অপারেশন-বাংলাদেশ বিষয়াবলী (সংবিধান সংশোধন )

অপারেশন-বাংলাদেশ বিষয়াবলী (সংবিধান সংশোধন )

গত পর্বে সংবিধানের গুরুত্বপুর্ন ধারা ও প্রেক্ষাপট নিয়ে আলোচনা করেছিলাম,যেগুলো বিসিএস সহকারী জজ নিয়োগ সহ যেকোন নিয়োগ পরীক্ষার প্রিলির জন্য গুরুত্বপুর্ন। আজ শুধু সংবিধানের সংশোধন বিষয়ক আলোচনা করব।
:
=> সংবিধানের দশম ভাগের ১৪২ নং অনুচ্ছেদে সংবিধান সংশোধনের কথা বলা আছে। সংবিধান সংশোধনের জন্য দুই-তৃতীয়াংশ সংসদ সদস্যের সম্মতির প্রয়োজন। এই পর্যন্ত বাংলাদেশের সংবিধান ১৬বার সংশোধন করা হয়।
=> প্রথম সংশোধনীঃ যুদ্ধাপরাধীসহ অন্যান্য গণবিরোধীদের বিচার নিশ্চিত করতে মনোরঞ্জন ধর সংবিধানের প্রথম সংশোধনী বিল উত্থাপন করেন। বিলটি ১৫ জুলাই ১৯৭৩ সালে পাস হয় এবং ১৭ জুলাই ১৯৭৩ সালে রাষ্ট্রপতি এতে অনুমোদন দেয়।
=> দ্বিতীয় সংশোধনীঃ অভ্যন্তরীণ /বহিরাক্রমনের গোলযোগে দেশের নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক জীবন বিপন্ন হলে সে অবস্থায় ‘জরুরি অবস্থা ‘ঘোষণার বিধান নিশ্চিত করতে মনোরঞ্জন ধরে সংসদে ২য় সংশোধনী বিল উত্থাপন করেন। বিলটি ২০ সেপ্টেম্বর ১৯৭৩ সালে পাস হয় এবং ২২সেপ্টেম্বর ১৯৭৩ সালে এতে রাষ্ট্রপতি অনুমোদন দেয়।
=> তৃতীয় সংশোধনীঃ বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত চুক্তি অনুযায়ী বেরুবাড়িকে ভারতের নিকট হস্থান্তরের বিধান রেখে সংসদে তৃতীয় সংশোধনী বিল উত্থাপন করে মনোরঞ্জন ধর। বিলটি ২৩ নভেম্বর ১৯৭৪ সালে পাস হয় এবং ২৭ নভেম্বর ১৯৭৪ সালে রাষ্ট্রপতি এতে অনুমোদন দেয়।
=> চতুর্থ সংশোধনীঃ সংসদীয় শাসন পদ্ধতির পরিবর্তে রাষ্ট্রপতি শাসিত শাসন পদ্ধতি চালু ও বহুদলীয় রাজনীতির পরিবর্তে একদলীয় রাজনীতি প্রবর্তন করতে মনোরঞ্জন ধর এ বিল উত্থাপন করেন। বিলটি ২৫ জানুয়ারি ১৯৭৫ সালে পাস হয় এবং ঐ দিনই রাষ্ট্রপতি এতে অনুমোদন দেয়।
=> পঞ্চম সংশোধনীঃ ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট এর সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে ১৯৭৯ সালের ৯ এপ্রিল পর্যন্ত সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান সরকারের যাবতীয় কর্মকান্ড বৈধতা দান করতে শাহ আজিজুর রহমান সংসদে এ সংশোধনী বিলটি উত্থাপন করেন। বিলটি ৬এপ্রিল ১৯৭৯ সালে সংসদে পাস হয় এবং ঐ দিনই রাষ্ট্রপতি এতে অনুমোদন দেয়।
=> ষষ্ঠ সংশোধনীঃ উপরাষ্ট্রপতি পদ থেকে রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচনের বিধান নিশ্চিত করতে শা আজিজুর রহমান এ সংশোধনী বিলটি উত্থাপন করেন। বিলটি ৮ জুলাই ১৯৮১ সালে পাস হয় এবং ৯ জুলাই ১৯৭৯ সালে রাষ্ট্রপতি এতে অনুমোদন দেয়।
সপ্তম সংশোধনীঃ ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ ফরমান ঘোষিত সামরিক আইন বলবৎ থাকাকালীন প্রণীত সকল ফরমান,প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের আদেশ,নির্দেশ,অধ্যাদেশ সহ অন্যান্য আইন অনুমোদন করার জন্য বিচারপতি এ কে এম নুরুল ইসলাম এটি উত্থাপন করেন। বিলটি ১০নভেম্বির ১৯৮৬ সালে পাস হয় এবং একইদিনে রাষ্ট্রপতি এতে অনুমোদন দেয়।

=> অষ্টম সংশোধনীঃ রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ইসলামকে স্বীকৃতিদান এবং ঢাকার বাইরে ৬টি জেলায় হাইকোর্টের স্থায়ী বেঞ্চ স্থাপন, Dacca এর নাম Dhaka এবং Bengali এর নাম Bangla পরিবর্তন করতে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমে এই সংশোধনী বিলটি আনে। বিলটি ৭জুন ১৯৮৮ সালে পাস হয় এবং ৯জুন ১৯৮৮ সালে রাষ্ট্রপতি এতে অনুমোদন দেয়।

=> নবম সংশোধনঃ রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের সাথে একই সময়ে উপরাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচন অনুষ্ঠান করা,রাষ্ট্রপতি পদে কোন ব্যক্তিকে পর পর দুই মেয়াদে সীমাবদ্ধ রাখতে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ এ সংশোধনী বিল উত্থাপন করেন। বিলটি ১০জুলাই ১৯৮৯ সালে পাস হয় ও ১১জুলাই ১৯৮৯ সালে রাষ্ট্রপতি এতে অনুমোদন দেয়।
=> দশম সংশোধনীঃ রাষ্ট্রপতির কার্যকালের মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্বে ১৮০ দিনের মধ্যে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ব্যাপারে সংবিধানের ১২৩(২) অনুচ্ছেদের বাংলা ভাষ্য সংশোধন ও সংসদে মহিলাদের ৩০টি আসন আরো ১০ বছরের জন্য সংরক্ষনের বিধান নিশ্চিত করতে হাবিবুল ইসলাম এ বিলটি উত্তাপন করেন। বিলটি ১২ জুন ১৯৯০ সালে পাস হয় এবং ২৩ জুন ১৯৯০ সালে রাষ্ট্রপতি এতে অনুমোদন দেয়।
=> একাদশ সংশোধনীঃঅস্থায়ী রাষ্ট্রপতি প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমেদের স্বপদে ফিরে যাবার বিধান রেখে মীর্জা গোলাম হাফিজ এ সংশোধনী বিল উত্থাপন করেন। বিলটি ৬ আগস্ট ১৯৯১ সালে পাস হয় ও ১০আগস্ট ১৯৯১ সালে রাষ্ট্রপতি এতে অনুমোদন দেয়।
=> দ্বাদশ সংশোধনীঃ সংসদীয় পদ্ধতিতে সরকার পুনঃপ্রবর্তন,উপ রাষ্ট্রপতির পদ বিলুপ্তির জন্য খালেদা জিয়া এ বিলটি উত্থাপন করেন। বিলটি ৬আগস্ট ১৯৯১ সালে পাস হয় এবং ১৮সেপ্টেম্বর ১৯৯১ সালে রাষ্ট্রপতি এতে অনুমোদন দেয়।
=> ত্রয়োদশ সংশোধনীঃ নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান রেখে বিলটি জমিরউদ্দিন উত্থাপন করেন। বিলটি ২৭মার্চ ১৯৯৬ সালে পাস হয় এবং ২৮ মার্চ ১৯৯৬ সালে রাষ্ট্রপতি এতে অনুমোদন দেয়।
=> চতুর্দশ সংশোধনীঃ নারীদের জন্য ৪৫ আসন সংরক্ষন, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি সংরক্ষন, অর্থ বিল,সংসদ সদস্যের শপথ,সাংবিধানিক বিভিন্ন পদের বয়স বৃদ্ধি এসব নিয়ে এ বিলটি ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ বিলটি উত্থাপন করেন। বিলটি ১৬মে ২০০৪ সালে পাস হয় এবং ১৭মে ২০০৪ সালে রাষ্ট্রপতি এতে অনুমোদন দেয়।
=> পঞ্চদশ সংশোধনীঃ প্রস্তাবনার সংশোধন,৭২ এর মূলনীতি পুনর্বহাল, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলুপ্ত,নারীদের জন্য ৫০ আসন সংরক্ষন, ইসির ক্ষমতা বৃদ্ধি এসব বিষয়ে এ সংশোধনী বিল উত্থাপন করেন ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ। বিলটি ৩০জুন ২০১১ সালে পাস হয় এবং ৩জুলাই ২০১১ সালে রাষ্ট্রপতি এতে অনুমোদন দেয়।
=>ষোড়শ সংশোধনীঃ ১৯৭২ সালের মূল সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদের পুনঃস্থাপনের মাধ্যমে বিচারপতিদের অভিসংশনের ক্ষমতা সংসদকে ফিরিয়ে দিতে এ বিলটি আনিসুল হক উত্থাপন করেন। বিলটি ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৪ সালে পাস হয় এবং ২২সেপ্টেম্বর ২০১৪ সালে রাষ্ট্রপতি এতে অনুমোদন দেয়।

 

Leave a Reply

স্যার, কিভাবে আপনাকে সাহায্য করতে পারি?

Click one of our representatives below

Customer Support
Customer Support

Syeda Nusrat

I am online

I am offline

Technical Support
Technical Support

Ariful Islam Aquib

I am online

I am offline