
কল সেন্টার হচ্ছে এক ধরনের কল কেন্দ্রিক অফিস যেখানে কল গ্রহণ ও ট্রান্সমিটের কাজ করা হয়। এই কল সেন্টারটি পরিচালনা করা হয় একটি প্রতিষ্ঠানের প্রশাসন দ্বারা যেখানে কোন প্রোডাক্ট সাপ্লাই বা সাপোর্ট দেয়া ও তথ্য সংক্রান্ত যাবতীয় সবকিছুর সেবা ভোক্তাদের প্রদান করা হয়। এছাড়াও কল সেন্টার কাজ করে টেলিমার্কেটিং, বিভিন্ন চ্যারিটেবল বা পলিটিক্যাল ফান্ড, ঋণ সংগ্রহ বা মার্কেট রিসার্চের কাজে। কল সেন্টারে কিছু এজেন্ট নিয়োগ করা হয় এবং তাদের প্রত্যেককে কম্পিউটার দেয়া হয় যেটি মেইন ওয়ার্ক স্টেশনের সাথে সংযোগ দেয়া থাকে, এছাড়াও দেয়া হয় একটি টেলিফোন সেট বা হেডসেট যেটি টেলিকম সুইচের সাথে সংযুক্ত থাকে। কল সেন্টারে কল দু ধরনের হতে পারে, একটা হলো ইন বাউন্ড কল, যেখানে গ্রাহক তার প্রোডাক্ট সম্পর্কে কোন তথ্য জানতে চেয়ে বা সমস্যা সম্পর্কে বলবে বা সাহায্য চাইবে। আরেক ধরনের কল হচ্ছে আউট বাউণ্ড, যেটি এজেন্ট তার গ্রাহকদের কাছে করবে কোন কিছু বেচাকেনার উদ্দেশ্যে যেমন- টেলিমার্কেটিং।
অন্যান্য দেশে এই কল সেন্টারের বিস্তৃতি ও পরিচিতি ইতিমধ্যেই অনেক। এখন বাংলাদেশেও এর পরিচিতি বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশে বিভিন্ন কাজের ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে যার মধ্যে সবচেয়ে ভালো সম্ভাবনা নিয়ে এসেছে কল সেন্টার। আমাদের দেশের একটা বড় অংশ গ্রাজুয়েশন শেষ করার পরও বেকার বসে থাকে। ফলে তারা প্রচন্ড রকম মানসিক হতাশায় ভোগে। প্রয়োজনীয় দক্ষতা থাকা সত্ত্বেও ভালো কোথাও চাকরি হয়না। কিন্তু গত কয়েক বছরে আমাদের দেশে চাকরির বাজারটা রাতারাতি বদলে গেছে। কল সেন্টারে তরুণদের জন্য সুযোগ বেড়েছে, অনেকেই এখন ফুল টাইম বা পার্ট টাইম চাকরি করছেন কল সেন্টারগুলোতে। অনেক ছাত্রছাত্রী পড়ালেখা চলাকালীন সময়েও কল সেন্টারে কাজ করে। যেসব ছাত্রছাত্রী বাংলা ও ইংরেজী ভাষায় পারদর্শী তাদের কল সেন্টারে ভালো কাজের সম্ভাবনাও বেশি। দেশের ৬০ টি কল সেন্টারে ইতিমধ্যেই প্রায় ২০,০০০ এর মতো মানুষ কাজে নিয়োজিত আছে। বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশন (বিটিআরসি) ২০০৮ সালের এপ্রিল থেকে কল সেন্টারগুলোকে লাইসেন্স ইস্যু করা শুরু করেছে প্রতিটার লাইসেন্স ফি ৫০০০ টাকা ধরে এবং এখন পর্যন্ত মোট ১৮৪ টা কোম্পানিকে লাইসেন্স দেয়া হয়েছে যার মধ্যে ৪১ টা কল সেন্টার কাজ করছে পুরোপুরি।
প্রথমে শুধু দেশের মধ্যে কাস্টমার সেবা প্রদান করা হলেও এখন দেশের বাইরে আন্তর্জাতিক পর্যায়েও এই সেবা দেয়া হয়। তবে স্থানীয় মার্কেটেই কল সেন্টার ভালো কাজ করছে যার বেশিরভাগই বড় বড় ব্যাংকগুলো যাদের প্রধান কাজ বিভিন্ন নতুন নতুন প্যাকেজ সুবিধা প্রদান এবং ঋণ সংগ্রহ। আর দেশের বৃহত্তম টেলিকম কোম্পানির মধ্যে গ্রামীনফোন কল সেন্টারে ১৪০০ এবং বাংলালিংক কল সেন্টারে প্রায় ৩৫০ জন লোক কাজ করে। এমনকি বড় হাসপাতালগুলো যেমন অ্যাপোলো ও স্কয়ার হাস্পাতালে যথাক্রমে ২৫ ও ১৬ জন লোক আছে শুধুমাত্র কাস্টমার সার্ভিসের জন্য। এ তো গেলো দেশের ভিতরে কাজের কথা, এর বাইরে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যেমন- লন্ডন, আমেরিকা, সুইজারল্যান্ডে কল সেন্টারগুলোর কিছু ফিক্সড ক্লায়েন্ট আছে যাদের সাথে তারা নিয়মিত কাজ করে থাকে। মিটিঙের আগে তারা সেসব ক্লায়েন্টের জন্য দরকারি কাগজপত্র তৈরি করে, পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনও দিয়ে থাকে মিটিং-এ, যাতে বিদেশি ক্লায়েন্টদের সাথে কাজে কোন সমস্যা না থাকে।
আমাদের দেশে অনেক দক্ষ লোক আছে কল সেন্টারে কাজ করার মতো । কিন্তু কল সেন্টারে কাজের ক্ষেত্রে যেই ব্যাপারটায় সবচেয়ে বেশি দক্ষ হতে হবে তা হল ইংরেজী জানা। ইংরেজী উচ্চারণ ও ভঙ্গি যেন ভালো হয়। তবে কল সেন্টারে কাজ শুরু আগে প্রত্যেককেই একটা শর্ট ট্রেনিং হলেও করতে হয়। একেক কল সেন্টারের কাজের ধরন অনুযায়ী ট্রেনিঙও ভিন্ন হয়ে থাকে। এই কল সেন্টার সত্যিকার অর্থেই অনেক বড় কাজের সুযোগ তৈরি করছে এবং সব ক্ষেত্রেই কল সেন্টারের প্রয়োজনীয়তাটা সবাই বুঝতে পারছে। বাংলাদেশেও এর ভবিষ্যৎ নিঃসন্দেহে ভালো
আরও পড়ুনঃ
বিভিন্ন জবসাইটে নিবন্ধিত ব্যক্তি নতুন কাজের খবর পান-
প্রতি এক হাজার ইন্টারনেট সংযোগের জন্য কতটি নতুন কাজের সুযোগ সৃষ্টি হয়?
পাঁচ বছর পর পরিবর্তন জিমেইলে এবং যুক্ত হয়েছে নতুন সুবিধা