বিসিএস – প্রিলিমিনারি – সাধারণ বিজ্ঞান – তরল ও বায়বীয় পদার্থ
পদার্থের অবস্থা:
পদার্থ হল এমন ভৌত বস্তু যার ভর ও আয়তন আছে। সকল পদার্থই সাধারণত তিন অবস্থায় বিরাজ করে: কঠিন, তরল ও বায়বীয়। কিন্তু স্বাভাবিক কক্ষ তাপমাত্রায় কিছু পদার্থ কঠিন, কিছু তরল এবং কিছু বায়বীয় অবস্থায় থাকে। তাপমাত্রা পরিবর্তনের সাথে সাথে অবস্থার পরিবর্তন ঘটে। তিন অবস্থাতেই এদের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য ও ধর্ম রয়েছে, তবে অণুর গঠনের কোনো পরিবর্তন ঘটে না। কঠিন অবস্থায় অণুসমূহ কাছাকাছি থেকে কাঁপতে থাকে; তাপ প্রদানের সাথে সাথে অণুসমূহ গতিশীল হয় এবং দূরে সরে যেতে থাকে। বিভিন্ন মাধ্যমে কঠিন, তরল ও বায়বীয় পদার্থের ছড়িয়ে পড়ার প্রবণতা লক্ষ করা যায়। তা হতে পারে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অথবা চাপের প্রভাবে।
* কঠিন পদার্থঃ
১. কঠিন অবস্থায় পদার্থের আয়তন নির্দিষ্ট
২. নির্দিষ্ট আকার ও আকৃতি আছে
৩. সাধারণ চাপে সংকুচিত হয় না
* তরল পদার্থঃ
১. তরল অবস্থায় পদার্থের আয়তন নির্দিষ্ট
২. নির্দিষ্ট আকার ও আকৃতি নেই।
৩. তরল সামান্য চাপে সংকুচিত হয়
* গ্যাসীয় পদার্থঃ
১. গ্যাসীয় অবস্থায় পদার্থের আয়তন নির্দিষ্ট নয়।
২. নির্দিষ্ট আকার ও আকৃতি নেই।
৩. গ্যাস অত্যান্ত সংকোচনশীল
> প্রবাহী পদার্থ: যে সকল পদার্থ সহজেই প্রবাহিত হতে পারে তাদেরকে প্রবাহি পদার্থ বলে। তরল ও বায়বীয় পদার্থ সহজেই প্রবাহিত হতে পাওে তাই এদের প্রবাহী পদার্থ বলে। কঠিন পদার্থের প্রবাহী ধর্ম নেই।
> কণার গতিতত্ত্ব: যে তত্ত্বের মাধ্যমে কণাসমূহ কীভাবে কঠিন তরল ও গ্যাসীয় অবস্থায় গতিশীল থাকে তা, জানা যায় তাকে কণার গতিতত্ত্ব বলে।
> কঠিন পদার্থ: এর মধ্যে আ আণবিক শক্তি বেশি থাকায় আন্তঃআণবিক ফাকা স্থান বা দূরত্ব খুব কম থাকে । এর কণাগুলো সর্বদা ক¤পমান থাকে। তবে এর ক¤পগুলো খুব ধীর গতি স¤পন্ন তাই আমরা স্বাভাবিক অবস্থায় কণাগুলোর কম্পন দেখতে পাইনা
> তরল পদার্থ: তরল পদার্থের মধ্যে আন্তঃ আণবিক আকর্ষনণ থাকে কম কিন্তু ফাকা স্থান থাকে বেশি।
> গ্যাসীয় পদার্থ: গ্যাসীয় পদার্থের মধ্যে এই আকর্ষণ নেই বললেই চলে। ফলে এর অনুগুলো মোটামুটি মুক্তভাবে অবস্থান করে। তাহলে পদার্থের তিনটা (কঠিন, তরল ও বায়বীয়) অবস্থাতেই অণুগলো গতিশীল অর্থাৎ ক¤পমান অবস্থায় থাকে। এই গতিশীল অবস্থা যে তত্ত্বে আলোচনা করা হয় সেই তথ্যটির নামই হলো কণার গতিতত্ত্ব।
> তাপ প্রয়োগে পদার্থের ভিন্নতার কারণ: তাপ প্রয়োগ করলে পদার্থের অণুগলোর গতিশক্তি বৃদ্ধি পায়, ফলে অণুগুলোর মধ্যে দূরত্ব বৃদ্ধি পায়। এর ফলে আন্তঃকণা আকর্ষণ শক্তি হ্রাস পায়। পদার্থ যে সকল ছোট ছোট কণার সমন্ময়ে গঠিত, সেই সকল কণাগুলো যেকোন তাপমাত্রায় নড়াচড়া করতে পারে। ছোট ছোট কণাগুলোর নড়াচড়ার ফলে পদার্থ এক ধরণের শক্তি লাভ করে। পদার্থের এ শক্তিকে গতিশক্তি বলে। তাপ প্রয়োগের ফলে গতিশক্তি বৃদ্ধি পায়। আন্তঃকণা আকর্ষণ শক্তির প্রভাবে বস্তুর ক্ষুদ্রতম কণাগুলো একে অপরের সাথে যুক্ত থাকে। এ শক্তি অধিক হলে বস্তু কঠিন হয়। অপেক্ষাকৃত কম হলে তরল এবং আরোও কম হলে বস্তু গ্যাসীয় অবস্থায় থাকে। আন্তঃকণা আকর্ষণ শক্তি ও গতিশক্তি পর¯পর বিপরীতধর্মী।
> আন্তঃকণা আকর্ষণ শক্তি ও গতিশক্তি পর¯পর বিপরীতধর্মীঃ আন্তঃকণা আকর্ষণ শক্তির মান যত বাড়বে গতিশক্তি ততো কমবে। আন্তঃকণা আকর্ষণ শক্তির মান যত কমবে গতিশক্তি তত বাড়বে। অনুগুলো দূরে দূরে চলে যাবে। কোনো পদার্থে তাপ প্রয়োগ করলে কণাগুলোর গতিশক্তি বৃদ্ধি পায় এবং আণ—ঃকণা আকর্ষণ শক্তি হ্রাস পায়। এর ফলে কঠিন পদার্থ থেকে তরল এবং তরল পদার্থ থেকে গ্যাসীয় পদার্থে রূপান্তরিত হয়। আবার শীতল করলে গ্যাস থেকে তরল এবং তরল থেকে কঠিন পদার্থে রূপান্তরিত হয়। আবার কিছু পদার্থ আছে যাদের তাপ প্রয়োগ করলে তরলে পরিণত না হয়ে সরাসরি গ্যাসীয় পদার্থে পরিণত হয় তাদের ঊর্ধ্বপাতন বলে। আবার সেই গ্যাসীয় পদার্থকে শীতল করলে তরল না হয়ে সরাসরি কঠিনে রূপান্তর হয়। যেমন. ন্যাপথালিন, কর্পূর, গন্ধক, আয়োডিন ইত্যাদি। এদের গলানাংক এবং স্ফুটনাংক একই।
> ব্যাপন: কোন মাধ্যমে কঠিন, তরল ও গ্যাসীয় পদার্থের স্বতঃস্ফূর্ত ও সমভাবে পরিব্যাপ্ত হওয়ার প্রক্রিয়াকে ব্যাপন বলে। তাপমাত্রা বৃদ্ধি করলে ব্যাপন হার বৃদ্ধি পাবে আবার তাপমাত্রা হ্রাস করলে ব্যাপনের হার হ্রাস পায়। কারণ তাপ বৃদ্ধি করলে পদার্থের গতি শক্তি বৃদ্ধি পায়। গতি শক্তি বৃদ্ধি পেলে কনাগুলো খুব দ্রুত এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় চলে যায় এ কারণে তাপমাত্রা বৃদ্ধি করলে পদার্থের ব্যাপন হার বেশি হয়। তাপমাত্রা বৃদ্ধির সাথে ব্যাপন সমানুপাতে পরিবর্তিত হয়। ব্যাপনের উপর তাপমাত্রা এবং চাপ দুটোরই প্রভাব আছে। চাপ বৃদ্ধি পেলে ব্যাপন হার হ্রাস পায়। অর্থাৎ চাপের সাথে ব্যাপন ব্যাস্তানুপাতে পরিবর্তিত হয়।
ঘনত্ব: বস্তুর একক আয়তনের ভরকে তার উপাদানের ঘনত্ব বলে। কোন বস্তুর ঘনত্ব বস্তুর উপাদান ও তাপমাত্রার উপর নির্ভর করে
চাপ: কোন পৃষ্ঠের একক ক্ষেত্রফলের উপর লম্বভাবে প্রযুক্ত বলের মানকে চাপ বলে। চাপের একক নিউটন/বর্গমিটার। নিউটন/বর্গমিটারকে প্যাসকেলও বলে। ১ বায়ুমন্ডলীয় চাপ = ১০১৩২৫ প্যাসকেল
প্লবতা: কোন বস্তুর কোন স্থির তরলে নিমজ্জিত করলে বস্তুটি উপরের দিকে যে লব্ধিবল অনুভব করে, তাকে প্লবতা বলে
নদীর পানিতে চেয়ে সমুদ্রের পানিতে সাঁতার কাটা সহজ কারন সমুদ্রের পানিতে নানা ধরনের লবণ দ্রবীভূত থাকে। তাই সমুদ্রের পানির ঘনত্ব নদীর পানি বা পুকুরের পানির চেয়ে বেশি। ঘনত্ব বেশি হওয়ার কারনে সমুদ্রের পানির প্লবতা নদী বা পুকুরের পানির চেয়ে বেশি। ফলে সমুদ্রের পানিতে সাঁতার কাটার সময় সাঁতারুর শরীরের উপর প্লবতা বেশি হওয়ায় শরীর হালকা বলে মনে হয়। এ কারনে নদী বা পুকুরের পানির তুলনায় সমুদ্রের পানিতে সাঁতার কাটা সহজ
লোহার টুকরা পানিতে ডুবে যায় কিন্তু লোহার তৈরী জাহাজ পানিতে ভাসে কারন লোহার খন্ড দ্বারা অপসারিত পানির ওজন লোহা খন্ডের ওজনের চেয়ে অনেক কম। কিন্তু লোহার তৈরি হলেও জাহাজ পানিতে ভাসে কারন জাহাজের ভিতরটা ফাঁপা। ফলে জাহাজ যে আয়তনের পানি অপসারণ করে তার ওজন জাহাজের ওজনের চেয়ে বেশি হয়।এতে জাহাজ পানিতে নামলে প্রথমে ডুবতে শুরু করে। খানিকটা ডুবার পর যখন অপসারিত পানির ওজন জাহাজের ওজনের সমান হয় তখন জাহাজটি ভাসতে থাকে
বরফ পানিতে ভাসে কারন পানি বরফে পরিনত হলে এর আয়তন বেড়ে যায়। ১ লিটার পানি বরফে পরিণত হলে এর আয়তন ১২/১১ লিটার হয়। সুতরাং বরফের ঘনত্ব পানির ঘনত্বের চেয়ে কম আর তাই বরফ পানিতে ভাসে। পানিতে ভাসার সময় বরফের ১১/১২ অংশ পানির নিচে থাকে এবং ১/১২ অংশ পানির উপরে থাকে
আপেক্ষিক গুরত্ব: কোন বস্তুর ওজন ও ৪০ঈ তাপমাত্রার সমআয়তন পানির ওজনের অনুপাতকে বস্তুর উপাদানের আপেক্ষিক গুরত্ব বলে
পৃষ্ঠটান: তরল মাত্রই একটি ধর্ম আছে – তরল পৃষ্ঠ সর্বদা সংকুচিত হয়ে সর্বনিম্ম ক্ষেত্রফলে আসতে চায়
তরলের মধ্যে যে বলের প্রভাবে এই বিশেষ ধর্ম প্রকাশ পায়, সেই বলকেই পৃষ্ঠটান বলে
প্রতিটি লেকচারে নতুন নতুন লিখা যুক্ত হচ্ছে, তাই কাঙ্খিত কোন লিখা না পেলে দয়া করে কিছুদিন পর আবার ভিজিট করে দেখবেন।
লিখাতে কিংবা লেকচারে কোন ভুলত্রুটি থাকলে অথবা আপনার কাঙ্খিত লিখা খুঁজে না পেলেইশিখন.কম এর ফ্যানপেইজ অথবা নিচে কমেন্ট কর