৭২ শতাংশই মেধা তালিকায় নিয়োগ হচ্ছে বিসিএস পরীক্ষায়।
কোটা প্রথা বহাল থাকার পরও বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের (বিসিএস) পরীক্ষায় প্রায় ৭২ শতাংশই মেধা তালিকা থেকে নিয়োগ পাচ্ছেন। বিদ্যমান ৫৫ শতাংশ কোটা পূরণ না হওয়ায় বিগত তিনটি বিসিএস পরীক্ষায় উল্লেখযোগ্য পরীক্ষার্থী মেধা তালিকা থেকে নিয়োগ পেয়েছেন।
সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) তথ্যানুযায়ী, ৩৩তম বিসিএসে ৭৭ দশমিক ৪০ শতাংশ, ৩৫তম বিসিএসে ৬৭ দশমিক ৪৯ শতাংশ এবং সর্বশেষ ৩৬তম বিসিএসে ৭০ দশমিক ৩৮ শতাংশ মেধাবী নিয়োগ পেয়েছেন। এই তিন বিসিএস থেকে ৭১ দশমিক ৭৫ শতাংশ মেধাবী নিয়োগের জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। ৩৪তম বিসিএসে কোটার পদ সংরক্ষণে থাকার কারণে মেধা থেকে নিয়োগ দেয়া সম্ভব হয়নি। শুধু বিসিএস প্রথম শ্রেণিতেই নয়, দ্বিতীয় শ্রেণির নন-ক্যাডার পদেও প্রায় সমানসংখ্যক মেধাবী নিয়োগ পাচ্ছেন।
তবে কোটা প্রথা শিথিল করে মেধাবীরা নিয়োগ পেলেও শিক্ষাবিদসহ সাধারণ শিক্ষার্থীরা কোটা প্রথা সংস্কারের পক্ষে। পিএসসির সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে, শুধু গত তিনটি বিসিএস নয়, সামনে চূড়ান্ত ফলাফলের জন্য অপেক্ষমাণ ৩৭তম বিসিএসেও উল্লেখযোগ্য মেধাবী পরীক্ষার্থী নিয়োগ পাবেন। পিএসসি ৩৬তম বিসিএসের ৩৬৬টি ক্যাডার পদ ৩৭তম বিসিএসের মেধাতালিকা থেকে এবং ৩৭তম বিসিএসের বিভিন্ন কোটার পদ খালি থাকলে তা মেধাতালিকা থেকে পূরণ করবে।
কোটা সংক্রান্ত এক ব্যাখ্যায় মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, বিগত তিনটি বিসিএসে মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত ছিল, মুক্তিযোদ্ধা বা অন্যান্য কোটা যদি কোটা সংশ্লিষ্টদের দিয়ে পূরণ না হয়, তাহলে সেটা মেধা তালিকায় যারা শীর্ষে অবস্থান করবে তাদের দিয়ে পূরণ করা হবে, এবং সেটিই করা হয়েছে। মেধাবীরা অবহেলিত হচ্ছে না। প্রতিটি সেক্টরেই মেধায় যারা অগ্রসর তারাই আসবে। কোটার দ্বারা কারও কোনো মেধা ক্ষতিগ্রস্ত হবে না।
এতদিন যাবত্ প্রতিটি বিসিএসে আলাদাভাবে কোটার যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলেও সরকারের অনুমতি সাপেক্ষে মেধা থেকে পূরণ করা হতো। কিন্তু গত ৬ মার্চ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জারি করা নির্দেশনায় বলা হয়, কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে মেধাবীরা সরাসরি নিয়োগের জন্য বিবেচিত হবেন। এর ফলে স্থায়ীভাবে কোটা প্রথা শিথিল হলো।
১৯৮৫ সালে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির পদে মেধার ভিত্তিতে ৪৫ শতাংশ নিয়োগের বিধান প্রবর্তন করা হয়। অবশিষ্ট ৫৫ শতাংশের মধ্যে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, ১০ শতাংশ মহিলা, ১০ শতাংশ জেলা এবং ৫ শতাংশ ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মধ্যে বণ্টনের ব্যবস্থা করা হয়, যা চলমান রয়েছে। ২০১২ সাল থেকে বিদ্যমান কোটাসমূহের মধ্যে যে কোটায় পর্যাপ্তসংখ্যক যোগ্য প্রার্থী পাওয়া যাবে না সে কোটা থেকে ১ শতাংশ পদ প্রতিবন্ধী প্রার্থীদের দ্বারা পূরণের বিধান রাখা হয়েছে।
এদিকে, ২০১৬ সালের ৪ সেপ্টেম্বর স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন নন-ক্যাডার দ্বিতীয় শ্রেণির সাড়ে নয় হাজার সিনিয়র স্টাফ নার্স নিয়োগের সুপারিশ করেছিল পিএসসি। এই মধ্যে ৭৬ দশমিক ৮৩ শতাংশ মেধায় নিয়োগের সুপারিশ করা হয়। একইভাবে দ্বিতীয় শ্রেণির মিডওয়াইফ পদে যে ৬০০ জন নিয়োগের সুপারিশ করা হয়, তার মধ্যে ৭৩ দশমিক ৫০ শতাংশ মেধা তালিকা থেকে সুপারিশপ্রাপ্ত। এছাড়াও উপজেলা আনসার-ভিডিপি কর্মকর্তা পদে সুপারিশপ্রাপ্ত ৩০২ জনের মধ্যে মেধা তালিকা থেকে এসেছেন ৭২ দশমিক ৫২ শতাংশ পরীক্ষার্থী।
আরো পড়ুন:
0 responses on "৭২ শতাংশই মেধা তালিকায় নিয়োগ হচ্ছে বিসিএসে"