সাদাপোশাকে গ্রেপ্তার করতে এলে
আপনি কোন অপরাধ না করলেও যদি হঠাৎ করে সাদাপোশাকধারী কিছু লোক এসে আপনাকে বলে যে তারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য। আপনাকে তাদের সঙ্গে যেতে হবে, আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে। আপনি কিছু না বুঝে ওঠার আগেই তারা আপনাকে গ্রেপ্তার করে বসল। কিংবা ঘটনাটি আপনার সঙ্গে না ঘটে কোনো আত্মীয়ের সঙ্গে ঘটল। এ অবস্থায় করবেন? কীভাবে এ ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলা করবেন? তা নিয়ে ইশিখন.কম আর আজকের পোস্ট। পোস্ট টি প্রথম আলো থেকে পরিমার্জিত করা হয়েছে।
গ্রেফতার করতে এলে করণীয়
১. প্রথমেই জানতে চাইতে হবে সুনির্দিষ্ট অভিযোগটি কী? অবশ্যই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে তাদের পরিচয় জানতে চাইবেন এবং তাদের পরিচয়পত্র দেখতে চাইবেন। (এটা নাগরিক হিসেবে আপনার অধিকার)
.
২. একা একা কোনো সিদ্ধান্ত না নিয়ে পরিবার-পরিজনকে সঙ্গে সঙ্গে খবর দিন। প্রয়োজনে আশপাশের ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশীদের খবর দিন এবং যত পারা যায় লোকজন জড়ো করার চেষ্টা কর আপনার বিরুদ্ধে কোনো গ্রেপ্তারি পরোয়ানা আছে কি না, তা দেখতে চাইবেন। সম্ভব হলে উক্ত ঘটনটার কয়েকটি ছবি তুলে রাখবেন।
.
৩. যদি তারা আপনাকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যেতে চায়, তাহলে আপনি একা তাদের সঙ্গে যাবেন না বলে তাদের জানিয়ে দেন এবং পরিবারের দু-একজনকে সঙ্গে নেবেন বলে তাদের জানান।
.
৪. প্রয়োজনে নিকটস্থ থানায় ফোন করে আপনার গ্রেপ্তারের এটি জানান। এবং থানা এ সম্পর্কে অবগত অছে কি না, তা জানার চেষ্টা কর
.
৫. আপনার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ দেখাতে না পারলে আপনাকে হয়তো ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তারের কথা বলতে পারে।
.
কিন্তু ৫৪ ধারায় ২০১৬ সালে আপলি বিভাগ নতুন কিছু দিকনির্দেশনা রয়েছে।
৫৪ ধারায় পুলিশ গ্রেফতারে আপিল বিভাগের নির্দেশনা
১. আপিল বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী পুলিশ গ্রেপ্তারের কারণ জানাতে বাধ্য থাকবে এবং পুলিশের পরিচয়পত্র দেখাতে বাধ্য থাকবে।
২. গ্রেপ্তারের স্থান ও সময় ব্যক্তির স্বাক্ষরসহ গ্রেপ্তারের পরপরই সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা এ বিষয়ে একটি মেমোরেন্ডাম তৈরি করবেন। গ্রেপ্তারের সময় ও স্থান এবং আটক রাখার জায়গা গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তির আত্মীয়কে জানাতে হবে। আত্মীয়স্বজন না পেলে ব্যক্তির নির্দেশনা মেনে তাঁর বন্ধুকে জানাতে হবে। এ জন্য সর্বোচ্চ ১২ ঘণ্টা সময় পাওয়া যাবে।
৩. কোন যুক্তিতে, কার তথ্যে বা অভিযোগে ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, ঠিকানাসহ তা কেস ডায়েরিতে লিখতে হবে, আটক ব্যক্তি কোন কর্মকর্তার তদারকিতে রয়েছেন, তাও উল্লেখ করতে হবে।
৪. বিশেষ ক্ষমতা আইনে কাউকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার করা যাবে না। গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তির শরীরে কোনো আঘাত থাকলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যকে তা রেকর্ড করে চিকিৎসার জন্য তাঁকে নিকটবর্তী হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে এবং সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের কাছ থেকে সনদ নিতে হবে।
পুলিশ গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে গেলে করণীয়
গ্রেপ্তার হলে গ্রেপ্তারের পর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আপনাকে বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে চালান দেবেন। ২৪ ঘণ্টা সময় অতিক্রান্ত হওয়ার পর কোনো অবস্থাতেই (ম্যাজিস্ট্রেটের আদেশ ছাড়া) পুলিশ আপনাকে আটক রাখতে পারবে না। এ সময় পুলিশ আপনাকে গুরুতর কোনো অভিযোগে রিমান্ডের আবেদন করতে পারে।
আপিল বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী ডায়েরির অনুলিপি ছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাউকে আদালতে হাজির করে আটকাদেশ চাইলে ম্যাজিস্ট্রেট, আদালত, ট্রাইব্যুনাল একটি বন্ড গ্রহণ করে তাঁকে মুক্তি দেবেন। আটক থাকা কোনো ব্যক্তিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অন্য কোনো সুনির্দিষ্ট মামলায় যদি গ্রেপ্তার দেখাতে চায়, সে ক্ষেত্রে যদি ডায়েরির অনুলিপিসহ তাঁকে হাজির না করা হয়, তাহলে আদালত তা মঞ্জুর করবেন না। কোনো কারণে নিম্ন আদালতে জামিন না হলে উচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হতে হবে।