NTRCA শিক্ষক নিবন্ধন বাংলা ভুল সংশোধন বা শুদ্ধকরণ
বাংলা বানান,প্রয়োগ-অপপ্রয়োগ ও বাক্যশুদ্ধি – বিসিএস বাংলা বিষয়ের গুরুত্বপূর্ণ অংশ।প্রতিবছরই এ অংশ থেকে ২-৪ টি প্রশ্ন এসে থাকে। এ অংশটি শুধু প্রিলিমিনারি পরীক্ষা নয়; লিখিত পরীক্ষা, ভাইভাসহ বাস্তব জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে অতীব প্রয়োজনীয় বিষয়।
লিখিত পরীক্ষার সিলেবাসেতো এ বিষয়ে আলাদাভাবে ৬ নম্বর থাকছেই।
যেমন – অশুদ্ধ:আমার আকাঙ্খা পূর্ণ হলো না।
শুদ্ধ: আমার আকাঙ্ক্ষা পূর্ণ হলো না।
সাধু ও চলিত ভাষার মিশ্রণজনিত ত্রুটি: একই বাক্যে সাধু ও চলিত ভাষার মিশ্রণ দূষণীয়।পরীক্ষার প্রশ্নে সাধু রীতির বাক্য বললে সে বাক্যে কোন চলিত রীতির শব্দ থাকতে পারবে না।আবার চলিত রীতির বাক্য বললে সে বাক্যে কোন সাধু রীতির শব্দ থাকতে পারবে না।
যেমন- অশুদ্ধ: কল্পনার চিঠি দেখে তিনি অবাক হইলেন।
শুদ্ধ: কল্পনার চিঠি দেখিয়া তিনি অবাক হইলেন(সাধু)।
অথবা,কল্পনার চিঠি দেখে তিনি অবাক হলেন(চলিত)।
বাচ্যজনিত ভুল:
অশুদ্ধ: আমি অপমান হয়েছি।
শুদ্ধ: আমি অপমানিত হয়েছি।
পুনরুক্তি বা বাহুল্যজনিত ভুল:যেমন –
অশুদ্ধ:তিনি অযথা অশ্রুজল বিসর্জন করিয়া সময় নষ্ট করেছেন।
শুদ্ধ: তিনি অযথা অশ্রু বিসর্জন করে সময় নষ্ট করেছেন।
লিঙ্গজনিত ভুল:
অশুদ্ধ: অনাথিনী মেয়েটি বড়ই অসহায়।
শুদ্ধ: অনাথা মেয়েটি বড়ই অসহায়।
বিভক্তিজনিত ভুল:যেমন-
অশুদ্ধ:বালকরা খেলাধুলায় পটু।
শুদ্ধ: বালকেরা খেলাধুলায় পটু।
প্রবাদ-প্রবচনজনিত ভুল:
অশুদ্ধ: দশ্চক্রে ঈশ্বর ভূত।
শুদ্ধ: দশচক্রে ভগবান ভূত।
বচনঘটিত অশুদ্ধি:
অশুদ্ধ: সকল শিক্ষকগণ এখানে উপস্থিত ছিল।
শুদ্ধ: সকল শিক্ষক /শিক্ষকগণ এখানে উপস্থিত ছিল।
সমাসঘটিত অশুদ্ধি:
অশুদ্ধ:তিনি আকণ্ঠ পর্যন্ত ভোজন করলেন।
শুদ্ধ: তিনি আকণ্ঠ/কণ্ঠ পর্যন্ত ভোজন করলেন।
প্রত্যয়জনিত ভুল:
অশুদ্ধ: জমির উৎকর্ষতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।
শুদ্ধ: জমির উৎকর্ষ বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।
সন্ধিঘটিত অশুদ্ধি:
অশুদ্ধ : ইতিমধ্যে যেটি ঘটেছে তাতেই তার মনবিকার দেখা দিয়েছে।
শুদ্ধ: ইতোমধ্যে যেটি ঘটেছে তাতেই তার মনোবিকার দেখা দিয়েছে।
রচনাপদ্ধতির অশুদ্ধি:
অশুদ্ধি:তিনি আরোগ্য হয়েছেন।
শুদ্ধ: তিনি আরোগ্য লাভ করেছেন।
বাক্যের পদক্রমজনিত অশুদ্ধি:
অশুদ্ধ : এখানে খাঁটি গরুর দুধ পাওয়া যায়।
শুদ্ধ: এখানে গরুর খাঁটি দুধ পাওয়া যায়।
বিরাম চিহ্নজনিত অশুদ্ধি:
অশুদ্ধ: আবদুর রহমান মাথা নিচু করে বলল আমার রান্না হুজুরের পছন্দ হয় নি।
শুদ্ধ: আবদুর রহমান মাথা নিচু করে বলল,”আমার রান্না হুজুরের পছন্দ হয় নি।”
বাক্যের অশুদ্ধ প্রয়োগ :
অশুদ্ধ: অন্যায়ের প্রতিফল দুর্নিবার্য।
শুদ্ধ: অন্যায়ের প্রতিফল দুর্নিবার /অনিবার্য।
বাক্যে সর্বনাম প্রয়োগে অসংগতি:
অশুদ্ধ: ক্লাসের সকল ছাত্রছাত্রী তার বাড়ি থেকে খাবার নিয়ে আসে।
শুদ্ধ: ক্লাসের সকল ছাত্রছাত্রী তাদের বাড়ি থেকে খাবার নিয়ে আসে।
বিশেষ্যের জায়গায় বিশেষণের কিংবা বিশেষণের বাহুল্যজনিত ভুল
অশুদ্ধ: অনাবশ্যকীয় ব্যাপারে কৌতূহল ভালো নয়।
শুদ্ধ: অনাবশ্যক ব্যাপারে কৌতূহল ভালো নয়।
যথার্থ শব্দ প্রয়োগ না করায় ভুল:
অশুদ্ধ: তিনি স্বস্ত্রীক ঢাকায় থাকেন।
শুদ্ধ:তিনি সস্ত্রীক ঢাকায় থাকেন।
নয় তো/নয়তো এর ব্যবহার:
(ক)আজ নয়, তো কাল যাব?
(খ)তুমি যেও, নয়তো মা খুব ভাববে।
পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে,উল্লিখিত উদাহরণসমূহে ‘নয় তো’ এবং ‘নয়তো’ শব্দের মধ্যে অর্থের পার্থক্য রয়েছে।’নয় তো’ মানে ‘নয়’ আর নয়তো মানে ‘বিকল্পপথ’।একইভাবে ‘হয় তো’ হচ্ছে হ্যাঁ-সূচক আর ‘হয়তো’ হচ্ছে সম্ভাব্যতা, অনিশ্চয়তা।
না এর ব্যবহার:
না সমাপিকা ক্রিয়ার পরে বসে ও অসমাপিকা ক্রিয়ার আগে বসে।যেমন- তুমি গান না গাইলে আমি গাইব না।
না- বোধক ছাড়াও অনুরোধ অর্থে ‘না’ এর ব্যবহার:যেমন-একটি গান গাও না ভাই।
কিছু উদাহরণ
অশুদ্ধ:এসব লোকগুলোকে আমি চিনি।
শুদ্ধ: এসব লোককে/লোকগুলোকে আমি চিনি।
ব্যাখ্যা: বাহুল্য দোষ। সব এবং গুলো – দুটোই বহুবচনাত্মক শব্দ। তাই দুটো একসঙ্গে বসতে পারেনা
এরূপে-
*অশুদ্ধ: সমুদয় সভ্যগণ আসিয়াছেন।
শুদ্ধু: সমুদয় সভ্য আসিয়াছেন।
*অশুদ্ধ: আমি এ ঘটনা চাক্ষুষ প্রত্যক্ষ করেছি।
শুদ্ধ: আমি এ ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছি।
*অশুদ্ধ: ঝুড়িতে রাখা সমস্ত মাছগুলোর আকার একই রকমের।
শুদ্ধ: ঝুড়িতে রাখা সমস্ত মাছের আকার একই রকমের।
*অশুদ্ধ: বিবিধ প্রকার দ্রব্য কিনলাম।
শুদ্ধ: বিবিধ দ্রব্য কিনলাম।
*অশুদ্ধ : সকল সদস্যবৃন্দ সভায় উপস্থিত ছিলেন।
শুদ্ধ : সকল সদস্য/সদস্যবৃন্দ সভায় উপস্থিত ছিলেন।
*অশুদ্ধ : বমালশুদ্ধ চোর গ্রেপ্তার হয়েছে।
শুদ্ধ: বমাল/মালশুদ্ধ চোর গ্রেপ্তার হয়েছ।
*অশুদ্ধ: সর্ব বিষয়সমূহে বাহুল্যতা বর্জন করবে।
শুদ্ধ: সব বিষয়ে বাহুল্য/বহুলতা বর্জন করবে।
*অশুদ্ধ: সব ধনাঢ্য ব্যক্তিবর্গের আতিথ্য সৎকার করা উচিত।
শুদ্ধ: সব ধনাঢ্য ব্যক্তির অতিথি সৎকার করা উচিত।
ব্যাখ্যা: মনে রাখবেন,অতীতবাচক শব্দের শেষে ‘ত’ হয়।যেমন- অতীত, উচিত(‘উচিত’- অতীতবাচক শব্দ)।অন্যদিকে যেটি আছে,চলছে,চলবে অর্থাৎ বর্তমান ও ভবিষ্যৎ বুঝালে ‘ৎ’ হয়।যেমন-জগৎ,বিদ্যুৎ, ভবিষ্যৎ ইত্যাদি।কিন্তু এসব শব্দের সঙ্গে বিভক্তি যুক্ত হলে ‘ৎ’ রূপান্তরিত হয়ে ‘ত’ হয়ে যায়।যেমন- জগৎ+এ=জগতে,ভবিষ্যৎ +এর =ভবিষ্যতের।
*অশুদ্ধ: সে ভিড়ে অন্যান্যদের মধ্যে হারিয়ে গেল।
শুদ্ধ: সে ভিড়ের মধ্যে হারিয়ে গেল।
অথবা,সে ভিড়ে অন্যদের মধ্যে হারিয়ে গেল।
অশুদ্ধ: তিনি সানন্দিত চিত্তে সম্মতি দিলেন।
শুদ্ধ: তিনি সানন্দ/আনন্দিত চিত্তে সম্মতি দিলেন।
ব্যাখ্যা: স+আনন্দ+ইত=সানন্দিত। ‘সানন্দিত’ একটি ভুল শব্দ। মূল শব্দ ‘আনন্দ’।এর পূর্বে ‘স’ আবার পরে ‘ইত’ হয় না।হয়ত বলতে হবে ‘সানন্দ’ নয়ত বলতে হবে ‘আনন্দিত ‘।এরূপ আরো কয়েকটি ভুল শব্দ -সলজ্জিত(স+লজ্জা+ইত), সশঙ্কিত(স+শঙ্কা+ইত)।
*অশুদ্ধ: সশঙ্কিত মানুষটি বুদ্ধিহীনতায় ভুগিবে এমন ভাবছ কেমন কারণেই?
শুদ্ধ: শঙ্কিত/সশঙ্ক মানুষটি বুদ্ধিহীনতায় ভুগবে, ভাবছ কোন কারণে?
*অশুদ্ধ:সলজ্জিত হাসি হেসে মেয়েটি উত্তর দিল।
শুদ্ধ: সলজ্জ/লজ্জিত হাসি হেসে মেয়েটি উত্তর দিল।
১।অশুদ্ধ: তোমার কটুক্তি শুনিয়া তিনি মর্মাহত হয়েছেন।
শুদ্ধ: তোমার কটূক্তি শুনে তিনি মর্মাহত হয়েছেন।
ব্যাখ্যা: কটু+উক্তি=কটূক্তি। ‘কটু’ ও ‘উক্তি’ দুটো শব্দেই ‘উ’কার থাকলেও সন্ধির ফলে ‘কটূক্তি’ শব্দে ‘ঊ’কার হয়।এমন আরো কয়েকটি শব্দ হল-
সু+উক্তি=সূক্তি, মরু+উদ্যান=মরূদ্যান,বিধু+উদয়=বিধূদয়, গুরু+উপদেশ=গুরূপদেশ,মধু+উৎসব= মধূৎসব।
বাক্যটির আরেকটি ভুল হল – সাধুরীতির শব্দ ‘শুনিয়া’ শব্দের ব্যবহার।
২। অশুদ্ধ : নিরপরাধী ব্যক্তিকে ক্ষমা কর।
শুদ্ধ: নিরপরাধ ব্যক্তিকে ক্ষমা কর।
ব্যাখ্যা: অপরাধী কিন্তু নিরপরাধ(নিরপরাধী নয়)।
নিরপরাধী নামে কোন শব্দ বাংলায় নেই। এরূপে-
দোষী কিন্তু নির্দোষ (নির্দোষী নয়),
অহংকারী কিন্তু নিরহংকার (নিরহংকারী নয়)।
৩।অশুদ্ধ: অন্যায়ের প্রতিফল দুর্নিবার্য।
শুদ্ধ: অন্যায়ের প্রতিফল অনিবার্য /দুর্নিবার।
ব্যাখ্যা: যেটি কোনভাবেই নিবারণ করা যায় না=অনিবার্য। আবার,যা বহু কষ্টে নিবারণ করা যায়=দুর্নিবার।
প্রশ্নোক্ত বাক্যটি অশুদ্ধের কারণ বাক্যটিতে ‘দুর্নিবার’ শব্দের ‘দুর্নি’ আর ‘অনিবার্য’ শব্দের ‘বার্য’ মিলিয়ে খিচুড়ি শব্দ ‘দুর্নিবার্য’ বানানো হয়েছে।
৪।অশুদ্ধ:ইদানীং কালে অনেক মহিলাই ববকাট করেন।
শুদ্ধ : ইদানীং অনেক মহিলাই ববকাট করেন।
ব্যাখ্যা: ‘ইদানীং’ শব্দের মধ্যেই কাল বা সময় লুকিয়ে আছে।তাই ‘ইদানীং’ শব্দের সঙ্গে ‘কাল’ শব্দের ব্যবহার শব্দের অপপ্রয়োগ। এরূপে-
* অশুদ্ধ: পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে কথা বলা অনুচিত।
শুদ্ধ: পরীক্ষা চলাকালে/চলার সময়ে কথা বলা অনুচিত।
ব্যাখ্যা: চলা +কালীন +সময়।কাল ও সময় এক সঙ্গে হতে পারে না।
৫।অশুদ্ধ:মনের কালি দূর করতে কালিমন্দিরে যাওয়া দরকার।
শুদ্ধ: মনের কালি দূর করতে কালীমন্দিরে যাওয়া দরকার।
ব্যাখ্যা: ‘কালী’ শব্দের সঙ্গে মন্দির,পূজা,বাড়ি,ঘাট,চরণ, পদ ও প্রসন্ন যুক্ত হলে ‘ঈ’কার হয়।অর্থাৎ কালীমন্দির, কালীপূজা,কালীবাড়ি,কালীঘাট,কালীচরণ,কালীপদ,কালীপ্রসন্ন। কিন্তু রং অর্থ প্রকাশে ‘কালি’ বানান ‘ই’কার হয়।যেমন- মনের কালি,পাতিলের কালি,কলমের কালি।
মহাকবি কালিদাসের বানানেও ‘ই’কার হয়।
৬।অশুদ্ধ: তিনি স্বস্ত্রীক স্টেশনে গিয়েছেন।
শুদ্ধ: তিনি সস্ত্রীক স্টেশনে গিয়েছেন।
ব্যাখ্যা: স =সহ,স্ব=নিজ।তিনি সস্ত্রীক(স্ত্রীসহ) গিয়েছেন, এর মানেই হল তিনি নিজের স্ত্রী নিয়েই গিয়েছেন(অন্যের স্ত্রী নিয়ে যাওয়ার প্রশ্নই আসে না)।
এরূপে-*অশুদ্ধ: আপনি স্বপরিবারে আমন্ত্রিত।
শুদ্ধ: আপনি সপরিবারে আমন্ত্রিত।
১।অশুদ্ধ: লেখাপড়ায় তার মনযোগ নেই।
শুদ্ধ: লেখাপড়ায় তার মনোযোগ নেই।
ব্যাখ্যা: ‘মনোযোগ’ (মনঃ+যোগ)শব্দটি সন্ধিসাধিত শব্দ।মনে রাখবেন,ঃ(বিসর্গ) সন্ধির ক্ষেত্রে বিসর্গের পরে যদি অঘোষ ধ্বনি (বর্গের ৩য়য়,৪র্থ ও ৫ম), হ,য,ব,র ও ল থাকে সেক্ষেত্রে বিসর্গের পূর্ববর্তী ব্যঞ্জনের সঙ্গে ‘ও’কার যুক্ত হয়। এরূপে-
যশঃ+লাভ=যশোলাভ,ইতিঃ+মধ্যে=ইতোমধ্যে,মনঃ+রম=মনোরম,মনঃ+হর=মনোহর,অধঃ+গতি=অধোগতি,মনঃ+নয়ন=মনোনয়ন।
২।অশুদ্ধ: সে দলের মধ্যে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠতম খেলোয়াড়।
শুদ্ধ: সে দলের মধ্যে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ/শ্রেষ্ঠতম খেলোয়াড়।
ব্যাখ্যা: শব্দের শেষে ‘তম’ প্রত্যয় সবচেয়ে অর্থেই(ইংরেজী superlative) ব্যবহৃত হয়। দুয়ের মধ্যে পার্থক্য বুঝাতে ‘তর’ প্রত্যয় ব্যবহৃত হয়।যেমন-
*পদ্মা বাংলাদেশের দীর্ঘ নদী।
*পদ্মা যমুনা অপেক্ষা দীর্ঘতর (পদ্মা আর যমুনা – এ দুয়ের পার্থক্য বুঝানো হয়েছে।
*পদ্মা বাংলাদেশের দীর্ঘতম নদী বা পদ্মা বাংলাদেশের সবচেয়ে দীর্ঘ নদী(বাংলাদেশের সব নদীর মধ্যে বুঝাতে)।
৩।অশুদ্ধ: তুমি সেখানে গেলে অপমান হবে।
শুদ্ধ: তুমি সেখানে গেলে অপমানিত হবে।
ব্যাখ্যা: ‘অপমান’ বিশেষ্য পদ যার অর্থ অসম্মান কিন্তু ‘অপমানিত’ বিশেষণ পদ যার অর্থ অসম্মানিত ।তাহলে চিন্তা কর তো আপনি কি এভাবে কখনো বলবেন?
*আপনি অসম্মান হবেন। নাকি বলবেন-
*আপনি অসম্মানিত হবেন।
এ ধরনের ভুলকে রচনারীতির অশুদ্ধি বলে। এরূপে-
*অশুদ্ধ: ইচ্ছা প্রমাণ হয়েছে।
শুদ্ধ: ইচ্ছা প্রমাণিত হয়েছে।
*অশুদ্ধ: অনাবশ্যকীয় ব্যাপারে কৌতুহল ভাল নয়।
শুদ্ধ: অনাবশ্যক ব্যাপারে কৌতূহল ভালো নয়।
ব্যাখ্যা: কৌতুক কিন্তু কৌতূহল, অনুবাদ কিন্তু অনূদিত।
৪।অশুদ্ধ:ছেলেটি ভয়ানক মেধাবী।
শুদ্ধ: ছেলেটি অত্যন্ত মেধাবী।
৫।অশুদ্ধ: উপরোক্ত।
শুদ্ধ: উপর্যুক্ত।
৬।অশুদ্ধ : মাতৃবিয়োগে তিনি শোকানলে মগ্ন।
শুদ্ধ: মাতৃবিয়োগে তিনি শোকানলে দগ্ধ।
ব্যাখ্যা: অনলে কেউ মগ্ন হয় না, দগ্ধ হয়।
৭।অশুদ্ধ:আজকাল অনেকেই ফুল বানান ভূল করে।
শুদ্ধ: আজকাল অনেকেই ফুল বানান ভুল করে।
আরো কিছু উদাহরণ
১। অশুদ্ধ: বিবাদমান দুটি দলে সংঘর্ষ হয়।
শুদ্ধ: বিবদমান দুটি দলে সংঘর্ষ হয়।
ব্যাখ্যা: বিবাদ কিন্তু বিবদমান।
২। অশুদ্ধ: অসহ্যনীয় ব্যথা।
শুদ্ধ: অসহনীয় ব্যথা /অসহ্য ব্যথা।
৩। অশুদ্ধ: মহারাজ সভাগৃহে প্রবেশ করলেন।
শুদ্ধ: মহারাজ সভাকক্ষে প্রবেশ করলেন।
ব্যাখ্যা: কোন গৃহে সভা হয় না,কক্ষে সভা হয়।
৪। অশুদ্ধ: তিনিও আদালতে তোমার বিরুদ্ধে সাক্ষী দিলেন।
শুদ্ধ: তিনিও আদালতে তোমার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিলেন।
ব্যাখ্যা: সাক্ষী হলেন ব্যক্তিবাচক শব্দ।সাক্ষ্য হল জবানবন্দি। আদালতে কেউ সাক্ষী দেয় না,জবানবন্দি(সাক্ষ্য) দেয়।
৫। অশুদ্ধ:বিস্ময়াভিভূত হতবাক চিত্ত।
শুদ্ধ: বিস্ময়াভিভূত চিত্ত/হতবাক চিত্ত।
৬। অশুদ্ধ: সংবাদ সম্মেলন।
শুদ্ধ: সাংবাদিক সম্মেলন।
৭। অশুদ্ধ: স্বাক্ষরতা কর্মসূচী।
শুদ্ধ: সাক্ষরতা কর্মসূচি।
৮। অশুদ্ধ: গড্ডালিকাপ্রবাহ।
শুদ্ধ: গড্ডলিকাপ্রবাহ।
৯। অশুদ্ধ: স্বশরীর।
শুদ্ধ: সশরীর।
১০। অশুদ্ধ: শশীভূষণ।
শুদ্ধ: শশী কিন্তু ‘শশী’শব্দের সাথে ‘ভূষণ’ যুক্ত হলে শশিভূষণ(‘ই’কার হয়ে যায়)।
১১। অশুদ্ধ: দোষনীয়।
শুদ্ধ: দূষণীয়।
১২। অশুদ্ধ: হৃদকম্প।
শুদ্ধ: হৃৎকম্প।
১৩। অশুদ্ধ: ঐক্যতান।
শুদ্ধ: ঐকতান।
১৪। অশুদ্ধ: সশিক্ষিত।
শুদ্ধ: স্বশিক্ষিত।
১৫। অশুদ্ধ: ভ্রান্তি কিছুতেই ঘুচে না।
শুদ্ধ: ভ্রান্তি কিছুতেই ঘোচে না।
১৬। অশুদ্ধ: স্বার্থকতা।
শুদ্ধ: সার্থকতা। কিন্তু স্বার্থপরতা বানানে ‘ব’ফলা হবে।
১৭। অশুদ্ধ :অনাথিনী।
শুদ্ধ: অনাথা।
১৮। অশুদ্ধ:এটা হচ্ছে ষষ্ঠদশ বার্ষিক সাধারণ সভা।
শুদ্ধ: এটা হচ্ছে ষোড়শ বার্ষিক সাধারণ সভা। ক্রমবাচক সংখ্যা হিসেবে ‘ষষ্ঠদশ’ ভুল শব্দ।যেমন- একাদশ,দ্বাদশ,ত্রয়োদশ, চতুর্দশ, পঞ্চদশ,ষোড়শ… ……
১৯। অশুদ্ধ: অন্তরের অন্তস্তল।
শুদ্ধ: অন্তরের অন্তঃস্থল।
২০। অশুদ্ধ:অনুষ্ঠানে আপনি স্ববান্দবে আমন্ত্রিত।
শুদ্ধ: অনুষ্ঠানে আপনি সবান্ধব আমন্ত্রিত।
২১। অশুদ্ধ: ভূমিকম্পে উর্ধ্বমুখী দালানটি ধ্বসে পড়ল।
শুদ্ধ: ভূমিকম্পে ঊর্ধ্বমুখী দালানটি ধসে পড়ল।
২২। অশুদ্ধ: স্তূপিকৃত।
শুদ্ধ: স্তূপীকৃত।
ব্যাখ্যা: শব্দের শেষে -করণ,কৃত,ভবন,ভূত থাকলে মূল শব্দের শেষে ‘ঈ’কার হয়।এরূপে –দূর+করণ=দূরীকরণ, সম+করণ=সমীকরণ,স্তূপ+কৃত=স্তূপীকৃত,সম+ভবন=সমীভবন,বাষ্প+ভবন=বাষ্পীভবন, পুঞ্জ+ভূত=পুঞ্জীভূত।
২৩। অশুদ্ধ: সমৃদ্ধশালী।
শুদ্ধ: সমৃদ্ধ বা সমৃদ্ধিশালী।
২৪। অশুদ্ধ: সমূলসহ।
শুদ্ধ: সমূল/মূলসহ।
২৫।অশুদ্ধ : আমি সন্তোষ হলাম।
শুদ্ধ: আমি সন্তুষ্ট হলাম।
২৬।অশুদ্ধ : বিদ্বান নারী।
শুদ্ধ: বিদূষী নারী।
২৭। অশুদ্ধ :জ্ঞানি মুর্খ অপেক্ষা শ্রেষ্টতর।
শুদ্ধ: জ্ঞানী মূর্খ অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ
২৮।অশুদ্ধ :শিক্ষার্থীগণের মধ্যে অনুপস্থিতের সংখ্যা কম।
শুদ্ধ:শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনুপস্থিতির সংখ্যা কম
২৯।অশুদ্ধ : ধৈর্যতা, সহিষ্ণুতা মহত্বের লক্ষণ।
শুদ্ধ :ধীরতা/ধৈর্য,সহিষ্ণুতা মহত্ত্বের লক্ষণ
৩০।অশুদ্ধ :অঙ্ক কষিতে ভূল করা উচিত নয়।
শুদ্ধ :অঙ্ক কষিতে ভুল করা উচিৎ নয়.
৩১।অশুদ্ধ : তিনি স্বস্ত্রীক স্টেসনে গিয়েচেন।
শুদ্ধ :তিনি সস্ত্রীক স্টেশনে গিয়েছেন।
৩২। অশুদ্ধ : তাদের মধ্যে বেশ সখ্যতা দেখতে পাই।।
শুদ্ধ :তাদের মধ্যে বেশ সখ্য/সখিত্ব দেখতে পাই
৩৩।অশুদ্ধ : যেমন বুনো কচু, তেমনি বাঘা বরই।
শুদ্ধ :যেমন বুনো ওল, তেমনি বাঘা তেতুল
৩৪। অশুদ্ধ : ঘর পোড়া গরু সিঁদূরে আম দেখলে ভয় পায়।
শুদ্ধ : ঘর পোড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখলে ভয় পায়
৩৫। অশুদ্ধ : সে আমার কাটা ঘায়ে চিনির ছিটা দিয়েছে।
শুদ্ধ :সে আমার কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা দিয়েছে
৩৬। অশুদ্ধ : কথাই বলে মোটা বাঁশে ঘুন ধরে।
শুদ্ধ :কথায় বলে কাচা বাঁশে ঘুণ ধরে
৩৭। অশুদ্ধ : মুমুষর্ লোকটির সাহায্য করা উচিৎ।
শুদ্ধ :মুমূর্ষ লোকটিকে সাহায্য করা উচিৎ।
৩৮। অশুদ্ধ : সেই বিভৎসো ঘটনা এখনও বিস্মিত হতে পারি নি।
শুদ্ধ :সেই বীভৎস ঘটনা এখনও ভুলতে পারি নি।
৩৯। অশুদ্ধ : বিমানের সিলেটগামী আভ্যন্তরীন ফ্লাইটটি দেরীতে ছাড়বে।
শুদ্ধ :বিমানের সিলেটগামী অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটটি বিলম্বে ছাড়বে।
৪০।অশুদ্ধ : কবির শোকসভায় বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবীরা শ্রদ্ধাজ্ঞলী জ্ঞাপন করেছে।
শুদ্ধ :কবির শোকসভায় বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবীগণ শ্রদ্ধাজ্ঞলি অপর্ণ করেছেন।
৪১।অশুদ্ধ : তার ঔদ্ধতপূণর্ আচরনে ব্যথিত হয়েছি।
শুদ্ধ :তার ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণে ব্যথিত হয়েছি।
৪২।অশুদ্ধ :তুমি আসিয়াছিলে, আমি লক্ষ্য করি নাই।
শুদ্ধ :তুমি এসেছিলে আমি লক্ষ্য করি নাই
৪৩।অশুদ্ধ :তিনি পূর্বাহ্ণে রওনা দিয়ে মধ্যাহ্নে পৌছান, অপরাহ্ন থেকে সায়াহ্নে ফিরে যান।
শুদ্ধ :তিনি পূর্বাহ্ণে রওনা দিয়ে মধ্যাহ্নে পৌছান, অপরাহ্ণে থেকে সায়াহ্নে চলে যান
৪৪।অশুদ্ধ :বাঁশ ঝাড়ে রাতে জোনাকি জ্বলে।
শুদ্ধ :রাতে বাশ ঝাড়ে জোনাক জ্বলে
৪৫।অশুদ্ধ :এত যে শঠতা এত যে ব্যাথা তবু যেন তা মধু মাখা।
শুদ্ধ : এত যে শঠতা এত যে ব্যথা তবু যেন তা মধুমাখা
৪৬।অশুদ্ধ : সমগ্র জেলার মধ্যে বগুড়ার চাউল ভাল।
শুদ্ধ :সব জেলার মধ্যে বগুড়ার চাউল ভালো
প্রতিটি লেকচারে নতুন নতুন লিখা যুক্ত হচ্ছে, তাই কাঙ্খিত কোন লিখা না পেলে দয়া করে কিছুদিন পর আবার ভিজিট করে দেখবেন।
লিখাতে কিংবা লেকচারে কোন ভুলত্রুটি থাকলে অথবা আপনার কাঙ্খিত লিখা খুঁজে না পেলেইশিখন.কম এর ফ্যানপেইজ অথবা নিচে কমেন্ট কর