পৃথিবীতে বসবাসকারী সকল জীবই সূর্যের আলোর উপর নির্ভরশীল। অর্থাৎ জীবজগতের সকল শক্তিরমূল উৎস সূর্য। সূর্যের যত আলো পৃথিবীতে আসে তার মাত্র শতকরা ২ ভাগ সবুজ উদ্ভিদ সালোকসংশ্লেষণের মাধ্যমেকাজে লাগিয়ে শর্করা জাতীয় খাদ্য তৈরি করে। সালোকসংশ্লেষণের মাধ্যমে প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ায় সৌরশক্তি রাসায়নিকশক্তিতে রূপান্তরিত হয়। এ প্রক্রিয়া চলার সময় সবুজ উদ্ভিদ বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক মৌল যেমন- পানি (হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন), নাইট্রোজেন, কার্বনডাইঅক্সাইড, আয়রন, সালফার ইত্যাদি ব্যবহার করে। এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই জড় ওজীবজগতের মধ্যে সংযোগ সৃষ্টি হয়।
সবুজ উদ্ভিদের মাধ্যমেই সূর্যশক্তি থেকে সৃষ্ট রাসায়নিক শক্তি বিভিন্ন প্রাণীতে খাদ্যশৃঙ্খলের মাধ্যমে স্থানান্তরিত হয়।উৎপাদক থেকে আরম্ভ করে সর্বোচ্চ খাদক পর্যন্ত শক্তি রূপান্তরের সময় প্রতিটি ধাপে শক্তি হ্রাস পেতে থাকে। তাহলেদেখা যাচ্ছে উৎপাদক থেকে শক্তি যায় তৃণভোজী প্রাণীর দেহে। সেখান থেকে দ্বিতীয় স্তরের খাদক এবং দ্বিতীয় স্তরেরখাদক থেকে যায় সর্বোচ্চ খাদকে। এভাবেই শক্তি প্রবাহ চলতে থাকে। প্রতি স্তরে শক্তি হ্রাস পেলেও বিযোজক যখনবিভিন্ন মৃত জীবে বর্জ্য পদার্থে বিক্রিয়া ঘটায় তখন অজৈব পুষ্টিদ্রব্য পরিবেশে মুক্ত হয়ে পুষ্টিভান্ডারে জমা হয়। যাআবার সবুজ উদ্ভিদ কাজে লাগায়। এ থেকে বুঝতে পারা যায় যে বাস্তুসংস্থানে পুষ্টিদ্রব্য চক্রাকারে প্রবাহিত হয় এবংশক্তিপ্রবাহ একমুখী।
পরিবেশে বাস্তুতন্ত্র একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ একক। যে কোনো পরিবেশে বাস্তুতন্ত্র মোটামুটিভাবে স্বনিয়ন্ত্রিত। প্রকৃতিতে যেকোনো জীবের সংখ্যা হঠাৎ করে বেশি বাড়তে পারে না। প্রতিটি জীব একে অন্যের উপর নির্ভরশীল। খাদ্য শৃঙ্খলেরমাধ্যমে এরা পরস্পর পরস্পরের সাথে সম্পর্কযুক্ত। সহজে এর কোনো একটি অংশ একেবারে শেষ হতে পারে না।কোনো একটি পরিবেশে বিভিন্ন স্তরের জীব সম্প্রদায়ের সংখ্যার অনুপাত মোটামুটিভাবে অপরিবর্তিত থাকে। পরিবেশবিভিন্ন পরিবর্তন ঘটলেও বহু দিন পর্যন্ত প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় থাকে। এসো একটি উদাহরণের সাহায্যে আমরা এটি বুঝতে চেষ্টা করি। মনে কর যে কোনো একটি বনে বাঘ, হরিণ, শূকর ইত্যাদি বাস করে। এ বনে বাঘের খাদ্যহলো হরিণ ও শূকর। হরিণ ও শূকরের সংখ্যা বেড়ে গেলে বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। কারণ বাঘ প্রচুর খাদ্য পাবে।আবার বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে হরিণ ও শূকরের সংখ্যা কমে যাবে। হরিণ ও শূকরের সংখ্যা কমে গেলে বাঘেরখাদ্যাভাব দেখা দিবে। ফলে বাঘের সংখ্যাও কমে যাবে। আবার বাঘের সংখ্যা যদি কমে যায় তবে হরিণ ও শূকরেরসংখ্যা বেড়ে যাবে। এভাবে হ্রাস-বৃদ্ধির ফলে একটি এলাকার বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য প্রাকৃতিকভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়।
-যে কোনো একটি পরিবেশের জড় এবং জীব সম্প্রদায়ের মধ্যে আদান-প্রদান, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও সহযোগিতারমাধ্যমে গড়ে ওঠে বাস্তুতন্ত্র।
-অজীব এবং জীব এই দুটি প্রধান উপাদান নিয়ে বাস্তুতন্ত্র গঠিত।
-উদ্ভিদ উৎস থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্রাণীর মধ্যে একে অন্যকে খাওয়ার মাধ্যমে শক্তির যে স্থানান্তর ঘটে তাই খাদ্যশৃঙ্খল।
-প্রকৃতিতে বিভিন্ন খাদ্যশৃঙ্খল পরস্পর সম্পর্কযুক্ত। খাদ্যশৃঙ্খলের এ ধরনের সংযুক্তি খাদ্যজাল নামে পরিচিত।
এই লেকচারের পরের পেইজে যেতে নিচের …. তে ক্লিক কর।