কৃত্রিম উপগ্রহের কক্ষপথে চলা বা ভ্রমণ
পৃথিবীর চারদিকে ঘোরার জন্য কেন্দ্রমুখি বল বা টানের প্রয়োজন হয়। কৃত্রিম উপগ্রহের উপর পৃথিবীর আকর্ষণ বল বাঅভিকর্ষ বলই এই কেন্দ্রমুখি বল জোগায়। হিসাব করে দেখা গেছে যে, যদি পৃথিবীর প্রায় ২৫০ কিলোমিটার উপরে তুলে পৃথিবী পৃষ্ঠের সমান্তরালভাবে প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ৮ কিলোমিটার বেগ দেওয়া যায় তবে কৃত্রিম উপগ্রহ পৃথিবীরচারদিকে ঘুরতে থাকে। কিন্তু এত উপরে তুলে কোনো বস্তুকে এত বেশি বেগ দেওয়া সহজসাধ্য বিষয় নয়। কারণ,বায়ুস্তরের সাথে তীব্র সংঘর্ষে এত তাপ উৎপন্ন হবে যে, বস্তুটি পুড়ে ছাই হয়ে যাবে। তিনটি রকেটের সাহায্যে কৃত্রিমউপগ্রহকে নির্দিষ্ট উচ্চতায় তুলে পরে ভূপৃষ্ঠের সমান্তরালে বেগ দেওয়া হয়। তখন কৃত্রিম উপগ্রহটি পৃথিবীর চারপাশেঘুরতে থাকে।
কৃত্রিম উপগ্রহের ব্যবহার ও গুরুত্ব
কৃত্রিম উপগ্রহ নানান রকম কাজে ব্যবহার করা হয়। এদের ব্যবহার অনুসারে এদের বিভিন্ন নামে অভিহিত করা হয়।
যেমন-
ক। যোগাযোগ উপগ্রহ
খ। আবহাওয়া উপগ্রহ
গ। পৃথিবী পর্যবেক্ষণকারী উপগ্রহ
ঘ। সামরিক বা গোয়েন্দা উপগ্রহ
ঙ। নৌপরিবহন উপগ্রহ
চ। জ্যোতির্বিদ্যাবিষয়ক উপগ্রহ
যোগাযোগ উপগ্রহ
আমরা অনেকে ইংল্যান্ড, আমেরিকা বা অন্য যে কোনো দেশে আত্মীয়-স্বজনের সাথে টেলিফোনে কথা বলে থাকি।আমরা যখন টেলিফোনে অন্য দেশের কারো সাথে কথা বলি, তখন আমাদের দেশের কোনো ডিশ এরিয়েল থেকেএকটি বেতার সঙ্কেত কৃত্রিম উপগ্রহে প্রেরিত হয়। উপগ্রহটি সঙ্কেতটিকে অন্য দেশের কোনো একটি ডিশ এরিয়েলেপাঠিয়ে দেয়, সেখান থেকে যার সাথে কথা বলছি তার টেলিফোনে পৌঁছায়। তাছাড়া আমরা বিভিন্ন দেশে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ বা অলিম্পিক গেইম টেলিভিশনে দেখে থাকি। অন্যদেশ থেকে একইভাবে বেতার সঙ্কেত কৃত্রিম উপগ্রহের মাধ্যমে আমাদের টেলিভিশনে পৌঁছায়। যে দেশে খেলা হচ্ছে সে দেশ থেকে ডিশএরিয়েলের মাধ্যমে একটি সঙ্কেত উপগ্রহে পাঠানো হয়। উপগ্রহ সঙ্কেতটি পুনরায় আমাদের দেশের কোনোডিশএরিয়েলে পাঠিয়ে দেয়। সেখান থেকে আমাদের টেলিভিশনে পৌঁছে। কৃত্রিম উপগ্রহ এখানে রিলে স্টেশনের কাজকরে। এই উপগ্রহ টেলিভিশন প্রোগ্রাম ও টেলিফোন সংবাদ পৃথিবীর একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে বয়ে নিয়ে যায়। এরনাম তাই যোগাযোগ উপগ্রহ।
আবহাওয়া উপগ্রহ
আমরা টেলিভিশন ও রেডিওতে আবহাওয়ার খবর শুনি এবং পত্রিকায় আবহাওয়ার খবর পড়ি। এসব মাধ্যমআবহাওয়ার এই পূর্বাভাস কোথা থেকে পায়? আবহাওয়া উপগ্রহ আবহাওয়ার পূর্বাভাসদানকারী ব্যক্তিদের জানিয়ে দেয় ঐদিনের বা পরবর্তী কয়েক দিনের আবহাওয়া কেমন হবে? কোথায় মেঘ সৃষ্টি হচ্ছে? কোন দিকে মেঘ যাচ্ছে? কোথায়কখন বৃষ্টি হতে পারে? আবহাওয়া উপগ্রহ এসব দেখতে পায়। এই উপগ্রহ বায়ু প্রবাহ, সাইক্লোন সৃষ্টি হওয়া, কোথায়ঘনীভূত হচ্ছে, কোন দিকে আঘাত হানতে পারে তার সবকিছু পর্যবেক্ষণ করে পূর্বাভাস দিতে পারে। এজন্য এইউপগ্রহের নাম আবহাওয়া উপগ্রহ।
পৃথিবী পর্যবেক্ষণকারী উপগ্রহ
এই উপগ্রহ পৃথিবীপৃষ্ঠের সুস্পষ্ট চিত্র দিতে পারে। সমুদ্রে কোথায় কোন জাহাজ থেকে তেল চুইয়ে পরিবেশ দূষণ করছে?কোন শহরের বায়ু দূষিত ও ময়লা, এই উপগ্রহের সাহায্যে ছবি তুলে জানা যেতে পারে। কোন মাঠে ফসল ভালো হচ্ছে,কোনো ফসলে রোগ-বালাই বা পোকা-মাকড় আক্রমণ করেছে কি না, তা জানতে তথ্য ও ছবি এই উপগ্রহ পাঠাতে পারে।বনে কোথায় আগুন লেগেছে, কোনো জাহাজের যাত্রাপথে হিমবাহ আছে তা জানতে এই উপগ্রহ সহায়তা করতে পারে।মাটি, পানি ও বায়ু দূষণ নির্ণয়ের জন্যও এই উপগ্রহ ব্যবহার করা হয়।
সামরিক বা গোয়েন্দা উপগ্রহ
গোয়েন্দার কাজ করার জন্য সামরিক বাহিনীতে এই উপগ্রহ ব্যবহার করা হয় তাই এর নাম গোয়েন্দা উপগ্রহ। প্রতিপক্ষযোদ্ধারা কোথায় লুকিয়ে আছে, গোপনে তারা কোনো অনুপ্রবেশ ঘটাচ্ছে কি না, কোনো গোপন আক্রমণ হচ্ছে কি না ইত্যাদি খবর সংগ্রহের জন্য এই উপগ্রহ ব্যবহার করা হয়।
এই লেকচারের পরের পেইজে যেতে নিচের …. তে ক্লিক কর।