বিসিএস ও ব্যাংক লিখিত প্রস্তুতি:
প্রজেক্টঃ তেল-নুন-লাকড়ী
:::::::::::::::বিদ্যুৎ:::::::::
*ব্রিটিশ বিজ্ঞানী মাইকেল ফ্যারাডে ১৮২০ থেকে ১৮৩০ এর দশকে প্রথম বিদ্যুৎ উৎপাদনের বুনিয়াদী তত্ত্ব আবিস্কার করেন। তাঁর আবিস্কৃত সেই প্রাথমিক তত্ত্বের উপরে ভিত্তি করেই আজো বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়ে আসছে ।
উৎসঃ উইকিপিডিয়া বাংলা
*এডিসন ইলেকট্রিক লাইট স্টেশন হলো প্রথম পাওয়ার স্টেশন যেটি ১৮৮২ সালের জানুয়ারিতে কাজ শুরু করে।টমাস জনসনের উদ্যোগে এটা চালু হয় ও তার অংশীদার এডোয়ার্ড জনসন এটা গঠন করে ও তত্ত্বাবধান করে।১২৫ অশ্বশক্তির বাস্পীয় ইঞ্জিনকে বাবকক ও উইলকক্স বয়লার ক্ষমতায়িত করে যেটি জুম্বো নামের একটি ২৭ টন ওজনের একটি জেনারেটরকে চালু করে।
উৎসঃ উইকিপিডিয়া বাংলা
*স্বাধীনতা লাভের পরপর বাংলাদেশে মোট ১১টি ইউনিটবিশিষ্ট ৭টি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র ছিল। এগুলি কাপ্তাই, শাহজীবাজার, সিদ্ধিরগঞ্জ, খুলনা, ঠাকুরগাঁও, রাজশাহী এবং বগুড়ায় অবস্থিত। পরবর্তীকালে আশুগঞ্জ, সিলেট, ফেঞ্চুগঞ্জ, ঘোড়াশাল, হরিপুর, রাউজান, বাঘাবাড়ি, ভেড়ামারা, সৈয়দপুর, বরিশাল, রংপুর, ভোলা, চট্টগ্রাম ও শিকলবাহায় সরকারি উদ্যোগে বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপিত হয়েছে।
উৎসঃ বাংলাপিডিয়া
*বিদ্যুৎ এর উৎস সমূহঃ
অনবায়নযোগ্য শক্তিঃ
1. কয়লা
2. ফসিল ফয়েল
3. প্রাকৃতিক গ্যাস
4. পেট্রোলিয়াম
5. নিউক্লিয়ার পাওয়ার
6. অয়েল শেল
নবায়নযোগ্য শক্তি
1. বায়োমাস
2. বায়োফুয়েল
3. জিওথার্মাল পাওয়ার
4. পানিবিদ্যুৎ
5. সৌর শক্তি
6. বায়ুশক্তি
7. মেরিন এনার্জি
o মেরিন কারেন্ট পাওয়া
o অসমোটিক পাওয়ার
o ওশান থার্মাল এনার্জি
o টাইডাল পাওয়ার
o ওয়েভ পাওয়ার
উৎসঃ উইকিপিডিয়া বাংলা
*বাংলাদেশে মাথাপিছু বিদ্যুৎশক্তির ব্যবহার খুবই কম, মাত্র ২২০ কিলোওয়াট ঘণ্টা। দেশের মাত্র ৪৭% মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধা ভোগ করে। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি/বিউবো) দেশের একমাত্র সরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদন কর্তৃপক্ষ। বিদ্যুৎ বিতরণের জন্য প্রধান দায়িত্বপ্রাপ্ত সংগঠন বিপিডিবি নিজে এবং পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি (আরইবি)। এছাড়া ঢাকা অঞ্চলের জন্য ঢাকা বিদ্যুৎ বিতরণ কর্তৃপক্ষ(ডিপিডিসি) ও ঢাকা বিদ্যুৎ সরবরাহ কোম্পানি (ডেসকো) এবং খুলনার জন্য আছে খুলনা বিদ্যুৎ সরবরাহ কোম্পানি (কেসকো)।
উৎসঃ বাংলাপিডিয়া
*সরকার ১০,০০০ মেঃ ওঃ বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা অর্জন এবং বিদ্যুৎ সপ্তাহ ২০১৩ আগামি নভেম্বর ১২, ২০১৩ তারিখে উৎযাপন করে । এ উপলক্ষে হাতির ঝিলে ফায়ারওয়ার্কস ও লেজার শো এর আয়োজন করা হয়। উক্ত অনুষ্ঠানে কয়লা ভিত্তিক ৭ টি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির SMS এর মাধ্যমে বিল প্রদান পদ্দতি উদ্বোধন করেন।
উৎসঃ বিদ্যুৎ বিভাগ, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার (http://www.powerdivision.gov.bd)
ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানি
*২৩ মার্চ ২০১৬, রোজ- বুধবার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং ত্রিপুরা’র মূখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার একসঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এ কার্যক্রম উদ্বোধন করবেন। প্রাথমিকভাবে ভারতের ত্রিপুরা থেকে বাংলাদেশের কুমিল্লায় ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানী/সঞ্চালন করা হবে। এই বিদ্যুৎ কুমিল্লা ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় ব্যবহৃত হবে।
*ত্রিপুরা হতে বাংলাদেশের কুমিল্লা পর্যন্ত ৪০০ কেভি ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের মাধ্যমে দ্বিতীয় আন্তঃদেশীয় গ্রীড সংযোগ স্থাপন করা হয়েছে। এর আগে গত ০৫ অক্টোবর, ২০১৩ ইং তারিখে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় পাওয়ার গ্রীড কোম্পানী অব বাংলাদেশ লিঃ (পিজিসিবি) নির্মিত প্রথম আন্তঃদেশীয় গ্রীড সংযোগ এর মাধ্যমে কমবেশী ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানী শুরু হয়।
প্রকল্প তথ্যকণিকা
প্রকল্পের নাম : ত্রিপুরা (ভারত)-কুমিল্লা (দঃ উপকেন্দ্র) (বাংলাদেশ) গ্রীড আন্ত:সংযোগ প্রকল্প।
মন্ত্রণালয় : বিদ্যুৎ বিভাগ, বিদ্যুৎ, জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়।
বাস্তবায়নকারী সংগঠন : পাওয়ার গ্রীড কোম্পানী অব বাংলাদেশ লিঃ (পিজিসিবি)।
প্রকল্পের মেয়াদ : জানুয়ারী, ২০১৫ হতে জুন, ২০১৬।
প্রাথমিক চুক্তি (গঙট) : উভয় দেশের জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ (ঔডএ) বৈঠক, তারিখ: ১০ অক্টোবর ২০১৪।
প্রকল্পের নির্মাণ ব্যয় : জিওবি : ১৫৭.৩৬ কোটি টাকা।
পিজিসিবি : ১৪.৩৮ কোটি টাকা।
মোট : ১৭১.৭৪ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ অংশে মোট সঞ্চালন লাইন : ৪৭ কি.মি.।
৪০০ কেভি লাইন : ২৮ কি.মি.। ভারত সীমান্ত হতে কুমিল্লা (উত্তর) সাবস্টেশন পর্যন্ত।
১৩২ কেভি লাইন : ১৯ কি.মি.। কুমিল্লা (উত্তর) হতে কুমিল্লা (দক্ষিণ) সাবস্টেশন পর্যন্ত।
বে-সম্প্রসারণ : কুমিল্লা (দক্ষিণ) সাবস্টেশন, ২টি।
ভারত অংশে সঞ্চালন লাইন : ১৮ কি.মি. (ভারত কর্তৃক নির্মিত)।
১৩২ কেভি লোডে চালু (লাইন চার্জ) : ২৮ ডিসেম্বর ২০১৫
উৎসঃ http://mpemr.gov.bd/news/details/225
* বিগত পাচঁ বছরে খাতওয়ারী বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃ্দ্ধি
বেসরকারি খাতে ৪০%, সরকারি খাতে ৫৩% এবং আমদানি ৭% বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃ্দ্ধি পায়। বিগত পাচঁ বছরে মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃ্দ্ধি পায় ৬৩২৩ মেগাওয়াট।
সাল স্থাপিত ক্ষমতা (মেগাওয়াট)
২০০৯ ৩৫৬
২০১০ ৭৭৫
২০১১ ১৭৬৩
২০১২ ৯৫১
২০১৩ ৬৬৩
২০১৪ ১৩১৫
বিদ্যুৎ আমদানি ৫০০
মোট ৬৩২৩
উৎসঃ http://powerdivision.portal.gov.bd/
* সরকার আগামী বছরের মধ্যে দেশে ১৬ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে। এজন্য চলতি বছরের মধ্যে নতুন ১৬টি কেন্দ্রে উৎপাদিত প্রায় ৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যোগ করতে যাচ্ছে। ফলে নতুন এই বিদ্যুতের সঙ্গে বিদ্যমান ১১ হাজার ২৭১ মেগাওয়াট যোগ হলে উৎপাদনের পরিমাণ দাঁড়াবে ১৬ হাজার মেগাওয়াট।
উৎসঃ যুগান্তর, ২৮ মে ২০১৫
*রুপকল্প ২০২১ বাস্তবায়নে বিদ্যুৎ অগ্রগতি
* দেশকে বিশ্বের বুকে উন্নত একটি দেশ হিসেবে পরিচিত করার লক্ষে সরকার বিভিন্ন পরিকল্পনা ও উদ্যোগ হাতে নিয়েছেন। “”এরমধ্যে ২০১৬ সালের মধ্যে ১৬ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে। ২০২১ সালে ২৪হাজার মেগাওয়াট, ২০৩১ সালের মধ্যে ৪০হাজার মেগাওয়াট ও ২০৪১ সালে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের মহাযজ্ঞের কাজ শুরু হল আজ থেকে(২৫/০২২০১৬ইং)। “”
উৎসঃ গণভবন থেকে ভিডিও কন্ফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী (২৫/০২২০১৬ইং)।
* প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের জাতীয় গ্রিডে সাত হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ হওয়ায় বিদ্যুৎ উৎপাদনে নতুন রেকর্ড হয়েছে।
উৎসঃ http://bangla.bdnews24.com (2014-07-16)
***মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ১২২২৯ মেগাওয়াট (March-2016)
উৎসঃ বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড
বিদ্যুৎ উৎপাদন (জ্বালানীর ধ্রণ অনুযায়ী) ২০১৪-১৫
খাত উৎপাদন পরিমাণ
গ্যাস 68.40%
কয়লা 2.04%
তেল 20.92%
পানি 1.62%
বিদ্যুৎ 7.03%
উৎসঃ বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড
বিগত পাচঁ বছরে বিদ্যুৎ উৎপাদন
অর্থবছর স্থাপিত উৎপাদন ক্ষমতা (মেগাওয়াট) সর্বোচ্চ উৎপাদন (মেগাওয়াট)
২০১০-১১ ৭২৬৪ ৪৮৯০
২০১১-১২ ৮৭১৬ ৬০৬৬
২০১২-১৩ ৯১৫১ ৬৪৩৪
২০১৩-১৪ ১০,৪১৬ ৭৩৫৬
২০১৪-১৫ ১১,২৬৫ ৭৪১৮
উৎসঃ বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড
*পাবনার রূপপুরে একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে রাশিয়ার সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এ কেন্দ্রে প্রতিটি ১০০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দুটি ইউনিট স্থাপন করা হবে। কেন্দ্রটি ২০১৭-১৮ সাল নাগাদ চালু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
উৎসঃ বাংলাপিডিয়া
*গত ২ অক্টোবর’২০১৩ রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করছেন প্রধানমন্দ্রী শেখ হাসিনা। ২০২১ সালের মধ্যে এ প্রকল্প চালু হলে জাতীয় গ্রিডে ২০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ যোগ হবে।
উৎসঃ প্রথম আলো, ০৩/১০/২০১৩
২০১৮ পর্যন্ত বছরওয়ারি বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা বাস্তবায়ন পরিকল্পনা (পরিকল্পনা: জুলাই ২০১৫)
সাল ২০১৫
(মেঃওঃ) ২০১৬
(মেঃওঃ) ২০১৭
(মেঃওঃ) ২০১৮
(মেঃওঃ) মোট
(মেঃওঃ)
সরকারি খাত ৮৪৮ ৮৮৫ ২০২০ ১৩৯৭ ৫১৫০
বেসরকারি খাত ১১১০ ৪২৮ ৬৩০ ৬৩০ ২৭৯৮
মোট ১৯৫৮ ১৩১৩ ২৬৫০ ২০২৭ ৭৯৪৮
উৎসঃ Ministry of Power, Energy and Mineral Resources (http://www.mpemr.gov.bd)
দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা
২০৩০ সাল নাগাদ জ্বালানির ধরণ অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা হবে নিম্নরূপঃ
:: ক) নিজস্ব ও আমদানিকৃত কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন – ১৯,৬৫০ মেগাওয়াট
:: খ) নিউক্লিয়ার ভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন – ৪,০০০ মেগাওয়াট
:: গ) গ্যাস ও এলএনজি ভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন – ৮,৮৫০ মেগাওয়াট
:: ঘ) আঞ্চলিক গ্রীড থেকে বিদ্যুৎ আমদানি- ৩,৫০০ মেগাওয়াট
:: ঙ) তরল জ্বালানি, হাইড্রো, নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন – ২,৭০০ মেগাওয়াট
উৎসঃ Ministry of Power, Energy and Mineral Resources (http://www.mpemr.gov.bd)
রামপাল কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র
*রামপাল কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য জমি অধিগ্রহণের আদেশ জারি হয় ২০১০ সালের ২৭ ডিসেম্বর, ভারতীয় কোম্পানি এনটিপিসির সাথে বাংলাদেশের পিডিবির জয়েন্ট ভেঞ্চার বা যৌথ বিনিয়োগ চুক্তি হয় ২৯ জানুয়ারি ২০১২ তারিখে ।
উৎসঃ# Final Report on Environmental Impact Assessment of 2x (500-660) MW Coal Based Thermal Power Plant to be Constructed at the Location of Khulna
রামপালে ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য ১৮৩৪ একর কৃষি, মৎস চাষ ও আবাসিক এলাকার জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে যদিও ভারতে একই আকারের একটি প্রকল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে ৭৯২ একর যার বেশির ভাগটাই এক ফসলি কিংবা অনুর্বর পতিত জমি।
উৎসঃ রায়গড় ইআইএ, এক্সিকিউটিভ সামারি, পৃষ্ঠা ১
*বিদ্যুৎ কেন্দ্র অপারেশনে থাকার সময়কার প্রভাব:
রামপাল কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ইআইএ রিপোর্টে পরিচালন পর্যায় কে ২৫ বছর ধরা হয়েছে। এই ২৫ বছর ধরে কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি সুন্দরবনের পরিবেশের উপর নিম্নলিখিত প্রভাব ফেলবে:
১) ক্ষতিকর সালফার ও নাইট্রোজেন গ্যাস:
ইআইএ রিপোর্ট অনুসারে ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে প্রতিদিন প্রায় ১৪২ টন বিষাক্ত সালফার ডাইঅক্সাইড(SO2) ও ৮৫ টন বিষাক্ত নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইড(NO2) নির্গত হবে।
উৎসঃ ইআইএ রিপোর্ট
২) কার্বন ডাই অক্সাইড এর প্রভাব:
প্রস্তাবিত কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রে সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তি ব্যাবহারে ঢাক ঢোল পেটানো হচ্ছে যদিও ইআইএ রিপোর্ট অনুসারে এই প্রযুক্তি ব্যাবহারের ফলে সাধারণ কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের তুলনায় মাত্র ১০ শতাংশ কার্বন ডাই অক্সাইড কর্ম নির্গত হবে।
উৎসঃ ইআইএ রিপোর্ট (পৃষ্ঠা ২৮৪)
৩) পশুর নদী থেকে পানি প্রত্যাহার:
ইআইএ রিপোর্ট অনুসারে কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যাবহারের জন্য পশুর নদী থেকে প্রতি ঘন্টায় ৯১৫০ ঘনমিটার করে পানি প্রত্যাহার করা হবে। কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রে শীতলিকরণ সহ বিভিন্ন কাজে ব্যাবহারের পর অবশিষ্ট পানি পরিশোধন করে ঘন্টায় ৫১৫০ ঘনমিটার হারে আবার নদীতে ফেরত দেয়া হবে। ফলে নদী থেকে প্রতি ঘন্টায় কার্যকর পানি প্রত্যাহারের পরিমাণ হবে ৪০০০ ঘনমিটার। ইআইএ রিপোর্টে এভাবে পশুর নদী থেকে ঘন্টায় ৪০০০ মিটার পানি প্রত্যাহারের ফলে পানির লবণাক্ততা, নদীর পলি প্রবাহ, প্লাবন , জোয়ার ভাটা, মাছ সহ নদীর উদ্ভিদ ও প্রাণী জগৎ ইত্যাদির উপর প্রভাব পড়বে ।
৪) পানি দূষণ:
যতই পরিশোধনের কথা বলা হউক, কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে পানি নির্গমন হলে তাতে বিভিন্ন মাত্রায় দূষণকারী উপাদান থাকবেই যে কারণে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বেলায় ‘শূণ্য নির্গমণ’ বা ‘জিরো ডিসচার্জ’ নীতি অবলম্বন করা হয়।
উৎসঃ রায়গড় ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ইআইএ, এক্সিকিউটিভ সামারি, পৃষ্ঠা ই-১২
অথচ রামপাল কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ই্আইএ রিপোর্টে বলা হয়েছে:
“After treatment, effluent shall be discharged to the Passur River at a rate of 100 m3/hr. Effluent quality shall be monitored at different stage of discharge and intake.”
ঘন্টায় ১০০ ঘনমিটার বা ৫১৫০ ঘনমিটার যাই হোক, কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে পানি নির্গমন করা হলে নির্গত পানির তাপমাত্রা, পানি নির্গমণের গতি, পানিতে দ্রবীভূতি নানান উপাদান বিভিন্ন মাত্রায় পানি দূষণ ঘটাবে যেটি গোটা সুন্দরবন এলাকার পরিবেশ ধ্বংস করবে।
৫) বায়ুর তাপমাত্রা বৃদ্ধি: ইআইএ রিপোর্ট অনুসারে ২৭৫ মিটার উচু চিমনী থেকে নির্গত গ্যাসীয় বর্জ্যের তাপমাত্রা হবে ১২৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস।
৬) বিষাক্ত ছাই : কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রে বছরে ৪ ৭ লক্ষ ২০ হাজার টন কয়লা পুড়িয়ে ৭ লক্ষ ৫০ হাজার টন ফ্লাই অ্যাশ ও ২ লক্ষ টন বটম অ্যাশ উৎপাদিত হবে। (পৃষ্ঠা )এই ফ্লাই অ্যাশ, বটম অ্যাশ, তরল ঘনীভূতি ছাই বা স্লারি ইত্যাদি ব্যাপক মাত্রায় পরিবেশ দূষণ করে কারণ এতে বিভিন্ন ভারী ধাতু যেমন আর্সেনিক, পারদ, সীসা, নিকেল, ভ্যানাডিয়াম, বেরিলিয়াম, ব্যারিয়াম, ক্যাডমিয়াম, ক্রোমিয়াম, সেলেনিয়াম, রেডিয়াম মিশে থাকে। (পৃষ্ঠা ২৮৭-২৮৮)
৭) শব্দ দূষণ: কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের টারবাইন, জেনারেটর, কম্প্রেসার, পাম্প, কুলিং টাওয়ার, কয়লা উঠানো নামানো, পরিবহন ইত্যাদির কাজে ব্যাবহ্রত যন্ত্রপাতি ও যানবাহন থেকে ভয়াবহ শব্দ দূষণ হয়। সুন্দরবন এলাকায় রামপাল কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র পরিচালনার সময় বিদ্যুৎ কেন্দ্র এলাকায় পরিবেশ অধিদপ্তরের বেধে দেয়া মাত্রার(দিনের বেলা ৫০ ডেসিবল, রাতে ৪০ ডেসিবল) চেয়ে বেশি শব্দ তৈরী হবে বলে ইআইএতে স্বীকার করা হলেও বলা হয়েছে সবুজ বেষ্টনী তৈরীকরার কারণে প্রকল্পের সীমার বাইরে উচ্চ শব্দ যাবে না।
৮) স্বাস্থ্যগত ঝুকি: কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে নির্গত সালফার, নাইট্রোজেন, কার্বন ইত্যাদির বিভিন্ন যৌগ কিংবা পারদ, সীসা, ক্যাডমিয়াম, ব্যারিয়াম ইত্যাদি ভারী ধাতুর দূষণ ছাড়াও কুলিং টাওয়ারে ব্যাকটেরিয়া সংক্রামণের কারণেও আশপাশের এলাকায় ব্যাপক আকারে নিউমোনিয়া জাতীয় রোগ ছড়িয়ে পড়ে। (পৃষ্ঠা ২৯১)
*সুন্দর বনের ভেতর দিয়ে কয়লা পরিবহনের ফলাফল
সরকারের পরিবেশ সমীক্ষাতেই স্বীকার করা হয়েছে, এভাবে সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে কয়লা পরিবহনকারী জাহাজ চলাচল করার ফলে-
১) কয়লা পরিবহনকারী জাহাজ থেকে কয়লার গুড়া, তেল, ময়লা আবর্জনা, জাহাজের দূষিত পানি সহ বিপুল পরিমাণ বর্জ্য নি:সৃত হয়ে নদী-খাল-মাটি সহ গোটা সুন্দরবন দূষিত করে ফেলবে;
২) সুন্দরবনের ভেতরে আকরাম পয়েন্টে বড় জাহাজ থেকে ছোট জাহাজে কয়লা উঠানো নামানোর সময় কয়লার গুড়া, ভাঙা কয়লা পানিতে/মাটিতে পড়ে- বাতাসে মিশে মাটিতে মিশে ব্যাপক পানি-বায়ু দূষণ ঘটাবে;
৩) চলাচলকারী জাহাজের ঢেউয়ে দুইপাশের তীরের ভূমি ক্ষয় হবে;
৪) কয়লা পরিবহনকারী জাহাজ ও কয়লা লোড-আনলোড করার যন্ত্রপাতি থেকে দিনরাত ব্যাপক শব্দ দূষণ হবে;
৫) রাতে জাহাজ চলের সময় জাহাজের সার্চ লাইটের আলো নিশাচর প্রাণী সহ সংরক্ষিত বনাঞ্চল সুন্দরবনের পশু-পাখির জীবনচক্রের উপর মারাত্বক ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে ইত্যাদি।
উৎসঃ প্রস্তাবিত রামপাল কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পরিবেশ সমীক্ষা, Impact of coal transportation, transshipment and handling, page 293-294
আরো পড়ুন: