📣চলছে প্রো-অফার!!! ইশিখন.কম দিচ্ছে সকল অনলাইন-অফলাইন কোর্সে সর্বোচ্চ ৬০% পর্যন্ত ছাড়! বিস্তারিত

Pay with:

সৃজনশীলের পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার

শিক্ষার্থীদের মুখস্থ বিদ্যার পরিবর্তে চিন্তা এবং সৃষ্টিশীলতার ওপর গুরুত্ব দিতেই ২০১০ সালে সৃজনশীল পদ্ধতি চালু হয়। কিন্তু শুরু থেকেই এ পদ্ধতি নিয়ে নানা বিতর্ক দেখা দেয়।

শিক্ষার্থীদের মুখস্থ বিদ্যার পরিবর্তে চিন্তা এবং সৃষ্টিশীলতার ওপর গুরুত্ব দিতেই ২০১০ সালে সৃজনশীল পদ্ধতি চালু হয়। কিন্তু শুরু থেকেই এ পদ্ধতি নিয়ে নানা বিতর্ক দেখা দেয়। এরমধ্যে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন গবেষণায় এ পদ্ধতির নানা সমালোচনার ঝড় উঠেছে। এই অবস্থায় সৃজনশীলের পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সৃজনশীলের বর্তমান পদ্ধতি ‘ব্লুম টেক্সনমি’ থেকে ‘সলো’ নামে নতুন আরেকটি পদ্ধতিতে যাওয়ার চিন্তা করছে সরকার। ইতিমধ্যে বেশকিছু উদ্যোগ হাতে নিয়েছে।

এরমধ্যে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ ৩ দিনের পরিবর্তে ১৫ দিন করা, কেন্দ্রীয় প্রশ্নব্যাংকের মাধ্যমে সব পাবলিক পরীক্ষা নেয়া, গণহারে প্রশ্নকর্তাদের বাদ দেয়া এবং নির্ধারিত মাপকাঠিতে প্রশ্ন করা এবং খাতা মূল্যায়ন করা।

কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বর্তমান সৃজনশীল পদ্ধতি ব্লুম টেক্সনমি থেকে আসা। এই পদ্ধতি থেকে বের হয়ে ‘সলো’ নামে অন্য আরেকটি পদ্ধতিতে যাওয়ার কথাও ভাবা হচ্ছে। এই পদ্ধতি চালু হলে বর্তমানে সৃজনশীলের প্রচলিত সব পদ্ধতিতে বদল আসবে। বর্তমানে এশিয়াসহ পশ্চিমা অনেক দেশেই ‘সলো’ পদ্ধতিতে শিক্ষাদান করা হচ্ছে। তবে বাংলাদেশের বর্তমান বাস্তবতায় এটা কতটুকু সম্ভব তা আরো খতিয়ে দেখা হচ্ছে। একই সঙ্গে পাবলিক পরীক্ষার ফলাফলে কোনো প্রভাব পড়ে কি-না সেটা দেখা হচ্ছে।

গত ১১ই জানুয়ারি ঢাকা শিক্ষাবোর্ডে বাংলাদেশ পরীক্ষা উন্নয়ন ইউনিটের (বেডু) আয়োজনে এ সংক্রান্ত একটি আলোচনা করা হয়। সেখানে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব চৌধুরী মুফাদ আহমেদ সভাপতিত্ব করেন। এ সময় শিক্ষা মন্ত্রণালয়, এনসিটিবি, নায়েম, মাউশিসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সেখানে ‘সৃজনশীল প্রশ্ন: প্রয়োজনের চেয়ে কঠিন’ শীর্ষক একটি গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর চট্টগ্রামের আঞ্চলিক বিভাগের পরিচালক প্রফেসর ড. সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক। গবেষণাপত্রে প্রচলিত সৃজনশীল পদ্ধতির নানা ত্রুটি- বিচ্যুতির এটি তুলে ধরে তিনি জানান, এই পদ্ধতির জনক হিসেবে পরিচিত বেঞ্জামিন স্যামুয়েল ১৯৫৬ সালে প্রথম এর ধারণার জন্ম দেন। পরবর্তীকালে এর বিভিন্ন পরিবর্তন ও পরিবর্ধন ঘটেছে। বেঞ্জামিন স্যামুয়েল ব্লমের এ বিষয়ক তত্ত্বটি ‘ব্লুম টেক্সনমি’ হিসেবে পরিচিত। তবে এ পদ্ধতিতে গিয়েও অনেক দেশ সেখান থেকে বের হয়ে এসেছে।

তিনি তার উপস্থাপনায় দেখান, ব্লম টেক্সনোমিতে এখন যে ধারাই প্রশ্ন করা হয় অর্থাৎ উদ্ধৃতি দিয়ে প্রশ্ন করার প্রচলন মানতে হবে কোথায় তিনি বলেননি। অথচ আমাদের দেশে শিক্ষকরা এটা ফলো করছেন। এতে তারা সরাসরি গাইড বই থেকে প্রশ্ন করছেন। এমনকি পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্ন পর্যন্ত সরাসরি গাইড বই থেকে করা হচ্ছে। এতে শিক্ষার্থীরাও সরাসরি গাইড বইয়ের সহায়তা নিচ্ছে। এসব কারণে অনেক দেশ এই ব্লুম পদ্ধতি থেকে বের হয়ে এসেছে। প্রফেসর ফারুক নতুন পদ্ধতি ঝড়ষড় (ঝঃৎঁপঃঁৎব, ড়নংবৎাব, ষবধৎহরহম ধহফ ড়ঁঃপড়সব) পদ্ধতির কথা জানান। যেটি এখন বিশ্বে জনপ্রিয় পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে যেতে হলে ২০২৫ সাল লাগবে। সলো পদ্ধতিতে গেলে শিক্ষার গুণগত মান কয়েকগুণ বেড়ে যাবে বলে উপস্থাপনায় দেখানো হয়। তবে তার এই পদ্ধতির সঙ্গে উপস্থিত অনেকেই দ্বিমত প্রকাশ করেন। তবে শেষ পর্যায়ে এসে সবাই তার উপস্থাপনার সঙ্গে একমত পোষণ করেন এবং এটা সময়সাপেক্ষে বাস্তবায়ন করার পক্ষে মত দেন।

বেডুর কর্মকর্তারা জানান, বর্তমান সৃজনশীল পদ্ধতি নিয়ে ২০০২ সাল থেকে কাজ শুরু হয়। ২০০৫ সালে প্রথম চালুর উদ্যোগ নিয়েও থমকে যায় সরকার। এরপর তত্ত্বাবধায়ক সরকার ২০০৮ সালে সীমিত পরিসরে চালু করে। আর ২০১০ সালে সারা দেশে একযোগে শুরু হয়। তাই নতুন পদ্ধতিতে যাওয়ার জন্য এখনই কাজ করতে হবে।

নতুন পদ্ধতির ব্যাখ্যা দিয়ে প্রফেসর সৈয়দ ফারুক বলেন, আমি এটা নিয়ে গবেষণা করেছি। সেখানে সৃজনশীল পদ্ধতির নানা ত্রুটি বিচ্যুতির কথা বলেছি। একই সঙ্গে নতুন ‘সলো’ পদ্ধতিতে গেলে আমাদের শিক্ষায় কী ধরনের পরিবর্তন আসবে সেটি দেখিয়েছি। তিনি বলেন, এই মুহূর্তে নতুন পদ্ধতিতে যাওয়ার সক্ষমতা আমাদের নেই। কিন্তু ‘সলো’ পদ্ধতিতে গেলে শিক্ষার গুণগত মান কয়েকগুণ বৃদ্ধি পাবে বলে জানান তিনি। তবে এটা বাস্তবায়ন করার দায়িত্ব সরকারের।

এ ব্যাপারে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব চৌধুরী মুফাদ আহমেদ বলেন, এটা ছিল একান্ত অভ্যন্তরীণ একটি একাডেমিক আলোচনা। সেখানে সৃজনশীলের নানা ত্রুটি-বিচ্যুতির কথা আলোচনা হয়েছে। এই আলোচনা আরো অব্যাহত থাকবে। পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্নে সরাসরি বই থেকে কিছু উদ্ধৃত এবং কিছু অংশ গ্রাফস করে করা যায় কি-না সেটা আলোচনা হয়েছে। এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়েছে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা চাইছি বলেই তো এটা হয়েছে। তবে এই মুহূর্তে প্রচলিত পদ্ধতিকে আরো উন্নত করার চিন্তা করছি। নতুন পদ্ধতিতে গেলে শিক্ষার মান বাড়বে সেটি বলা হচ্ছে। এখন এটি চিন্তা করে দেখবো।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, সৃজনশীল পদ্ধতির গুণগত মান উন্নয়নের জন্য সেসিপ, সেকায়েপ এবং টিকিউআই’র মতো বড় বড় প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। বিশ্বব্যাংকসহ দাতা সংস্থার কাছ থেকে ঋণের টাকা দিয়ে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণসহ নানা উদ্যোগ নিলেও শেষ পর্যন্ত কাজে আসেনি। খোদ পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) বিভিন্ন প্রতিবেদনে সৃজনশীলে এখনো শিক্ষক-শিক্ষার্থীর ভীতি দূর হয়নি বলে তথ্য উঠে এসেছে। আইএমইডি প্রতিবেদনে দেখানো হয়, দেশের মাধ্যমিক শিক্ষা স্তরে সৃজনশীল প্রশ্ন পদ্ধতির গুণগত পরিবর্তনের জন্য নেয়া ৮০০ কোটি টাকার প্রকল্প পানিতে গেছে। চালুর আট বছর পরও এ পদ্ধতিটি নিয়ে শিক্ষার্থী-অভিভাবক, এমনকি শিক্ষকদের মাঝেও এক ধরনের ‘ভীতি’ কাজ করছে। শিক্ষকরা নিজেরাই এখনো এ পদ্ধতিতে অভ্যস্ত হতে পারেননি।

তারা বাজার থেকে নোট-গাইড বই কিনে তা থেকে বিদ্যালয়ের নিজস্ব পরীক্ষায় সরাসরি প্রশ্ন তুলে দিচ্ছেন। আইএমইডি’র প্রতিবেদনে বলা হয়, সৃজনশীল পদ্ধতির যে চারটি ধাপের জ্ঞানমূলক, অনুধাবনমূলক, প্রয়োগ ও উচ্চতর দক্ষতার মধ্যে শিক্ষার্থীরা জ্ঞানমূলক ও অনুধাবনমূলক বিষয়ের ওপর প্রশ্নের কিছু উত্তর দিতে পারলেও প্রয়োগ ও উচ্চতর দক্ষতামূলক উত্তর দিতে পারেনি। গণিত ৫১.৭ ভাগ, ইংরেজী ৮.২ ভাগ ও বিজ্ঞান ৩৩ ভাগ শিক্ষার্থীর কাছে কঠিন বিষয় বলে তথ্য এসেছে। বিভিন্ন বর্ষের পাবলিক পরীক্ষার ফলাফল বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদন বলছে, ২০১৫ ও ২০১৭ সালের মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাসের হারে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার মূল কারণ গণিত, বিজ্ঞান ও ইংরেজীতে কম নম্বর পাওয়া। ফলে শিক্ষার্থীদের ৫৯.৮ ভাগকে এই বিষয়গুলো বুঝতে প্রাইভেট পড়তে হয় ও গাইড বই অনুসরণ করতে হয়, যেটি স্থানীয় পর্যায়ে মতবিনিময় কর্মশালায় উপস্থিত শিক্ষার্থীরাও বলেছে। শিক্ষার্থীদের মতে, শিক্ষকদের প্রায় ৪০ ভাগ তাদের প্রাইভেট পড়তে উৎসাহিত করেন।

এ ব্যাপারে ঢাকা বিদ্যালয়ের ইমিরেটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, একটা পদ্ধতি থেকে অন্য আরেকটি পদ্ধতিতে যাওয়া মানে কয়েক হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য। কর্মকর্তারা দেশ- বিদেশে প্রশিক্ষণ নেন। কিন্তু বাস্তবায়নে কোনো দক্ষতা তারা দেখাতে পারেন না। প্রশিক্ষণের নামে প্রমোদ ভ্রমণ করে বিশ্বব্যাংকসহ দাতাদের দেয়া প্রেসক্রিপশন বাস্তবায়নে উঠে পড়ে লেগে যায়। তিনি বলেন, নতুন একটি পদ্ধতি দাঁড়াতে না দাঁড়াতে আরেকটি পদ্ধতিতে যাওয়া মানে পুরনো পদ্ধতির পেছনে সব বিনিয়োগ পানিতে যাওয়া। তাই নতুন পদ্ধতিতে যাওয়ার আগে অবশ্যই শিক্ষা সংশ্লিষ্টদের মত নেয়া প্রয়োজন।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের চেয়ারম্যান ও সৃজনশীল নিয়ে গবেষণা করার প্রতিষ্ঠান ‘রিসার্চ ফর অ্যাডভান্সমেন্ট অব কমপ্লিট এডুকেশনের’ (রেস) প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ড. মো. শরিফ উদ্দিন বলেন, নতুন পদ্ধতিতে নানা ত্রুটি রয়ে গেছে। এই পদ্ধতিকে কীভাবে আরো উন্নত করা যায় সেটা ভাবা উচিত। রেস তার গবেষণায় দেখিয়েছে, এখনো ৯২ শতাংশ শিক্ষার্থী গাইড বইয়ের সাহায্য নেয়। মাত্র ৮ শতাংশ শিক্ষার্থী গাইড বই থেকে দূরে থাকে। ৬৭ শতাংশ শিক্ষার্থী সৃজনশীল পদ্ধতি বোঝার ক্ষেত্রে গৃহশিক্ষকের সহায়তা নিচ্ছেন। পরীক্ষা কেন্দ্রে ২৫ শতাংশ শিক্ষার্থী প্রশ্নপত্রই বুঝতে পারে না। ৩ শতাংশ শিক্ষার্থী বাংলাকে কঠিন, ৩৯ শতাংশ শিক্ষার্থী ইংরেজীকে কঠিন, ৩৩ শতাংশ গণিত সবচেয়ে কঠিন মনে করে। এর মধ্যে ২৫ দশমিক ৬৫ শতাংশ শিক্ষার্থী গণিতইংরেজী উভয় সাবজেক্টই বেশি কঠিন বলে মনে করে।

 

 

আরো পড়ুন:

এস.এস.সি এবং এইচ.এস.সি সৃজনশীল পরীক্ষায় ভালো মার্কস তোলার কিছু কৌশল

   
   

0 responses on "সৃজনশীলের পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার"

Leave a Message

Address

151/7, level-4, Goodluck Center, (Opposite SIBL Foundation Hospital), Panthapath Signal, Green Road, Dhanmondi, Dhaka-1205.

Phone: 09639399399 / 01948858258


DMCA.com Protection Status

Certificate Code

সবশেষ ৫টি রিভিউ

eShikhon Community
top
© eShikhon.com 2015-2024. All Right Reserved