বিসিএস ও ব্যাংক লিখিত প্রস্তুতি:
ব্যাংক কেলেঙ্কারি, অর্থ পাচার ও বাংলাদেশ:
==ব্যাংক কেলেঙ্কারি
=
:: এ দেশে সবচেয়ে সহজ কাজ হল অন্যের টাকা মেরে দেয়া। এর প্রধান কারণ হল, ছোট থেকে বড় কোনো অর্থ কেলেঙ্কারির বিচার এ দেশে কখনও হয়নি। পাড়া মহল্লার সমিতি থেকে শুরু করে বড় বড় ব্যাংক, কোম্পানি পর্যন্ত হাজার কোটি টাকা খেয়ে সাবাড় করে ফেলেছে, উধাও হয়ে গিয়েছে। কিছুই হয়নি। অর্থ আত্মসাতের নেশাটা হল মাদকের মত। একবার যে বিনাশ্রমে টাকা কামানো শিখে যায় তাকে আর কোনোভাবে পরিশ্রম করে উপার্জনে ফেরানো যায় না। সারা জীবন সে অন্যের টাকা মারার ধান্ধায় থাকে। তার এক হাত সব সময় অন্যের পকেটে থাকে।এটাই নিয়ম। রাষ্ট্র যখন ছোট অনিয়মগুলোর বিচার করে না, তখন এরা পরের ছকটি আরও বড় করে আঁটে। তাদের বিজনেস, কর্মই এটা। বাংলাদেশে টাকা মেরে দেয়ার জবটা প্রফেশনাল পর্যায়ে চলে গেছে। যুবক দিয়ে শুরু হয়েছিল। এরপর ডেসটিনি, হলমার্ক, বেসিক ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক, শেয়ার বাজার হয়ে অবশেষে বাংলাদেশ ব্যাংকে এখন তাদের মূখর পদচারণা। আমাদের দেশে অর্থ আত্মসাতের এ কর্মটি এতোটাই প্রফেশনাল পর্যায়ে পৌছে গেছে যে, এর খ্যাতি দেশ ছাড়িয়ে বিদেশে ছড়িয়ে গেছে। তারা জেনে গেছে, এখানে টাকা মেরে দিলে কোন বিচার হয়না। আর একটু আধটু রাজনৈতিক জোগসাজস থাকলে তো কথাই নেই। আজকের এ পর্যায়টা একদিনে তৈরি হয়নি। একটু পর্যবেক্ষণ করলেই বুঝা যায়, এরা প্রথমে বিভিন্ন এমএলএম কোম্পানির নাম করে পাবলিকের টাকা মেরেছে, কিছু হয়নি। শেয়ার বাজারের টাকা লুটেছে, কিছু হয়নি। ব্যাংক লোনের নাম করে ব্যাংকের টাকা লোপাট করেছে, তাতেও কিছু হয়নি। বরং বেসিক ব্যাংকের জন্য বাজেটে আলাদা করে অর্থ বরাদ্ধ দেয়া হয়েছে। উৎসঃ atnnews.com.bd. ২২ মার্চ, ২০১৬।
::ব্যাংক কেলেঙ্কারির কিছু চিত্র নিচে উল্লেখ করা হলোঃ
♦হলমার্ক ঋণ কেলেঙ্কারির মাধ্যমে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক থেকে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা তুলে নিয়েছে প্রতারক চক্র।
♦রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংক থেকেও প্রায় সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা তুলে নিয়েছে জালিয়াত চক্র।
♦বিসমিল্লাহ গ্রুপসহ অর্ধশতাধিক ভুঁইফোড় কোম্পানি আরও কয়েক হাজার কোটি টাকা ব্যাংক থেকে তুলে নিয়েছে।
♦কিশোরগঞ্জে সুড়ঙ্গ খুঁড়ে সোনালী ব্যাংকের ভল্ট থেকে প্রায় ১৭ কোটি টাকা চুরির চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটে। কিশোরগঞ্জের ঘটনার দেড় মাস পর সুড়ঙ্গ কেটে চুরির ঘটনা ঘটে বগুড়ার আদমদীঘিতে।
♦চাঞ্চল্যকর আরেকটি ডাকাতির ঘটনা ঘটে জয়পুরহাটে।
♦২০১৫ সালের এপ্রিলে আশুলিয়ায় দিন-দুপুরে ব্যাংক ডাকাতির ঘটনায় ব্যাংকের ম্যানেজারসহ আটজন নিহত হন।
♦যশোরে অগ্রণী ব্যাংকের গ্রিল কেটে ভল্ট ভেঙে ২১ লাখ টাকা নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা।
উৎসঃ দৈনিক আমার দেশ।১২ মার্চ, ২০১৬।
::বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ১০ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার চুরি যাওয়ার ঘটনায় এখন বিশ্বজুড়ে তোলপাড় চলছে। চুরি যাওয়া ওই অর্থের মধ্যে শ্রীলঙ্কা থেকে ২ কোটি ডলার উদ্ধার করা হয়েছে। আর ফিলিপাইনে চলে যাওয়া ৮ কোটি ১০ লাখ ডলারের সিংহভাগেরই কোনো হদিস মিলছে না। এ ঘটনায় আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশ ও ফিলিপাইনে আলাদা তদন্ত চলছে। অর্থ চুরির মূল ঘটনাটি গত ৫ থেকে ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ এর মধ্যে সম্পন্ন হলেও এর প্রস্তুতি শুরু হয়েছিল অনেক আগেই। নিচে সেসব বিষয় তুলে ধরা হলো দিনপঞ্জির হিসেবেঃ
♦১৫ মে, ২০১৫: ফিলিপাইনের মাকাতি শহরের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশনের (আরসিবিসি) জুপিটার স্ট্রিট শাখায় সন্দেহভাজন চার ব্যক্তির নামে চারটি আলাদা ব্যাংক হিসাব খোলা হয়।
♦৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬: যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে থাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ হিসাব থেকে হ্যাকাররা ৯৫ কোটি ১০ লাখ ডলার স্থানান্তরের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের দিক থেকে ৩৫টি নির্দেশনা পাঠানো হয়। এর জন্য আর্থিক লেনদেনের বার্তা আদান-প্রদানের আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক সুইফটকে ব্যবহার করা হয়। এর মধ্যে ৩০টি নির্দেশনা আটকে দিলেও পাঁচটি নির্দেশনা কার্যকর করে নিউইয়র্ক ফেড। চারটি নির্দেশনার মাধ্যমে ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার ফিলিপাইনে আর একটি নির্দেশনার মাধ্যমে ২ কোটি ডলার শ্রীলঙ্কায় পাঠানো হয়।
♦৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬: সুইফটের মাধ্যমে যেসব আর্থিক লেনদেন করা হয়, তার একটি নিশ্চিতকরণ বার্তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রতিদিন প্রিন্ট হয়। ওই দিন বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব ও বাজেট বিভাগের যুগ্ম পরিচালক জোবায়ের বিন হুদা দেখতে পান, প্রিন্টার মেশিনে সুইফটের স্বয়ংক্রিয় বার্তা প্রতিবেদন প্রিন্ট হয়নি। জোবায়ের ও তাঁর সহকর্মীদের একই প্রতিবেদন সনাতন পদ্ধতিতে প্রিন্ট করতে ২৪ ঘণ্টা সময় লেগে যায়। একই দিনে ফিলিপাইনের রিজাল ব্যাংকে উইলিয়াম গোর নামে আরেকটি হিসাব খোলা হয়। পাশাপাশি একই ব্যাংকে জেসি ক্রিস্টোফার ল্যাগরোসাস নামে খোলা একটি হিসাব থেকে ২ কোটি ২৭ ডলার তুলে নেওয়া হয়। পরে সেই অর্থ জমা হয় উইলিয়াম গোর হিসাবে। বর্তমানে ফিলিপাইনে এ ঘটনার যে তদন্ত চলছে, তা থেকে জানা গেছে, ৫ ফেব্রুয়ারি রিজাল ব্যাংকের জুপিটার শাখার ব্যবস্থাপক মায়া সান্তোস দেগুইতো নিজের গাড়িতে করে ওই দিন বিপুল অর্থ সরিয়েছেন।
♦৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬: বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা জোবায়ের বিন হুদা এদিন কার্যালয়ে এসে দেখেন সুইফট সিস্টেমটি যথাযথভাবে কাজ করছে না। পরে বিকল্প উপায়ে সিস্টেমটি চালু করে বেশ কিছু নিশ্চিতকরণ বার্তা দেখতে পান, যেগুলো এসেছিল নিউইয়র্ক ফেডের কাছ থেকে।
♦৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬: বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা নিশ্চিত হন, পাঁচটি অনুমোদিত সুইফট বার্তার মাধ্যমে নিউইয়র্ক ফেডের হিসাব থেকে ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার সরানো হয়েছে। এর মধ্যে ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার গেছে ফিলিপাইনের রিজাল ব্যাংকে। আর ২ কোটি ডলার গেছে শ্রীলঙ্কার প্যান এশিয়ান ব্যাংকিংয়ে। আরও ৮৫ কোটি ডলার স্থানান্তরের নির্দেশনা আটকে দেওয়া হয়েছে। ওই দিনই বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক ফেড, ব্যাংক অব নিউইয়র্ক মেলোন, সিটিগ্রুপ, ওয়েলস ফার্গো, ফিলিপাইনের রিজাল ব্যাংক ও শ্রীলঙ্কার প্যান এশিয়ান ব্যাংকের কাছে অর্থের লেনদেন বন্ধের বার্তা পাঠানো হয়।
♦৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬: রিজাল ব্যাংকের চারটি হিসাব থেকে ৫ কোটি ৮১ লাখ ডলার জমা করা হয় একই ব্যাংকের উইলিয়াম গোর হিসাবে। এদিন ফিলিপাইনের রিজাল ব্যাংকের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংককে জানানো হয়, চারটি হিসাবের লেনদেন আটকে দিয়েছে, কিন্তু ততক্ষণে ওই সব হিসাব থেকে সিংহভাগ অর্থই সরিয়ে ফেলা হয়। ৫ থেকে ১৩ ফেব্রুয়ারি—এই কয়েক দিনে রিজাল ব্যাংকের উইলিয়াম গোর হিসাব থেকে অর্থ চলে যায় ম্যানিলাভিত্তিক বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনকারী প্রতিষ্ঠান ফিলরেমের কাছে। প্রতিষ্ঠানটি ওই অর্থ ফিলিপাইনের স্থানীয় মুদ্রা পেসোতে রূপান্তর করে। এরপর সেই অর্থের ২ কোটি ৯০ লাখ ডলার ব্লুমবেরি রিসোর্ট করপোরেশনে, ২ কোটি ১২ লাখ ডলার ইস্টার্ন হাওয়াই লেইজার কোম্পানিতে আর ৩ কোটি ৬ লাখ ডলার পাঠানো হয় ওয়েক্যাং জু নামের এক ব্যক্তির কাছে।
♦১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬: ফিলিপাইনের অ্যান্টি মানি লন্ডারিং কাউন্সিল (এএমএলসি) আনুষ্ঠানিকভাবে জানতে পারে যে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার ফিলিপাইন থেকে অন্যত্র চলে গেছে। এদিনই বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আতিউর রহমান ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আমান্দো তেতাংকোর কাছে ফোন করে চুরি যাওয়া অর্থ ফেরত পাওয়ার বিষয়ে সহযোগিতা চান।
♦১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬: বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাংলাদেশ আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিটের প্রতিনিধিরা ফিলিপাইনের ম্যানিলায় গিয়ে সে দেশের এএমএলসির সঙ্গে বৈঠক করে।
♦১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬: শ্রীলঙ্কার প্যান এশিয়া ব্যাংকিং বাংলাদেশ ব্যাংকের নিউইয়র্ক ফেড শাখায় ২ কোটি ডলার ফেরত দেয়।
♦২৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬: পাঁচটি ব্যাংক হিসাব জব্দ করার জন্য ফিলিপাইনের এএমএলসির পক্ষ থেকে আদালতে মামলা করা হয়। এদিন অর্থ চুরির ঘটনাটি নিয়ে ফিলিপাইনের পত্রিকা ইনকোয়ারার প্রথম প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
♦১ মার্চ, ২০১৬: ফিলিপাইনের আদালত ব্যাংক হিসাব জব্দের আদেশ দেন।
♦৭ মার্চ, ২০১৬: বাংলাদেশ ব্যাংক আনুষ্ঠানিকভাবে গণমাধ্যমকে রিজার্ভের অর্থ চুরির ঘটনাটি জানায়। এদিন দেশের সংবাদমাধ্যমে রিজার্ভের অর্থ চুরির ঘটনা নিয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
♦১১ মার্চ, ২০১৬: ফিলিপাইনের এএমএলসি অর্থ পাচারে জড়িত থাকার অভিযোগে রিজাল ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক মায়া সান্তোস দেগুইতোর বিরুদ্ধে ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিসে অভিযোগ দায়ের করে।
♦১৩ মার্চ, ২০১৬: বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ঘোষণা দেন, ব্যর্থতার দায়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
♦১৫ মার্চ, ২০১৬: বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আতিউর রহমান পদত্যাগ করেন। ফিলিপাইনের সিনেট এ বিষয়ে শুনানি শুরু করে। তাতে রিজাল ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট লরেঞ্জো তান সিনেটের অনেক প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে যান। আর ব্যাংকটির শাখা ব্যবস্থাপক মায়া সান্তোস দেগুইতো রুদ্ধদ্বার শুনানির অনুরোধ করেন। এদিন ফিলিপাইনের শেয়ারবাজারে রিজাল ব্যাংকের শেয়ারের দাম ৫ দশমিক ১ শতাংশ কমে যায়।
♦১৭ মার্চ, ২০১৬: মায়া সান্তোস দেগুইতো রুদ্ধদ্বার শুনানিতে সাক্ষ্য দেন। পরে তাঁর আইনজীবী জানান, রিজাল ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে তিনি এ কাজ করতে বাধ্য হয়েছেন। অন্যদিকে এদিন রিজাল ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ তদন্তে মায়া সান্তোসকে দায়ী করা হয়। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুরোধ উপেক্ষা করে মায়া অর্থ স্থানান্তর করেছেন।
♦১৮ মার্চ, ২০১৬: ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আমান্দো তেতাংকো বলেন, অর্থনৈতিক ঝুঁকি এড়াতে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এদিন রিজাল ব্যাংকের ব্যবস্থাপক মায়া সান্তোস দেগুইতোর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন সে দেশের ব্যবসায়ী উইলিয়াম গো।
♦২১ মার্চ, ২০১৬: শ্রীলঙ্কার বেসরকারি সংগঠন (এনজিও) শালিকা ফাউন্ডেশনের ছয় পরিচালকের দেশত্যাগের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন দেশটির আদালত। এই শালিকা ফাউন্ডেশনের নামে খোলা ব্যাংক হিসাবে বাংলাদেশের রিজার্ভের ২ কোটি টাকা স্থানান্তর করা হয়েছিল।
♦২২ মার্চ, ২০১৬: রিজাল ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক মায়া সান্তোস ও তাঁর সহকারী অ্যাঞ্জেলা তোরেসকে ব্যাংকের চাকরি থেকে বহিষ্কার করা হয়।
♦২৩ মার্চ, ২০১৬: রিজার্ভের অর্থ চুরির ঘটনায় নিউইয়র্কের ফেডের গাফিলতি রয়েছে কি না এবং সে বিষয়ে আইনগত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যায় কি না, তা খতিয়ে দেখতে যুক্তরাষ্ট্রে একজন আইনজীবী নিয়োগ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এদিন সিঙ্গাপুর থেকে ফিলিপাইনে ফেরেন অর্থ কেলেঙ্কারির ঘটনায় অভিযুক্ত সে দেশের ব্যবসায়ী কিম ওয়ং। এ ছাড়া এ ঘটনায় রিজাল ব্যাংক দুঃখ প্রকাশ করে এবং ব্যাংকটির চেয়ারম্যান লরেঞ্জো তান ছুটিতে যান।
উৎসঃ দৈনিক প্রথম আলো।২৬ মার্চ, ২০১৬।
::বাংলাদেশ ব্যাংকের ভূমিকাঃ এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের যে ক্ষীপ্রতা ও তত্পরতা আরোপ করা উচিত ছিল বিশেষ করে ফিলিপাইনে বাংলাদেশ অ্যাম্বাসেডর ও সংশ্লিষ্টদের সমন্বয়ে এ কাজটি করলে এবং বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে এর জন্য সহায়তাসহ শুধু রিজাল ব্যাংক নয় বরং এটি ফিলিপিন সরকারকে জোরেসোরে অবহিত করলে রিজাল ব্যাংক থেকে অবশ্যই এ বিরাট অংক চুরি রোধ করা যেতো। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক এককভাবে এ দায়িত্ব চুপি চুপি করায় এ সর্বনাশ সাধিত হলো বলে মনে হয়। সন্দেহ নেই যে, এ ধরনের সাইবার ক্রাইম রোধকল্পে বাংলাদেশ ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাজে মারাত্মক দায়িত্বহীনতার পরিচয় পাওয়া যায়। শুধু তাই নয় দীর্ঘদিন যাবৎ এতো বড় এটি ধামা-চাপা দেয়ারও একটা প্রয়াস লক্ষ্য করা যায়। যার দায় বাংলাদেশ ব্যাংক কখনো এড়াতে পারে না। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বলা হচ্ছে এটা এক ধরনের সাইবার অ্যাটাক। এতে তারা অনেকটা হতবিহ্বল হয়ে পড়েছিলেন। বলা হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক একটি স্বতন্ত্র বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। সুতরাং তাদের কাজকর্মের একটি গতিধারা আছে। সেই ধারায় কাজটি করতে তাদের কিছুটা দেরি হয়েছে। এটি একদমই একটি হাতুড়ে অজুহাত। ঘরে আগুন লাগলে আপনি কি আইনের খাতা দেখবেন নাকি তাত্ক্ষণিক পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন আগুন নেভানোর জন্য। কি দুর্ভাগ্য আমাদের! এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ পদে অধিষ্ঠিত কর্তাব্যক্তিদের কাছ থেকে এসব আইনি কথা শুনতে হচ্ছে দেশের গরিব মানুষের ঘামে অর্জিত প্রায় ৮০০ কোটি টাকা চুরি হওয়া বিষয় নিয়ে। তাদের উচিত ছিল সাথে সাথে এবং তাত্ক্ষণিকভাবে এটি সরকার প্রধানসহ মাননীয় অর্থমন্ত্রীকে অবহিত করা যাতে এ ক্ষেত্রে দেশে এবং বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশের মিশনগুলোতে রেড এলার্ট জারি করা যায়। এ ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলে ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ তারিখ রাত বারোটার পর ঘটে যাওয়া এ ঘটনাটি থেকে পাচার হওয়া অর্থ ফিলিপাইনের ব্যাংক থেকে ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ তারিখ উত্তোলন রোধ করা যেতো।
উৎসঃ দৈনিক ইত্তেফাক।২০ মার্চ, ২০১৬।
::বর্তমানে গৃহিত পদক্ষেপঃ ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের চারজন কর্মকর্তাকে আইন প্রণয়নকারী সংগঠন জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে। দুইজন ডেপুটি গভর্নরকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে এবং অর্থসচিবকেও তার পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। নতুন গভর্নর হিসেবে জনাব ফজলে কবিরকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে মতিঝিল থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে ও বাংলাদেশ ব্যাংকের ১২ জন কর্মকর্তা গোয়েন্দা নজরদারিতে রয়েছেন। ব্যাংক জালিয়াতির অনেক ঘটনা বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন সময় সংগঠিত হয়েছে তবে এতো বড় ধরনের জালিয়াতি এটাই প্রথম। সন্দেহ নেই যে, এই জালিয়াতিতে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে রক্ষিত বিভিন্ন দেশের অর্থের নিরাপত্তা এখন বড় ধরনের প্রশ্নের সম্মুখীন। যে কোনো দেশের সরকারের রিজার্ভের অর্থ এভাবে চুরি হওয়ার ঘটনায় বিশ্বব্যাপী বাণিজ্যিক ও কেন্দ্রিয় ব্যাংকে অর্থ নিরাপত্তা সর্বাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ ও নড়বড়ে হয়ে পড়েছে। মনে হচ্ছে বিশ্বব্যাপী আর্থিক ব্যবস্থায় এটা যেন আরেকটি টুইন টাওয়ারের ঘটনা। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান অনেকটা আবেগতাড়িত হয়ে বলছেন যে বাংলাদেশ ব্যাংক তার সন্তানের মতো। এর ক্ষতি কিছু হোক তিনি তা চান না। তিনি বলেছেন যে, তিনি চান না বাংলাদেশ ব্যাংক নিয়ে কোনো বিতর্ক হোক। বাংলাদেশ ব্যাংকের ভাবমূর্তির সমস্যা হোক। তাই নৈতিকতার দায়বদ্ধতা থেকে তিনি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন। তিনি আরো বলেছেন যে, তিলে তিলে খনি শ্রমিকের মতো ২৮ বিলিয়ন ডলারের রিজার্ভ গড়ে তুলেছেন। এছাড়াও আবেগতাড়িত আরো কথাবার্তা তিনি বলেছেন। তবে যারা প্রশাসনে থাকবেন তাদের অবশ্যই আবেগ, অনুরাগ-বিরাগের ঊর্ধ্বে থেকে অত্যন্ত নিরপেক্ষতা বজায় রেখে দেশের স্বার্থ সর্বাগ্রে রেখে কাজ করতে হয়। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও তথ্য-প্রযুক্তি বিভাগের মধ্যে মারাত্মক সমন্বয়হীনতা ও নজরদারীর ব্যর্থতা সুস্পষ্ট হয়ে ওঠেছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের মধ্যে ব্যাপক প্রশাসনিক অভারহল প্রয়োজন। এখন কোনো কিছুকেই আর হালকা করে দেখার অবকাশ নেই। দেশের রিজার্ভ বৃদ্ধির এটিকে কারো ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় হয়েছে বলে যে দাবি করা হচ্ছে বাস্তবতার নিরিখে তা মোটেও সমর্থনযোগ্য নয়। বলার অপেক্ষা রাখে না যে দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনা গত কয়েক বছরে মারাত্মকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন ব্যাংকে জাল-জালিয়াতি, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকে মারাত্মক মূলধন সংকট, ব্যাপক আকারে খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি ইত্যাদি দেশের অর্থনীতির জন্য সুসংবাদ নয়।
উৎসঃ দৈনিক ইত্তেফাক।২০ মার্চ, ২০১৬।
::বাংলাদেশে কোনো ব্যাংকের তহবিল থেকে কোটি ডলারের সমপরিমাণ অর্থ হাপিস হওয়ার ঘটনা এটিই প্রথম নয়। নিয়মিত আর্থিক চুরি-জোচ্চুরিগুলো হিসাবে নিলে ফেডের ভল্ট থেকে চুরির ঘটনাও ম্লান হয়ে যাবে। দেশের গোটা ব্যাংকিং খাতের মোট সম্পদের প্রায় এক-চতুর্থাংশ নিয়ন্ত্রণ করে রাষ্ট্রায়ত্ত ছয়টি ব্যাংক। এর বিপরীতে দেশের অর্থনীতিতে ব্যাংকগুলোর অবদান খুবই সামান্য। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের হিসাব অনুযায়ী, ব্যাংকগুলোর নন-পারফর্মিং লোনের হার অতিরিক্ত বেশি। গোটা ব্যাংকিং খাতেও এ হার খুবই বেশি— ১১ শতাংশ। উন্নত দেশগুলোর ক্ষেত্রে এ হার যেখানে কোনোভাবেই ৪ শতাংশের বেশি নয়। এর জন্য ব্যাংকগুলোর অদক্ষ ব্যবস্থাপনাকেই দায়ী করতে হয়। তবে প্রকৃত দায়ী হলো বাংলাদেশের পৃষ্ঠপোষকতার সংস্কৃতি। দেশের ইতিহাসে বৃহত্তম ব্যাংকিং কেলেঙ্কারির ঘটনাটি ঘটেছে সবচেয়ে বড় রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকে। ২০১০ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে ব্যাংকটির শুধু একটি শাখা থেকে অবৈধভাবে ঋণ দেয়া হয়েছে প্রায় ৪৫ কোটি ৪০ লাখ ডলারের সমপরিমাণ অর্থ। এর মধ্যে প্রায় ৩৪ কোটি ৪০ লাখ ডলারের সমপরিমাণ ঋণ দেয়া হয়েছে পোশাক খাতের প্রতিষ্ঠান হল-মার্ক গ্রুপকে। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর মাহমুদের সঙ্গে যোগসাজশে নানা কল্পিত প্রতিষ্ঠানের নামে লেটার অব ক্রেডিট ইস্যুর মাধ্যমে এ সময় ব্যাপক দুর্নীতির ঘটনা ঘটান সোনালী ব্যাংকের এক অসাধু শাখা ব্যবস্থাপক। কেলেঙ্কারিটি প্রকাশের পরও মাত্রাতিরিক্ত নন-পারফর্মিং ঋণের অনুপাত নিয়ে চলছে সোনালী ব্যাংক। ২০১৪ সালে এর হার দাঁড়ায় ৩৭ শতাংশে। এর পরও সোনালীসহ রাষ্ট্রায়ত্ত অন্য ব্যাংকগুলোকে ক্রমাগত মূলধনের জোগান দিয়ে গেছে সরকার।
উৎসঃ দৈনিক বণিক বার্তা। ১২ এপ্রিল, ২০১৬।
::রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর দায়িত্বহীনভাবে ঋণদানের প্রবণতা ও খেলাপি ঋণগ্রহীতাদের পার পেয়ে যাওয়ার বড় কারণ হলো বাংলাদেশের ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক এলিটদের পারস্পরিক আঁতাত। ২০০৮ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত রাষ্ট্রায়ত্ত একটি ব্যাংকের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী এক গবেষক সাক্ষাত্কারে জানিয়েছিলেন, ব্যবসায়িক সম্ভাবনা বিবেচনায় নয়, বরং প্রভাব বা উচ্চপর্যায়ে যোগাযোগের ভিত্তিতে ঋণদানের প্রবণতা বেড়েছে। এসব ঋণই মূলত খেলাপি হয়ে যাচ্ছে। ২০০৯ থেকে ২০১২ সালে রাষ্ট্রায়ত্ত আরেক ব্যাংক বেসিক ব্যাংক থেকে লুট হয়েছে প্রায় সাড়ে ৫৬ কোটি ডলারের সমপরিমাণ অর্থ। এ কেলেঙ্কারির মূল সন্দেহভাজন ও ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যানকে এ নিয়ে কোনো অভিযোগের মুখোমুখি করেনি দুর্নীতি দমন কমিশন। ঘটনাগুলো ঘটতে পারছে, কারণ রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর দুর্বলতা ও তহবিলের অপর্যাপ্ততা। তার চেয়েও বড় কথা হলো, টেকনোক্র্যাট বা অডিটর কারোরই এটা ঠেকানোর মতো যথেষ্ট ক্ষমতা বা শক্তি নেই। গোটা বিশ্বে নিম্ন কর-জিডিপি অনুপাতের দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান সামনের দিকে, প্রায় ১০ শতাংশেরও নিচে। অবকাঠামোর অভাবে এখানে আয়কর আদায় করা কঠিন। করপোরেশনগুলোর ওপর কর বসানো আছে প্রচুর। কিন্তু ঘুষ দিলে তা থেকেও পার পাওয়া যায়। এর আংশিক প্রভাবে রাজস্ব আহরণের জন্য বাংলাদেশে পণ্য আমদানিতে গলাকাটা পরিমাণ শুল্ক ধরা হয়। তাতে বরং আমদানিকারকদের শুল্ক ফাঁকিতে উত্সাহিত করা হয়। এর ওপর আছে মূলধন পাচারের মতো বিষয়। বাংলাদেশের মতো দেশে রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুটের পর অন্য কোনো কেলেঙ্কারির ধারাবাহিকতায় তা ধরা পড়া বা সরকারের হাতে অর্থ বাজেয়াপ্তের মতো ঝুঁকি নিতে চায় না কেউই। এরই ফল হিসেবে স্থানীয় কর কর্তৃপক্ষের চোখ এড়িয়ে বাংলাদেশ থেকে মূলধন পাচার হয়ে যাচ্ছে আরো কম করহার ও কম আইনি জটিলতার দেশে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গ্লোবাল ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটির হিসাব অনুযায়ী, শুধু ২০০৪ সালে বাংলাদেশ থেকে বিদেশে পাচার হয়েছিল ৩৩০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ অর্থ। পরবর্তীতে শুধু ২০১৩ সালেই এর পরিমাণ দাঁড়ায় ৯৭০ কোটিতে, যেটি ওই বছরের মোট দেশজ উত্পাদনের (জিডিপি) ৬ শতাংশের বেশি এবং ওই বছর পাওয়া মোট বৈদেশিক সহায়তার সাড়ে তিন গুণ। অথচ পাচার হওয়া এ অর্থ যদি বাংলাদেশেই থাকত এবং এর ওপর কর আদায় করা সম্ভব হতো, তাহলে ব্যাংক কেলেঙ্কারি ও জালিয়াতির ঘটনা ঘটত অনেক কম। এর পৌনঃপুনিক ধারাবাহিকতায় তা পরবর্তীতে বিদেশে অর্থ পাচারের প্রবণতাকেও কমিয়ে আনত ব্যাপক আকারে। এ কারণেই অফশোর ট্যাক্স হ্যাভেন এটির স্বচ্ছতা বাড়ানো দরকার। বাংলাদেশেরও নিজ জায়গা থেকে বিদেশে অবৈধ অর্থ পাচারের এটি বন্ধ করা এবং কর আদায় প্রক্রিয়া নিয়ে নতুন করে ভাবা দরকার। তাহলেই আর্ন ও রাজস্ব দুটোই বাড়বে। আর পরিবর্তন আনতে গেলে অবশ্যই কর কর্তৃপক্ষ, আইনি প্রক্রিয়া ও বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাপক সংস্কার প্রয়োজন। তাহলে বর্তমান পরিস্থিতি থেকে সুবিধাভোগীরা ভবিষ্যতে এ ধরনের সুযোগ খুব কমই পাবেন। অন্যদিকে দেশের দুর্নীতিপরায়ণ রাজনীতিবিদদের ঠেকানোর জন্য দরকার যথাযথ রাষ্ট্রীয় আমলাতান্ত্রিকতার প্রয়োগ।
উৎসঃ দৈনিক বণিক বার্তা। ১২ এপ্রিল, ২০১৬।
অর্থ পাচার
=
:: অর্থ পাচারের কিছু নমুনা নিচে দেয়া হলোঃ
♦দেশের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী কামরুল ইসলাম (ছদ্মনাম)। গত ২০১৫ সালের শুরুতেই তিনি মালয়েশিয়ায় ‘সেকেন্ড হোম’ সুবিধা নিয়েছেন। এ সুবিধা পেতে মালয়েশিয়ার ব্যাংকে পাঁচ লাখ রিঙ্গিত বা এক কোটি টাকার বেশি অর্থ জমা রেখেছেন। এ ছাড়া নিয়ে গেছেন সারা জীবনের অর্জিত সব অর্থ-সম্পদ। আর এই পুরো টাকাটাই তিনি পাচার করেছেন হুন্ডির মাধ্যমে।
♦ভুয়া কোম্পানি ও জাল দলিল দিয়ে ব্যাংক থেকে ১১০০ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার পর লাপাত্তা বিসমিল্লাহ গ্রুপের লোকজন। বিদেশে টাকা পাচার করে নিজেরাও দেশত্যাগ করেছেন।
♦ভুয়া দলিলে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে হলমার্ক গ্রুপ। এসব টাকার অধিকাংশ এখন বিদেশে পাচার হয়ে গেছে।
♦ঢাকার একটি আইটি কোম্পানির কনসালটেন্ট হিসেবে কাজ করছেন ব্রিটিশ নাগরিক মি. পিটার। তিনি থাকেন অবশ্য থাইল্যান্ডে। তাকে এ দেশে আসতে হয় না। নামমাত্র সেই কনসালটেন্টের নামে মোটা অঙ্কের ফি থাইল্যান্ডের একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পাঠিয়ে দেওয়া হয় নিয়মিত।
বাংলাদেশ থেকে বিদেশে টাকা পাচারের এটি হলো খণ্ডচিত্র। এমন অসংখ্য পদ্ধতিতে দেশ থেকে টাকা পাচার হচ্ছে প্রতিনিয়ত। হুন্ডির মাধ্যমে যেমন পাচার হচ্ছে টাকা, তেমনি বিদেশি নাগরিকদের চাকরি দেওয়া বা কনসালটেন্ট নিয়োগের নামেও অর্থ পাচার হচ্ছে। ভুয়া দলিল দিয়ে হাজার কোটি টাকা ব্যাংকঋণ নিয়ে কোম্পানির লোকজন লাপাত্তা হয়ে যায়। ব্যাংকঋণের বিপুল অঙ্কের টাকা বিদেশে পাচার করার অসংখ্য ঘটনা ধরাও পড়েছে। সেকেন্ড হোমের সুবিধা নিয়েও দেশ থেকে টাকা পাচার হচ্ছে। আমদানি-রপ্তানির সময় পণ্যের প্রকৃত মূল্য গোপন করার মাধ্যমে অর্থ পাচার নিয়মিত ঘটনায় দাঁড়িয়েছে। আর পাচার করা অর্থের বেশির ভাগই মালয়েশিয়া, ব্যাংকক ও দুবাই চলে গেছে। বিদেশি বিনিয়োগ উন্মুক্ত করে দেওয়ায় পাচারকারীরা টাকা পাচারে ওই সব দেশকে বেছে নিচ্ছে। সেখানে আবাসিক ভবন, জমি ক্রয়, হোটেলসহ বিভিন্ন ব্যবসায় এসব টাকা বিনিয়োগ করা হচ্ছে। এ ছাড়া যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের মধ্যে ইংরেজী চ্যানেলের ছোট দ্বীপরাষ্ট্রগুলোতেও অর্থ পাচারের অভিযোগ রয়েছে। পাচারের টাকা যাচ্ছে বিদেশের নামিদামি ক্যাসিনোতে। আর এসব অর্থ পাচারকারীকে দেখানো হচ্ছে ঋণখেলাপি হিসেবে। জানা গেছে, দেশের অন্যতম আর্থিক কেলেঙ্কারিগুলোর মধ্যে একটি হলো শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারি। এর পরে রয়েছে, একের পর এক রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ লোপাট। হলমার্ক, বেসিক ব্যাংকসহ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংগুলোতে একের পর এক কেলেঙ্কারি। দেশ থেকে অর্থ পাচার ও সর্বশেষ বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে রিজার্ভের অর্থ চুরি।
::২০০৮ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত আট বছরে দেশ থেকে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় লুট হয়েছে ১০ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে বিদেশে পাচার হয়েছে ৫ লাখ ৩০ হাজার ৪২৪ কোটি টাকা। ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফিনানশিয়াল ইন্টিগ্রিটির (জিএফআই) সম্প্রতি প্রকাশিত তথ্যে দেখা যায়, বাংলাদেশ থেকে ২০১৩ সালে ৯৬৬ কোটি ৬০ লাখ ডলার পাচার হয়েছে। টাকার অঙ্কে যেটি ৭৬ হাজার ৩৬১ কোটি ৪০ লাখ টাকা। পাচার হওয়া এ অর্থ আগের বছরের তুলনায় ৩৩ দশমিক ৭৯ শতাংশ বেশি। ২০১৪ ও ২০১৫ সালে এই পাচারকৃত অর্থের পরিমাণ বেড়েছে। সংস্থাটির সর্বশেষ ২০১৫ সালের ডিসেম্বরের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া ওই অর্থ বাংলাদেশের ২০১৫-১৬ অর্থবছরের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবহন, পল্লী উন্নয়ন, শিল্প ও ভৌত অবকাঠামো খাতের মোট উন্নয়ন বাজেটের সমান। প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে যারা অর্থসম্পদ গড়েন, তারাই মূলত এ টাকা পাচার করেন। পাশাপাশি দেশের শিল্পোদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের একটি অংশ নিজেদের পরিবার এবং সন্তানদের নিরাপত্তা ও নিশ্চয়তার জন্য বিভিন্নভাবে অর্থ বাইরে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বাংলাদেশে ব্যাংকিং খাতে ঋণ জালিয়াতির মাধ্যমে কেলেঙ্কারির ঘটনা নতুন কিছু নয়। সরকারি প্রভাব বিস্তার করে মন্ত্রীদের নির্দেশে, ভুয়া কাগজপত্র দাখিল করে, বন্ধকি সম্পত্তি অতিমূল্যায়িত করে, ভুয়া এলসি খুলে কিংবা জাল সঞ্চয়পত্র ও এফডিআর বন্ধক রেখে ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সুষ্ঠু তদারকি ব্যবস্থা না থাকায় অতীতে দেশের ব্যাংকিং খাত দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়। কিন্তু দুঃখজনক ঘটনা হলো, বিভিন্ন সময়ে ব্যাংকিং খাতে এ দুর্নীতির ঘটনা উদ্ঘাটিত হলেও কখনো কারও শাস্তি হয়নি। আইনের ফাঁক গলে ওই দুর্নীতিবাজরা বেরিয়ে গেছে। ফলে বারবার দেশের ব্যাংকিং খাতে অর্থ কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটছে। বিশিষ্ট ব্যাংকার, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, দেশ থেকে অর্থ পাচার উদ্বেগজনক পর্যায়ে গেছে। প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ কালো টাকা দেশ থেকে পাচার হয়ে যাচ্ছে। অর্থ পাচারের সঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই। তবে মালয়েশিয়া, কানাডায় সেকেন্ড হোমের নামে বাংলাদেশিরা ঘরবাড়ি বানিয়েছেন। অনেক বড় অঙ্ক ছাড়া এই বাড়িঘর বানানো অসম্ভব নানা উপায়ে বাংলাদেশের অর্থ পাচার হচ্ছে। অ্যান্টি মানিলন্ডারিং আইন হয়েছে, ফিনানশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট করা হয়েছে। তবে তারা খুব বেশি কাজ করতে পারছে না। কোনো মানিলন্ডারিং তারা ধরতে পারেনি। এর মানে, তাদের দক্ষতায় ঘাটতি আছে। এ জন্য কর্মকর্তাদের উচ্চ প্রশিক্ষণ দিয়ে কাজ করানো উচিত। অর্থ পাচার ঠেকাতে পারলে দেশের জিডিপি ৮ শতাংশের বেশি হতো। রাজনৈতিক কমিটমেন্ট থেকে সরকারের কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংককে স্বাধীনভাবে কাজ করতে না দেওয়ার কারণে এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। এ ছাড়া রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায়ও এ ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে। তবে সবার আগে বাংলাদেশ ব্যাংককে কাজ করার পূর্ণ স্বাধীনতা দিতে হবে। অন্যথায় এ ধরনের ঘটনা ঘটতেই থাকবে। তিনি বলেন, হলমার্ক কেলেঙ্কারির ঘটনায় ব্যাংকগুলো একটু নড়েচড়ে বসেছে। এ ক্ষেত্রে সরকারকেও এগিয়ে আসতে হবে। অর্থ পাচার আমাদের একটি বড় সমস্যা। এটি ঠেকাতে কঠোরভাবে পদক্ষেপ নিতে হবে।’
::যে প্রক্রিয়ায় অর্থ পাচার হচ্ছে, তার কিছু নিচে তুলে ধরা হলোঃ
♦ভুয়া দলিলে ব্যাংকঋণ নিয়ে পাচারঃ ভুয়া কাগজপত্র জমা দিয়ে ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কেটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ করছে একটি সিন্ডিকেট। বিনিয়োগ, বৈদেশিক বাণিজ্যের নামে ঋণ নিয়ে পাচার করে দেওয়া হচ্ছে বিদেশে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক পরিদর্শনে উঠে এসেছে, সাম্প্রতিক সময়ে অন্তত ৩০ হাজার কোটি টাকা ব্যাংকিং খাত থেকে বেরিয়ে গেছে। এর সিংহ ভাগই গেছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো থেকে। হলমার্ক ও বিসমিল্লাহ গ্রুপের ঋণ জালিয়াতির পর বেসিক ব্যাংকের প্রায় চার হাজার কোটি টাকার বেশির ভাগই পাচার হয়ে গেছে। হলমার্ক ও বিসমিল্লাহ গ্রুপের ঋণ কেলেঙ্কারিতে এ ধরনের প্রতারণার আশ্রয় নেওয়া হয়। এ ঘটনায় প্রায় চার হাজার কোটি টাকা লোপাট করা হয়েছে। ভুয়া কাগজপত্র জমা দিয়ে ঋণ অনুমোদন করিয়ে নিচ্ছে এই প্রতারক চক্র। পরবর্তী সময়ে ঋণ পরিশোধে চলে টালবাহানা। তবে মর্টগেজে রাখা সম্পত্তি নিলামে দেওয়ার ব্যবস্থা নিলে বেরিয়ে আসছে আসল তথ্য। এরপর ওই টাকা আর ফিরিয়ে আনতে পারে না সংশ্লিষ্ট ব্যাংক। ফলে সেগুলোকে খেলাপি হিসেবে দেখানো হয়। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, গত চার দশকে এভাবে ব্যাংকিং খাত থেকে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা লোপাট করা হয়েছে।
♦হুন্ডির স্বর্গরাজ্য বিমানবন্দরঃ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ব্যাংক ও মানি এক্সচেঞ্জ বুথগুলোতে চলছে অবৈধ হুন্ডি ও বৈদেশিক মুদ্রা পাচারের ব্যবসা। ব্যাংকের বুথগুলোর অসৎ কর্মকর্তারা এ হুন্ডি ও বৈদেশিক মুদ্রা পাচারের ব্যবসা পরিচালনা করছেন বলে গোয়েন্দা সূত্রগুলো জানিয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই এই বিমানবন্দর দিয়ে পাচার হয়ে যাচ্ছে শত শত কোটি টাকা। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের টার্মিনাল-১ ও টার্মিনাল-২ এর প্রবেশ গেট ও ভিআইপি গেটে মোট ১৬টি লাগেজ স্ক্যানিং মেশিনে অস্ত্র ও গোলাবারুদসহ অন্য ধাতব সামগ্রী পরীক্ষা করা সম্ভব হলেও কাগজের নোট শনাক্ত করা যায় না। আর এ সুযোগে পাচারকারীরা নির্বিঘ্নে মুদ্রা পাচার করলেও কর্তৃপক্ষতা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। এসব স্ক্যানিং মেশিন দিয়ে কাগজের মুদ্রা পাচার অনায়াসে সম্ভব বলে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষস্বীকার করলেও তা প্রতিরোধে তেমন কোনো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। আর এভাবেই যুগ যুগ ধরে দেদার চলছে মুদ্রা পাচার। বিমানবন্দরে কর্মরত একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধিরা জানান, বিদ্যমান পদ্ধতিতে মুদ্রা পাচার রোধ অসম্ভব কেননা এসব স্ক্যানিং মেশিনে কাগজের মুদ্রা শনাক্ত করা অসম্ভব আর এ সুযোগ কাজে লাগাচ্ছেন মুদ্রা ব্যবসায়ীরা। সূত্রগুলো বলেছে, গত এক বছরে শুধু শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে পাচারকালে আটক হয়েছে প্রায় দেড়শ কোটি টাকার দেশি-বিদেশি মুদ্রা। তবে পাচার হওয়া ৫ শতাংশ ধরা পড়ে বিমানবন্দরে বিভিন্ন কারণে। বৈদেশিক মুদ্রাসহ আটক ব্যক্তিরা এমন তথ্য দিয়েছেন গোয়েন্দাদের। তারা জানিয়েছেন, পাচারকৃত ওই মুদ্রার অন্যতম গন্তব্যস্থল হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের দুবাই। এ ছাড়া থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, চীনসহ যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে মুদ্রা পাচার হচ্ছে। সূত্র জানায়, মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসার আড়ালে শতাধিক ব্যক্তি রাজধানীতে হুন্ডি ব্যবসা করছে। তাদের সঙ্গে রয়েছে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কিছু অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশ।
♦বিদেশি নিয়োগের নামে পাচারঃ বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন প্রায় দুই লাখ বিদেশি। এর বাইরে ব্যবসায়ী, শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন খাতে এ দেশে বিদেশি অবস্থান করছেন প্রায় ১২ লাখ। বাংলাদেশে এসে ব্যবসার কথা বলে বিভিন্নভাবে টাকা পাচারের অভিনব ব্যবসা ফেঁদে বসেছেন তারা। দেশের বিভিন্ন ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের যোগসাজশে দেশের টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত বিদেশিদের বেতন, ফি বাবদ প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়ে যাচ্ছে প্রায় পাঁচ বিলিয়ন ডলার। এই বিপুল পরিমাণ অর্থ চলে গেলেও ওয়ার্ক পারমিট বা অনুমতি নিয়ে বাংলাদেশে কাজ করছেন মাত্র কয়েক হাজার ব্যক্তি। অনুমতিপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের নেওয়া অর্থের বিষয়ে তথ্য থাকলেও এর বাইরে যেসব অর্থ যাচ্ছে এর কোনো হদিস নেই। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, যে পরিমাণ অর্থ বিদেশি নাগরিকরা নিয়ে যান, বাংলাদেশে এর চেয়ে কম পরিমাণ অর্থ রেমিট্যান্স হিসেবে আসে। বাংলাদেশে বিদেশিদের উচ্চ বেতনে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। নিয়োগকৃত এসব বিদেশির বাংলাদেশের তিনটি প্রতিষ্ঠান থেকে ওয়ার্ক পারমিট নিতে হলেও তা না নিয়েই কাজ করছেন তারা। স্থানীয় কর্তৃপক্ষের ওয়ার্ক পারমিট নিয়ে নিয়োগের কথা থাকলেও ওই তিনটি প্রতিষ্ঠানের কোনোটির কাছেই বিদেশিদের সম্পর্কে কোনো তথ্য নেই। ওয়ার্ক পারমিট নিয়ে এ দেশে গত পাঁচ বছরে আসা বিদেশিদের কেউই ফিরে যাননি। যারা একবার ওয়ার্ক পারমিট নিয়েছেন, আর কখনোই নবায়ন করেননি। বিভিন্ন এনজিও, আইটি প্রতিষ্ঠান, গার্মেন্টসহ বড় বড় কোম্পানি কনসালটেন্ট নিয়োগ দিচ্ছে বিদেশিদের। এসব কনসালটেন্ট বাংলাদেশে না এসে তাদের ফি বাবদ নিয়ে যাচ্ছেন কোটি কোটি ডলার। বাস্তবে নিয়োগ কর্তৃপক্ষপ্রতিষ্ঠানগুলো ফি বাবদ হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করে দিচ্ছে। দেশের গার্মেন্ট কোম্পানিগুলোতে কাজ করছেন কয়েক হাজার বিদেশি নাগরিক। গার্মেন্টস খাতে ১৮ থেকে ২০ হাজারের মতো বিদেশি কর্মরত আছেন। এই খাতে বিদেশিরা মোট কত টাকা উপার্জন করছে এর কোনো হিসাবই নেই। কিন্তু বিনিয়োগ বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, কাজের অনুমতিপ্রাপ্ত মাত্র কয়েকশ ব্যক্তি রয়েছেন গার্মেন্ট শিল্পগুলোতে। এসব বিদেশি একবার বাংলাদেশে এসে যেন সোনার খনি পেয়ে আর ফিরে যান না। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বিদেশিদের বেতন-ভাতা বাবদ প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে চলে যাচ্ছে পাঁচ বিলিয়ন ডলার। এনজিওবিষয়ক ব্যুরো থেকে অনুমতি নিয়ে এ দেশে কাজ করছেন মাত্র ৫০০ জনের মতো। কিন্তু বাস্তবে আছে প্রায় ১৫ হাজারেরও বেশি।
♦সেকেন্ড হোমের নামে পাচারঃ ২৩৭০ জন বাংলাদেশি মালয়েশিয়ায় ‘সেকেন্ড হোম’ সুবিধা নিয়েছেন। এ সুবিধা পেতে মালয়েশিয়ার ব্যাংকে মোটা অঙ্কের অর্থ জমা রাখতে হয়েছে। এর পরও বাংলাদেশের সুযোগ গ্রহণকারীদের সংখ্যা প্রতিদিন বেড়েই চলেছে। বয়স ৫০ বছরের নিচে এমন কোনো ব্যক্তির এ সুবিধা নিতে লাগছে পাঁচ লাখ রিঙ্গিত বা এক কোটি টাকার বেশি। বয়স ৫০ বছরের বেশি হলে সাড়ে তিন লাখ রিঙ্গিত বা ৮০ লাখ টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংক মানিলন্ডারিং-সংক্রান্ত এক অনুসন্ধানে দেখেছে, এসব অর্থ হুন্ডির মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় নিয়ে গেছেন সুবিধা গ্রহণকারীরা। এর বাইরেও কোটি কোটি টাকা মালয়েশিয়ায় পাচার করে নিয়ে গেছেন তারা। এ কারণে গত কয়েক বছরে মালয়েশিয়ায় পাচার হয়ে গেছে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা। মালয়েশিয়ার পর্যটন মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে গত ১০ বছরের পরিসংখ্যান ঘেঁটে দেখা যায়, সেকেন্ড হোম সুবিধা গ্রহণের দিক দিয়ে ১০ বছর ধরে বাংলাদেশিরা রয়েছেন দ্বিতীয় অবস্থানে। বাংলাদেশের ঠিক আগে রয়েছে চীন।
উৎসঃ দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন।১৪ মে, ২০১৬।
আরো পড়ুন: