শূন্য, ধনাত্মক ও ঋণাত্মক বিভব : কোনো আধানহীন পরিবাহকের বিভবকে শূন্য ধরা হয়। কোনো আহিত পরিবাহককে পৃথিবীর সাথে সংযুক্ত করলে তার বিভবও শূন্য হয়। কেননা, সংযুক্ত অবস্থায় পৃথিবী ও পরিবাহক একত্রে একটি পরিবাহকে পরিণত হয়। ধনাত্মক আধানে আহিত পরিবাহকের বিভব ধনাত্মক আর ঋণাত্মক আধানে আহিত পরিবাহকের বিভব ঋণাত্মক ।
বিভবের একক ভোল্ট : অসীম থেকে প্রতি কুলম্ব (1C) ধনাত্মক আধানকে তড়িৎ ক্ষেত্রের কোনো বিন্দুতে আনতে যদি এক জুল (1J) কাজ সম্পন্ন হয়, তবে ঐ বিন্দুর বিভবকে এক ভোল্ট (1V) বলে। তড়িৎ ক্ষেত্রের কোনো বিন্দুর বিভব 20V বলতে বুঝায় অসীম থেকে প্রতি কুলম্ব ধনাত্মক আধানকে তড়িৎ ক্ষেত্রের ঐ বিন্দুতে আনতে 20J কাজ সম্পন্ন হয়।
বিভব পার্থক্য : প্রতি একক ধনাত্মক আধানকে তড়িৎ ক্ষেত্রের এক বিন্দু থেকে অন্য বিন্দুতে স্থানান্তর করতে সম্পন্ন কাজের পরিমাণকে এই দুই বিন্দুর বিভব পার্থক্য বলে। বিভব পাথক্যের একক অবশ্যই ভোল্ট।
তড়িৎবীক্ষণ যন্ত্র Electroscope ঃ
যে যন্ত্রের সাহায্যে কোনো বস্তুতে আধানের অস্তিত্ব ও প্রকৃতি নির্নয় করা যায় তাকে তড়িৎবীক্ষণ যন্ত্র বলে।
স্থির তড়িতের ব্যবহার ও বিপদ
Uses and dangers of static electricity
১। স্থির বৈদ্যুতিক রং স্প্রে : গাড়ি, সাইকেল আলমারি বা অন্যান্য জিনিস রং করার জন্য ইদানিং রং এর স্প্রে ব্যবহার করা হয়। এটি করা হয় স্থির তড়িৎ ব্যবহার করে। স্প্রে গান এমনভাবে তৈরি করা হয় যে এটি রং এর অতি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আহিত কণা তৈরি করে। রং স্প্রে গানের সূচালো প্রান্তটি একটি স্থির তড়িৎ জেনারেটর এর এক প্রান্তের সাথে সংযুক্ত করা হয়। জেনারেটরের অন্য প্রান্তটি যে ধাতব পাতটি রং করতে হবে তার সাথে সংযুক্ত করা হয় যেটি অবশ্যই ভূ-সংযুক্ত থাকে। একটি গাড়ি রং করার ক্ষেত্রে স্প্রে গান থেকে নির্গত আহিত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণা গাড়ির বাইরের কাঠামো দ্বারা আকৃষ্ট হয়। ফলে গাড়ির বহিরাবরণের এর উপর রং এর একটি সুষম আস্তরণ পড়ে। এছাড়াও এই ক্ষুদ্র কণাগুলো তড়িৎ ক্ষেত্রের বল রেখা বরাবর চলে কাঠামোর চিপাচাপা অর্থাৎ এর অপ্রকাশ্য স্থানে পৌঁছে সেখানেও রং করে।
২। ইঙ্ক জেট প্রিন্টার : এটি হচ্ছে সবচেয়ে সাধারণ ধরনের প্রিন্টার যেটি কম্পিউটারের সাথে সংযোগ দেওয়া থাকে। একটি ইঙ্ক-গান তার সূচালো মুখ দিয়ে অতি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কালির কণা নিক্ষেপ করে। এই ক্ষুদ্র কণাগুলো ধনাত্মক (+) ভাবে আহিত। এই কালির কণাগুলো দুটি পাতের মধ্যস্থল দিয়ে চলে।এই ধনাত্মক কালির কণাগুলোকে ধনাত্মক পাত বিকর্ষণ করে এবং এগুলো ঋণাত্মক পাতে আকৃষ্ট হয়। একটি কম্পিউটার পাতগুলোর ভোল্টেজ এমনভাবে নিয়ন্ত্রণ করে যে পাতগুলো কখনো ধনাত্মক, কখনো ঋণাত্মক আধানে আহিত হয় এবং কালির কণাগুলো বিক্ষিপ্ত হয়ে চলমান কাগজের উপর বিভিন্ন স্থানে পড়ে এবং প্রয়োজনমত অক্ষর বা ছবির আকৃতি ছাপে। রঙিন ছাপার জন্য চার রকমের রঙিন কালি ব্যবহার করা হয়।
৩। ফটো কপিয়ার : আজকাল ফটো কপিয়ার বা ফটো কপি মেশিন খুবই প্রয়োজনীয় এবং জনপ্রিয় একটি যন্ত্র। শিক্ষালয় ও বিবিধ অফিস ছাড়াও সাধারণ জনগণ যে কোনো প্রয়োজনীয় দলিল বা কাগজপত্রের এক বা একাধিক অবিকল কপির জন্য এই যন্ত্র ব্যবহার করে থাকেন। এই যন্ত্রেও স্থির তড়িৎ ব্যবহার করা হয়। ফটো কপিয়ারের ভিতরে অন্ধকারে একটি ঘূর্ণায়মান ড্রাম থাকে। এই ড্রামের উপর ধনাত্মক আধান স্প্রে করা হয়। যে পৃষ্ঠা ফটোকপি করতে হবে একটি উজ্জ্বল আলো তাকে আলোকিত করে। পৃষ্ঠার সাদা অংশ আলো প্রতিফলিত করে, কিন্তু অন্ধকার বা ছাপানো অংশ কোনো আলো প্রতিফলিত করে না। প্রতিফলিত আলো ড্রামের উপর কেন্দ্রিভূত হয়। ড্রামের যে স্থানটি সাদা কাগজ দ্বারা প্রতিফলিত আলো পড়ে উজ্জ্বল হয়, সেই অংশ থেকে আধান বের হয়ে যায়। ড্রামের কেবল অন্ধকার অংশই ধনাত্মক আধানে আহিত থাকে। ঋণাত্মকভাবে আহিত কার্বনের পাউডার কালি (টোনার) ড্রামের উপর স্প্রে করা হয়। ঋণাত্মক ভাবে আহিত এই কালির কণাগুলো ড্রামের ধনাত্মকভাবে আহিত অংশের সাথে আঠালোভাবে লেগে থাকে। এক টুকরা সাদা কাগজকে ধনাত্মকভাবে আহিত করা হয়। এটিকে ড্রামের সাথে চেপে রাখা হয়। এই কাগজটি ড্রাম থেকে কার্বন পাউডারের প্যাটার্ণ তার গায়ে তুলে আনে। টোনার (-) টি কাগজ (+) কর্তৃক আকৃষ্ট হবে। কাগজখানা উত্তপ্ত রোলারের মধ্য দিয়ে চালনা করা হয়। এতে টোনারের কালি গলে যায় এবং কাগজের সাথে মিশে যায়, ফলে একটি স্থায়ী কপি তৈরি হয়।
স্থির তড়িতের বিপদ
অনেক ক্ষেত্রে স্থির তড়িতের উপস্থিতি অসুবিধাজনক এবং বিপদ ডেকে আনতে পারে।
বিমানে জ্বালানি ভরা : আকাশে যখন বিমান উড়ে তখন বায়ুর সাথে ঘর্ষণের ফলে এটি তড়িতাহিত হতে পারে। বিমানের আধান বাড়তে থাকলে বিমান ও ভূপৃষ্ঠের মধ্যে বিভব পার্থক্য বাড়তে থাকে। এত উচ্চ বিভব পার্থক্যের কারণে বিমানে যখন জ্বালানি ভরা হয় তখন কিছু আধান ভূমিতে চলে যাওয়ার সময় স্ফুলিঙ্গ সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, যেটি বিরাট বিস্ফোরণের কারণ হতে পারে। এই জন্য বিমানের চাকা পরিবাহক রাবার দ্বারা তৈরি করা থাকে, যাতে বিমান ভূমি স্পর্শ করলে বিমানে জমা হওয়া আধান নিরাপদে ভূমিতে চলে যেতে পারে। এই সমস্যার সমাধান হচ্ছে বিমান ভূমিতে অবতরণের পর যথা সম্ভব তাড়াড়াড়ি এবং জ্বালানি ভরা শুরু করার আগেই একটি পরিবাহক দ্বারা ভূ-সংযুক্ত করা।
এই লেকচারের পরের পেইজে যেতে নিচের …. তে ক্লিক কর।