বিসিএস ও ব্যাংক লিখিত প্রস্তুতি
নারী —- ক্ষমতায়ন, উন্নয়ন, অধিকার, নির্যাতন; লিঙ্গ বৈষম্য—- সাফল্য, ব্যর্থতা।
::বিশ্বের ১৪৫টি দেশে নারী-পুরুষের সমতা নিয়ে করা সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ৬৪তম৷ এর আগে, ২০১৪ সালে ১৪২টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ছিল ৬৮ নম্বরে৷ সেই বিবেচনায় বাংলাদেশে নারী ও পুরুষের মধ্যে বৈষম্য দুই ধাপ কমেছে৷ এছাড়া জরিপ অনুযায়ী, লিঙ্গ বৈষম্য কমিয়ে আনা বা নারী-পুরুষের অসমতা দূর করার কাজে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় সবার থেকে এগিয়ে৷
উৎসঃ বিশ্ব লিঙ্গ বৈষম্য প্রতিবেদন – ২০১৫।
::২০০৭ সাল থেকে টানা নয় বছর লিঙ্গ বৈষম্য কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে মোটামুটি ধারাবাহিকভাবে উন্নতি করছে বাংলাদেশ৷ নিম্নে একটি ছকে তা দেখানো হলঃ
সাল—-মোট দেশ—-বাংলাদেশের অবস্থান
২০০৭——১২৮
—-১০০
২০০৮——১৩০
—-৯০
২০০৯——১৩৪
—-৯৩
২০১০——-১৩৪
—-৮২
২০১১——-১৩৫
—-৬৯
২০১২——-১৩৫
—৮৬
২০১৩——১৩৬
—৭৫
২০১৪——-১৪২
—-৬৮
২০১৫——-১৪৫
—-৬৫
উৎসঃ বিশ্ব লিঙ্গ বৈষম্য প্রতিবেদন – ২০১৫।
::২০১৪ সালের তুলনায় নারী দুই ধাপ এগিয়েছে শিক্ষা ও রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে৷ রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে গতবারের ১০ম থেকে এগিয়ে বাংলাদেশে এবার ৮ম হয়েছে এবং স্কোর করেছে ০.৪৩৩। এই সময়ে রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে নারী-পুরুষ ব্যবধান ঘুচেছে ৪%, আর্থিক দূরত্ব কমেছে ৩%। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষায় নারীর অংশগ্রহণের ক্ষেত্রেও বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ঈর্ষনীয়৷ তবে উচ্চ শিক্ষায় নারীর অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান আগের থেকে পিছিয়েছে৷ এছাড়া অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডেও নারীর অংশগ্রহণ দুই ধাপ পিছিয়েছে, ২০১৪ সালের তুলনায়৷
উৎসঃ বিশ্ব লিঙ্গ বৈষম্য প্রতিবেদন – ২০১৫।
::দেশের ৬.১০ কোটি কর্মজীবীর মধ্যে ১.৮ কোটি নারী৷ ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তাদের মধ্যে নারীর সংখ্যা ১৬ হাজার ৬৯৭ জন৷ বিদেশে বিভিন্ন পেশায় কর্মরত ৭৬ লাখ প্রবাসীর মধ্যে ৮২ হাজার ৫৫৮ জন নারী৷ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্পের ৮০% কর্মীই নারী৷ আর দেশের ৯০% ক্ষুদ্র ঋণ ব্যবহারকারীও নারী৷
উৎসঃ বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।
::১৯৮৬ সালের সাধারণ নির্বাচনে সরাসরি ভোটে মাত্র ৫ জন নারী সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন৷ বর্তমানে সংসদে ৭০ জন নারী সংসদ সদস্য রয়েছেন৷ এছাড়া মন্ত্রীভায় নারী আছেন – প্রধানমন্ত্রী নারী, সাবেক প্রধানমন্ত্রী নারী, বিরোধী দলিয় নেত্রি নারী, এমনকি জাতীয় সংসদের স্পিকারও নারী৷
::অর্থনৈতিক অংশগ্রহণ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও রাজনীতিতে নারী-পুরুষ সমতা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের উন্নতি অভূতপূর্ব, বাংলাদেশ নারী উন্নয়নের একটি আদর্শ দেশ।
উৎসঃ ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরাম (ডব্লিউইএফ)।
::রাজনীতিতে লিঙ্গ বৈষম্য হ্রাস করে আঞ্চলিক নেতৃত্বে সাফল্যের জন্য বাংলাদেশ মর্যাদাপূর্ণ ওমেন ইন পার্লামেন্টস (ডব্লিউআইপি) গ্লোবাল ফোরাম অ্যাওয়ার্ড লাভ করেছে। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের জোনাল ক্যাটাগরিতে রাজনীতিতে লিঙ্গ বৈষম্য কমিয়ে আনায় অসামান্য অবদানের জন্য বাংলাদেশ এ বিজয় গৌরব অর্জন করে।যা বাংলাদেশের জন্য একটি বিরাট সম্মান। এটি নারী উন্নয়নে কাজ করে অন্তর্জাতিক বড় বড় স্বীকৃতিগুলোর একটি।
::মানব উন্নয়ন সূচকে ২০১৫ সালে বাংলাদেশ ১৪২ নম্বরে উঠে এসেছে। ১৮৭টি দেশের মধ্যে আগের বছর বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৪৩। ২০১৪ সালের মতো ২০১৫ তে দ্রুত এগিয়ে চলা ১৮ টি দেশের তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশের নাম। নারী উন্নয়ন, প্রত্যাশিত আয়ু, সাক্ষরতা, শিক্ষা এবং মাথাপিছু আয়ের ভিত্তিতে সারাবিশ্বে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে ইউএনডিপি।
উৎসঃ UNDP।
::২০১৫ সালে নারীর ক্ষমতায়নে ১৭৩ টি দেশের মাঝে ৪১তম স্থান লাভ করে বাংলাদেশ।
উৎসঃ বিশ্বব্যাংক।
:: নারীর কর্মসংস্থানের দিক দিয়ে তাৎপর্যপূর্ণ উন্নতি সাধন করেছে বাংলাদেশ। অন্যদিকে অর্থনৈতিক সক্ষমতা নিয়ে পরিচালিত বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায়ও এগিয়েছে বাংলাদেশ।২০১৫ সালে নারী উন্নয়ন সূচকে অন্তর্ভুক্ত ১৬ টি দেশের মাঝে বাংলাদেশের অবস্থান ২য়।
উৎসঃ মাষ্টার কার্ড।
::২০১৫ সালে মায়েদের অবস্থা সূচকে অন্তর্ভুক্ত ১৭৯ টি দেশের মাঝে বাংলাদেশের অবস্থান ১৩০ তম।
উৎসঃ সেভ দ্য চিলড্রেন।
::নারীদের বর্তমান অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে পুরুষের জন্য কোটা লাগতে পারে।—- মেহের আফরোজ চুমকি।মাননীয় প্রতিমন্ত্রী , মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়। 2016-03-06।
::আন্তর্জাতিক নারী দিবস-২০১৬ এর প্রতিপাদ্য বিষয় হলোঃ “”Planet 50-50 by 2030: Step It up for Gender Equality”” “”অধিকার, মর্যাদায় নারী-পুরুষ সমানে সমান।””
::প্রতিটি কলেজে ছাত্রীদের জন্য একটি বাস দেয়ার চিন্তা করছে সরকার — মেহের আফরোজ চুমকি।মাননীয় প্রতিমন্ত্রী, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়।2016-04-13।
::বাংলাদেশে নারী উন্নয়নের একটি অংশ জয়িতা ফাউন্ডেশন। বর্তমান সরকার প্রথম মেয়াদে ক্ষমতা নেওয়ার পর ২০১১ সালের নভেম্বরে জয়িতা প্রতিষ্ঠা করে। সারা বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে তুলে আনা হয় বেশ কিছু নারী উদ্যোক্তা। দেশব্যাপী ছড়িয়ে থাকা নিবন্ধন করা ১৬ হাজার নারী সমিতি থেকে বাছাই শেষে লটারির মাধ্যমে নির্বাচিত ১৮০টি সমিতিকে প্রাথমিক পর্যায়ে দোকান বরাদ্দ দেওয়া হয়। প্রতিদিন এ সংখ্যা বেড়েছে, বেড়েছে জয়িতার সদস্য সংখ্যাও। রাজধানীর ধানমন্ডির রাপা প্লাজার পাশে জয়িতার জন্য সরকার একটি বাড়ি বরাদ্দ দিয়েছে। শুধু তাই নয়, পুরো বাংলাদেশব্যাপী তৃণমূল নারীদের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে এ ফাউন্ডেশন। মূলত উৎপাদন থেকে শুরু করে বণ্টন পর্যন্ত নারীর কর্মক্ষেত্র বিস্তৃত করতে সরকার বদ্ধপরিকর। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এক্ষেত্রেও সফলতার ধারাবাহিকতা অব্যাহত রয়েছে। এতে সর্বোপরি এগিয়ে যাচ্ছে গ্রামীণ থেকে শুরু করে সমাজের সর্বস্তরের নারীরা। অর্থিক প্রণোদনায় নারীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা সম্ভব হয়েছে বলেই এ অগ্রগতি ত্বরান্বিত হয়েছে, মত অর্থনীতিবিদদের।
উৎসঃ মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়৷
::চলতি অর্থবছরের (২০১৫-১৬) বাজেটে নারীদের জন্য মন্ত্রণালয়ের আওতায় বিশেষ বরাদ্দ রাখা হয়েছে। তাছাড়া বাল্যবিয়ে রোধ করে শিক্ষা গ্রহণে আগ্রহী করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া, অসহায়-অবহেলিত-প্রতিবন্ধী নারীদের সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের আওতায় নিয়ে আসা, নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে কর্মযজ্ঞ, নারীদের দক্ষতা বাড়াতে কার্যক্রম পরিচালনা, তৃণমূল নারীদের বাণিজ্যিকভাবে পণ্য উৎপাদন ও বিপণনের জন্য জয়িতা ফাউন্ডেশন (কার্যক্রম পর্যায়ক্রমে বিভাগীয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সম্প্রসারিত করা হয়েছে) কাজ করছে। এছাড়াও নারীদের ড্রাইভিং, ক্যাটারিং প্রশিক্ষণসহ আইসিটি সেক্টরেও কাজের সুযোগ তৈরি হয়েছে।
উৎসঃ জাতীয় মহিলা সংস্থা।
::২০১০ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ৮৬০ মিলিয়ন ডলার ৫৭ হাজার ৭২২ জন নারীকে ঋণ হিসেবে দেওয়া হয়েছে। এতে তারা গড়ে তুলেছেন বিভিন্ন ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প।নিচে একটি ছকে তা দেখানো হলঃ
সাল—–নারী(জন)—-ঋণ(মিলিয়ন ডলার)
২০১০——-১৩৮৩১
————২৩১
২০১১——-১৬৬৯৬
————-২৫৭
২০১২——১৭৩৬২
————-২৮২
উৎসঃ মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়৷
::৩০ লাখ নারী শ্রমিক কাজ করছেন পোশাকখাতে। এটি বাংলাদেশের প্রাইভেট সেক্টরে নারী বিপ্লবের একটি বড় ক্ষেত্র। তাছাড়া মোট নারী শ্রমশক্তির হার ২০১০ সালে ছিল ২৪ % যেটি ২০১৩ সালে বেড়ে ৩৬% এ দাঁড়িয়েছে। সরকারের নানান দূরদর্শী পদক্ষেপের কারণে আরও উন্নতির দিকে যাচ্ছে বাংলাদেশ ও দেশের নারীরা।
উৎসঃ শ্রমশক্তি জড়িপ।
::অর্থনীতিতে অতি দ্রুত বিশেষ করে চাকরি, ব্যবসায় নারীর সংখ্যা বাড়ছে। মোট শ্রমশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণ নিচে দেখানো হলঃ
সাল
—–শতকরা হার
২০০২-০৩
——২৬.১০
২০০৫-০৬
——২৯.২০
২০১১-১২
——-৩৯.১০
উৎসঃ সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) এক গবেষণা।
::দেশে এখন মাতৃ-মৃত্যুর হার ৬৬% কমে এসেছে। প্রতিলাখে ১৪৩ জনের বেশি নয়, এমন লক্ষ্য বাস্তবায়নে এগোচ্ছে বাংলাদেশ। শুধু তাই নয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অঙ্গীকার ২০৩০ সালের মধ্যে এ সংখ্যা ৬৩ এর ঘরে নিয়ে আসার। দেশে মাতৃ-মৃত্যু হ্রাস করে নারী উন্নয়নের পথকে আরও সুগম করতে কাজ করছে সরকার। প্রতিটি গ্রামে গ্রামে, তূণমূলে, প্রান্তিক মানুষের হাতের নাগালে রয়েছে কমিউনিটি ক্লিনিক।এছাড়া প্রতিটি জেলায় নারীবান্ধব জেলা হাসপাতাল গড়ে তোলা হয়েছে। এখানে নারীদের চিকিৎসায় আলাদা সেল রয়েছে। যাতে করে তারা দ্রুত উন্নত সেবা পেতে পারেন। দেশব্যাপী ১২ হাজার ৯৫৬টি মাতৃসদন রয়েছে, যাতে স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছেন নারীরা।
উৎসঃ জাতীয় মহিলা সংগঠন ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
::সেই মহাজোট আমল থেকে শিক্ষায় নারীদের উন্নয়ন এক ভিন্নমাত্রা পেয়েছে। শিক্ষা নীতির পাশাপাশি নিশ্চিত হয়েছে ৬ থেকে ১০ বছর বয়সী প্রায় শতভাগ মেয়ে শিশুর শিক্ষা প্রাপ্যতার হার। কমেছে উচ্চ শিক্ষায় ঝরে পড়ার হার, নারী শিক্ষার প্রসারে দেওয়া হচ্ছে বৃত্তি এবং অর্থ সহায়তা। ১৯৯১ সালে প্রাথমিকে মেয়েদের অংশগ্রহণ ৬০.০৫% থাকলেও এখন প্রায় ৯৮%। তাছাড়া উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত নারী শিক্ষা অবৈতনিক করা হয়েছে। বর্তমানে উচ্চ শিক্ষায় নারীদের অংশগ্রহণ অংশগ্রহণ আশাব্যঞ্জক।
উৎসঃ প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
::কর্মক্ষেত্রে সমতা আনয়নের লক্ষ্যে ও সেবা খাতে নারীর অংশগ্রহণমূলক অগ্রগতি সাধনের জন্য জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি ২০১১ প্রবর্তন করা হয়েছে। নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশের অগ্রগতি প্রশংসনীয়, যেমন ইউনিয়ন এবং উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নারীদের সরাসরি অংশগ্রহণ একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। জাতীয় সংসদে নারীর অংশগ্রহণের হার ১৯.৮৭%। অকৃষিখাতে নারীর কর্মসংস্থান বর্তমানে ২৫%।
উৎসঃ জাতীয় মহিলা সংস্থা।
::বাল্যবিয়ে রোধেও সফলতা অর্জন করেছে বাংলাদেশ। ১৯৮৪ সালে ৫২% মেয়েশিশু বাল্য বিয়ের শিকার ছিল। এখন এ হার কমে ১৭% হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অঙ্গীকার- এ সংখ্যা শূন্যে নামিয়ে আনা হবে ২০৪০ সালের মধ্যে। তিনি সে টার্গেট নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছেন।
::রাজনীতিতে বাংলাদেশের নারীদের অংশগ্রহণ পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র ভারতের চেয়ে বেশি। সংসদে নারীর উপস্থিতির ক্ষেত্রে ভারতের অবস্থান যেখানে ১০৫, সেখানে বাংলাদেশের অবস্থান ৬৫তম।
উৎসঃ ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়ন’-এর ২০১২ সালের এক গবেষণা।
::যে রাষ্ট্র যত সভ্য, সে রাষ্ট্রে মা তত নিরাপদ, তত নিশ্চিন্ত। সেই বিচারে বিশ্ব মাতৃপরিস্থিতি সূচকে ২০১৪ সালে ১৭৮ দেশের মধ্যে ১৩০তম অবস্থানে উঠে এসেছে বাংলাদেশ। ২০১২ সালে ১৬৫টি দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৩৬।
উৎসঃ বিশ্ব মাতৃপরিস্থিতি সূচক ২০১৪।
::নারীদের উন্নয়নে বাংলাদেশ যেমন দ্রুত এগিয়ে যাওয়া একটি দেশের নাম, ঠিক তেমনি নারীর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে একটি আদর্শ দেশ। নারীদের পথ চলায় বাংলাদেশ সরকার যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে এবং যেসব পদক্ষেপ চলমান তাতে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে বিশ্বের প্রতিটি সূচকেই বাংলার নারীদের অবস্থান আরও সুদৃঢ় হবে। ডব্লিউইএফ বাংলাদেশের নারীর ক্ষমতায়নের বেশ প্রশংসা করেছে। শুধু তাই নয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যাপক প্রশংসা করেছে ইউনেস্কো। বাংলাদেশে নারী শিক্ষায় প্রধানমন্ত্রীর নেওয়া সবগুলো পদক্ষেপকে আধুনিক বলেছে তারা।
উৎসঃ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংগঠন (ডব্লিউএইচও)।
::সম্প্রতি ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের প্রতিযোগিতামূলক সূচকে দুই ধাপ এগিয়েছে বাংলাদেশ মোট ৩.৭৬ পয়েন্ট পেয়ে বাংলাদেশ ১০৯ থেকে ১০৭-এর ঘরে প্রবেশ করেছে। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম বিশ্বের ১৪০টি দেশের উৎপাদনশীলতার ওপর ভিত্তি করে ২০১৫-১৬ সালের জন্য এ তালিকা প্রকাশ করে। এখানে ১১৩টি বিষয়কে বিবেচনা করে সূচক তৈরি করা হয়েছে।
উৎসঃ ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম।
::””জগতের যত বড় বড় জয়, বড় বড় অভিযান,
মাতা ভগ্নি ও বধূদের ত্যাগে হইয়াছে মহিয়ান।””
কাজী নজরুল ইসলামের চরণ দু’টিই প্রমাণ করে জগতের প্রত্যেকটি সাফল্য, প্রত্যেকটি বিজয়, প্রত্যেকটি সৃষ্টির পেছনে নারীর অবদান কোনো না কোনো ভাবে আছে। নারী মমতাময়ী আশ্রয়ে শিশুকে বড় করেছে, পুরুষের পাশে থেকে প্রেরণা যুগিয়েছে, ভ্রাতৃবন্ধনে সহোদরকে এগিয়ে যেতে পাথেয় যুগিয়েছে। নারীর সাহসে পুরুষ আকাশ জয় করেছে, হিমালয়ে উঠেছে, সমুদ্র পাড়ি দিয়েছে। তবে নারীরা যে শুধু পুরুষকে প্রেরণা, ভালোবাসা, আনন্দ দিয়েছে তেমনটি নয়, সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন সময়ে নারী পালন করেছে নেতৃস্থানীয় ভূমিকা। উপমহাদেশের নারীনেত্রী ইলা মিত্র দেখিয়েছেন কীভাবে পরাধীনতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হয়, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার দেখিয়েছেন কীভাবে শত্রুর বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে হয়, শহীদ জননী জাহানারা ইমাম দেখিয়েছেন কীভাবে রাজাকারদের বিচার করতে হয়।
::বাংলাদেশের নারীরা নিজ মেধা আর যোগ্যতায় এগিয়ে চলেছে নিরন্তর।নিচে কিছু উদাহরণ দেয়া হলঃ
১।সচিব পদে বর্তমানে কর্মরত আছে পাঁচজন নারী। মহিলা ও শিশু মন্ত্রণালয়ে নাসিমা বেগম, খাদ্য মন্ত্রণালয়ে মুশফেকা ইকফাত, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সুরাইয়া বেগম, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের কানিজ ফাতেমা, সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে বেগম আখতারী মমতাজ সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
২।মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের মহাপরিচালক পদে দয়িত্ব পালন করছেন ফাহিমা খাতুন।
৩।জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মহাপরিচালক হিসেবে আছেন শামসুন নাহার।
৪।পুলিশ প্রশাসনে ডিআইজি পদে ফাতেমা বেগম ও রওশন আরা দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।
৫।বাংলাদেশে অন্যতম শ্রেষ্ঠ ভাস্করের মর্যাদায় অধিষ্ঠিত হয়ে শামীম শিকদার ও আইভি জামান উৎসাহ জোগাচ্ছেন অন্য নারীদের।
৬।সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা।
৭।বাংলাদেশে প্রথম টেস্টটিউব বেবির (শিশু) জন্মের সাফল্য লাভকারী ডাক্তার একজন নারী পারভীন ফাতিমা।
৮।তরুণ চলচ্চিত্র নির্মাতা সারা আফরীন নির্মিত ‘শুনতে কি পাও’ নন্দিত হয়েছে বিশ্বদরবারে। বার্লিন ট্যালেন্ট ক্যাম্পাসের সম্পাদনা ল্যাবে মাত্র নয়টি ছবির মধ্যে আমন্ত্রিত হয় তার নির্মিত ‘শুনতে কি পাও’। বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসবের কোনো অংশে এটিই ছিল কোনো বাংলাদেশি চলচ্চিত্রের প্রথম অংশগ্রহণ।
৯।আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ফ্যাশন ডিজাইনার বাংলাদেশের বিবি রাসেল এ দেশের তাঁতশিল্পকে নিয়ে গেছেন বিশ্বদরবারে, দেশকে পরিচিত করেছেন বিশ্ববাজারে।
১০। বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনেও নারীদের সাফল্য কম নয়। শুটিং, দাবা, সাঁতার ও ব্যাডমিন্টনে দেশের নারী ক্রীড়াবিদরা সাফল্যের স্বাক্ষর রেখেছেন। টেবিল টেনিস তারকা জোবেরা রহমান লিনু হয়েছেন গিনেস রেকর্ডধারী।
১১।দৃঢ় মনোবল নিয়ে বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট জয় করে সফলতার তালিকায় নাম লিখিয়েছেন বাংলাদেশের অকুতোভয় নারী নিশাত মজুমদার এবং ওয়াসফিয়া নাজরীন।এভারেস্ট শৃঙ্গে উড়িয়েছেন বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকা।
উৎসঃ rodoshee.com
::মেধা আর কৃতিত্বে বাংলাদেশের নারীরা দেশে-বিদেশে অর্জন করেছে নানান পুরস্কার ও স্বীকৃতি।নিচে কিছু উদাহরণ দেয়া হলঃ
১।প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি চ্যাম্পিয়নস অব দ্য আর্থসহ বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক পদক ও সম্মাননা অর্জন করেছেন।
২।এশিয়ার নোবেল নামে খ্যাত ফিলিপাইনের র্যামন ম্যাগসাইসাই অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছেন তহরুন্নেসা আবদুল্লাহ ও অ্যাঞ্জেলা গোমেজ।
৩। জাহাজভাঙা শিল্পের পরিবেশ দূষণ ও শ্রমিকদের মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে আইনি লড়াই করে পরিবেশ আইনবিদ ২০০৯ সালে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান অর্জন করেন ‘গোল্ডম্যান এনভায়রনমেন্টাল অ্যাওয়ার্ড।’ টাইম ম্যাগাজিন কর্তৃক পান ‘হিরোজ অব এনভায়রনমেন্ট’ এবং ২০১২ সালে অর্জন করেন র্যামন ম্যাগসাইসাই অ্যাওয়ার্ড।
৪। দেশের দক্ষিণের জেলা নোয়াখালীতে গান্ধী আশ্রম পরিচালনা ও সমাজসেবায় অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ভারতের অন্যতম বেসামরিক রাষ্ট্রীয় পুরস্কার ‘পদ্মশ্রী’তে ভূষিত হয়েছেন বাংলাদেশি নারী ঝর্ণাধারা চৌধুরী।
উৎসঃ rodoshee.com
::বাংলাদেশে নারী শিক্ষার অগ্রগতি আর নারীদের অগ্রগামী ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. অমর্ত্য সেন। নারীশিক্ষায় ভারতের তুলনায় বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে গেছে এবং বাংলাদেশ থেকে অনেক ক্ষেত্রেই শিক্ষা নেওয়ার আছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। ৫ জানুয়ারি,২০১৩ কলকাতার শান্তিনিকেতনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। বাংলাদেশে নারীশিক্ষায় এগিয়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ হিসেবে অমর্ত্য সেন দেশের বিভিন্ন পর্যায়ে নারীর ক্ষমতায়নকেই চিহ্নিত করেন। অমর্ত্য সেনের মতে, ‘বাংলাদেশে অনেক বেশি নারী শিক্ষক রয়েছে। স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে নারীদের সংখ্যা অনেক। এমনকি বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন ও ইউনিয়নের মধ্যেও নারীদের আধিক্য রয়েছে। মানব উন্নয়ন সূচকের সব ক্ষেত্রেই মূলত এই নারীরাই বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে সহায়তা করছে।’
::বাংলাদেশের নারী নেত্রী এবং মানবাধিকার কর্মী অ্যাডভোকেট এলিনা খান বলেন, ‘‘দেশের প্রচলিত আইন এবং দৃষ্টিভঙ্গি নারীর সমতার পথে প্রধান বাধা৷ প্রধানমন্ত্রী বা বিরোধী দলীয় নেত্রী নারী হলেই নারীর সমতা বা ক্ষমতায়ন নিশ্চিত হয় না৷ আগে নিশ্চিত করতে হবে তারা কাদের প্রতিনিধিত্ব করছেন।”” তাঁর কথায়, ‘‘আমাদের রাষ্ট্র এবং সমাজ ব্যবস্থার যারা নিয়ন্ত্রক, তাঁরা পুরষতন্ত্রেরই প্রতিনিধিত্ব করছেন৷ তাঁরা একটি সিস্টেমের প্রতিনিধিত্ব করেন আর সেই সিস্টেমটাই পুরুষতান্ত্রিক৷ তাই কোনো নারীর একক ক্ষমতায়ন নারীর ক্ষমতায়ন বা সমতা নিশ্চিত করে না৷”” এলিনা খান বলেন, ‘‘বিচার, পেশা, মজুরি এবং নিজের ঘরে নারী অসাম্যের শিকার৷ এটা দূর করার জন্য রাষ্ট্রকে উদ্যোগ নিতে হয় সবার আগে৷ নারীরা আগের চেয়ে এগিয়েছে, সমতার বিচারের অসাম্য দূর হচ্ছে, কিন্তু তাতে অসাম্য দূর হয়নি৷ সমতা প্রতিষ্ঠা এখনো অনেক দূর৷
উৎসঃ DW.COM।08.03.2016।
::ভূমি এবং প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর নারীর অধিকারের চিত্রটি জানা যায় এক গবেষণায়৷ অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত ‘নারীর ভূমি অধিকার ও বঞ্চনা’ শীর্ষক গবেষণায় বলেছেন, ‘‘মাত্র শতকরা চার ভাগ নারীর ভূমির ওপর প্রকৃত মালিকানা রয়েছে৷ মুসলিম নারীরা উত্তরাধিকার সূত্রে সম্পত্তির মালিকানা লাভ করলেও শতকরা মাত্র দুই থেকে পাঁচ ভাগ মুসলিম নারীর ভূমিতে প্রকৃত মালিকানা রয়েছে৷””
::বাংলাদেশে সরকারি ও আধা সরকারি প্রতিষ্ঠানে অনুমোদিত পদের সংখ্যা ১০ লাখ ৯৭ হাজার ৩৩৪টি৷ এর মধ্যে নারীর সংখ্যা ৮৩ হাজার ১৩৩, অর্থাৎ ৭.৬% ভাগ৷ উপসচিব পদ থেকে সচিব পদ পর্যন্ত নারীদের সংখ্যা মাত্র ১% বা তারও কম৷ জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের বিচার বিভাগে বিচারক পদের ১০% হলো নারী৷ তবে হাইকোর্টে প্রধান বিচারপতি পদে এখনো নারীকে দেখা যায়নি৷
উৎসঃ জাতীয় শ্রম শক্তি জরিপ প্রতিবেদন।
::দেশে নারী শ্রমিকের সংখ্যা সাড়ে ৮ লাখ৷ তারা সবাই মজুরি বৈষম্যের শিকার৷ পুরুষের সমান কাজ করলেও মজুরি পান কম৷ উদাহরণস্বরূপ, গ্রামাঞ্চলে একই কাজ করে পুরুষ শ্রমিকরা গড়ে ১৮৪ টাকা পেলেও নারী শ্রমিকরা পান মাত্র ১৭০ টাকা৷ মানবাধিকার ও ন্যায় বিচারের এটি স্পষ্ট করার জন্য এই একটি তথ্যই যথেষ্ঠ৷ উৎসঃ জাতীয় শ্রম শক্তি জরিপ প্রতিবেদন।
::বাংলাদেশের ৬০% এর বেশি নারী তাদের পারিবারিক জীবনে কখনো না কখনো পারিবারিক সহিংসতার শিকার হয়েছেন৷ ২০১৫ সালের মে মাসে একটি জরিপের ফল প্রকাশ করে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়৷ তাদের অধীনে ‘নারী নির্যাতন প্রতিরোধকল্পে মাল্টিসেক্টরাল প্রোগ্রামে’র আওতায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এবং রাজশাহী, চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল শের-ই-বাংলা, খুলনা, সিলেট এম এ জি ওসমানী, রংপুর ও ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ৯ বছরে ২২ হাজার ৩৮৬ জন নারী ধর্ষণসহ নির্যাতনের ঘটনায় চিকিৎসা নেন৷
উৎসঃ মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়৷
আরো পড়ুন: