৩৭ তম লিখিত প্রস্তুতিঃ মাদকাসক্তি

বিসিএস ও ব্যাংক লিখিত প্রস্তুতি

মাদকাসক্তি:

::বাংলাদেশে বর্তমানে মাদকাসক্তি পরিস্থিতি ভয়াবহ। মাদকের নেশায় জড়িয়ে পড়ছে তরুণ যুবসমাজের সঙ্গে শিশু-কিশোররাও। রাজধানীর নামি-দামি স্কুল কলেজের শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে রাস্তায় বেড়ে ওঠা শিশুরাও ঝুঁকছে মাদকে। মাদক ব্যবসা এখন সারাদেশেই ছড়িয়ে পড়ছে। শুধু কেরানীগঞ্জেই মাদক ব্যবসার জেরে এক বছরে খুন হয়েছে ৪০ জন। তাছাড়া সর্বনাশা মাদক ইয়াবায় ছেয়ে গেছে সারাদেশ। প্রতি বছর ইয়াবাসহ বিভিন্ন ধরনের মাদক বিক্রি হচ্ছে হাজার কোটি টাকারও বেশি। মিয়ানমারের সীমান্ত দিয়ে চোরাইপথে অবাধে প্রবেশ করছে ইয়াবা। ইয়াবা ছাড়াও মাদকের বাজারের প্রধান নেশার উপকরণ হচ্ছে ফেনসিডিল, হেরোইন, মদ, গাঁজাসহ বিভিন্ন নেশা জাতীয় ট্যাবলেট এবং চেতনানাশক ইনজেকশন। আর এগুলো এতটাই সহজলভ্য ঢাকা শহরের অলিগলি শুরু করে গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত তা ছড়িয়ে পড়েছে। হাত বাড়ালেই হাতের কাছে পাওয়া যায় মাদক। ‘দেশে প্রায় ৫০ লাখ ছেলেমেয়ে মাদকাসক্ত ’পুলিশের রাজশাহী রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) ইকবাল বাহার জানিয়েছেন, দেশের ১৩ থেকে ৩২ বছর বয়সী প্রায় ৫০ লাখ ছেলেমেয়ে মাদকাসক্ত। আধুনিক বাংলাদেশের ভবিষ্যতের জন্য এটা অত্যন্ত আশঙ্কাজনক বলে মনে করছেন তিনি। শুধু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একার পক্ষে এই মাদক নির্মূল সম্ভব নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটা থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে শুধু সীমান্ত এলাকার মাদকপাচার বন্ধ হলে চলবে না। এ ক্ষেত্রে প্রশাসন, পুলিশের পাশাপাশি সুধীমহল ও অভিভাবকদের সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। সচেতন হতে হবে সবাইকে।
উৎসঃ আমাদেরসময়.কম।৩০ আগষ্ট, ২০১৫।

::পরিবারের খোঁজখবর না নেওয়ার কারণে অনেক শিক্ষিত ছেলেমেয়ে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে। এটা অনেক সময় পরিবারের সদস্যরা জানেও না। ছেলেমেয়েরা এমনভাবে আসক্ত হয়ে পড়ছে যে মাদকের জন্য পরিবারের লোকজনকে হত্যা করতেও দ্বিধা করে না। তাই মাদকের ভয়াবহ ছোবল থেকে পরিবার ও দেশকে রক্ষা করতে হলে আগে দরকার পরিবারের সচেতনতা।—— ডা. মোহিত কামাল।

::সিগারেট দিয়ে নেশা শুরু হলেও মাদকের প্রতি আসক্তি ধীরে ধীরে শুরু হয়। বেশির ভাগই শুরু হয় বন্ধুবান্ধবের সাহচর্যে। মূলত মাদক কেনার অর্থ জোগাড় করতে গিয়েই কিশোর-তরুণরা ব্যাপকভাবে নানা অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে। এ সুযোগে মাদক ব্যবসায়ী, সংঘবদ্ধ অপরাধীচক্র খুন, অপহরণ, চাঁদাবাজিসহ নানা কাজে তাদের ব্যবহার করতে থাকে। মাদকের এই নেশার জালে একবার জড়িয়ে পড়লে কেউ আর সহজে বেরিয়ে আসতে পারে না। ফলে মাদকসেবিরা প্রতিদিন আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠে। আমাদের দেশে কিশোর সন্ত্রাসীর ক্রমবর্ধমান দাপটের যে তথ্য সম্প্রতি বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে এর মূল কারণ সম্ভবত নিহিত রয়েছে এখানেই। দেশের সর্বত্র সন্ত্রাসী কার্যক্রম স্কুল-কলেজগামী মেয়েদের নানাভাবে উত্ত্যক্ত করা, গুলি বা ছুরিকাঘাতে হত্যা করা কিংবা সড়ক দুর্ঘটনার আধিক্যের পেছনেও মাদকাসক্তির ভূমিকা অন্যতম।—— ডা. অরূপ রতন চৌধুরী।

::আমাদের সমাজে মাদকাসক্ত ছেলেমেয়েদের নিয়ে অনেক ঘটনাই ঘটেছে যেমন ২০১৩ সালের ১৪ আগস্ট মাদকাসক্ত ঐশী খুন করেছিল বাবা-মাকে। এই খুন নিয়ে সারাদেশে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল, গত ২২ মার্চ, ২০১৪ পঞ্চগড়ে মা-বাবাকে হত্যা করল মঞ্জুরুল হাসান নামে এক মাদকাসক্ত ছেলে। নেশার টাকা না পেয়ে পঞ্চগড় জেলা সদরে বাবা-মাকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করেছে মাদকাসক্ত ছেলে। হয়ত আরো অনেক পরিবারে এমন ঘটনা ঘটেই যাচ্ছে, হয়তবা আমরা তা সংবাদপত্রে দেখি না।
উৎসঃ আমাদেরসময়.কম।৩০ আগষ্ট, ২০১৫।

::বাংলাদেশে গত ছয় বছরে মাদক হিসেবে ইয়াবার ব্যবহার বেড়েছে ৭৭ গুণ (৭৬২১ শতাংশ)। তবে অন্যান্য মাদক যেমন ফেনসিডিল ও হেরোইনের ব্যবহার কিছুটা কমেছে। গাঁজার ব্যবহার সামান্য বেড়েছে। ২০০৮ সালের তুলনায় ২০১৩ সালে ইয়াবা উদ্ধারের পরিমাণ বেড়েছে ৭৭ গুণ।বাংলাদেশে মাদক সেবনে বছরে ব্যয় হয় প্রায় ৪০০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বা প্রায় ৩১০০০ কোটি টাকা। দেশে প্রায় ৫০ লাখ মানুষ মাদক সেবন করছে। কোনো কোনো বেসরকারি সংস্থার মতে তা ৮০ লাখেরও বেশি। মোট মাদকসেবির ৫০ ভাগেরও বেশি ইয়াবা ব্যবহার করছে।
উৎসঃ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তথ্য ২০১৩।

::দেশে বর্তমানে প্রায় ১৪ লাখ পথশিশু রয়েছে, যারা কোনো না কোনোভাবে মাদক সেবনের সঙ্গে সম্পৃক্ত।—— ওয়াহিদ বানু। নির্বাহী পরিচালক, অপরাজয়ী বাংলাদেশ।

::দেশের বিভিন্ন মাদক নিরাময় কেন্দ্রে প্রায় ১৩০০০ মাদকাসক্ত চিকিৎসাধীন রয়েছে। যাদের মধ্যে বেশির ভাগই মধ্য ও উচ্চবিত্ত পরিবারের উঠতি বয়সী ছেলেমেয়ে।
উৎসঃ মাদকদ্রব্য অধিদফতর।

::পথশিশুদের ৮৫% ই কোন না কোনভাবে মাদক সেবন করে। এর মধ্যে ১৯% হেরোইন, ৪৪% ধূমপান, ২৮% বিভিন্ন ট্যাবলেট এবং ৮% ইনজেকশনের মাধ্যমে নেশা করে থাকে। ঢাকা শহরে কমপক্ষে ২২৯টি স্পট রয়েছে, যেখানে ৯ থেকে ১৮ বছর বয়সী শিশুরা মাদক সেবন করে।
উৎসঃ বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরাম।

::ঢাকা বিভাগে মাদকাসক্ত শিশুর প্রায় ৩০% ছেলে এবং ১৭% মেয়ে। ১০ থেকে ১৭ বছর বয়সী ছেলে ও মেয়েশিশুরা শারীরিক ও মানসিকভাবে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। মাদকাসক্ত ৮০% পথশিশু মাত্র সাত বছরের মধ্যে অপরাধমূলক কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে পড়ে।
উৎসঃ জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট।

::মাদকাসক্ত শিশুদের ড্রাগ গ্রহণ ও বিক্রয়ের সঙ্গে জড়িত ৪৪ % পথশিশু, পিকেটিংয়ে জড়িত ৩৫%, ছিনতাইয়ে ১২%, মানবপাচার সহায়তা কাজে ১১%, দুধর্ষ সন্ত্রাসীদের সহায়তাকারী হিসেবে ৫% ও অন্যান্য ভ্রাম্যমাণ অপরাধে জড়িত ২১% ।এ ছাড়া বোমাবাজিসহ অন্যান্য সহিংস কর্মকান্ডে জড়িত ১৬%।
উৎসঃ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক গবেষণা জরিপ।

::দেশে প্রায় ৬৮ লাখ মানুষ মাদকাসক্ত। এদের মধ্যে ৮৪ ভাগ পুরুষ, ১৬ ভাগ নারী। সমাজের বিত্তশালী ব্যক্তি থেকে শুরু করে নারী ও শিশু-কিশোররাও মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। ওই প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, দেশজুড়ে প্রায় ৩.৫ লাখ মানুষ নানাভাবে মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত।
উৎসঃ জাতিসংঘের প্রতিবেদন।

::দেশে মাদকাসক্তের সংখ্যা ৪৭ লাখ। অধিদপ্তর আসক্তদের ৯০% কে কিশোর-তরুণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। তাদের ৪৫% বেকার এবং ৬৫% আন্ডারগ্র্যাজুয়েট। আর উচ্চশিক্ষিতের সংখ্যা ১৫%।অবৈধ মাদকদ্রব্য আমদানির জন্য প্রতি বছর ১০ হাজার কোটিরও বেশি টাকার মুদ্রা বিদেশে পাচার হচ্ছে।
উৎসঃ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর।

::মাদকের নেশা এখন আলো ঝলমল নগরীর প্রাণকেন্দ্র থেকে শুরু করে অন্ধকার গ্রামেও এখন এর অবাধ বিচরণ। ভৌগোলিক অবস্থানের ভিত্তিতে বাংলাদেশের মাদক ব্যবসা ও প্রাপ্তির সহজলভ্যতা বেশি এবং বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থান পরিপ্রেক্ষিতে তরুণ সমাজ এদিকে ঝুঁকেছেও বেশি- ঠিক যেমনটি প্রত্যাশা মাদক ব্যবসায়ীদের। ২০০২ সালের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী মাদকাসক্তদের মধ্যে হেরোইন সেবনের মাত্রা বেশি। সাদা পাউডার জাতীয় এই নেশা সেবনের হার মারাত্মক হারে বেড়েই চলেছে। মোট মাদকাসক্তের ৭৫% ই ছিল হেরোইনসেবী। ১৯৯৬ সালে এই হার ছিল ৫১%। ১৯৯৮ সালে ৬২% এবং ২০০০ সালে দাঁড়ায় ৭২%। বিভিন্ন সময়ে পরিচালিত বহু সরকারি ও বেসরকারি সমীক্ষায় পাওয়া তথ্যে প্রকাশ করা হয় হেরোইন পাচারের জন্য এ দেশকেই সবচেয়ে বেশি নিরাপদ মনে করছে পাচারকারীরা। কমপক্ষে দেশের ৩০টি রুট দিয়ে স্থল ও নৌপথে এ দেশে মাদক প্রবেশ করে বিমান ও জাহাজে করে পৌঁছে যাচ্ছে উন্নত বিশ্বে, বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে বাজার বা গোডাউন হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।শুধু ভারত থেকেই আসে ৩.৫ কোটি টাকার মাদকদ্রব্য। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আসে ফেনসিডিল।ভারত থেকে প্রতিদিন বাংলাদেশে আসছে ১০ লাখ বেতল ফেনসিডিল।দেশের প্রায় ৫১২টি পয়েন্টে প্রতিদিন হেরোইন, আফিম, প্যাথেডিন, ফেনসিডিল, গাঁজাসহ বিভিন্ন ধরনের মাদক বিক্রি হয়। তাছাড়া অন্য মাদকদ্রব্য। সর্বত্র হাত বাড়ালেই মিলছে এসব। সংঘবদ্ধ চোরাচালানি চক্র সবসময় বেপরোয়াভাবে ফেনসিডিল আনছে। বাস, ট্রাক, ট্রেনে সে ফেনসিডিল ছড়িয়ে পড়ছে সারা বাংলাদেশে। বাংলাদেশে মাদকাসক্তরা তাদের আসক্তির পেছনে বছরে খরচ করে কমপক্ষে ৫০০০০ কোটি টাকা।
উৎসঃ ফ্যামিলি হেলথ ইন্টারন্যাশনালের তথ্য।

::একজন মাদকাসক্ত তার নেশার পেছনে প্রতিদিন সর্বোচ্চ ৫০০ থেকে সর্বনিম্ন ৫০ টাকা খরচ করে। তবে বেশির ভাগের ক্ষেত্রেই দৈনিক খরচ ১০০ থেকে ২০০ টাকার মধ্যে। আর পক্ষান্তরে এই নেশার টাকার জোগান দিতে আসক্তরা বেছে নেয় বিভিন্ন অন্যায় পথ। যার ফলে সৃষ্টি হচ্ছে খুন, ছিনতাই, ডাকাতির মতো ঘটনা। নেশার জন্য বাবা খুন হচ্ছে সন্তানের হাতে। সেই খুনের দায় বহন করে ছেলেটি, হয় জেলে না হয় অন্ধকার জগতে প্রবেশ করছে। এভাবে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদে মাদক মানুষকে ঠেলে দিচ্ছে অবাধ ও বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে। এখানেই শেষ নয় ৪০ বছর বয়সের পরে আকস্মিক মৃত্যুর ৫০% ই ঘটে মাদকাসক্তির কারণে। আর সেই লোকটি মৃত্যুর আগে রেখে যান কিছু উত্তরসূরি। মাদকাসক্তদের ৫৯% ই আসে এমন পরিবার থেকে যাদের মাসিক আর্ন ১০০০-৫০০০ টাকার মধ্যে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী মাদকাসক্তদের ৩০% শুধু নেশার খরচ জোগান দিতেই নানা অপরাধ কর্মে জড়িয়ে পড়ে। এই সব জরিপে যে তথ্যটি সবচেয়ে বেশি আতঙ্ক ও ভয়ের কারণ, তা হচ্ছে দেশে মাদকাসক্তদের ৯১% কিশোর তরুণ ও যুবক বয়সী। আর এই আসক্তির ভয়াবহ বিস্তার ঘটেছে শিক্ষার্থী এবং শিক্ষিত বেকারদের মধ্যে। আমাদের দেশে মহিলাদের মধ্যে ও মাদকাসক্তদের সংখ্যা বাড়ছে। এটা উদ্বেগের কারণ। নারী আসক্তদের ৯০ ভাগের বয়স ১৫-৩৫ বছরের মধ্যে। বাদবাকি ৩৫-৪৫ বছরের মধ্যে। মাদকাসক্তদের মধ্যে শতকরা পাঁচজন নারী। তাদের মধ্যে ছাত্রী, গৃহিণী, ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী রয়েছেন।
উৎসঃ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান।

::মাদকসেবীরা গড়ে প্রতিদিন অন্তত ২০ কোটি টাকার মাদক সেবন করে থাকে। হিসাব অনুযায়ী মাসে ৬০০ কোটি টাকা। অন্যদিকে সারা দেশে প্রায় ৩০ লাখ মাদক ব্যবসায়ী প্রতিদিন কমপক্ষে প্রায় ২০০ কোটি টাকার মাদক কেনাবেচা করে। আরো একটি ভয়ঙ্কর চিত্র হচ্ছে, সারা দেশের ছড়িয়ে পড়া ইয়াবার শতকরা ৮৫ ভাগই ভেজাল। যার ফলে এসব ইয়াবা গ্রহণকারী মাদকাসক্তরা নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। তার মধ্যে কিডনি, লিভার ছাড়াও মস্তিষ্কের স্বাভাবিক কাজকর্ম নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, শতকরা ৮০ ভাগ খুনের সঙ্গে মাদকাসক্তরাও কোনো না কোনোভাবে জড়িত। দেশের প্রায় ৫১২ পয়েন্টে প্রতিদিন হেরোইন, আফিম, প্যাথেডিন, ফেনসিডিল, গাঁজাসহ বিভিন্ন ধরনের মাদক বিক্রি হয়। এ ছাড়া ভারত থেকে প্রতিদিন বাংলাদেশে আসছে ১০ লাখ বোতল ফেনসিডিলসহ অন্য মাদকদ্রব্য। আর দেশে প্রায় ৩০ লাখ মানুষ নিয়মিত ইয়াবা সেবন করছে।
উৎসঃ দৈনিক ইনকিলাব।২৮ জানুয়ারি, ২০১৬।

::বাংলাদেশে মাদক হিসেবে একসময়ে ফেনসিডিল শীর্ষস্থান দখল করলেও, এখন ইয়াবা সবাইকে ছাড়িয়ে গেছে৷ এর প্রধান ব্যবহারকারী তরুণ প্রজন্ম৷ তাই মোবাইল-ফোন” target=”_blank”>মোবাইল ফোন ও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ইয়াবার বাজারজাতকরণ সহজ হয়েছে৷ বাংলাদেশে ইয়াবা ট্যাবলেট প্রধানত আসে মিয়ানমার থেকে৷ বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) গত চার বছরে ১ কোটি ৭৫ লাখ ৭৪৫ পিস উদ্ধার করেছে কক্সবাজারের বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত এলাকা থেকে৷ এর মধ্যে ২০১৫ সালে সবচেয়ে বেশি ৫২ লাখ ১৯ হাজার ৮৫ পিস ইয়াবা উদ্ধার করেছে বিজিবি৷ উত্তেজক এই ট্যাবলেট রাজধানী ঢাকা থেকে শুরু করে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিক্রি করছে মাদক ব্যবসায়ীরা৷ এ জন্য জালের মতো ছড়িয়ে রয়েছে তাদের নেটওয়ার্ক৷ এমনকি এটি খুচরা পর্যায়ে বিক্রির জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পর্যন্ত ডিলার রয়েছে৷ বাংলাদেশে মাদকের থাবা বাংলাদেশ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশে গত আট বছরে মাদক হিসেবে ইয়াবার ব্যবহার বেড়েছে শতকরা ৬০০ ভাগ বা ছয়গুণ৷ অধিদপ্তরটির হিসাবে ২০০৮ সালে ৩৬ হাজার ৫৪৩টি, ২০০৯ সালে এক লাখ ২৯ হাজার ৬৪৪টি, ২০১০ সালে আট লাখ ১২ হাজার ৭১৬টি, ২০১১ সালে ১৩ লাখ ৬০ হাজার ১৮৬টি, ২০১২ সালে ১৯ লাখ ৫১ হাজার ৩৯২টি, ২০১৩ সালে ২৮ লাখ ২১ হাজার ৫২৮টি, ২০১৪ সালে ৬৭ লাখ ৬৭ হাজার ৩৩৮টি এবং ২০১৫ সালে ১ কোটি ৯৫ লাখ ৪৪ হাজার ১৭৫টি ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার হয়েছে৷
উৎসঃ DW.COM

::মাদক উৎপাদনে শীর্ষ কয়েকটি দেশঃ

১।আফগানিস্তানঃ বিশ্বে সবচেয়ে বেশি আফিম চাষ হয় আফগানিস্তানে৷ জাতিসংঘের হিসেবে, প্রতি বছর প্রায় পাঁচ থেকে ছয় হাজার টন কাঁচা আফিম উৎপাদন হয় সেখানে৷ ন্যাটো বাহিনীর সৈন্যরা চলে যাওয়ার পর আরো বেশি পরিমাণ জমিতে আফিমের চাষ হচ্ছে বলে জানা গেছে৷ যুক্তরাষ্ট্র ও এশিয়া হচ্ছে, আফগানিস্তানের আফিমের মূল ক্রেতা৷

২।কলম্বিয়াঃ কোকেন উৎপাদনে বিশ্বে সেরা কলম্বিয়া৷ জাতিসংঘের হিসেবে কলম্বিয়ায় প্রতি বছর তিন থেকে চার’শ টন কোকেন উৎপাদিত হয়৷ এছাড়া পেরু ও বলিভিয়াতেও কোকেনের চাষ হয়৷ ল্যাটিন অ্যামেরিকা, উত্তর অ্যামেরিকা আর ইউরোপ কোকেনের সবচেয়ে বড় বাজার৷

৩।মরক্কোঃ উত্তর আফ্রিকার মরক্কোতে প্রতি বছর গড়ে প্রায় দেড় হাজার টন মারিজুয়ানা ও হাশিশ উৎপাদিত হয়৷

৪।যুক্তরাষ্ট্র ও মেক্সিকোতে সীমিত আকারে মারিজুয়ানা বা গাঁজার ব্যবহার বৈধ করায় এর চাষ আরও বেড়েছে।

৫।গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গলঃ মাদক উৎপাদনে এশিয়ার তিন দেশ মিয়ানমার, লাওস আর থাইল্যান্ড ‘গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গল’ নামে পরিচিত৷ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই তিন দেশে প্রতিবছর গড়ে প্রায় এক হাজার টন আফিম উৎপাদিত হয়৷

৬।যুক্তরাষ্ট্র ও মেক্সিকোঃ মেথাম্ফেটামিন বা ক্রিস্টাল মেথ হলো এক ধরণের মাদক, যেটা এক ধরণের সুখানুভূতি এনে দেয় বলে মনে করেন এর সেবনকারীরা৷ ইদানীং এই মাদক সেবনের হার বাড়ছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ৷ তবে কোন দেশে এটা সবচেয়ে বেশি তৈরি হয় তা জানা যায়নি৷ তবে ক্রিস্টাল মেথ ল্যাবেও তৈরি করা যায়৷ তাই সারা বিশ্বে পুলিশ এ ধরনের ল্যাবে অভিযান চালাচ্ছে৷ এ পর্যন্ত যত অভিযান হয়েছে, তার ৮০ ভাগই হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র আর মেক্সিকোর ল্যাবে৷

::“২০১৩ সালে বিশ্বে দুই লাখ মাদকাসক্তের মৃত্যু হয়েছে, যেটি সবার জন্যই উদ্বেগের। এ অবস্থায় জনস্বাস্থ্য রক্ষায় বিশ্বব্যাপী মাদকবিরোধী সচেতনতা সৃষ্টির বিকল্প নেই।শুধু আইন করে লাভ হবে না। এজন্য দরকার জনপ্রতিরোধ। মাদক শরীরের জন্যে কতটা ভয়ঙ্কর তা অনুধাবনের সুযোগ তৈরি করতে এ ধরনের আলোচনার গুরুত্ব অপরিসীম। একইসঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নিষ্ঠার সঙ্গে কাজে উৎসাহিত করতে হবে। সীমান্তে যারা নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছেন, তাদেরকেও কঠোর হতে হবে।বাংলাদেশে মাদকের উৎপাদন না হলেও পার্শ্ববর্তী দেশগুলো থেকে আসা মাদকের অবাধ বিচরণে ধ্বংস হচ্ছে দেশের যুব সমাজ।” ——- ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের (আইপিইউ) প্রেসিডেন্ট সাবের হোসেন চৌধুরী।

::সারা বিশ্বে মাদককারবারীদের প্রতিরোধ কল্পে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন আন্দোলন। যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ১৯৮৭ সালে ২৩টি দেশ মাদক বিরোধী আন্দোলনে অংশ নেয়। সৌদি আরব, পাকিস্তান, ইরান প্রভৃতি দেশে মাদক চোরাচালানের শাস্তি মৃত্যুদন্ড। ব্রাজিল ও কলম্বিয়ায় মাদক উৎপাদক ও চোরাচালানিদের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনী দিয়ে যুদ্ধ পরিচালনা করা হয়। বাংলাদেশের ‘মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর’ নামে একটি বিভাগ কাজ করছে।
উৎসঃ দৈনিক ইত্তেফাক।২৯ জুন, ২০১৫।

::মাদকাসক্তির চিকিৎসাঃ মাদকাসক্তির চিকিৎসার বেশ কয়েকটি ধাপ রয়েছে। প্রথম পর্যায়ে চিকিৎসার জন্য উদ্বুদ্ধ করা হয়, মাদকাসক্তির ধরন নির্ণয় করা হয়। শারীরিক ও মানসিক পরীক্ষা করা হয়। এরপর তার ‘উইথড্রয়াল’ সিনড্রোম এবং মাদক প্রত্যাহারজনিত শারীরিক সমস্যার চিকিৎসা করা হয়। শরীর থেকে মাদকের ক্ষতিকর রাসায়নিক অংশগুলো বের করে দেয়া হয়, এ ধাপটিকে বলা হয় ‘ডিটক্সিফিকেশন’। এসময় তার পুষ্টি নিশ্চিত করতে হয় ও প্রয়োজনীয় ওষুধ প্রদান করা হয়। মাদকমুক্ত করার জন্য বিভিন্ন স্বীকৃত ওষুধ নির্দিষ্ট নিয়মে মনোচিকিৎসকের পরামর্শে সেবন করা লাগতে পারে। পরবর্তী ধাপে তাকে কাউন্সিলিংয়ের মাধ্যমে মাদকমুক্ত থাকার প্রেরণা দেয়া হয়। আবার যাতে মাদক গ্রহণ না করে সে বিষয়ে উপযুক্ত পরামর্শ দেয়া হয়, ফের আসক্ত হওয়ার জন্য যেসব ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ রয়েছে সেগুলো থেকে দূরে থাকার প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। তাকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে সাহায্য করা হয়, নানা সামাজিক কর্মকান্ডেও উৎসাহিত করা হয় চিকিৎসাধীন আসক্তজনকে। আসক্ত হওয়ার আগের যোগ্যতা ও গুণাবলি ফিরিয়ে দেয়ার জন্য পুনর্বাসনমূলক পদক্ষেপ নেয়া হয়। পারিবারিক বন্ধন দৃঢ় করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হয়। মাদকাসক্তি চিকিৎসার ধাপগুলো বেশ দীর্ঘমেয়াদি। তাই ধৈর্য ধরে চিকিৎসা করাতে হয়। অপরিপূর্ণ চিকিৎসার কারণে আবার আসক্তি (রিল্যান্স) হতে পারে। ফ্যামিলি কাউন্সিলিংও চিকিৎসার একটি জরুরি ধাপ।

::LIST OF GOVERNMENT TREATMENT CENTRE:
a. Central Treatment Center, Tejgaon, Dhaka.
b. Treatment Center, Chittagong.
c. Treatment Center, Rajshahi.
d. Treatment Center, Khulna.
e. Central Jail Treatment Center- Jessore, Rajshahi & Comilla.
উৎসঃ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর।

::পরিবারের করণীয়ঃ পারিবারিক পরিবেশ হতে হবে ধূমপানমুক্ত। সন্তানদের কার্যকলাপ এবং সঙ্গীদের ব্যাপারে খবর রাখতে হবে। সন্তানরা যেসব জায়গায় সবসময় যাওয়া-আসা করে সে জায়গাগুলো সম্পর্কে জানতে হবে। সন্তানদের সঙ্গে খোলামেলা ও সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি করতে হবে, যাতে করে তারাই নিজে থেকে তাদের বন্ধু-বান্ধব সম্পর্কে আলোচনা করে। পরিবারের সব সদস্যই ড্রাগের ক্ষতিকারক বিষয়গুলো সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করবেন। ধৈর্য ধরে সন্তানদের সব কথা শোনার জন্য অভিভাবকরা নিজেদের প্রস্তুত করবেন। সন্তানদের মঙ্গলের জন্য পরিবারের সদস্যরা যথেষ্ট সময় দেবেন। সন্তানদের সামাজিক, মানসিক, লেখাপড়া সংক্রান্ত অর্থনৈতিক চাহিদাগুলো যথাসম্ভব মেটাতে হবে, তবে প্রয়োজনের অতিরিক্ত দিয়ে তাদের প্রত্যাশা বাড়তে দেয়া যাবে না। পরিবারের সদস্যরা পরস্পরের প্রতি সহানুভূতিশীল হবেন, প্রায়ই তারা সবাই মিলে আনন্দদায়ক কিছু কার্যকলাপের পরিকল্পনা করবেন এবং পরিবারের সবাই মিলে সুন্দর সময় কাটাবেন। ‘গুড প্যারেন্টিং’ বিষয়ে জ্ঞান নিতে হবে বাবা-মাকে।

আরো পড়ুন:

বাংলাদেশ বিষয়াবলি অন্যান্য

আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি রাজনীতি

সরকারি চাকরি করতে দিতে হবে ডোপ টেস্ট বা মাদক পরীক্ষা

Leave a Reply

স্যার, কিভাবে আপনাকে সাহায্য করতে পারি?

Click one of our representatives below

Customer Support
Customer Support

Syeda Nusrat

I am online

I am offline

Technical Support
Technical Support

Ariful Islam Aquib

I am online

I am offline