বাংলাদেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা কেন জরুরি
১. বাংলাদেশের বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতি ও দলীয়করণ সুলভে ও সহজে সেবা প্রাপ্তির পথে প্রধান অন্তরায়। এর সঙ্গে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক নেতৃত্বের অযোগ্যতা ও অদক্ষতার একটা যোগসূত্র রয়েছে। আর সার্বিকভাবে দেশে সুশাসনের অভাবে অন্যায়-অবিচার, দুর্নীতি, বৈষম্য, সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজির শিকার হচ্ছেন জনগণ এবং বিরোধী দল দমন-পীড়নের শিকার হচ্ছে।
২. শুদ্ধাচারের কনসেপটি সুশাসনের তত্ত্ব থেকে নিঃসৃত। শুদ্ধাচার সুশাসনের পূর্বশর্ত। আবার তারা একে অপরের পরিপূরক বটে। বাংলাদেশের দুর্নীতি ও অনাচারের ব্যাপক চর্চা ও বিস্তৃতির কারণে দাতা সংগঠন তথা উন্নয়ন সহযোগীরা সুশাসনকে ঋণ ও অনুদান প্রদানে পূর্বশর্ত হিসেবে নির্ধারণ করে। তারা তিনটি বিষয়কে সুশাসনের জন্য অপরিহার্য জ্ঞান করেন। এগুলো হলো- স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও অংশীদারিত্ব। এগুলোর অভাবে সুশাসন এবং শুদ্ধাচার প্রতিষ্ঠায় ব্যাঘাত ঘটে।
৩. এক কথায় দুর্নীতি স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠার পথে এক ধরনের অন্তরায়। এ জন্য দুর্নীতি নির্মূলকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে। এ জন্য সরকার ও দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)-কে ব্যাপক কর্মকৌশল প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন এবং আইনি প্রক্রিয়া জোরদার করতে হবে।
৪. আমাদের দেশের বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানে জবাবদিহিতা নেই। বিশেষ করে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে জবাবদিহিতার কোনো বালাই নেই। এসব প্রতিষ্ঠানে শুদ্ধাচার চর্চা তো দূরের কথা, চলছে চরম স্বেচ্ছাচারিতা। আইন ও বিধিবিধানের ব্যত্যয় ঘটিয়ে কিংবা ইচ্ছামাফিক এগুলো ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করে স্বার্থ হাসিল করাই প্রথা বা আচার হয়ে গেছে। কোথাও সিস্টেম কাজ করছে না। সুশাসনের জন্য প্রয়োজন উত্তম আইনের শাসন এবং সিস্টেমের কঠোর অনুশীলন। একটি কথা আছে- Rule by the best law is preferable to the rule by the best man দুর্নীতির ঊর্ধ্বমুখী উলস্ফলন ঘটায় চেইন অব কমান্ড ভেঙে পড়েছে। কথায় আছে- মাছের পচন ধরে মাথায়। অতএব, ঊর্ধ্বতন সোপানে অধিষ্ঠিতদের সততা, দক্ষতা ও জবাবদিহিতার অনুকরণীয় নজির সৃষ্টি করতে হবে। আর তা শুরু করতে হবে রাজনৈতিক নেতৃত্ব থেকে। কেননা, দেশ তথা সরকার পরিচালনার ভার তাদের হাতেই।
৫. গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থায় উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় অংশীদারিত্ব সুশাসন তথা শুদ্ধাচার প্রতিষ্ঠা অপরিহার্য
৬. সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠান ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে নৈতিকতা ও সততার চর্চাও অত্যন্ত জরুরি। সুতরাং সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সমাজ থেকে দুর্নীতি এবং সব ধরনের অন্যায়-অবিচার, বৈষম্য, সন্ত্রাস ও দমন-পীড়ন বন্ধ করার জন্য দৃঢ় রাজনৈতিক অঙ্গীকার অপরিহার্য।
৭. সুশাসন ও শুদ্ধাচার প্রতিষ্ঠায় অংশীদারিত্বমূলক প্রশাসন তথা উন্নয়ন প্রশাসনের কোনো বিকল্প নেই। আর শাসন-প্রশাসনে চেক অ্যান্ড ব্যালান্স প্রতিষ্ঠায় সংবিধানে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনাও অত্যাবশ্যক বলে অনুভূত হচ্ছে।
এই লেকচারের পরের পেইজে যেতে নিচের …. তে ক্লিক কর।
পরের পাতাসমুহ >>
0 responses on "বিসিএস -> প্রিলিমিনারি -> নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সুশাসন -> নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সুশাসন"