বিসিএস প্রিলিমিনারি সাধারণ বিজ্ঞান মহাকর্ষ অভিকর্ষ

ভর ও ওজনের সম্পর্ক
প্রত্যেক বস্তু পদার্থ দ্বারা গঠিত। বস্তুর মধ্যে পদার্থের পরিমাণই হচ্ছে এর ভর। ভর কিলোগ্রাম (kg) এককে নিক্তিদ্বারা পরিমাপ করা হয়। ভর হচ্ছে একটি ভৌত রাশি যেটি ভূ-পৃষ্ঠে বা ভূ-পৃষ্ঠের উপরে বস্তুর অবস্থানের পরিবর্তনেরসাথে পরিবর্তিত হয় না। ৭৫ কেজি ভরের একজন মহাশূন্যচারীর ভর চাঁদে কিংবা পৃথিবীর বা চাঁদের কক্ষপথেও ৭৫কেজিই থাকবে। মহাশূন্যচারী কতটুকু পদার্থ দিয়ে তৈরি স্থান পরিবর্তনে তার কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না বলে তার ভরসর্বত্র অপরিবর্তিত থাকে। যেহেতু বস্তুর ভর একটি ধ্রুব রাশি, সুতরাং বস্তুর ওজন অভিকর্ষজ ত্বরণ g এর উপর নির্ভর করে। যেসব কারণেঅভিকর্ষজ ত্বরণের পরিবর্তন ঘটে সেসব কারণে বস্তুর ওজনও পরিবর্তিত হয়। ভূ-পৃষ্ঠ থেকে যত উপরে উঠা যায়বস্তুর ওজন তত কমতে থাকে। বস্তুর ওজন বস্তুর মৌলিক ধর্ম নয়। কোনো বস্তুর ওজন থাকতেও পারে আবারনাও থাকতে পারে। পৃথিবীর কেন্দ্রে অভিকর্ষজ ত্বরণ শূন্য, তাই সেখানে বস্তুর ওজনও শূন্য। একদম মহাশূন্যে কোনোবস্তুর ওজন শূন্য হতে পারে যেখানে বস্তুর উপর কোনো মহাকর্ষ বল নেই। চাঁদের মাধ্যাকর্ষণজনিত ত্বরণের মান প্রায়পৃথিবীর১/৬ ভাগ। সুতরাং চাঁদে ১ কেজি ভরের বস্তুর ওজন হবে কেবলমাত্র ১.৬ নিউটন (N)।

কোনো বস্তুর ওজন পৃথিবীর কেন্দ্র থেকে তার দূরত্বের উপর নির্ভর করে। যদি দূরত্ব বাড়ানো হয় তাহলে তার উপরপৃথিবীর আকর্ষণ কমে যায়, ফলে বস্তুর ওজন হ্রাস পায়। ভূ-পৃষ্ঠে ১ কেজি ভরের কোনো বস্তুর ওজন ৯.৮ নিউটনহলেও পৃথিবী থেকে দূরত্ব বাড়ার সাথে সাথে বস্তুর ওজন কমতে থাকে। পৃথিবীর পৃষ্ঠেও কোনো বস্তুর ওজনের অতি সামান্য তারতম্য ঘটে। এর একটি কারণ হচ্ছে পৃথিবী সুষম গোলকনয় এবং ভূ-পৃষ্ঠের সর্বত্র অভিকর্ষজ ত্বরণের মানও এক নয়। অবশ্য এ পার্থক্য এত ক্ষুদ্র যে কেবল সুবেদী ওজনমাপক যন্ত্রের সাহায্যেই তা পরিমাপ করা যাবে। অধিকাংশ হিসাব নিকাশের সময় আমরা এ পার্থক্য উপেক্ষাকরি। ১ কেজি ভরের কোনো বস্তুর ওজন সবচেয়ে বেশি হবে পৃথিবীর দুই মেরুতে অর্থাৎ উত্তর মেরু ও দক্ষিণমেরুতে। যেখানে এর ওজন হবে ৯.৮৩ নিউটন। বিষুবীয় অঞ্চলে এর ওজন সবচেয়ে কম হবে ৯.৭৮ নিউটন।ক্রান্তীয় অঞ্চলের ওজন হবে ৯.৭৯ নিউটন।যেহেতু বস্তুর ভর বেশি হলে তার ওজনও বেশি হয়, ওজন ভরের সমানুপাতিক। সুতরাং যে সকল যন্ত্র দিয়ে ওজনমাপা যায় সেগুলো দিয়ে ভরও মাপা যায়। স্প্রিং নিক্তি অনেক সময় কিলোগ্রাম এককে দাগাঙ্কিত থাকে। যেহেতু নিক্তিএবং ওজন মাপক যন্ত্রগুলো এমনভাবে দাগাঙ্কিত থাকে যে, অনেক সময় আমরা ভর ও ওজন উভয়ের জন্যইকিলোগ্রাম একক ব্যবহার করে থাকি। এটি অবশ্যই ভুল। ওজন এক প্রকার বল এবং বৈজ্ঞানিক হিসাব-নিকাশের সময়তা অবশ্যই নিউটন এককে পরিমাপ করতে হবে। যখন আমরা ১ কেজি লিখিত একটি চাউলের প্যাকেট বা একটিদুধের টিন কিনিতখন বুঝি ঐ প্যাকেটের চাউলের বা টিনের দুধের ভর ১ কেজি কিন্তু ওজন ১ কেজি নয়, পৃথিবীতেএগুলোর ওজন হবে ৯.৮ নিউটন। চাউলের প্যাকেটের ওজন গ্রহ থেকে গ্রহান্তরে বা চাঁদে ভিন্ন হবে যদিও ভরেকোনো পরিবর্তন হবে না।

পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে অভিকর্ষজ ত্বরণ ও বস্তুর ওজন

বস্তুর ওজন অভিকর্ষজ ত্বরণ g এর উপর নির্ভরশীল। সুতরাং যে সকল কারণে অভিকর্ষজ ত্বরণের পরিবর্তন ঘটে সেসকল কারণে বস্তুর ওজনও পরিবর্তিত হয়। বস্তুর ওজন বস্তুর মৌলিক ধর্ম নয়। স্থানভেদে বস্তুর ওজনেরপরিবর্তন হয়। যে সকল কারণে ওজনের পরিবর্তন হয় নিচে তা বর্ণনা করা হলো।

(ক) ভূ-পৃষ্ঠের বিভন্ন স্থানে : পৃথিবীর আকৃতি ও আহ্নিক গতির জন্য বিভিন্ন স্থানে বস্তুর ওজন বিভিন্ন হয়।
(১) পৃথিবীর আকৃতির জন্য : পৃথিবী সুষম গোলক না হওয়ায় পৃথিবীর কেন্দ্র থেকে ভূপৃষ্ঠের সকল স্থান সমদূরে নয়।
যেহেতু g এর মান পৃথিবীর কেন্দ্র থেকে দূরত্বের উপর নির্ভর করে, তাই পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে g এর মানের পরিবর্তনহয়। বিষুবীয় অঞ্চলে পৃথিবীর ব্যাসার্ধ সবচেয়ে বেশি হওয়ায় g এর মান সবচেয়ে কম (৯.৭৮ মিটার/সেকেন্ড)।সুতরাং বিষুবীয় অঞ্চলে কোনো বস্তুর ওজন সবচেয়ে কম হয়। বিষুবীয় অঞ্চল থেকে মেরু অঞ্চলের দিকে যত যাওয়াযায়, ব্যাসার্ধ তত কমতে থাকে এবং gএর মান বাড়তে থাকে (৯.৮৩ মিটার/সেকেন্ড) ।এর ফলে বস্তুর ওজনওবাড়তে থাকে। মেরু অঞ্চলে পৃথিবীর ব্যাসার্ধ সবচেয়ে কম হওয়ায় g এর মান মেরু অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি। ফলেওজনও সবচেয়ে বেশি হয়।
(২) পৃথিবীর আহ্নিক গতির জন্য : পৃথিবীর আহ্নিক গতির জন্য অভিকর্ষজ ত্বরণ বিষুবীয় অঞ্চল থেকে মেরু অঞ্চলের দিকে ক্রমশ বৃদ্ধি পায়। এর ফলে বস্তুর ওজনও বৃদ্ধি পায়।

(খ) ভূপৃষ্ঠ থেকে উচ্চতর কোনো স্থানে : ভূপৃষ্ঠ থেকে যত উপরে উঠা যায় অভিকর্ষজ ত্বরণের মানও তত কমতেথাকে। এর ফলে ভূপৃষ্ঠ থেকে যত উঠা যায় বস্তুর ওজনও তত কমতে থাকে। এই কারণে পাহাড় বা পর্বতশীর্ষেবস্তুর ওজন কম হয়।
(গ) পৃথিবীর অভ্যন্তরে কোনো স্থানে : ভূপৃষ্ঠ থেকে যত নিচে যাওয়া যায় অভিকর্ষজ ত্বরণের মান ততই কমতে থাকে।এর ফলে পৃথিবীর যত অভ্যন্তরে যাওয়া যায় বস্তুর ওজন তত কমতে থাকে। এ কারণে খনিতে কোনো বস্তুর ওজন কমহয়। পৃথিবীর কেন্দ্রে অভিকর্ষজ ত্বরণের মান শূন্য। সুতরাং পৃথিবীর কেন্দ্রে যদি কোনো বস্তুকে নিয়ে যাওয়া যায়, তাহলেবস্তুর উপর পৃথিবীর কোনো আকর্ষণ থাকবে না, অর্থাৎ বস্তুর ওজন শূন্য হবে।

এই লেকচারের পরের পেইজে যেতে নিচের …. তে ক্লিক কর।

মন্তব্য করুন

স্যার, কিভাবে আপনাকে সাহায্য করতে পারি?

Click one of our representatives below

Customer Support
Customer Support

Syeda Nusrat

I am online

I am offline

Technical Support
Technical Support

Ariful Islam Aquib

I am online

I am offline