মহাবিশ্বের উৎপত্তি হলো কীভাবে?
মহাবিশ্বের উৎপত্তি ও বিকাশ সংক্রান্ত যেসব তত্ত্ব আছে তার মধ্যে বহুল প্রচলিত হলো ’বিগব্যাঙ তত্ত্ব’।বাংলায় একেবলা হয় ’মহাবিস্ফোরণ তত্ত্ব’।এই তত্ত্বের মতে মহাবিশ্ব একসময় অত্যন্ত উত্তপ্ত ও ঘনরূপে বা ঘন অবস্থায় ছিল যাঅতি দ্রুত প্রসারিত হচ্ছিল। দ্রুত প্রসারণের ফলে মহাবিশ্ব ঠান্ডা হয়ে যায় এবং বর্তমান প্রসারণশীল অবস্থায় পৌঁছায়।অতি সম্প্রতি জানা গেছে যে, বিগব্যাঙ বা মহাবিস্ফোরণ সংঘটিত হয়েছিল প্রায় ১৩.৭৫ বিলিয়ন বছর ( ১৩৭৫ কোটিবছর) পূর্বে এবং এটাই মহাবিশ্বের বয়স। বিগব্যাঙ তত্ত্ব একটি বহু পরীক্ষিত বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব যেটি বেশিরভাগ বিজ্ঞানীগ্রহণ করেছেন। এর কারণ, জ্যোতির্বিদদের পর্যবেক্ষিত প্রায় সকল ঘটনাই এই তত্ত্ব সঠিক ও ব্যাপকভাবে ব্যাখ্যা করতে সক্ষম। বর্তমান কালের বিখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং এই তত্ত্বের পক্ষে যুক্তি দেন এবং পদার্থবিদ্যার দৃষ্টিকোণথেকে এর ব্যাখ্যা উপস্থাপন করেন।
প্রাকৃতিক বা স্বাভাবিক উপগ্রহ
আমরা আগেই বলেছি যে গ্যালাক্সিতে আমরা বাস করি তার নাম ছায়াপথ। এই ছায়াপথে রয়েছে সূর্য ও এর পরিবার যাকে সৌরজগৎ বলা হয়। সৌরজগতে রয়েছে সূর্য ও একে ঘিরে আবর্তনশীল ৮টি গ্রহ। যেসব বস্তু সূর্যের চারদিকে ঘোরেতাদের বলা হয় গ্রহ। সূর্যকে ঘিরে আবর্তনশীল আটটি গ্রহ হলোবুধ, শুক্র, পৃথিবী, মঙ্গল, বৃহস্পতি, শনি, ইউরেনাস ও নেপচুন। কোনো কোনো গ্রহের রয়েছে একাধিক উপগ্রহ। যারা গ্রহকে কেন্দ্র করে ঘোরে এদের বলা হয় উপগ্রহ। যেমন পৃথিবীকে কেন্দ্র করে ঘুরছে চাঁদ তাই চাঁদ পৃথিবীর উপগ্রহ। সুতরাং, পৃথিবী সূর্যের একটি গ্রহ এবং চাঁদ পৃথিবীর উপগ্রহ।
জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের ধারণা নক্ষত্রের জন্মের সময় একেকটি গ্রহকে ঘিরে কয়েকটি মহাজাগতিক মেঘ আবর্তিত হত। এরা নক্ষত্রের আকর্ষণে ঘনিভূত হয়ে অবশেষে জমাট বেঁধে গ্রহদের জন্ম হয়। এভাবেই আবার গ্রহদের চারপাশে জমা মহাজাগতিক মেঘ থেকেই উপগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে।এসব উপগ্রহ হলো প্রাকৃতিক উপগ্রহ। গ্রহ ও উপগ্রহের কোনো আলো ও উত্তাপ নেই। এদের উপর সূর্যের আলো পড়ে তা প্রতিফলিত হয়। পৃথিবীর ১টি, মঙ্গলের ২টি, বৃহস্পতির ৬৩টি, শনির ৩৪টি, ইউরেনাসের ২৭টি এবং নেপচুনের ১৩টি উপগ্রহ আছে। এরা এদের গ্রহের মাধ্যাকর্ষণ বলের প্রভাবে গ্রহের চারদিকে ঘোরে।
কৃত্রিম উপগ্রহ ও এর ইতিহাস
মানুষের পাঠানো যেসব বস্তু বা মহাকাশযান পৃথিবীকে কেন্দ্র করে নির্দিষ্ট কক্ষপথে ঘোরে তাদের বলা হয় কৃত্রিমউপগ্রহ। রকেটের সাহায্যে এদের উৎক্ষেপণ করা হয়। পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ টানের প্রভাবে চাঁদের মতো এরা এদেরকক্ষপথে ঘোরে। কৃত্রিম উপগ্রহ চাঁদের তুলনায় অনেক ছোট এবং চাঁদের তুলনায় অনেক নিচু দিয়ে পৃথিবীর চারদিকেঘোরে। নির্দিষ্ট কক্ষপথে ঘোরার জন্য এদের প্রয়োজনীয় দ্রুতি থাকতে হয়। পৃথিবী থেকে কৃত্রিম উপগ্রহের উচ্চতা যতবেশি হবে তার দ্রুতি হবে তত কম। ফলে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করতে এরা বেশি সময় নেবে। আমরা জানি পৃথিবী ২৪ ঘণ্টায় এর নিজ অক্ষের চারদিকে একবার পাঁক খায়। সুতরাং, কোনো কৃত্রিম উপগ্রহ যদি ২৪ ঘণ্টায় পৃথিবীরচারদিকে একবার ঘুরে আসে তাহলে একে পৃথিবী থেকে স্থির বলে মনে হবে।
কৃত্রিম উপগ্রহ ও মহাকাশ যাত্রার ইতিহাস খুব একটা পুরোনো নয়, একেবারেই নতুন। তোমরা জেনে অবাক হবে যে, মহাকাশযাত্রার প্রথম পদক্ষেপটির সূচনা হয়েছিল ১৯৫৭ সালের ৪ঠা অক্টোবর। এই যাত্রার সূচনা করে তৎকালীনসোভিয়েট ইউনিয়ন। তারা স্পুটনিক-১ নামক কৃত্রিম উপগ্রহ মহাকাশে উৎক্ষেপণ করে। স্পুটনিক শব্দের অর্থ হলো ভ্রমণসঙ্গী। একই বছর ২রা নভেম্বর স্পুটনিক-২ নামক আরেকটি কৃত্রিম উপগ্রহ তারা মহাকাশে পাঠান। প্রথম মার্কিনকৃত্রিম উপগ্রহের নাম এক্সপ্লোরার-১।এই উপগ্রহ ১৯৫৮ সালের ২রা ফেব্রুয়ারি মহাকাশে পাঠানো হয়। ভস্টক-১নামক সোভিয়েট কৃত্রিম উপগ্রহ মানুষ নিয়ে প্রথম পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে। যে মানুষটি প্রথম মহাকাশে গিয়েছিলেনতার নাম সোভিয়েট ইউনিয়নের ইউরি গ্যাগারিন। তিনি ১৯৬১ সালের ১২ই এপ্রিল ভস্টক-১ কৃত্রিম উপগ্রহে চড়েপৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করেন। স্টক-৬ নামক কৃত্রিম উপগ্রহে (মহাকাশযান) চড়ে প্রথম সোভিয়েট মহিলা মহাকাশচারি ভেলেনটিনা তেরেসকোভা মহাকাশে ঘুরে আসেন ১৯৬৩ সালে। ইনটেলসেট-১ কৃত্রিম উপগ্রহকে পাঠানো হয়বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারের জন্য যোগাযোগ উপগ্রহ হিসেবে। রিমোটসেনসিং বা দূর অনুধাবনের জন্য পাঠানো প্রথমউপগ্রহ হলো ল্যান্ডসেট-১।একে পাঠানো হয় ১৯৭২ সালে। আন্তর্জাতিক যোগসূত্র স্থাপনের জন্য অ্যাপোলো-সয়োজটেস্ট প্রজেক্ট নামে একটি কৃত্রিম উপগ্রহ মহাকাশে প্রম পাঠানো হয় ১৯৭৫ সালে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ এ পর্যন্ত প্রায়হাজার হাজার কৃত্রিম উপগ্রহ মহাকাশে পাঠিয়েছে। কয়েক শত কৃত্রিম উপগ্রহ বর্তমানে ব্যবহার করা হচ্ছে এবং হাজারহাজার অব্যবহৃত কৃত্রিম উপগ্রহ বা তাদের অংশবিশেষ মহাকাশ ধ্বংসাবশেষ হিসেবে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করছে।
এই লেকচারের পরের পেইজে যেতে নিচের …. তে ক্লিক কর।