>>>>>>৩৮ তম বিসিএস লিখিত ও প্রিলিমিনারি পরীক্ষার প্রস্তুতি<<<<<< #ইরানের সাথে #P5+1 এর পারমাণবিক চুক্তি।
==মোহাম্মদ মনজুর মোরশেদ
==
‘ইরান নিউক্লিয়ার চুক্তি’ বিশ্বে এ সময় সবচেয়ে আলোচ্য বিষয়, ‘হট টপিক’। নিউইয়র্ক সময় সোমবার ১৪ জুলাই ২০১৫ সকালে হোয়াইট হাউসে প্রেসিডেন্ট ওবামা এ চুক্তির কথা মার্কিনিদের জানান এবং এর বিশেষ বিশেষ ক্লজগুলো ব্যাখ্যা করেন। তিনি বলেন, এই চুক্তির ফলে বিশ্ব এবং আমেরিকা নিরাপদ হয়েছে। ইরান অন্তত এক দশক বা তারও বেশি সময় পারমাণবিক বোমা বানাতে পারবে না। জার্মানি ও নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী ৫ সদস্য ইরানের সঙ্গে এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে এ চুক্তির প্রশংসা করে ওবামা আরো বলেন, কংগ্রেস উল্টাপাল্টা করলে তিনি ভেটো দিবেন।
চুক্তিটি স্বাক্ষর হয়েছে ভিয়েনায়, যেটি প্রায় এক দশক আলোচনার ফসল। নিউইয়র্ক টাইমস জানায়, ইরান আগামী পনেরো বছরে এর পারমাণবিক সক্ষমতা ও মজুদ কমিয়ে আনবে। তবে আগামী ৫ বছর ইরানের অস্ত্র রপ্তানি নিষিদ্ধ থাকছে; ব্যালাস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র রপ্তানি নিষিদ্ধ থাকবে ৮ বছর। ওবামা বলেছেন, এই চুক্তি বিশ্বাসের ওপর নির্ভরশীল নয় বরং এটা ভেরিফিকেশনের ওপর ভিত্তিশীল। ভেরিফিকেশনের পয়েন্টগুলো অবশ্য এখনো চূড়ান্ত হয়নি। একশ পাতারও বেশি এই চুক্তির চুলচেরা বিশ্লেষণ হবে, যদিও অনেকের কাছে এখনই এটি একটি বাজে চুক্তি, তাদের আর বিশ্লেষণের দরকার নেই।
যুক্তরাষ্ট্রসহ ছয় বিশ্বশক্তির সাথে যে সমঝোতা হয়েছে তা থেকে অনেক কিছু শেখার আছে। তা হলো একটি দেশ বা জাতি যদি ঐক্যবদ্ধ থাকে, লক্ষ্যপানে অটুট থাকে, বুদ্ধিমত্তা এবং কৌশলের সাথে পথ চলে, জ্ঞান বিজ্ঞান চর্চা করে, আবিষ্কারের নেশায় নীরবে কাজ করে, নিজস্ব সংস্কৃতির ওপর অবিচল থাকে আর জাতীয় স্বার্থ এবং স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের প্রতি আপস না করে তাহলে সময়ের পরিক্রমায় উন্নফয়ন, সমৃদ্ধি এবং শক্তি সবই অর্জিত হবে। সেই জাতি পৃথিবীর বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবেই। তখন সবাই সেই দেশ এবং জাতিকে সমীহ করে। ইরানের বেলায় আজ সেটিই প্রযোজ্য। যুক্তরাষ্ট্রের দুই প্রতিপক্ষ রাশিয়া এবং চীনের সাথে ইরানের সম্পর্ক ইরানকে বিশ্বরাজনীতির মঞ্চে দৃঢ় অবস্থান দিয়েছে।
চুক্তিটি ২০ জুলাই জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদেও সর্বসম্মতভাবে পাস হয়েছে। চুক্তিটির সারসংক্ষেপ হচ্ছে- ইরান একটি নির্দিষ্ট সীমারেখা পর্যন্ত তার পরমাণু কর্মসূচি চালাবে, তবে পরমাণু বোমা বানাবে না। বিনিময়ে ইরানের ওপর আরোপিত অর্থনৈতিক অবরোধ উঠে যাবে। বিশ্বের সেরা ছয় পরাশক্তির সাথে ইরানের এই সমঝোতা চুক্তি বিশ্বরাজনীতির পরিমন্ডলে একটি ঐতিহাসিক ঘটনা এবং নিঃসন্দেহে এটি ইরানের বিরল অর্জন। বিশ্বের সেরা ছয়টি ক্ষমতাধর রাষ্ট্রকে আলোচনার টেবিলে আনা এবং চুক্তিতে পৌঁছতে তাদেরকে রাজি করানো চাট্টিখানি কথা নয় এবং এটা অসাধ্য সাধন করার মতোই একটি বিষয়। এ ক্ষেত্রে ইরান তা সাধন করেছে। এটা ইরানের বিশাল একটি অর্জন এবং ঐতিহাসিক বিজয়। প্রকৃতপক্ষে ইরানের শক্তিই আজ ইরানকে এই মর্যাদা এনে দিয়েছে। কারণ শক্তি হচ্ছে শান্তি এবং নিরাপত্তার গ্যারান্টি। যার শক্তি আছে তাকে সবাই সমীহ এবং সম্মান করে। তাকে কেউ আঘাত করে না। তাই যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন, ব্রিটেন এবং ফ্রান্সসহ বিশ্বের শক্তিশালী রাষ্ট্রসমূহকে কেউই আক্রমণ করে না। এসব দেশের কেউই একে অন্যকে আক্রমণ করেনি। এমনকি যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়া একে অপরের চির দুশমন হলেও আজ পর্যন্ত এরা একে অন্যকে কখনও আক্রমণ করেনি এবং ভবিষ্যতেও আক্রমণ করার কোনো আশঙ্কা নেই। তাদের শক্তি তাদের শান্তি এবং নিরাপত্তাকে নিশ্চিত করেছে। একইভাবে ইরানের শক্তিই আজ ইরানের শান্তি এবং নিরাপত্তাকে নিশ্চিত করেছে। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং সামরিক ক্ষেত্রে ইরানের শক্তিই আজ বিশ্বের সেরা ছয় পরাশক্তিকে ইরানের সাথে সমঝোতায় আসতে বাধ্য করেছে। এই বাস্তবতা থেকে সবারই শিক্ষা গ্রহণ করা উচিত।
এই সমঝোতা এমন সময় হলো, যখন ইরাক, সিরিয়া, লিবিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে আইএস জঙ্গিদের তৎপরতা বেড়েছে। কট্টর সুন্নি মতাবলম্বী এই জঙ্গিগোষ্ঠী যেমন ইরানের জন্য হুমকি, তেমনি বিপজ্জনক পশ্চিমা শক্তিগুলোরও জন্যও।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এই সমঝোতাকে ঐতিহাসিক বলে অভিহিত করেছেন। জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুনসহ বিশ্বনেতারা সমঝোতাকে স্বাগত জানালেও ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু দেখেছেন বাঁকা চোখে। এর মাধ্যমে তিনি প্রমাণ করলেন মধ্যপ্রাচ্যের যেকোনো শান্তিপ্রক্রিয়ায় ওই রাষ্ট্রটিই প্রধান বাধা।
এই সমঝোতার ফলে মধ্যপ্রাচ্যে যে শান্তির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে, সেটি কাজে লাগাতে হলে সৌদি আরবের সঙ্গে ইরানের সম্পর্কোন্নয়নের পাশাপাশি ইসরাইলকেও আগ্রাসী নীতি থেকে সরে আসতে হবে। চূড়ান্ত চুক্তির পর যত দ্রুত সম্ভব ইরানের ওপর থেকে যুক্তিরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হবে বলেও প্রত্যাশিত। চুক্তির শর্ত পূরণের দায়িত্ব কেবল এক পক্ষের নয়।
পরিসমাপ্তি টানার পূর্বেই যে কথা প্রতিবেদিত না করলে হৃদয়মন তৃপ্ত হবে না, আর সেটি হলো, বাঘ, সিংহ এবং হাতির শক্তিই বনে তাদের নিরাপত্তাকে নিশ্চিত করেছে। একইভাবে যে বাড়িতে কুকুর থাকে, সে বাড়িতে কিন্তু শিয়াল প্রবেশ করে না। সুতরাং পৃথিবীর বুকে আত্মমর্যাদা নিয়ে মাথা উঁচু করে বাঁচার জন্য সবারই উচিত শক্তি অর্জন করা। কারণ এই শক্তিই একটি জাতি এবং একটি দেশের শান্তি, নিরাপত্তা, উন্নয়ন, স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্বসহ সবকিছুই নিশ্চিত করে।