১৯২৯ সালের ১৬ মে প্রথম বার অনুষ্ঠিত হয় অ্যাকাডেমি পুরস্কার। আদর করে অনুরাগীরা যাকে অস্কার বলে ডাকে। ১৯২৭ এবং ১৯২৮ সালের জন্য ছবির জন্য প্রথম বার এই পুরস্কার দেওয়া হয়। তার পরের বছর ১৯৩০ সালে এপ্রিল এবং নভেম্বর মাসে দু’-দু’বার এই পুরস্কার দেওয়া হয়। অস্কার নিয়ে সাতটি অজানা কথা।
:: অস্কার পুরস্কার জয়ীদের একটি চুক্তিপত্রে সই করতে হয়। তাঁদের অঙ্গীকার করতে হয় যদি তাঁরা পুরস্কারটি বিক্রি করেন তবে প্রথমে অ্যাকাডেমিকেই এক ডলারের বিনিময় বেচতে হবে। যদি তাঁরা তা না করেন তবে ট্রফি নিজেদের কাছে রাখতে পারবেন না। এই আইনটি ১৯৫০ সাল থেকে চালু হয়েছে।
:: লস অ্যাঞ্জেলেসের হলে ছবি না দেখানো হলে সেই ছবি অস্কারের জন্য মনোনীত হয় না।
:: রাইট-ইন-ভোটের মাধ্যমে প্রথম বার অস্কার জেতেন হাল মোর। ১৯৩৫ সালে ‘আ মিডসামার নাইটস ড্রিমের জন্য সেরা চিত্রগ্রাহকের পুরস্কার জেতেন হাল।
:: ১৯৮৩ সাল থেকে ২০০৭ সাল, ২৪ বছরে কুড়ি বার মনোনয়ন পেলেও এক বারও অস্কার ভাগ্যে শিকে ছেড়েনি সাউন্ড রেকর্ডিস্ট কেভিন ও’নিলের।
:: ১৯৯২ সালে ‘সাইলেন্স অফ ল্যাম্ব’ ছবিতে নরখাদক ডঃ হ্যানিবল লেক্টরের চরিত্রের জন্য সেরা অভিনেতার অস্কার জেতেন স্যর অ্যান্থনি হপকিন্স। এই প্রথম বার মাত্র ১৬ মিনিটের রোলের জন্য কেউ সেরা অভিনেতার পুরস্কার জেতেন।
:: সাড়ে তেরো ইঞ্চি লম্বা অস্কারের ট্রফির ওজন সাড়ে আট পাউন্ড।
:: ২০০০ সালে চুরি যায় ৫৫টি ট্রফি। জঞ্জালের মধ্যে থেকে উদ্ধার হয় ৫২টি ট্রফি। তবে খোঁজ পাওয়া যায়নি তিনটি ট্রফির।
এ পর্যন্ত তিনটি ছবি অস্কারে সর্বাধিক ১১টি ক্যাটাগরিতে পুরস্কার পেয়েছে। বেনহার (১৯৫৯) প্রথম ছবি হিসেবে এ কৃতিত্ব অর্জন করে। পরে দীর্ঘ বিরতির পর টাইটানিক (১৯৯৭) ও লর্ড অব দ্য রিংগস (২০০৩) একই কৃতিত্ব ভাগাভাগি করে নেয়। টাইটানিক অন্য আরেকটি রেকর্ড দখল করে আছে। মোট ১৭টি ক্যাটাগরির ১৪টিতে মনোনয়ন পায় ছবিটি। এর আগে অল অ্যাবাউট ইভ (১৯৫০) ১৫টির মধ্যে ১৪টি ক্যাটাগরিতে মনোনয়ন পায়।
অস্কারের ইতিহাসে প্রধান পাঁচটি ক্যাটাগরিতে (সেরা ছবি, সেরা পরিচালক, সেরা স্ক্রিন প্লে, সেরা অভিনেতা ও সেরা অভিনেত্রী) পুরস্কার পাওয়ার ঘটনা ঘটেছে মাত্র তিনবার—ইট হ্যাপেন্ড ওয়ান নাইট (১৯৩৪), ওয়ান ফ্লিউ ওভার দ্য কাক্কুস নেস্ট (১৯৭৫) ও সাইলেন্স অব দ্য ল্যাম্বস (১৯৯১)—এই তিনটি ছবি।
মেরিল স্ট্রিপ ও ড্যানিয়েল ডে লুইসমিউজিক্যাল ছবি ক্যাবারে-এর (১৯৭২) কপালে আটটি অস্কার জুটলেও বঞ্চিত হয় সেরা ছবির পুরস্কার থেকে। হবেই না বা কেন, সে বছর সেরা ছবির অস্কার যে পেয়েছে কাল্ট মুভি গড ফাদার।
একাডেমি অ্যাওয়ার্ড ইতিহাসে ওয়ারেন বেটি একটি ব্যতিক্রমী নাম। কারণ, তিনি একমাত্র ব্যক্তি, যিনি কিনা একটি ছবির জন্য সেরা প্রযোজক, সেরা পরিচালক, সেরা লেখক এমনকি সেরা অভিনেতার জন্য মনোনয়ন পেয়েছেন। তা-ও আবার দু-দুবার! প্রথমবার হ্যাভেন ক্যান ওয়েইট (১৯৭৮), পরে রেডস-এর (১৯৮১) জন্য। রেডস-এর জন্য সেরা পরিচালকের পুরস্কারটাও অবশেষে পান তিনি।বেনহার
কোন সেলিব্রিটি সবচেয়ে বেশি অস্কার পেয়েছেন জানেন? ওয়াল্ট ডিজনি। কার্টুন ও ডকুমেন্টারি প্রযোজনার জন্য মোট ২২টি অস্কার পান তিনি! সবচেয়ে বেশিবার (৫৯) অস্কারের মনোনয়ন পেয়েও রেকর্ড গড়েন ডিজনি।
অস্কারের ইতিহাসে এ পর্যন্ত দুজন অভিনেতা মরণোত্তর পুরস্কার পেয়েছেন। সেরা অভিনেতা হিসেবে পিটার ফিঞ্চ নেটওয়ার্ক (১৯৭৬) ছবির জন্য আর হিথ লেজার সেরা পার্শ্ব-অভিনেতার পুরস্কার পেয়েছেন দ্য ডার্ক নাইট-এ (২০০৯) ভয়ংকর ভিলেন চরিত্র জোকারের জন্য।
লরেন্স অব অ্যারাবিয়া (১৯৬২) অস্কার পাওয়া ব্যতিক্রমী এক ছবি। কেন জানেন? কারণ, এ ছবিতে কোনো নারী চরিত্র নেই!
পরিচালক হিসেবে সবচেয়ে বেশি অস্কার পেয়েছেন কে বলুন তো? জন ফোর্ড। চারবার অস্কার পান তিনি। উল্টোদিকে, আলফ্রেড হিচকক, স্ট্যানলি কুবরিকরা কোনো অস্কার পাননি।
টাইটানিকপ্রথম কৃষ্ণাঙ্গ হিসেবে ১৯৬৩ সালে সেরা অভিনেতার পুরস্কার পান সিডনি পয়টার দ্য লিলিস ইন দ্য ফিল্ড ছবির জন্য।
অভিনেত্রীদের মাঝে কে বেশি অস্কার পেয়েছেন বলতে পারেন? ক্যাথরিন হেপবার্ন। মোট চারটি অস্কার পেয়েছেন তিনি। মনোনয়ন পেয়েছেন ১২টি।
অভিনেত্রীদের মাঝে মেরিল স্ট্রিপ সবচেয়ে বেশি ১৮ বার অস্কারের মনোনয়ন পেয়েছেন। আর অভিনেতাদের মাঝে শীর্ষে আছেন ড্যানিয়েল ডে লুইস। তিনবার সেরা অভিনেতা হিসেবে অস্কার পান তিনি। তাঁর ঝুলিতে ভবিষ্যতেও হয়তো আরও কিছু অস্কার জমা হবে।
অস্কার পুরুষ্কার ২০১৭
অস্কারের ৮৯তম আসরে সেরা অভিনেতার পুরস্কার জিতেছেন ক্যাসি অ্যাফ্লেক।
‘ম্যানচেস্টার বাই দ্য সি’ ছবির জন্য তিনি এ পুরস্কার জেতেন।
আর এবারের আসরে সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার পেয়েছেন ‘লা লা ল্যান্ড’ ছবির এমা স্টোন।
একই ছবি দিয়ে সেরা পরিচালকের অস্কার পেয়েছেন ড্যামিয়েন চ্যাজলে।
বাংলাদেশ সময় সোমবার ভোর ৬টার দিকে লস অ্যাঞ্জেলসের ডলবি থিয়েটারে চলচ্চিত্রের সবচেয়ে জমকালো এই আ♥সরের পুরস্কার ঘোষণা করা হয়।
এবার ২৪টি বিভাগে মনোনীতদের মধ্য থেকে বিজয়ীর হাতে পুরস্কার তুলে দেয়া হয়। এ বছর ৩৩৬টি ছবি প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত হয় সেরা চলচ্চিত্র বিভাগে লড়াইয়ের জন্য।
শেষ পর্যন্ত সংক্ষিপ্ত তালিকায় চূড়ান্ত মনোনয়ন পায় ৯টি ছবি- অ্যারাইভাল, ফেন্সেস, হ্যাকসো রিজ, হেল অর হাই ওয়াটার, হিডেন ফিগার্স, লা লা ল্যান্ড, লায়ন, ম্যানচেস্টার বাই দ্য সি ও মুনলাইট।
অস্কারের অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করছেন কমেডিয়ান ও টিভি অনুষ্ঠান উপস্থাপক জিমি কিমেল।
অস্কারে এ বছর বিভিন্ন বিভাগে বিজয়ী নির্বাচনের জন্য ভোট দেন ৬ হাজার ৬৮৭ জন অস্কার সদস্য।
হলিউডের ডলবি থিয়েটারে বালাদেশ সময় সোমবার ভোর ৬টার দিকে বসেছিল অস্কারের ৮৯তম আসর। ইতিমধ্যেই অস্কারের সব পুরস্কার ঘোষণা হয়ে গেছে। এই আসরের সবচেয়ে আকর্ষণীয় পুরস্কার ‘সেরা ছবি’র পুরস্কারটি জিতে নিয়েছে মুনলাইট। এই ছবির সহ অভিনেতার চরিত্রে অভিনয় করে প্রথম মুসলিম অভিনেতা হিসেবে অস্কার জিতেছেন কৃষ্ণাঙ্গ অভিনেতা মাহেরশালা আলি। তিনি সেরা পার্শ্ব অভিনেতার পুরস্কারটি জিতে নিয়েছেন।
এখানে রইল অস্কারের সেরা পুরস্কার বিজয়ীদের তালিকা:
সেরা ছবি: ‘মুনলাইট’
সেরা অভিনেত্রী: এমা স্টোন, ‘লা লা ল্যান্ড’
সেরা অভিনেতা: ক্যাসি অ্যাফ্লেক, ‘ম্যানচেস্টার বাই দ্য সি’
সেরা পরিচালক: ড্যামিয়েন চ্যাজেল, ‘লা লা ল্যান্ড’
সেরা পার্শ্ব অভিনেত্রী: ভায়োলা ডেভিস, ‘ফেন্সেস’
সেরা পার্শ্ব অভিনেতা: মাহেরশালা আলি, ‘মুনলাইট’
সেরা অবলম্বিত চিত্রনাট্য: ‘মুনলাইট’
সেরা মৌলিক চিত্রনাট্য: ‘ম্যানচেস্টার বাই দ্য সি’
সেরা মৌলিক গান: সিটি অফ স্টারস, ‘লা লা ল্যান্ড
সেরা চিত্রগ্রহণ: ‘লা লা ল্যান্ড’
সেরা মৌলিক স্কোর: ‘লা লা ল্যান্ড’
সেরা অ্যানিমেটেড ফিচার: ‘জুটোপিয়া’
সেরা বিদেশি ভাষার ছবি: ‘দ্য সেলস ম্যান’
সেরা ডকুমেন্টারি ফিচার: ‘ও.জে.: মেড ইন অ্যামেরিকা’
সেরা লাইভ অ্যাকশন শর্ট: ‘সিঙ’
সেরা ডকুমেন্টারি শর্ট সাবজেক্ট: ‘দ্য হোয়াইট হেলমেটস’
সেরা এডিটিং: ‘হ্যকস রিজ’
সেরা ভিজ্যুয়াল অ্যাফেক্টস: ‘দ্য জাঙ্গল বুক’
সেরা প্রডাকশন ডিজাইন: ‘লা লা ল্যান্ড’
সেরা অ্যানিমেটেড শর্ট: পাইপার
সেরা শব্দ মিশ্রণ: ‘হ্যাকস রিজ’
সেরা শব্দ সম্পাদনা: ‘অ্যারাইভাল’
সেরা মেকআপ এবং চুল: ‘সুইসাইড স্কোয়াড’
সেরা পোশাক ডিজাইন: ‘ফ্যান্টাস্টিক বিস্টস অ্যান্ড হোয়্যার টু ফাইন্ড দেম’