
যাদের উচ্চ রক্তচাপ আছে, যারা উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ নিয়মিত খান কিংবা যাদের উচ্চ রক্তচাপ নেই- সবারই কিন্তু আকস্মিক রক্তচাপ বাড়তে পারে। একবার রক্তচাপ বেশি দেখলেই হাই ব্লাড প্রেশার বা উচ্চ রক্তচাপের রোগী বলা যায় না। এ জন্য প্রয়োজন কিছুদিন পর পর বেশ কয়েকবার রক্তচাপ মেপে দেখা এবং তারিখ ও সময়সহ তা লিখে রাখা। আবার রক্তচাপ যদি অনেক বেড়েও যায়, তা আবার এক ধাক্কায় কমানো উচিত না। ধীরে ধীরে কমানো উচিত। অন্যথায় শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ যেমন মস্তিষ্ক, চোখ, হৃৎপিণ্ড, লিভার, কিডনি ইত্যাদি বিকল হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
উচ্চ রক্তচাপ এর কারন
ক্ষণস্থায়ী রক্তচাপ বৃদ্ধি অনেক ক্ষেত্রেই পরে স্বাভাবিক হয়ে যায়। তার পরও একে অবহেলা করা উচিত নয়। আবার বেশ কিছুদিন বা কয়েক সপ্তাহ ধরে বাড়তি রক্তচাপ থাকলে অবশ্যই ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। হার্ভার্ড হেলথ পাবলিকেশনের মতে, রক্তচাপের এই হঠাৎ বেড়ে যাওয়া বেশ কিছু কারণে হতে পারে।
- ব্যথার ওষুধ (অ্যাসপিরিন, আইবুপ্রুফেন জাতীয়), গর্ভনিরোধক পিল, নেশাজাতীয় বস্তু যেমন- কোকেন, অ্যামফিটামিন ইত্যাদি গ্রহণ করা।
হরমোনজনিত কিছু রোগ।
- কিডনি রোগ যেক্ষেত্রে কিডনিতে রক্ত প্রবাহ কমে যায়।
- গর্ভাবস্থায় গর্ভজনিত জটিলতা।
- ব্লাড প্রেশারের রোগী যিনি ব্লাড প্রেশারের বড়ি অনিয়মিতভাবে গ্রহণ করে থাকেন।
- রক্তচাপ বেড়ে যাওয়ার একটি প্রধান কারণ অতিরিক্ত লবণ গ্রহণ করা। যদিও অতিরিক্ত লবণ গ্রহণে সবার রক্তচাপ বাড়ে না; তার পরও খাদ্যাভ্যাস (ভাতের সঙ্গে পাতে অতিরিক্ত লবণ নেওয়া), ফাস্ট ফুড ও প্রক্রিয়াজাত খাদ্য গ্রহণ- শরীরে অতিরিক্ত লবণ ঢুকে যাওয়ার অন্যতম কারণ। তা ছাড়া ভূরিভোজন নাড়ির গতি ও রক্তচাপ বাড়ায়।
- মানসিক চাপের কারণে শরীরে হরমোন তৈরি হয়। হৃৎপিণ্ড দ্রুত কাজ করে। রক্তনালি সংকুচিত হয়ে ব্যাসার্ধ কমে চিকন হয়ে যায়। এভাবে রক্তচাপ বেড়ে যায়। আমেরিকান আয়াট্রোজেনিক অ্যাসোসিয়েশনের মতে, ডাক্তারের কাছে গেলে ভয় ও মানসিক চাপে ২৫ ভাগ রোগীর রক্তচাপ এমনিতেই বেড়ে যায়। একে হোয়াইট কোট হাইপারটেনশন বলা হয়।
- ২০০৭ সালে প্রকাশিত আমেরিকান জার্নাল অব হাইপারটেনশনে বলা হয়, মাত্র একটি সিগারেট গ্রহণ রক্তনালির ওপর নিকোটিনিক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার জন্য যথেষ্ট। এতে রক্তনালি শক্ত হয়ে যায়। রক্তসংবহনতন্ত্রে প্রদাহ সৃষ্টি হয়, নাড়ির স্পন্দন বেড়ে যায়, একই সঙ্গে রক্তচাপও বাড়ে।
উচ্চ রক্তচাপ এর প্রতিকার
- হঠাৎ রক্তচাপ বেড়ে গেলে ডাক্তারের পরামর্শে ঘুমের ওষুধ সেবন করা।
- ওজন কমানো। বডি ম্যাস ইনডেক্স বা বিএমআই ২৫-এর নিচে রাখা
- লবণ কম খাওয়া।
- মদ্যপান বা নেশাদ্রব্য গ্রহণ না করা।
- প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট জোরে জোরে হাঁটা।
- চর্বিজাতীয় খাবার কম খাওয়া।
- প্রচুর ফল ও শাকসবজি খাওয়া।
- মাছ বেশি খাওয়া।
- ধূমপান পরিত্যাগ করা।
- ডায়াবেটিস, হাইপারলিপিডেমিয়া (রক্তে অতিরিক্ত চর্বি জমা হওয়া) নিয়ন্ত্রণে রাখা।
- ঘন ঘন রক্তচাপ পরিমাপ না করা।
- হাসিখুশি ও প্রফুল্ল থাকা। বন্ধু-পরিজনসহ সুখী জীবন-যাপনের চেষ্টা করা।
- মানসিক অবসাদগ্রস্ততা দূর করা।
- উচ্চমাত্রার ওষুধ গ্রহণ করে হঠাৎ রক্তচাপের অতিরিক্ত না কমিয়ে ফেলা।
- যথেষ্ট বিশ্রাম নেওয়া।
আরও পড়ুনঃ
চতুর্থ প্রজন্মের মোবাইল ইন্টারনেট সেবা তথা ফোর-জি সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন।