সাধারণ বিজ্ঞান মহাকর্ষ অভিকর্ষ : বিসিএস প্রিলিমিনারি
মহাকরাময়,
আমরা লাফ দিয়ে উপরের দিকে উঠতে চাইলে বেশি দূর উঠতে পারি না। আবার ভূ-পৃষ্ঠে ফিরে আসি। গাছের ফলমাটিতে পড়ে। ক্রিকেট বলকে উপর দিকে ছুড়ে দিলে মাটিতে পড়ে। এর কারণ কী? কারণ পৃথিবী আমাদের তারনিজের দিকে টানে বা আকর্ষণ করে। শুধু পৃথিবী কেন, সবকিছুই আমাদের আকর্ষণ করে। আসলে এ মহাবিশ্বেরপ্রত্যেকটি বস্তুকণা একে অপরকে নিজের দিকে আকর্ষণ করে। এই আকর্ষণ বলকে মহাকর্ষ বলে।
নিউটনের মহাকর্ষ সূত্র ও মহাকর্ষ বল
দুটি বস্তুকণার মধ্যকার এ আকর্ষণ বলের মান শুধু বস্তুদ্বয়ের ভর এবং এদের মধ্যকার দূরত্বের উপর নির্ভর করে।এদের আকৃতি, প্রকৃতি কিংবা মাধ্যমের প্রকৃতির উপর নির্ভর করে না। বস্তুদ্বয়ের ভর বেশি হলে, আকর্ষণ বলও বেশিহয় আর তাদের মধ্যে দূরত্ব বেশি হলে বল কম হয়। এ আকর্ষণ সম্পর্কে নিউটনের একটি সূত্র আছে যেটি নিউটনেরমহাকর্ষ সূত্র নামে পরিচিত।
সূত্রটি হলো : মহাবিশ্বের প্রতিটি বস্তুকণা একে অপরকে নিজের দিকে আকর্ষণ করে এবং এ আকর্ষণ বলের মানবস্তুকণাদ্বয়ের ভরের গুণফলের সমানুপাতিক এবং এদের দূরত্বের বর্গের ব্যস্তানুপাতিক এবং এ বল বস্তুকণাদ্বয়েরসংযোজক সরলরেখা বরাবর ক্রিয়া করে।
ধরা যাক,m1এবং m2 ভরের দুটি বস্তু পরস্পর থেকে d দূরত্বে অবস্থিত এদের মধ্যকার আকর্ষণ বলFহলে, মহাকর্ষ সূত্রানুসারে,
F=G m1 m2\d2
এখানে G, একটি সমানুপাতিক ধ্রুবক। একেবিশ্বজনীন মহাকর্ষীয় ধ্রুবক বলে। এর অর্থহচ্ছে এক কিলোগ্রাম ভরের দুটি বস্তু একমিটার দূরত্বে স্থাপন করলে এরা পরস্পরকেযে বলে আকর্ষণ করে তা Gএর সমান।
মহাকর্ষ সূত্রানুসারে আমরা দেখতে পাই, নির্দিষ্ট দূরত্বে অবস্থিত দুটি বস্তুর ভরের গুণফল দ্বিগুণ হলে বল দ্বিগুণ হবে, ভরের গুণফল তিনগুণ হলে বল তিনগুণ হবে। আর নির্দিষ্ট ভরের দুটি বস্তুর দূরত্ব দ্বিগুণ করলে বল এক-চতুর্থাংশ হবে, দূরত্ব তিনগুণ করলে বল নয় ভাগের এক ভাগ হবে। মহাকর্ষ বলের প্রভাবে পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ঘুরে।
অভিকর্ষ ও অভিকর্ষজ ত্বরণ
অভিকর্ষ : আমরা ইতোমধ্যে দেখেছি যে এ মহাবিশ্বের প্রত্যেকটি বস্তুকণাই একে অপরকে নিজের দিকে আকর্ষণকরে। এ মহাবিশ্বের যে কোনো দুটি বস্তুর মধ্যে যে আকর্ষণ তাই মহাকর্ষ। দুটি বস্তুর একটি যদি পৃথিবী হয় এবংপৃথিবী যদি বস্তুটিকে আকর্ষণ করে তবে তাকে মাধ্যাকর্ষণ বা অভিকর্ষ বলে। অর্থাৎ কোনো বস্তুর উপর পৃথিবীরআকর্ষণই অভিকর্ষ। গাছের ফল মাটিতে পড়ে। ক্রিকেট বলকে উপর দিকে ছুড়ে দিলে মাটিতে পড়ে। এখানে পৃথিবীযেমন ফল বা ক্রিকেট বলকে আকর্ষণ করে তেমনি এরাও পৃথিবীকে আকর্ষণ করে। পৃথিবী অনেক বড় এবং এরআকর্ষণ বল অনেক বেশি হওয়ায় ফল ও ক্রিকেট বল মাটিতে পড়ে। পৃথিবী এবং অন্য যে কোনো বস্তুর মধ্যে যেআকর্ষণ তাকে অভিকর্ষ বলে। সূর্য ও চন্দ্রের মধ্যে যে আকর্ষণ তা মহাকর্ষ, কিন্তু পৃথিবী এবং তোমার বিজ্ঞান বই এরমধ্যে যে আকর্ষণ তা অভিকর্ষ।
অভিকর্ষজ ত্বরণ : আমরা জানি বল প্রযুক্ত হলে কোনো বস্তুর বেগ বৃদ্ধি পায়। প্রতি সেকেন্ডে যে বেগ বৃদ্ধি পায় তাকেত্বরণ বলে। অভিকর্ষ বলের প্রভাবেও বস্তুর ত্বরণ হয়। এ ত্বরণকে অভিকর্ষজ ত্বরণ বা মাধ্যাকর্ষণজনিত ত্বরণ বলাহয়। যেহেতু বেগ বৃদ্ধির হারকে ত্বরণ বলে, সুতরাং অভিকর্ষ বলের প্রভাবে ভূপৃষ্ঠে মুক্তভাবে পড়ন্ত কোনো বস্তুর বেগবৃদ্ধির হারকে অভিকর্ষজ ত্বরণ বলে।
অভিকর্ষজ ত্বরণকে g দ্বারা প্রকাশ করা হয়। যেহেতু অভিকর্ষজ ত্বরণ এক প্রকার ত্বরণ, সুতরাং এর একক হবেত্বরণের একক অর্থাৎ মিটার/সেকেন্ড২।
ধরা যাক, M = পৃথিবীর ভর,
m=ভূ-পৃষ্ঠে বা এর নিকটে অবস্থিত কোনো বস্তুর ভর,
d=বস্তু ও পৃথিবীর কেন্দ্রেরমধ্যবর্তী দূরত্ব।
তাহলে মহাকর্ষ সূত্রানুসারে, অভিকর্ষ বল,
আবার বলের পরিমাপ থেকে আমরা পাই, অভিকর্ষ বল = ভর X অভিকর্ষজ ত্বরণ
অর্থাৎF=mg
উপরিউক্ত দুই সমীকরণ থেকে পাওয়া যায়,
Mg=GMm/d2
বা, g=GM/d2
এ সমীকরণের ডান পাশে বস্তুর ভর m অনুপস্থিত। সুতরাং অভিকর্ষজ ত্বরণ বস্তুর ভরের উপর নির্ভর করে না। যেহেতুGএবং পৃথিবীর ভর ধ্রুবক, তাই M-এর মান পৃথিবীর কেন্দ্র থেকে বস্তুর দূরত্বd-এর উপর নির্ভর করে। সুতরাং -এর মান বস্তু নিরপেক্ষ হলেও স্থান নিরপেক্ষ নয়। এর অর্থ হলো g -এর মান বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন রকম হয়।
এই লেকচারের পরের পেইজে যেতে নিচের …. তে ক্লিক কর।