সহজ ব্যাখ্যায় সহজ প্রস্তুতি (প্রিলি +লিখিত)
=
এই টপিকটি প্রিলি ও লিখিত দুই অংশের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। আগেই বলেছি,যেসব বিষয় প্রিলি ও লিখিত সিলেবাসে একই রকম সেগুলোতে বেশি জোর দিয়ে পড়তে হবে। প্রিলি প্রস্তুতির সাথে সাথে যেন অন্তত বলতে পারেন লিখিত পরীক্ষার জন্য ও আপনার ৩০% প্রস্তুতি শেষ। সামনে ৩৬ তম লিখিত ও ৩৭ তম প্রিলি।আসুন আজ সহজ ব্যাখ্যায় বাক্যের প্রয়োগ -অপপ্রয়োগ জেনে নিই।
===
________________________________
প্রসঙ্গঃ বাক্যের প্রয়োগ -অপপ্রয়োগ
________________________________
১ম পদ্ধতিঃ নিচের বাক্যটি খেয়াল কর-
=> সকল দর্শকমণ্ডলীকে স্বাগত জানাই।
বাক্যটি আপাত দৃষ্টিতে শুদ্ধ মনে হলেও, বাক্যটি ভুল। ভুলটা কোথায়? প্রথমে দেয়া আছে, “”সকল “” শব্দটি। এটি দ্বারা বহুবচন বুঝায়, আবার পরের শব্দটি “” দর্শকমণ্ডলীকে “”, এটি দ্বারা ও বহুবচন বুঝায়। অর্থাৎ বহুবচনের বহু ব্যবহারে বাক্যটি ভুল হল। যেখানে”” সকল”” শব্দটি দ্বারা সবাইকে বুঝাচ্ছে সেখানে “” দর্শকমণ্ডলীকে “” না বলে শুধু “”দর্শককে “” বললেই সঠিক হত। তাহলে বাক্যটিকে আমরা ২ভাবে শুদ্ধ করতে পারি-
১)সকল দর্শককে স্বাগত জানাই।
২) দর্শকমণ্ডলিকে স্বাগত জানাই।
:
একই ভাবে নিচের কয়েকটা বাক্য খেয়াল কর এবং উপরের দেয়া নিয়মানুযায়ী সমাধান করঃ
=> সকল ছাত্রগণ পাঠে মনোযোগী নয়। (‘সকল’ ও ‘ছাত্রগণ’ দুটোই বহুবচন)
=> সকল বন্যার্তদের ত্রাণসামগ্রী দেওয়া হয়েছে। (‘সকল’ ও ‘বন্যার্তদের ‘ দুটোই বহুবচন)
=> যাবতীয় প্রাণীবৃন্দ এই গ্রহের বাসিন্দা। (‘যাবতীয় ‘ ও ‘প্রাণীবৃন্দ ‘ দুটোই বহুবচন)
:
এই ৩টা বাক্য নিজেরা শুদ্ধ কর আপনাদের সুবিধার্থে প্রতিটি বাক্যের পাশে ১ম বন্ধনীর মাঝে সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা দিয়ে ভুলটি চিহ্নিত করে দিলাম।
:
২য় পদ্ধতিঃ নিচের বাক্যটি পড়ুন-
=> আফজাল অথবা মুন্না নিজেরা কাজটি করেছে।
এখানে প্রথমে বলা আছে “”আফজাল অথবা মুন্না “” মানে যেকোন একজন অঅর্থাৎ একবচন, পরে বলা আছে “”নিজেরা “” অর্থাৎ বহুবচন। আচ্ছা আপনি কি বলবেন, “”আমি নিজেরা কাজটি করেছি “”? নিশ্চয় না! আপনি হয়তো এটা বলবেন, “”আমি নিজে কাজটা করেছি “” বা “”আমরা নিজেরা কাজটি করেছি। “”
চলুন এবার উপরের বাক্যটি আবার পড়ি। “”আফজাল অথবা মুন্না নিজেরা কাজটি করেছে। “” যেহেতু অথবা দ্বারা বুঝাচ্ছে কাজটি যেকোন একজন করল, সুতরাং এখানে বাক্যটির শুদ্ধরুপ হবে “”আফজাল অথবা মুন্না নিজে কাজটি করেছে।””
:
একইভাবে নিচের বাক্যটি পড়ুন-
=> দলীয় কর্মীরা স্বার্থ উদ্ধারে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছে।
প্রথমে বলা আছে “”কর্মীরা “” পরে বলা আছে “”নিজেকে “”। তাহলে বাক্যটি ভুল হয়ে গেল না! অর্থাৎ কর্মীরা নিজদের নিয়োজিত রেখেছে এটাই তো হওয়া উচিৎ। যেহেতু “”কর্মীরা “” অনেক,তাই বাক্যটিতে “”নিজেকে “” এর পরিবর্তে হবে “”নিজেদের””। আসুন এবার শুদ্ধ বাক্যটি লিখি। “”দলীয় কর্মীরা স্বার্থ উদ্ধারে নিজেদের নিয়োজিত রেখেছে। “”
:
৩য় পদ্ধতিঃ নিচের বাক্যটি পড়ুন-
=> বর্তমানে বিদ্বান মহিলার সংখ্যা অনেক বেশি।
বিদ্বান মানে জ্ঞানী। তাহলে তো বাক্যটি ঠিকই আছে! এরকম মনে হচ্ছে না? কিন্তু তবু বাক্যটি ভুল।”” বিদ্বান”” শব্দটি হল পুংলিঙ্গ, কিন্তু উপরের বাক্যে বলা আছে মহিলার কথা। সুতরাং আমাদেরকে “”বিদ্বান “” শব্দটির স্ত্রীলিঙ্গ খুঁজে বের করতে হবে। বিদ্বানের স্ত্রীলিঙ্গ হল বিদুষী। অতএব উপরের বাক্যটির শুদ্ধ রুপ হবে “”বর্তমানে বিদুষী মহিলার সংখ্যা অনেক বেশি। “” একইভাবে নিচের বাক্যগুলো পড়ুন।
=> রাজা পাপিষ্ঠ মেয়েটিকে শাস্তি দিলেন। (এখানে মেয়ের কথা বলা আছে,কিন্তু পাপিষ্ঠ পুরুষবাচক শব্দ যার স্ত্রীবাচক শব্দ পাপিষ্ঠা)
=> ভাগ্যবান মহিলাটি পরপর ২বার বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। (এখানে মহিলার কথা বলা আছে,কিন্তু ভাগ্যবান পুরুষবাচক শব্দ যার স্ত্রীবাচক শব্দ ভাগ্যবতী )
=> এই মহান মহিলার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাই। (এখানে মহিলার কথা বলা আছে,কিন্তু মহান পুরুষবাচক শব্দ যার স্ত্রীবাচক শব্দ মহীয়সী )
এভাবে পরীক্ষায় আসলে লিঙ্গজনিত বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবে।
:
৪র্থ পদ্ধতিঃ নিচের বাক্যটি পড়ুন –
=> তার দুচোখ অশ্রুজলে ভেসে গেল।
এ ধরনের বাক্য আমরা প্রায়ই বলে থাকি। কিন্তু ভুল যে একটা থেকেই যায়। ভুলটা তাহলে কোথায়? “”অশ্রু “” শব্দের অর্থ চোখের জল। তাহলে এখানে যদি আবার অশ্রুজল শব্দটি উল্লেখ করি তাহলে একই শব্দ (জল) ২বার ব্যবহৃত হয়ে যায়। একইভাবে নিচের বাক্যগুলো শুদ্ধ কর
=> তৎকালীন সময়ে রাজারা রাজ্য পরিচালনা করতেন। (এখানে তৎকালীন মানে তখনকার সময়ে, তাহলে বাক্যটিতে তৎকালীন সময়ে বললে “”সময় “” কথাটা ২বার চলে আসে, যেটি ভুল)
=> শুধুমাত্র সঙ্গীতা ছেলেটির জন্য প্রার্থনা করে। (এখানে শুধুমাত্র শব্দটি ভুল, শুধু বা মাত্র যেকোন একটি হবে।”” শুধু “” দ্বারা একজন বুঝায়,””মাত্র”” দ্বারা ও একজন বুঝায়।)
:
সবার সুবিধার্থে চেষ্টা করেছি বিস্তারিত ব্যাখ্যা সহ বাক্যের অপপ্রয়োগ গুলো বুঝিয়ে দিতে। এই টপিক থেকে প্রিলি ও লিখিত পরীক্ষায় প্রশ্ন আসবেই। একটু সচেতন হলেই সব উত্তর সঠিকভাবে দেয়া সম্ভব। লিখিত প্রার্থীদের “”গ্রন্থ সমালোচনা “” বিষয়ে অনেকে প্রশ্ন করেছেন, যদি এই টপিকটি কমন না পড়ে তাহলে কী করবেন? এই বিষয়ে আমি একটা ফরম্যাট প্রস্তুত করেছি। “”গ্রন্থ সমালোচনার “” ক্ষেত্রে যদি আপনার প্রশ্নটি কমন নাও পড়ে তাহলে আমার দেওয়া ফরম্যাটটা লিখে দিয়ে চলে আসবেন। ফরম্যাটটা খুব সুন্দর ভাষায় সাহিত্যের ছোঁয়া দিয়ে লেখার চেষ্টা করেছি,যেন অন্তত শুভংকরের ফাঁকি দিয়ে আপনি বিজয়ের হাসি হাসতে পারেন। সব কমন পড়তে হয়না, কিছু বিষয় কমন করে নিতে হয়। এমন কিছু বিষয় নিয়ে তৈরী করা ফরম্যাট আমি পরীক্ষার ২সপ্তাহ আগে আমার প্রোফাইলের টাইমলাইনে দিয়ে দিব।এখন দিচ্ছিনা বিশেষ কারণে। এখন যদি এত সহজ পথটি আপনি জেনে যান, তাহলে প্রস্তুতিতে আপনার অবহেলা চলে আসবে। আপনার স্বার্থ বিবেচনায় পরীক্ষার ২সপ্তাহ আগে দিয়ে দিব।