
ভর্তিচ্ছুদের দুর্দশা কমাতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করারও আহ্বান জানিয়েছেন আবদুল হামিদ। বৃহস্পতিবার দেশের ৪৫টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় বঙ্গভবনে এ ক আহ্বান জানান দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য আবদুল হামিদ।
অনুসন্ধানে জানা যায়, শুধু আর্থিক লাভের কথা বিবেচনা করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ভিন্ন ভিন্ন ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে আসছে। এতে ভর্তিচ্ছুক ও তাদের অভিভাবকদের আর্থিক, শারিরীক ও মানসিক কষ্ট হয়। এক যুগের বেশি সময় যাবত বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা চালুর পক্ষে শিক্ষাবিদরা। কিন্তু উপাচার্যদের অসহযোগিতার কারণে তা বাস্তবায়ন হচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে প্রথমবারের মতো কোনও রাষ্ট্রপতি সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের ডেকে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার আহ্বান জানালেন।
বৃহস্পতিবার উপাচার্যদের সঙ্গে বৈঠকের পর রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীন সাংবাদিকদের বলেন, ‘ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিচ্ছু ও তাদের অভিভাবকদের দুর্দশা কমাতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে গুচ্ছ ভিত্তিক ভর্তি পরীক্ষার ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি।’
তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতি তাঁর বক্তব্যে নারী শিক্ষার্থীদের দুর্দশা, ভর্তি পরীক্ষার সময় মসজিদে অবস্থান, আর্থিক সমস্যাসহ বিভিন্ন দুর্দশার কথা তুলে ধরেন। এ লক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি উপাচার্যদের ভর্তি পরীক্ষার সমন্বিত ব্যবস্থা নেয়ার ওপর জোরে দেন।
প্রেস সচিব বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে বিশ্বমানের শিক্ষা নিশ্চিতে সময় উপযোগী পাঠ্যক্রম বাস্তবায়ন করার আহ্বান জানান।’
শিক্ষকদের শিক্ষার্থীদের গড়ে তোলার মূল কারিগর উল্লেক করে রাষ্ট্রপতি শিক্ষকদের প্রচলিত শিক্ষার বাইরে গিয়ে গবেষণা কার্যক্রম বাড়ানোর ওপর দোর দেন। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করারও আহ্বান জানিয়েছেন আবদুল হামিদ। একই সঙ্গে নতুন বিভাগ খোলার বিষয়ে চাহিদার ওপর নজর রাখতে উপাচর্যাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি। এসময় ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্কে দুরত্ব কমিয় আনতে উপাচার্যাদের প্রতি আহ্বান জানান আবদুল হামিদ।
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান ও রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের সচিবরা উপস্থিত ছিলেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, বর্তমানে শিক্ষার্থীদের প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আলাদাভাবে ফরম কিনতে হয়। এতে বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বড় অঙ্কের আর্ন হয়। যদিও ইউজিসির নির্দেশনা অনুযায়ী, ভর্তি পরীক্ষার আয়ের ৪০ শতাংশ টাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিলে জমা রেখে তা উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে ব্যয় করার কথা। কিন্তু অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয় তা করে না। আবার সমন্বিত বা গুচ্ছ ভর্তিতে এই আর্ন কমে যায়। এ ছাড়া ভর্তি বাণিজ্য আর কোচিং-গাইড বাণিজ্যের জন্যই অনেকে এ পদ্ধতির বিরোধিতা করেন। এ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা হলে এ ধরনের ব্যবসায় বড় ধস নামবে। সমন্বিত বা গুচ্ছভিত্তিক ভর্তি পরীক্ষার বিষয়ে আলোচনা শুরু হয় ২০০৭ খ্রিস্টাব্দে। ২০১৩ খ্রিস্টাব্দের ৭ জুলাই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে উপাচার্যদের সভায় বেশির ভাগ উপাচার্য সমন্বিত বা গুচ্ছভিত্তিক ভর্তি পরীক্ষার বিষয়ে নীতিগতভাবে একমত পোষণ করেছিলেন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, গত কয়েক বছর ধরেই মেডিক্যালে ভর্তিতে সমন্বিত পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে। এতে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি লাঘব হয়েছে। সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এবং কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তিন ভাগে ভাগ হয়ে এই গুচ্ছ পদ্ধতি চালু করা যেতে পারে।
আরো পড়ুন: