জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্তে প্রায় ২ লাখ শিক্ষার্থীর ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের তুঘলকি সিদ্ধান্তে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার আশঙ্কা করছেন ২০১৫ খ্রিস্টাব্দের ডিগ্রি (পাস) ও সার্টিফিকেট কোর্সে (পুরাতন সিলেবাস) উত্তীর্ণ দুই লাখের বেশি শিক্ষার্থী।
শিক্ষার্থীদের দাবি, এমনিতেই তিন বছরের কোর্স সাড়ে পাঁচ বছরে শেষ হয়েছে। ২ ফেব্রুয়ারি ফল প্রকাশ করা হলেও এখনো মাস্টার্স ভর্তির তারিখ ঘোষণা না করায় হতাশায় ভুগছেন শিক্ষার্থীরা। দ্রুত মাস্টার্স ভর্তির বিজ্ঞপ্তি দেয়া না হলে রাজপথে নামার চিন্তা করছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা। একাধিক শিক্ষার্থী এ খবর নিশ্চিত করেছেন।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে অনুষ্ঠিত ২০১৫ খ্রিস্টাব্দের ডিগ্রি (পাস) ও সার্টিফিকেট কোর্স (পুরাতন সিলেবাস) পরীক্ষার ফল গত ২ ফেব্রুয়ারি প্রকাশ হয়। এতে দুই লাখ ১০ হাজার ২৮৭ জন শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছিল।
২০১৫ খ্রিস্টাব্দের ডিগ্রি (পাস) উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, আমরা ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলাম। তিন বছরের কোর্স শেষ করতে আমাদের সাড়ে পাঁচ বছর লেগেছে। এখন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আমাদের নতুন সিলেবাস ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মাস্টার্স করানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে যা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক ও অন্যায় । খেয়াল খুশিমতো শিক্ষার্থীদের জীবন নষ্ট করার অধিকার কোনোভাবেই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নেই। দ্রুত মাস্টার্স ভর্তির বিজ্ঞপ্তি দেয়া না হলে আন্দোলনে নামার হুমকি দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
ভোলার তজুমদ্দিন ডিগ্রী কলেজের শিক্ষার্থী মো. সাইমুন ইসলাম রাজিব অভিযোগ করে বলেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের জীবন থেকে ৩ বছরের ডিগ্রি পাস কোর্সে সাড়ে পাঁচ বছর শেষ করেও থেমে থাকেনি। ডিগ্রির ফল প্রকাশের ১৭ দিন পর অনার্সের ফল প্রকাশিত হয়। কিন্তু অনার্সের ফল প্রকাশের পর মাস্টার্সের ভর্তি ফরম ছেড়ে দিলেও আমাদের মাস্টার্সের ভর্তির বিজ্ঞপ্তি এখনো দেয়া হয়নি। গত ২ ফেব্রুয়ারি ডিগ্রি পাস কোর্সের ফলাফল প্রকাশের পর জাবির কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা জানান, নতুন সিলেবাস ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের সঙ্গে আমাদের মাস্টার্স করাবে যা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক ও অন্যায় । আমরা আমাদের পুরাতন সিলেবাসের অধীনে মাস্টার্স শেষ করতে চাই। আগামী ১০ দিনের মধ্যে আমাদের মাস্টার্স প্রিলিমিনারি ২০১৫-২০১৬ শিক্ষাবর্ষেরে ভর্তির ফরম ছাড়া না হলে আমরা আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবো
২০১৫ খ্রিস্টাব্দের ডিগ্রি (পাস) উত্তীর্ণ মো: হাসান সুমন বলেন, আমরা জানতে পেরেছি ডিগ্রি ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের ফল প্রকাশের পর ডিগ্রি ২০১২-১৩ এবং ২০১৩-১৪ একই সঙ্গে ভর্তি করাবে। তা হলে তো আমরা আরও ১ বছর পেছনে পড়ে যাবো। ৩ বছরের ডিগ্রি ৬ বছর লেগেছে। অনতিবিলম্বে আমাদের মাস্টার্স ভর্তির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করার জন্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে দাবি জানাচ্ছি।
ঈশ্বরদী,পাবনা থেকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সুজন কুমার দাস জানান, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০১৫ খ্রিস্টাব্দে অনুষ্ঠিত ডিগ্রি (পুরাতন) সিলেবাস পরীক্ষায় প্রথম শ্রেনীতে উত্তীর্ণ হয়েছি। খুবই দুঃখজনক যে, তিন বছরের কোর্স শেষ করতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় লাগিয়ে দিয়েছে প্রায় ৬ বছর। এটা কোন ধরনের নিয়ম তা আমি জানি না। তাহলে আমাদের মাস্টার্স করবো কবে?
সিলেটের এমসি কলেজের শিক্ষার্থী আকলিমা খাতুন লুবনা বলেন, আমরা ২০১২-১৩ বর্ষে ডিগ্রির শিক্ষার্থী ছিলাম। তিন বছরের কোর্স শেষ করতে প্রায় ছয় বছর চলে গেছে। এখন যদি আবার ২০১৩-১৪ বর্ষের শিক্ষার্থীদের সঙ্গের মাস্টার্সে ভর্তি হলে আমাদের জীবন থেকে আরও একটি বছর চলে। পুরাতন সিলেবাসে ডিগ্রি উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের জন্য মাস্টার্স কোর্স এক বছর করারও দাবি জানান লুবনা।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্তে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন হবিগঞ্জ বিন্দাবন কলেজের শিক্ষার্থী মো: শাওন খান, সিলেট এমসি কলেজের জুবায়ের আহমেদ,চট্টগ্রামের নোয়াপাড়া ডিগ্রি কলেজের মো: হাবিবুল ইসলাম শিমুল, হাটহাজারী কলেজের মো: আবুল বাশার, গফরগাঁও সরকারি কলেজের মো: আওয়াল মিয়া, মেহেরপুর সরকারি কলেজের মো: ফজলে রাব্বি, কুড়িগ্রামের চিলমারি ডিগ্রি কলেজের পলাশ চন্দ্র বর্মন, ভুরঙ্গামারি ডিগ্রি কলেজের মো: জাহিদুল ইসলাম,ভোলার তজুমদ্দিন ডিগ্রী কলেজের মো: নুর আলম, জামালপুরের মাদারগঞ্জের নুরুন্নাহার মির্জা কাশেম মহিলা ডিগ্রি কলেজের ফাহিমা খাতুন, সিরাজগঞ্জের বিলুকচি ডিগ্রি কলেজের বিপুল সরকার, গাইবান্ধা সরকারি কলেজের মো: রবিউল ইসলামসহ আরও অনেকে।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, বিষয়টি নিয়ে উচ্চ পর্যায়ে কথা হবে দুএকদিনের মধ্যেই। শিক্ষার্থীদের আশঙ্কা কতটুকু যৌক্তিক তা খতিয়ে দেখা হবে।
আরো পড়ুন:
0 responses on "জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্তে প্রায় ২ লাখ শিক্ষার্থীর ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে"