বিসিএস প্রস্তুতি -বাংলা ,প্রসঙ্গঃ গ্রন্থ সমালোচনা
বাংলাঃ
–
.
এই এটি ৩৫ তম বিসিএস থেকে লিখিত পরীক্ষার জন্য সংযোজন করা হয়। গ্রন্থ সমালোচনা করারা জন্য অনেক বই সম্পর্কে বিশদ জ্ঞান থাকা বাঞ্চনীয়। কিন্তু সময় যেহেতু সংক্ষিপ্ত, এই সংক্ষিপ্ত পরিসরে এত বই শুধু ১৫ মার্কসের জন্য পড়া অসম্ভব আবার এই ১৫ মার্কসকে এড়িয়ে যাওয়ার ও সুযোগ নাই। এক্ষত্রে একটি মধ্যবর্তী পন্থা অবলম্বন করা যেতে পারে। আর তা হল উল্লেখযোগ্য বই সম্পর্কে শুধু মূলভাবটা পড়ে নেয়া। আসুন আজ “”গৃহদাহ “” উপন্যাসটির গ্রন্থ সমালোচনা শুরু করি।
.
উপন্যাসের নামঃ গৃহদাহ
লেখকঃ শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
.
বাংলা সাহিত্যে যে ক’জন লেখকের ক্ষুরধার লেখনীতে, শব্দশৈলী আর বাক্যের চারুময়তা পাঠক হৃদয়ে ভাবনার জগতে নতুন এক বারান্দা সৃষ্টি করে, তাদের অন্যতম অপরাজেয় কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। সমাজে ঘটমান বিভিন্ন বিষয়কে তিনি কলমের মাথায় কালির স্পর্শে সাদা পৃষ্ঠায় বন্দি করে এক অনবদ্য মুগ্ধতা দিয়ে আলোড়িত করেছেন পাঠকচিত্তে। ‘গৃহদাহ’ তাঁর একটি উল্লেখযোগ্য উপন্যাস।
.
বাঙালি সমাজের বেদীমূলে চিত্রিত বিভিন্ন দুঃখ,বেদনা, ভালবাসা কিংবা অপরিনামদর্শি প্রেমের নিখাদ বর্ণনার স্বাক্ষর রেখে তিনি সৃষ্টি করেছেন গৃহদাহ উপন্যাস। উপন্যাসটি ১৯২০ সালে প্রথম প্রকাশিত হয়। এর প্রকাশক হল ইউপিএল। এ উপন্যাসকে ঘিরে প্রধান যে চরিত্রগুলো লেখক অঙ্কন করেছেন সেগুলো হল মহিম,সুরেশ ও অচলা। প্রেমের
বেড়াজালে হৃদপিন্ডের প্রকোষ্ঠে জন্ম নেওয়া ভালো লাগা, অতঃপর ভালবাসার এক সুনিপুন কাহিনী তৈরী হয়েছে অচলা চরিত্রটি ঘিরে।
.
মহিম ও সুরেশ দুই পুরুষের প্রতি অচলার এক অনবদ্য আকর্ষনের পালা বদলকে কেন্দ্র করে উপন্যাসের সূত্রপাত। মহিম ও অচলার বিয়ে দিয়েই উপন্যাসটি শান্ত সমুদ্রে নৌকা ভাসায়। মহিম ও অচলার সামাজিকভাবে বিয়ে হয়। চলতে থাকে বাঙালির চিরায়ত সংসার। কিন্তু হঠাৎ করেই যেন অচলার মনের দখিনা হাওয়াটি অন্য সুরে বইতে থাকে। বিয়ের পর অচলা তার স্বামী মহিমকে ছেড়ে সুরেশের কাছে আত্মসমর্পন করে। প্রেমের এক অসম সমীকরণে অচলা সুরেশের প্রতি আকর্ষন অনুভব করে,যা সমাজের দৃষ্টিতে পাপ। কিন্তু অল্প কিছুদিন পরই আবার সুরেশের প্রতি মোহভঙ্গের পর মহিমের উপস্থিতিতে অচলার মনে একাকীত্ব ও দুঃসহ শুন্যতার মধ্যে উপন্যাসের যবনিকাপাত ঘটে।
.
একই ব্যক্তির প্রতি কখনো আসক্তি কখনো অনীহা এমন এক মনস্তত্ত্বের নিগুঢ় তথ্য যেটি অচলা অনুধাবনে ব্যর্থ হয়। উপন্যাসের প্রতিটি স্তরেই দেখা যায় সমাজ, স্বামী,সংসার আরর প্রেমের দোলাচলে ভাসতে থাকে অচলার জীবনের সমীকরণ। অচলা মাতৃহীন পিতৃগৃহে অসম্পুর্ণ সামাজিক ও মনস্তাত্তিক পরিবেশে লালিত পালিত। তার পিতা কেদারনাথের অসংগঠিত সংসারে সে এক অবিন্যস্ত মেয়ের মত বেড়ে উঠে। তাই তার সত্ত্বা, চিত্ত,হৃদয় সবই আবেগের আন্দোলনে এক অস্পৃশ্য বিবেকহীন কাজে আলোড়িত হয়েছে বারবার। তাই প্রথম দিকে সুরেশের অসংযত আবেগদীপ্ত ব্যবহার বিরক্ত করেনি অচলাকে এবং তার প্রতি আমন্ত্রণ ও ছিল না,প্রত্যাখ্যান ও ছিল না। বিয়ের পর মহিমের সাথে গ্রামে এসে মৃনাল ও মহিমের সম্পর্কে কদর্য সন্দেহ সর্বোপরি মহিমের নিঃস্নেহ কঠোর কর্তব্য পরায়ণতা তার মনে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। মহিম সবসময়ই নিরুত্তাপ আবেগহীন ছিল। অচলা মহিমকে একান্তভাবে পেয়েও তার প্রেমোচ্ছল হৃদয়খানি মেলে দিতে পারেনি।
.
গৃহদাহ উপন্যাসটি অচলা,মহিম ও সুরেশের মাঝে গড়ে উঠা এক ত্রিভুজ প্রেমের মনস্থাত্ত্বিক বিশ্লেষণ। মহিম ও সুরেশের মত দুই বিপরীতধর্মী চরিত্রের সাথে অচলার আত্মার আত্মিক সম্পর্কের সুনিপুন বিন্যাস এক মনস্থাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব ঘটিয়ে অচলার জীবনে বিয়োগাত্মক পরিনতির জন্ম দিয়েছে।
.
পরিশেষে বলা যায়,গৃহদাহ উপন্যাসটি শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের দ্বিধান্বিত সত্ত্বার তীব্র আত্মক্ষয়ী আর্তনাদ। সে আর্তনাদ অচলাকে ঘিরে প্রতিনিয়ত প্রতিধ্বনিত হয়েছে তার হৃদপিন্ডের প্রকোষ্ঠে।
___________
এ গ্রন্থ সমালোচনাটি সম্পুর্ন আমার নিজের লেখা। বাজারে অন্যান্য প্রকাশনীর বইয়ের সাথে আমার লেখাটিত তুলনামুলক বিশ্লেষণ করে যেটি আপনার কাছে গ্রহনযোগ্য মনে হবে সেটি নোট করে রাখতে পারেন। বলা বাহুল্য, বাংলার কিছু বিষয় লেখার ক্ষেত্রে কিছুটা সাহিত্যিক ভাষায় লেখার চেষ্টা থাকলে মার্কস কিছুটা বাড়তে পারে। শিক্ষককে যদি আপনার লেখার মধ্য দিয়ে বুঝিয়ে দিতে পারেন আপনি বাংলা সাহিত্যে পড়াশুনা করেছেন (যদিও বা আপনার সাবজেক্ট ভিন্ন) তাহলেই আপনার লেখা অন্যমাত্রায় গ্রহনযোগ্যতা পাবে। আমি নিজেই কিন্তু আইন নিয়ে পড়াশুনা করেছি।