এইচএসসি – জীব বিজ্ঞান – ১ম পত্র – অধ্যায় ০৫ – শৈবাল ও ছত্রাক Part 1
? শৈবালঃ
পৃথিবীতে বহু প্রকার শৈবাল জন্মে ।এদের মধ্যে কিছু এককোষী এবং কিছু বহুকোষী।শৈবালের হাজার হাজার প্রজাতির মধ্যে আকার ,আকৃতি ও গঠনে প্রচুর পার্থক্য আছে।আকার ,আকৃতি ও গঠনে পার্থক্য থাকলেও মৌলিক বৈশিষ্ট্য এক হওয়ায় এরা সবাই শৈবাল নামে পরিচিত।সম্পূর্ণ ভাসমান শৈবালকে ফাইটোপ্লাংটন বলে।জলাশয়ে পারিনর নিচে মাটিতে আবদ্ধ হয়ে যে শৈবাল জন্মায় তাদেরকে বেনথিক শৈবাল বলে। পাথরের গায়ে জন্মানো শৈবালকে লিথোফাইট বলে।শৈবালই সুকেন্দ্রিক (eukaryotic)
শৈবাল কোষের গঠন মােটামুটিভাবে উচ্চ শ্রেণির উদ্ভিদকোষের মতোই। কোষের বাইরে সেলুলোজ (প্রধান বস্তু) নির্মিত জড় কোষপ্রাচীর, কোষপ্রাচীর দিয়ে পরিবেষ্টিত অবস্থায় কোষঝিল্লি, কোষঝিল্লি দিয়ে পরিবেষ্টিত অবস্থায় সাইটোপ্লাজম থাকে। সাইটোপ্লাজমে বিদ্যমান আছে সুস্পষ্ট নিউক্লিয়াস, বৃহৎ ক্লোরোপ্লাস্ট, মাইটোকন্ড্রিয়া, পাইরিনয়েড, রাইবােসোম ইত্যাদি অঙ্গাণু এবং সঞ্চিত খাদ্য। কোনো কোনো শৈবালের দেহ নলাকার, শাখান্বিত, প্রস্থ প্রাচীরবিহীন এবং কোষে বহু নিউক্লিয়াস যুক্ত থাকে। এরূপ শৈবাল দেহকে সিনোসাইটিক (coenocytic) শৈবাল বলে; যেমন- Vaucheria, Botrydium.
? ছত্রাকঃ
ছত্রাক হল এককোষী বা বহুকোষী সুকেন্দ্রিক জীব, যারা সালোকসংশ্লেষনের মাধ্যমে শর্করা তৈরি করতে পারে না এবং যাদের দৃঢ় কোষ প্রাচীর আছে।বহুকোষী ছত্রাক অসংখ্য সরু সরু সুতোর মত অংশ নিয়ে গঠিত। এগুলিকে Hypha বলে। এগুলি একত্রিত হয়ে Mycelium গঠন করে।ক্লোরোফিলবিহীন পরভোজী পুষ্টিসম্পন্ন ও ইউক্যারিওটিক প্রকৃতির সমাঙ্গদেহী উদ্ভিদদের ছত্রাক বলা হয়।
► উপকারী ছত্রাক ঃ
✅ পেনিসিলিয়াম [Penicillium notatum]:- পেনিসিলিয়াম এক রকমের বহুকোশী মৃতজীবী ছত্রাক । এই ছত্রাক ফল, জেলি, শাক-সবজি এবং বিভিন্ন সংরক্ষিত খাদ্য বস্তুর ওপর জন্মায় । এরা সাধারণত নীল বা সবুজ ছাতা নামে পরিচিত । বিজ্ঞানী আলেকজান্ডার ফ্লেমিং 1928 খ্রিস্টাব্দে পেনিসিলিয়াম নোটেটাম [Penicillium notatum] নামে ছত্রাক থেকে বিখ্যাত অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ ‘পেনিসিলিন’ আবিষ্কার করেন । এই ওষুধ ক্ষত, টনসিলাইটিস, ব্রঙ্কাইটিস, মেনিনজাইটিস, নিউমোনিয়া, সিফিলিস এবং বিভিন্ন প্রদাহ জনিত রোগে সাফল্যের সঙ্গে ব্যবহৃত হয় ।
✅ ঈস্ট [Saccharomyces cerevisiae]:- ঈস্ট এক রকমের এককোশী মৃতজীবী ছত্রাক । এরা পাকা ফল, আখ, খেজুর, তাল ইত্যাদির মিষ্টি রসে জন্মায় । ঈস্ট সন্ধান প্রক্রিয়ায় ওই সব শর্করা জাতীয় খাদ্য গেঁজিয়ে অ্যালকোহল উত্পন্ন করে । অ্যালকোহল বিভিন্ন রকমের ঔষধ সংরক্ষণে ব্যবহৃত হয় । ঈস্ট থেকে বি-কমপ্লেক্স ট্যাবলেট প্রস্তুত হয় । ঈস্ট থেকে প্রাপ্ত উৎসেচক জাইমেজ বিভিন্ন শিল্পে ব্যবহৃত হয় । বেকারি শিল্পে ঈস্ট পাউরুটি, কেক প্রভৃতি খাবার তৈরি করার জন্য ব্যবহার করা হয় ।
► অপকারী ছত্রাক ঃ
✅ অ্যাসপারজিলাস [Aspergillus niger]ঃ অ্যাসপারজিলাস শাকসবজি, ফল, জ্যাম, জেলি, আচার, রান্না করা খাদ্য সামগ্রী, রুটি, মাছ, মাংস, দুধ, দই, মাখন প্রভৃতি বিভিন্ন খাদ্য বস্তুকে আক্রমণ করে ও বিনষ্ট করে । তাছাড়া অ্যাসপারজিলাসের বিভিন্ন প্রজাতি সেলুলোজ, কাগজ, কাপড়, চামড়া ও প্লাস্টিকের জিনিস, ফটোফিল্ম, রবারের বস্তু, রেশম ইত্যাদিকেও ধ্বংস করে । এমনকি এই ছত্রাকটি মানুষের ত্বক, ফুসফুস, কর্ণিয়া, কানের ভিতরে বিভিন্ন রোগ সংক্রমণ ।
✅ পাকসিনিয়া গ্রামিনিস [Puccinia graminis tritici]ঃ এটি এক ধরনের পরজীবী ছত্রাক । এই ছত্রাক গম গাছের পাতায় ব্রাউন রাস্ট [brown rust] বা পিঙ্গল বর্ণের রাস্ট [yellow rust] বা মরিচা রোগ সৃষ্টি করে এবং গম গাছের কান্ড ও পাতায় ব্ল্যাক রাস্ট [black rust] বা কৃষ্ণ বর্ণের মরিচা রোগ সৃষ্টি করে, ফলে গম গাছের পাতায় ও কান্ডে মরিচার মতো দাগ দেখা যায় । পাকসিনিয়া ছত্রাক দ্বারা আক্রান্ত গাছে গমের ফলন আশঙ্কাজনকভাবে কমে যায় ।
0 responses on "এইচএসসি - জীব বিজ্ঞান - ১ম পত্র - অধ্যায় ০৫ - শৈবাল ও ছত্রাক Part 1"