয়ে আমাদেরকে সুস্থ ও স্বাভাবিক করে তোলে। শ্রেণিবিন্যাসের বিবেচনায় নাটককে বহু শ্রেণিতে বিভক্ত করা সম্ভব। যেমন-ধধ”পদী (বা ক্ল্যাসিক্যাল) নাটক, রোম্যান্টিক নাটক। অথবা ধরা যাক- কাব্যধর্মী নাটক, সামাজিক নাটক, চক্ষান্তমলক নাটক, ঐতিহাসিক নাটক, পৌরাণিক নাটক, প্রহসন। এসব ব্যতিরেকেও হতে পারে গীতিনাট্য, নৃত্যনাট্য, চরিতনাটক, উপন্যাসের নাট্যরূপ, সাঙ্কেতিক নাটক, সমস্যাপ্রধান নাটক, একাঙ্কিকা ইত্যাদি। টধ্যাজেডি ও কমেডি-মোটা দাগে এই দুইটি বিভাজন তো রয়েছেই।
মাধ্যমিক বাংলা সাহিত্য ১৪১
বাংলা নাটকের ক্ষেত্রে প্রথম যুগান্তকারী প্রতিভা মাইকেল মধুসদন দত্ত এবং দীনবন্ধু মিত্র। মাইকেলের লেখনীতেই সর্বপ্রথম টধ্যাজেডি, কমেডি ও প্রহসন বাংলা ভাষায় সৃষ্টি হয়। তারপর দীনবন্ধু আবির্ভত হন সামাজিক নাটক নিয়ে। তাঁর ‘নীলদর্পণ’ নাটক এর শ্রেষ্ঠ উদাহরণ। পরবর্তী সময়ে গিরিশচন্দ্র ঘোষ (১৮৪ক্ত- ১৯১১) একইসঙ্গে নাট্যকার ও অভিনেতা ছিলেন। তিনি পৌরাণিক নাটক (‘জনা’, ‘বুদ্ধদেব’) ঐতিহাসিক নাটক (‘কালাপাহাড়’), সামাজিক নাটক (‘প্রফুল্ল’) ইত্যাদি রচনা করেছেন। এরপর দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের (১৮৬ক্ত-১৯১ক্ত) ঐতিহাসিক নাটক ‘চন্দ্রগুপ্ত’ ও ‘শাজাহান’ বাঙালি দর্শকদের হৃদয় জয় করে নেয়। তাঁর সমসাময়িকগণের মধ্যে অমৃতলাল বসু, ক্ষীরোদপ্রসাদ বিদ্যাবিনোদ উল্লেখযোগ্য। আর তার পরেই আবির্ভাব কবি রবীন্দ্রনাথের, যিনি বাংলা নাটকেরও মোড় ঘুরিয়ে দেন নানা দিকে : রক্তকরবী, ডাকঘর, অরূপরতন প্রতীকধর্মী নাটক হিসেবে বাংলা সাহিতে্য কালজয়ী হয়ে রয়েছে। ছোটগল্প : রবীন্দ্রনাথ তাঁর একটি কবিতায় যেটি বলেছিলেন সে-কথাটি ছোটগল্পের প্রক …তি সম্র্পূকে এখনও প্রম াণ্য ব্যাখ্যা হিসেবে গণ্য হয়ে আসছে। তিনি লিখেছিলেন :
ছোট প্রাণ, ছোট ব্যথা ছোট ছোট দুঃখ কথা নিতান্তই সহজ সরল সহ ̄ধ বিস্মৃতি রাশি প্রত্যহ যেতেছে ভাসি
তারি দুচারিটি অশ্রুজল। নাহি বর্ণনার ছটা ঘটনার ঘনঘটা
নাহি তত্ত্ব নাহি উপদেশ অন্তরে অত…প্তি রবে সাঙ্গ করমিনে হবে
শেষ হ’য়ে হইল না শেষ। শেষ হয়ে হইল না শেষ’-কথাটি খুবই গুরুত্বর্পূণ। এ-কথার ভিতরেই বলে দেওয়া হলো যে, ছোটগল্প কখনোই কাহিনীর ভিতরে ঘটনার শুরু থেকে শেষ র্পূযন্ত বলে দেয় না- যেমনটা ঘটে উপন্যাসের ক্ষেত্রে। বাংলা সাহিতে্য ‘ছোটগল্প’ শব্দটি ব্যবহৃত হচ্ছে চল্লিশ-পঞ্চাশ বৎসরের বেশি নয়। তার র্পূবে শুধু ‘গল্প’ বলা হত। বড়ো আকারের গল্প হলে ‘উপন্যাসিকা’ কথা চল ছিল, অর্থাৎ ছোট উপন্যাস। সাহিতে্যর যত শাখা আছে, যেমন কাব্য মহাকাব্য নাটক উপন্যাস ইত্যাদি, সে-সবের মধ্যে ছোটগল্পই হচ্ছে বয়সে সর্বকণিষ্ঠ। ছোটগল্পেও থাকে উপন্যাসের মতোই কোনো-না-কোনো কাহিনীর বর্ণনা, তবে তা শুরু থেকে শেষ র্পূযন্ত নয়, কাহিনীর ভিতরে থেকেই বেছে নেওয়া কোনো অংশ থাকে মাত্র। ইংরেজী সাহিতে্যর উদাহরণ অনুসরণ করে বাংলায় যেমন উপন্যাস লিখিত হয়েছে, ছোটগল্পেরও অনুপ্রেরণা এসেছে পা-াত্য সাহিত্য থেকেই। ‘ছোটগল্প’ বলতে কোন ধরনের কাহিনী বোঝাবে সে বিষয়ে বিশ্ববিখ্যাত মার্কিন ছোটগল্পকার এডগার অ্যালান পো (১৮০৯-১৮৪৯) মনে করতেন আধ ঘণ্টা থেকে দু-এক ঘণ্টার মধ্যে পড়ে ওঠা যায় এমন কাহিনীই ‘ছোটগল্প’। ইংরেজ লেখক এইচ.জি.ওয়েল্্স্্ বলতেন যে ছোটগল্পের আয়তন এমন হওয়া সঙ্গত যেন ১০ থেকে ৫০ মিনিটের ভিতরে পড়া শেষ হয়। ইংরেজী ভাষায় পো-কে ছোটগল্পের জনক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তিনি লিখেছেন : ওহ ঃযব যিড়ষব পড়সঢ়ড়ংরঃরড়হ ঃযবৎব ংযড়ঁষফ নব হড় ড়িৎফ ৎিরঃঃবহ ড়ভ যিরপয ঃযব ঃবহফবহপু, ফরৎবপঃ ড়ৎ রহফরৎবপঃ, রং হড়ঃ ঃড় ঃযব ড়হব ঢ়ৎব-বংঃধনষরংযবফ ফবংরমহ. ….. ঁহফঁব নৎবারঃু রং লঁংঃ ধং বীপবঢ়ঃরড়হধষ যবৎব ধং রহ ঃযব ঢ়ড়বস, নঁঃ ঁহফঁব ষবহমঃয রং ুবঃ সড়ৎব ঃড় নব ধাড়রফবফ. বলাই বাহুল্য, উপন্যাসে যেমন বিস্তারিতভাবে কাহিনী বর্ণনা থাকে, ছোটগল্পের পরিধি ক্ষুদধ হওয়ার কারণে ঘটনার পুঙ্খানুপ ুঙ্খ উপস্থাপন সেখানে সম্ভব নয় এবং অপধয়োজনীয়ও বটে। সাহিত্য গবেষক শ্রীশচন্দ্র দাশ যথার্থই
১৪২ মাধ্যমিক বাংলা সাহিত্য
বলেছেন : ‘আসল কথা এই যে, ছোটগল্প আকারে ছোট হইবে বলিয়া ইহাতে জীবনের র্পূণাবয়ব আলোচনা থাকিতে পারে না, জীবনের খন্ডাংশকে লেখক যখন রস-নিবিড় করিয়া ফুটাইতে পারেন, তখনই ইহার সার্থকতা। জীবনের কোনো একটি বিশেষ মুহর্ত কোনো বিশেষ পরিবেশের মধ্যে কেমন ভাবে লেখকের কাছে প্রত্যক্ষ হইয়াছে, ইহা তাহারই রূপায়ণ। আকারে ছোট বলিয়া এখানে বহু ঘটনা-সমাবেশ বা বহু পাত্রপাত্রীর ভিড় সম্ভব পর নহে। ছোটগল্পের আরম্ভ ও উপসংহার নাটকীয় হওয়া চাই। সত্য কথা বলিতে কি, কোথায় আরম্ভ করিতে হইবে এবং কোথায় সমাপ্তির রেখা টানিতে হইবে, এই শিল্পদৃষ্টি যাহার নাই তাহার পক্ষে ছোটগল্প লেখা লাঞ্ছনা বই কিছুই নহে।’ বাংলা ভাষায় সার্থক ছোটগল্পকারের অনন্য দৃষ্টান্ত রবীন্দ্রনাথ। চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য অনুসারে ছোটগল্প বহুপ্রকার হতে পারে। সাধারণত শ্রেণিবিভাগ হিসেবে এগুলোকে উল্লেখ করা যায় : ১. প্রেমবিষয়ক, ২. সামাজিক, ক্ত. প্রকৃতি ও মানুষ সম্র্পূকে, ৪. অতিপ্রাকৃত কাহিনী, ৫. হাস্যরসাত্মক, ৬. উঞগ¢ট কল্পনাশ্রয়ী, ৭. সাঙ্কেতিক বা প্রতীকধর্মী, ৮. ঐতিহাসিক, ৯. বিজ্ঞানভিত্তিক, ১০. গার্হস্থ বিষয়ক, ১১. মনস্তাত্ত্বিক, ১২. মনুষে্যতর প্রাণিজগৎ, ১ক্ত. বাস্তবনিষ্ঠ, ১৪. গোয়েন্দাকাহিনী বা ডিটেকটিভ গল্প, ১৫. বিদেশি পটভমিকায় রচিত গল্প। আমাদের জন্য গর্বের বিষয় এটাই যে, বাংলা ভাষায় উপরোক্ত সব ক’টি শ্রেণির গল্পই বাঙালি গল্পলেখকবৃন্দ লিখে গেছেন ও এখনো লিখছেন। উপন্যাস সাহিতে্যর শাখা প্রশাখার মধ্যে উপন্যাস অন্যতম। শুধু তাই নয়, পাঠক সমাজে উপন্যাসই সর্বাধিক বহুল পঠিত ও জনপ্রিয়তার শীর্ষে। উপন্যাসে কোনো একটি কাহিনী বর্ণিত হয়ে থাকে এবং কাহিনীটি গদ্যে লিখিত হয়। কিন্তু র্পূবে এমন এক সময় ছিল যখন কাহিনী পদ্যে লেখা হত; তখন অবশ্য তাকে উপন্যাস বলা হত না। যেমন বাংলা সাহিতে্যর মধ্যযুগে সব ধরনের মঙ্গলকাব্যই ছন্দে রচিত এবং তাতে গল্প বা কাহিনীই প্রকাশিত হয়েছে, তবু তাকে উপন্যাস না বলে কাব্যই বলা হত – যেহেতু কবিতার ন্যায় তা ছন্দে রচিত হয়েছে। উপন্যাস রচিত হয় গদ্যভাষায়, এই তথ্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। ছন্দোবদ্ধ রচনার অনেক পরে যেহেতু গদ্যের আবির্ভাব তাই অপেক্ষাকৃত আধুনিক কালেই গদ্যে কাহিনী লেখা হয়েছে, যেমন- গল্প বা ছোটগল্প, উপন্যাস, রম্যকাহিনী ইত্যাদি। উপন্যাসের প্রধান উপজীব্য হলো প−ট (চষড়ঃ)। ঐ প−ট বা আখ্যানভাগ তৈরি হয়ে ওঠে গল্প ও তার ভিতরে উপস্থিত বিভিন্ন চরিত্রের সমন্বয়ে। বাংলা ভাষায় প্রথম সার্থক ও কালজয়ী (এবং অনেকের মতে এখন র্পূযন্ত শ্রেষ্ঠ) ঔপন্যাসিক বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। উনিশ শতকের র্পূবে বাংলায় কোনো উপন্যাস রচিত হয়নি। ইংরেজী উপন্যাস পাঠ করে অনুপ্রাণিত হয়ে বঙ্কিম উপন্যাস রচনায় হাত দেন। তাঁর কপালকু-লা, বিষবৃক্ষ, চন্দ্রশেখর ইত্যাদি কালজয়ী কথাসাহিত্য। বঙ্কিমচন্দ্রের পরে মহৎ ঔপন্যাসিক বলতে আমরা পধধানত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কে বুঝি। একটি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, পৃথিবীতে যেখানে যত বাঙালি রয়েছে তাদের ভিতরে শরৎচন্দ্রই এখন র্পূযন্ত সবচেয়ে বেশি পঠিত ও জনপিধয়। বাংলা সাহিতে্যর আধুনিক যুগে অবশ্য তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, বনফুল, সমবেশ বসু, শহীদুল্লা কায়সার, আবু ইসহাক, হাসান আজিজুল হক প্রমুখ বিভিন্ন গল্পাকার ও ঔপন্যাসিক খ্যাতি অর্জন করেছেন। উপন্যাস বহু রকমের হতে পারে। যেমন- ঐতিহাসিক উপন্যাস, সামাজিক উপন্যাস, কাব্যধর্মী উপন্যাস, ডিটেকটিভ উপন্যাস, মনোবিশ্লেষণধর্মী উপন্যাস ইত্যাদি। বঙ্কিমচন্দ্রের সমকালে ঐতিহাসিক উপন্যাস খুব জনপ্রিয় ছিল। তাঁর সমসাময়িক রমেশচন্দ্র দত্ত তাঁরই মতো বহু ইতিহাস-আশ্রিত উপন্যাস রচনা করেছিলেন- যেমন মাধবী-কঙ্কণ, রাজপুত-জীবনসন্ধ্যা, মহারাষ্টধ- জীবনপ্রভাত ইত্যাদি।
মাধ্যমিক বাংলা সাহিত্য ১৪ক্ত
তবে তাঁর সমসাময়িক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় যেভাবে বাঙালি পাঠকসমাজকে মন্ত্রমুগ্ধ করে জয় করে নেন, তার সমকক্ষ আর কাউকে দেখা যায় না। প্রবন্ধ আমরা সকলেই অ স্পষ্টভাবে ঝুকি ‘প্রব ন্ধ’ কাকে বলে বা কী রকম। গদ্যে লিখিত এমন রচনা যার উদ্দেশ্য পাঠকের জ্ঞানত…ষ্ণাকে পরিত…প্ত করা। কোনো সন্দেহ নেই, এ জাতীয় লেখায় তথে্যর প্রাধান্য থাকবে যার ফলে অজ্ঞাত তথ্যাদি পাঠক জানতে পারবে। ধরা যাক, সংবাদপত্রের যাবতীয় খবরাখবর-দেশের, বিদেশের, মহাকাশের ইত্যাদি। সবই গদ্য ভাষায় রচিত এবং যার লক্ষ্য পাঠকের অজানা বিষয় পাঠককে জানানো। গদ্যসাহিতে্যর অন্তর্গত হলেও তথ্যবহুল রচনা হলেই তাকে প্রবন্ধসাহিতে্যর উদাহরণরূপে গণ্য করা চলবে না, যদি-না লেখাটি সাহিত্য পদবাচ্য হয়। সাহিতে্যর প্রধান লক্ষণ সৃজনশীলতা। লেখকের সৃজনীশক্তির কোনো পরিচয় যদি পরিস্ফটিত না হয়, তো তেমন কোনো লেখাকে প্রবন্ধসাহিতে্যর লক্ষণযুক্ত বলা যাবে না। এ-কারণে খবরের কাগজে প্রকাশিত সমস্ত লেখাই গদ্যে রচিত হলেও তাদেরকে প্রবন্ধসাহিতে্যর নমুনা হিসেবে বিবেচনা করা সঙ্গত নয়। তাহলে তো জ্ঞানবিজ্ঞান সংক্ষান্ত সকল রচনাই প্রবন্ধসাহিত্য বলে গণ্য হতে পারত। তা না হওয়ার কারণ ঐ সৃজনশীলতার অভাব। মনে রাখা প্রয়োজন : সাহিতে্যর যেটি চিরন্তন উদ্দেশ্য – সৌন্দর্যসৃষ্টি ও আনন্দদান, প্রবন্ধের সেই একই উদ্দেশ্য। সাধারণত কল্পনাশক্তি ও বুদ্ধিবৃত্তিকে আশ্রয় করে লেখক কোনো বিষয়বস্তু সম্র্পূকে যে আত্মসচেতন নাতিদীর্ঘ সাহিত্য-রূপ সৃষ্টি করেন তাকেই ‘প্রবন্ধ’ নামে অভিহিত করা হয়। প্রবন্ধের ভাষা ও দৈর্ঘ্য নানা রকম হতে পারে ঠিকই, তবে তা গদ্যে ও নাতিদীর্ঘ আকারে লিখিত হয়। প্রবন্ধের দুটমিুখ্য শ্রেণিবিভাগ আছে : তন্ময় (ড়নলবপঃরাব) প্রবন্ধ ও মন্ময় (ংঁনলবপঃরাব) প্রবন্ধ। বিষয়বস্তুর প্রাধান্য স্বীকার করে যে-সকল বস্তুনিষ্ঠ প্রবন্ধ লিখিত হয় সেগুলোকে তন্ময় বা বস্তুনিষ্ঠ প্রবন্ধ বলে। এ ধরনের প্রবন্ধ কোনো সুনির্দিষ্ট সুচিন্তিত চৌহদ্দি বা সীমারেখার মধ্যে আদি, মধ্য ও অন্ত-সমন্বিত চিন্তাপ্রধান সৃষ্টি। এ জাতীয় রচনায় লেখকের পান্ডিত্য, বুদ্ধি ও জ্ঞানের পরিচয়ই মুখ্য হয়ে দেখা দেয়। আরেক শ্রেণির রচনাও সম্ভব যেখানে লেখকের মেধাশক্তি অপেক্ষা ব্যক্তিহৃদয়ই প্রধান হয়ে ওঠে। এদেরকে মন্ময় প্রবন্ধ বলে। রবীন্দ্রনাথের অধিকাংশ প্রবন্ধ এই র্পূযায়ের। ফরাশি ভাষায় বেল্্ লের্ৎ্ (নবষষব ষবঃৎব) বলে একটি শব্দ আছে, ইংরেজীতেও বেল্্ লের্ৎ্ই বলে। এর বাংলা নেই। বাংলায় বলা যেতে পারে চারুকথন। বেল্্ শব্দের অর্থ-সুন্দর, চমৎকার। আর লের্ৎ্ অর্থ-ষবঃঃবৎ, অক্ষর। বেল্্ লের্ৎ্ মন্ময় প্রবন্ধের উৎকৃষ্ট উদাহরণ। রবীন্দ্রনাথের ‘বিচিত্র প্রবন্ধ’ বইটির সকল রচনাই এ জাতীয় মন্ময় প্রবন্ধের র্পূযায়ভুক্ত। অনেকে এ ধরনের লেখাকে ‘ব্যক্তিগত প্রবন্ধ’ বলারও পক্ষপাতী। ‘রম্য রচনা’ নামে একটা কথা অনেক দিন যাবত ব্যক্তিগত প্রবন্ধ বোঝাতে ‘রম্য রচনা’ ব্যবহার করা ঠিক নয়। কারণ ‘রম্য রচনা’ শব্দদ্বয়ের ‘রম্য’ শব্দের ভিতরে এমন ইঙ্গিত রয়ে যায় যে, লেখাটি সিরিয়াস বা গুরুগম্ভীর বিষয় নিয়ে নয়, অথচ রম্যরচনার বিষয় খুবই গুরুগম্ভীর হতে পারে, কিন্তু প্রকাশভঙ্গি ও ভাষা গুরুগম্ভীর হলে চলবে না। বাংলা ভাষায় রচিত প্রবন্ধ সাহিত্য আয়তনে বিশাল এবং গুণগত মানে অতি উত্তম। রাজা রামমোহন রায় থেকে শুরু করে অদ্যাবধি তার প্রবহমাণতা কখনো ব্যাহত বা বাধাপ্রাপ্ত হয় নি। শব্দার্থ ও
টীকা : মেঘনাথ-বধ – কবি ও নাট্যকার মাইকেল মধুসদন দত্ত রচিত আধুনিক বাংলা মহাকাব্য; রামায়ন – প্রাচীন ভারতবর্ষে রচিত মহাকাব্য; মহাভারত – প্রাচীন ভারতবর্ষে রচিত মহাকাব্য; লঙ্কা দ্বীপ – সিংহল দ্বীপ, বর্তমান নাম শ্রীলঙ্কা; অতুলপ্রসাদ সেন (১৮৭১-১৯ক্ত৪) – জন্ম ঢাকায় ১৮৭১ এর ২ শে অক্টোবর এবং মৃতু লখ্নৌ শহরে ১৯ক্ত৪ সালের ২৬শে আগস্ট। ব্রাহ্মন ছিলেন। ব্যারিস্টারি পাস করে
১৪৪ মাধ্যমিক বাংলা সাহিত্য
স্বাধীনভাবে ওকালতি ব্যবসা শুরু করেন। সংগীত রচনার জন্য বাঙালির সংস্কৃতিজগতে চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন। তাঁর ভক্তিগীতি ও দেশাত্মবোধক গান অদ্যাবধি জনপ্রিয়; অরপরতন – রবীন্দ্রনাথের সাংকেতিক নাটক; এইচ.জি.ওয়েল্্স্্ (১৮৬৬-১৯৪৬) : ইংরেজী ঔপন্যাসিক, সাংবাদিক ও ঐতিহাসিক, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর ̄ধষ্টা ইংরেজী ভাষায়; একাঙ্কিকা – এক অঙ্কের নাটককে বলা হয়; এডর্্্গ্ াঅ্যালান পো (১৮০৯-৪৯) : আমেরিকার কবি, গল্পকার ও সমালোচক; এরিস্টোট্ল্্ (খ্রিষ্টর্পূব ক্ত৮৪-ক্ত২২ অব্দ) : গ্রিক দার্শনিক, বিজ্ঞানী ও সাহিত্য সমালোচক, দার্শনিক পে−টোর শিষ্য ছিলেন; কপালকু-লা – ঊনবিংশ শতাব্দির অন্যতম শ্রেষ্ঠ ঔপন্যাসিক বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের একটি উপন্যাস, উপন্যাসের নামকরণ হয়েছে নায়িকার নামে; কালাপাহাড় – একটি ঐতিহাসিক চরিত্র। হিন্দুধর্মবিদ্বেষী এক সেনাপতি, দুর্ধর্ষ ও নিষ্ঠুর প্রকৃতির ছিলেন; গিরিশচন্দ্র ঘোষ (১৮৪৪-১৯১২) : বাংলা নাটকের যুগন্ধর পুরুষ। নাট্যরচনার পাশাপাশি অভিনয়ও করতেন। অভিনেতা হিসেবেও অভতর্পূব সুনাম অর্জন করেছিলেন; চন্দ্রগুপ্ত – প্রাচীন ভারতবর্ষের এক বিখ্যাত নৃপতি, রাজত্বকাল ক্ত২০ থেকে ক্তক্ত০ খ্রিষ্টাব্দ, কবি ও নাট্যকার দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের (১৮৬ক্ত-১৯১ক্ত) বিখ্যাত নাটক ‘চন্দ্রগুপ্ত’ ১৯১১ সালে প্রকাশিত হয়; চন্দ্রশেখর – বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের একটি নাটক; জনা – পৌরাণিক নাটক; ডাকঘর – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত নাটক; তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় (১৮৯৮- ১৯৭১) : আধুনিক বাংলা সাহিতে্যর বিখ্যাত ঔপন্যাসিক ও গল্পাকার; দ্বিজেন্দ্রলাল রায় (১৮৬ক্ত-১৯১ক্ত) : কবি, নাট্যকার ও সংগীত রচয়িতা, তাঁর ‘শাজাহান’ ও ‘চন্দ্রগুপ্ত’ অত্যন্ত জনপ্রিয় নাটক; দীনবন্ধু মিত্র (১৮ক্ত০-৭ক্ত): বাংলা নাট্যসাহিতে্যর যুগ ̄ধষ্টা লেখক, ‘নীলদর্পণ’ তাঁর সর্বাধিক খ্যাত নাটক, ১৮৬০ সালে প্রকাশিত হয়, ‘সধবার একাদশী’ তাঁর বিখ্যাত প্রহসন; রজনীকান্ত সেন (১৮৬৫-১৯১০) – সিরাজগঞ্জের ভাঙাবাড়ি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। স্বরচিত গানের সুকণ্ঠ গায়ক ছিলেন। তাঁর দেশাত্মবোধক গান বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন করে; রমেশচন্দ্র দত্ত (১৮৪৮-১৯০৯) – কলকাতায জন্মগ্রহণ করেন। প্রথম বাঙালি কমিশনা। খ্যাতনামা ঔপন্যাসিক। বঙ্গবিজেতা, মাধবীকঙ্কন, জীবন-প্রভাত, জীবন-সন্ধ্যা, সংসার, সমাজ তাঁর উল্লেখযোগ্য উপন্যাস, ‘রাজপুত জীবনসন্ধ্যা’ রমেশচন্দ্র দত্ত রচিত ঐতিহাসিক উপন্যাস; রাজা রামমোহন রায় (১৭৭২-১৮ক্তক্ত৪) – পন্ডিমবঙ্গের হুগলীতে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। সমাজ-সংস্কারের, ধর্মসংস্কারক ও বহু ভাষাবিদ পন্ডিত। বাংলা গদ্যের প্রস্তুতির্পূবের শিল্পী। বেদনাগ্রন্থ, বেদান্তসার, গৌড়ীয় ব্যাকরণ তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ; সমরেশ বসু (১৯২৪-১৯৮৮) – আধুনিক বাংলা সাহিতে্যর স্বনামধন্য ঔপন্যাসিক; দৃশ্যকাব্য – প্রাচীন অলংকারশাে ̄¿ নাটকে দৃশ্যকাব্য বলা হয়ে থাকে; নকশীকাঁথার মাঠ – পল্লিকবি জসীম উদ্্দীন রচিত আখ্যান কাব্য; নীলদর্পণ – দীনবন্ধু মিত্রের নাটক, দেশের তৎকালীন শাসনকর্তা বিধটিশদের হুকুমে বাধ্যতামলক নীলচাষ করানোর সমালোচনা করে এই নাটক রচিত হয়েছিল; পৌরাণিক নাটক – ভারবর্ষীয় পুরাণের কোনো কাহিনী অবলম্বনে রচিত নাটক; পধফুল্ল – নাট্যকার ও অভিনেতা গিরিশচন্দ্র ঘোষের লেখা নাটক; প্রহসন – উপন্যাস না নাটকের রচনাশৈলী অবলম্বনে হাস্যরসাত্মক রচনা; প−ট – গল্প ্উপন্যাস নাটকের কাহিনী অংশকে প−ট বলা হয়; বনফুল – গল্পকার ও ঔপন্যাসিক বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায়ের ছদ্মনাম বা লেখক নাম; বন্দে মাতরম – এই দু শব্দের অর্থ জননীকে অর্থাৎ মাকে বন্দনা করি, বঙ্কিমচন্দ্র তাঁর ‘আনন্দমঠ’ উপন্যাসে স্বরচিত এই গানটি যুক্ত করেছেন; বিচিত্র প্রবন্ধ – রবীন্দ্রনাথ রচিত একটি প্রবন্ধ সংকলনগ্রন্থ; বিষবৃক্ষ – বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত উপন্যাস; বুদ্ধদেব – পৌরাণিক নাটক; বৈষ্ণব কবিতা – প্রাচীন বাংলাদেশে প্রচলিত গীতিকবিতা ও গান; মঙ্গলকাব্য – বাংলা সাহিতে্যর মধ্যযুগে রচিত এক ধরনের কাহিনী-কাব্য; মহাভারত – প্রাচীন ভারতবর্ষে দুটমিহাকাবে্যর একটি, অন্যটি রামায়ণ, মল রচনা সংস্কৃত ভাষায় লিখিত হয়েছিল, কয়েকশত বৎসর পরে বাংলায় অনদিত হয়; মহারাষ্টধ জীবনপ্রভৃতি – উনশ শতকের ঔপন্যাসিক রমেশচন্দ্র দত্ত রচিত ঐতিহাসিক উপন্যাস; মাধবী কঙ্কণ – রমেশচন্দ্র দত্ত রচিত উপন্যাস; মেঘনাদবধ কাব্য – কবি ও নাট্যকার মাইকেল মধুসদন দত্ত (১৮২৪-৭ক্ত) রচিত আধুনিক বাংলা মহাকাব্য; রক্তকরবী – রবীন্দ্রনাথ রচিত সাংকেতিক নাটক; রাজপুত
মাধ্যমিক বাংলা সাহিত্য ১৪৫
জীবনসন্ধ্যা – রমেশচন্দ্র দত্ত রচিত ঐতিহাসিক উপন্যাস; রামপ্রসাদ সেন (আনু: ১৭২ক্ত-৮১) কপি ও সংগীত রচয়িতা, ভক্তিগীতি রচনার জন্য বিখ্যাত, এঁর গানকে ‘রামপ্রসাদী’ আখ্যা দেওয়া হয়; শহীদুল্লা কায়সার (১৯২৭-৭১) – ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময়ে শহিদ হন; শাজাহান – নাট্যকার ও কবি দ্বিজেন্দ্রলাল রায় রচিত নাটক; শর্পনখা – রামায়ণ মহাকাবে্যর কাহিনীতে লঙ্কার রাজা রাবনের বোন; শেক্সপীয়র – ইংরেজী কবি ও নাট্যকার; শ্রাব্যকাব্য – যে কাব্য পড়া ও শোনার জন্য রচিত, এর বিপরীতে রয়েছে দৃশ্যকাব্য; শ্রীশচন্দ্র দাস – ‘সাহিত্য সন্দর্শন’ গ্রন্থের রচয়িতা, বইটি সাহিতে্য বিভিন্ন শাখা (যেমন গল্প কবিতা উপন্যাস ইত্যাদি) সম্র্পূকে বিস্তারিত আলোচনা গ্রন্থ; সংস্কৃত অলঙ্কারিকবৃন্দ – প্রাচীন সংস্কৃত সাহিত্য বিষয়ে পুরনো আমলে যাঁরা আলোচনা করেছেন, বইপত্র লিখেছেন; সীতা – পৌরাণিক চরিত্র, রামচন্দ্রের স্ত্রী, লঙ্কার রাজা রাবণ অপহরণ করে নিয়ে যায়। তার ফলে রাবণের বিরুদ্ধে রাম যুদ্ধযাত্রা করেছিলেন। দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের নাটক ‘সীতা’ ১৯০৮ সালে প্রকাশিত হয়; সোজনবাদিয়া ঘাট – পল্লিকবি জসীম উদ্্দীন রচিত কাহিনীকাব্য; হাসান আজিজুল হক – জন্ম ১৯ক্ত৯ সালে, বাংলাদেশের বিখ্যাত কথাশিল্পী।