
এসএসসি ও সমমানে প্রতিবছরই বাড়ছে ঝরে পড়া। ঝরে পড়া ঠেকাতে সরকারের নানা প্রচেষ্টা সত্ত্বেও পাঁচ বছরে ঝরে পড়ার হার দ্বিগুণের বেশি হয়েছে। নবম শ্রেণিতে নিবন্ধন করেছে কিন্তু এসএসসি পরীক্ষা দেয়নি এমন শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২০১৪ খ্রিস্টাব্দে ছিল প্রায় পৌণে দুই লাখ। চলতি ২০১৮ খ্রিস্টাব্দে এমন শিক্ষার্থীর সংখ্যা পৌণে চার লাখ। অনুসন্ধানে এমন চিত্র পাওয়া গেছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ঝরে পড়া ঠেকাতে মেধাবৃত্তি দেয়া হায় ৪০ শতাংশ শিক্ষার্থীকে উপবৃত্তি দেয়া হয়। এ ছাড়া অতিদরিদ্র, নদী ভাঙন, হাওর ও পাহাড়ি অঞ্চলের শিক্ষার্থীরা আরও বেশি উপবৃত্তি পায়। বিনামূল্যে টেক্সটবুক সবাই পায় কিন্তু ঝরে পড়া ঠেকানো যাচ্ছে না। তবে, ঝরে পড়ার হার ফি বছর কমে আসছে। আবার মন্ত্রণালয় ও শিক্ষাবোর্ডের কর্মকর্তাদের কেউ কেউ এদের সবাইকে ঝরে পড়া বলতে নারাজ। শিক্ষামন্ত্রী বুধবার সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ঝরে পড়ারোধে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। তিনি আশা করছেন ভবিষ্যতে এটা কমে আসবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দেয়া তথ্যানুযায়ী, আজ বৃহস্পতিবার সারা দেশে শুরু হচ্ছে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা ২০১৮। এতে অংশ নিতে ১৭ লাখ ৩৯ হাজার ৫৭৩ জন নিয়মিত শিক্ষার্থী ফরম পূরণ করেছে। ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষে নবম শ্রেণিতে ভর্তি হয়ে নিবন্ধন করেছিল ২১ লাখ ১৪ হাজার ২২২ জন। এ হিসাবে দুই বছরে ঝরে গেছে পৌণে চার লাখ বা তিন লাখ ৭৪ হাজার ৬৪৯ জন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ঝরে পড়া ঠেকানোর নাম করে গত ২৫/৩০ বছরে বিদেশ থেকে কয়েকহাজার কোটি টাকা এনে লুটপাট আর ওয়ার্কশপ ও টেলিভিশনে টকশো করেছে শিক্ষা বিষয়ক এনজিওর মোর্চা গণসাক্ষরতা অভিযান।
গণসাক্ষরতার প্রধান নির্বাহী রাশেদা কে চৌধুরীও ঝরে পড়া নিয়ে গণমাধ্যমে কথা বলেন। তিনি আজ একটি জাতীয় পত্রিকাকে দেয়া সাক্ষাতকারে বলেছেন, অতিরিক্ত পরীক্ষার চাপ, যত উপরে উঠছে তত পড়ালেখার ব্যয় বাড়ছে। আর তার মতে এগুলোই ঝরে পড়ার প্রধান কারণ। অথচ গণসাক্ষরতাই ঝরে পড়া রোধ করার জন্য বিদেশ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা এনেছেন গত কয়েক বছরে। প্রাথমিক ও অষ্টম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষা চালুর পক্ষে ২০০৯ ও ২০১০ খ্রিস্টাব্দে কথা বলেছেন। মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের ধন্যবাদ দিয়েছেন। অথচ এখন তিনি বেশি পরীক্ষার চাপের কথা বলছেন।
পরিসংখ্যানে দেখা যায় বোর্ডভিত্তিক ঝরে পড়ায় শীর্ষে কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ড। এ বোর্ডে নবম শ্রেণিতে দুই লাখ ১০ হাজার ৭৪৫ জন নিবন্ধন করে। এর মধ্যে এক লাখ ৩৬ হাজার ৭৭০ জন পরীক্ষায় অংশ নিতে ফরম পূরণ করেছে। অর্থাৎ ঝরে পড়েছে ৭৩ হাজার ৯৭৫ জন।
ঢাকা বোর্ডে পাঁচ লাখ ৩৩ হাজার ৮৫৭ জন নিবন্ধন করলেও পরীক্ষায় অংশ নিতে ফরম পূরণ করেছে চার লাখ ৭৩ হাজার ৪৪৪ জন। ঝরে পড়েছে ৬০ হাজার ৪১৩ জন। রাজশাহী বোর্ডে নিবন্ধিত দুই লাখ দুই হাজার ৪২৫ জনের মধ্যে ফরম পূরণ করেছে এক লাখ ৭৯ হাজার ৯৩৬ জন। এ বোর্ডে ঝরে পড়েছে ২২ হাজার ৪৮৯ জন। যশোর বোর্ডে এক লাখ ৮৭ হাজার ৩২০ জনের মধ্যে পরীক্ষায় অংশ নিতে আবেদন করেছে এক লাখ ৫৪ হাজার ৩৪৪ জন। এ বোর্ডে ঝরে গেছে ৩২ হাজার ৯৭৬ জন। চট্টগ্রাম বোর্ডে এক লাখ ৩৫ হাজার ২২১ জন নিবন্ধন করলেও পরীক্ষায় অংশ নিতে ফরম পূরণ করেছে এক লাখ ১৮ হাজার ৮৮ জন। এ বোর্ডে ঝরে গেছে ১৭ হাজার ১৩৩ জন। বরিশাল বোর্ডে ৯৭ হাজার ২৯১ জন নিবন্ধন করেছে। আর ফরম পূরণ করেছে ৮৪ হাজার ৮৩৩ জন। ঝরে গেছে ১২ হাজার ৪৫৮ জন। সিলেট বোর্ডে নিবন্ধিত এক লাখ ১১ হাজার ৮৯৯ জনের মধ্যে ফরম পূরণ করেছে ৯২ হাজার ৯৬৮ জন। ঝরে গেছে ১৮ হাজার ৯৩১ জন। দিনাজপুর বোর্ডে এক লাখ ৮১ হাজার ৩২৪ জন নবম শ্রেণিতে নিবন্ধন করেছে। আর এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিতে আবেদন করেছে এক লাখ ৬৪ হাজার ৬২ জন। ঝরে পড়েছে ১৭ হাজার ২৬২ জন। মাদ্রাসা বোর্ডে দুই লাখ ৯৫ হাজার ৪৯২ জন নিবন্ধন করলেও ফরম পূরণ করেছে দুই লাখ ৩৭ হাজার ২৯৪ জন। এ বোর্ডে ঝরে গেছে ৫৮ হাজার ১৯৮ জন। কারিগরি বোর্ডে এক লাখ ৫৮ হাজার ৬৪৮ জন নবম শ্রেণিতে নিবন্ধ করেছে। আর ফরম পূরণ করেছে ৯৭ হাজার ৮৩৪ জন। ঝরে গেছে ৬০ হাজার ৮১৪ জন।
জানতে চাইলে নেত্রকোণার পূর্বধলার জেএন পাইলট মডেল বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শুধাংশু শেখর তালুকদার বলেন, ‘গ্রামাঞ্চলে অনেক মেয়ের বিয়ে হয়ে যায়। দারিদ্রে কারণে অনেক ছেলেরা ছোট চাকরিতে ঢুকে যায়।’ তার মতে, শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা ছিল- টেস্ট পরীক্ষায় পাস না করলে ফরম পূরণের সুযোগ দেওয়া যাবে না। এ কারণেও পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কমেছে। যেটাকে ঝরে পড়া বলা ঠিক হবে না। তারা আবার পরীক্ষায় বসতে পারে।
আরো পড়ুন: