বিসিএস ও ব্যাংক লিখিত প্রস্তুতি
শিশুশ্রম —– বিশ্ব ও বাংলাদেশ।
::ইতিহাস ঘাঁটিলে দেখা যায়, অষ্টাদশ শতাব্দির শেষভাগে গ্রেট ব্রিটেনে কারখানা চালু হইলে সর্বপ্রথম শিশুশ্রম একটি সামাজিক সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পূর্বাঞ্চল ও মধ্য পশ্চিমাঞ্চলে গৃহযুদ্ধের পর এবং দক্ষিণে ১৯১০ সালের পর শিশুশ্রম একটি স্বীকৃত সমস্যা হিসেবে দেখা দেয়। তত্কালে শিশুরা কারখানায় শিক্ষানবিশ অথবা পরিবারে পরিচারক হিসেবে কাজ করিত। কিন্তু কারখানাগুলিতে তাহাদের নিয়োগ দ্রুতই প্রকৃত অর্থে হইয়া দাঁড়ায় দাসত্ব। ব্রিটেনে ১৮০২ সালে এবং পরবর্তী বত্সরগুলিতে সংসদে গৃহীত আইন দ্বারা এ সমস্যার নিরসন হয়। ইউরোপের অন্যান্য দেশে একই ধরনের আইন অনুসরণ করা হয়।
উৎসঃ দৈনিক ইত্তেফাক।১৫ জানুয়ারি, ২০১৬।
::জাতিসংঘের শিশু সনদে বর্ণিত সঙ্গানুযায়ী ১৮ বছরের কমবয়সী সকলেই শিশু।এই সঙ্গানুযায়ী বাংলাদেশের ৪৫% ই শিশুর দলে রয়েছে।
::বিশ্বব্যাপী ১৬ কোটি ৭০ লাখেরও বেশি শিশু শ্রমিক হিসেবে কাজ করছে। ১৫ বছরের নিচে এ শিশুরা শিশুশ্রমের ফাঁদে আটকে রয়েছে। এর কারণ যেখানে বিশ্বব্যাপী ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সী কর্মক্ষম ৭.৫০ কোটি তরুণ বেকার, সেখানে ১৬.৫০ কোটি শিশু রয়েছে শ্রমিক হিসাবে।
উৎসঃ আন্তর্জাতিক শ্রম সংগঠন (আইএলও)।
::বাংলাদেশে ৩৪.৫০ লক্ষ শিশু শ্রমিক রহিয়াছে। ইহার মধ্যে প্রায় ১২ লক্ষ শিশু ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত। জরিপে অন্যতম প্রশ্ন ছিল—কেন শিশুরা শ্রমিক হিসেবে কাজ করিতে বাধ্য হইতেছে? কেন এইসব শিশু শিক্ষা হইতে বঞ্চিত? জরিপচিত্রে দেখা যাইতেছে, প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করিবার পূর্বেই যাহারা বিদ্যালয় হইতে ঝরিয়া পড়ে, তাহাদের একটি বড় অংশ বাস, টেম্পো, হিউম্যান হলার প্রভৃতি গণপরিবহনে হেলপার হিসেবে কাজ করে। কর্মস্থলে বেশিরভাগ সময় তাহাদের ঝুঁকিপূর্ণভাবে কার্যসম্পাদন করিতে দেখা যায়। কেহ কেহ চায়ের দোকান, হোটেল, রেস্তোরাঁ, মোটরগাড়ি ও রিকশার গ্যারেজ, সাইকেল নির্মাণ কারখানা, ইটভাটাসহ নানা ধরনের ছোট ছোট কারখানায় কাজ করিতেছে।দেশের ৫৭% শিশু শ্রমিক হিসেবে কাজ করিতে বাধ্য হইতেছে প্রধানত অন্নসংস্থানের নিমিত্ত।
উৎসঃ শিশুশ্রম জরিপ-২০১৩, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)।
::২৩.৭০% শিশুকে মজুরি দেওয়া হইলেও তাহার পরিমাণ প্রয়োজনের তুলনায় নগণ্য। অন্যদিকে ৯০ % শিশু প্রাথমিকভাবে বিদ্যালয়মুখী হইলেও শিক্ষা সমাপ্ত করিবার পূর্বেই অর্ধেকের বেশি ছেলেমেয়ে স্কুল হইতে ঝরিয়া পড়ে।
উৎসঃ FAO ও UNICEF এর ২০১৫ সালের জরিপ।
::আমাদের দেশে শিশুশ্রমিক নিয়োগের প্রায় ৯৫% ই ঘটে অনানুষ্ঠানিক খাতে। তাহাদের জন্য সাপ্তাহিক গড় কর্মঘণ্টা আনুমানিক ৪৫ এবং মাসিক বেতন ৫০০ টাকার নীচে। মেয়ে শিশুশ্রমিকের মাসিক বেতন ছেলে শিশুশ্রমিকের তুলনায় গড়ে প্রায় ১০০ টাকা কম।
উৎসঃ দৈনিক ইত্তেফাক। ১৫ জানুয়ারি, ২০১৬।
::ঘনবসতি, সীমিত সম্পদ এবং ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও দারিদ্র্যের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় শিশুরাই। অর্থনৈতিক টানাপোড়েন বেশিরভাগ পরিবারকে তাহাদের সন্তানদের উপার্জনমূলক কাজে জড়িত করিতে বাধ্য করে। যদিও দশ বত্সরে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটিয়াছে, দারিদ্র্য হ্রাস পাইয়াছে এবং শ্রমজীবী শিশুর সংখ্যাও জনসংখ্যা বৃদ্ধির অনুপাতে হ্রাস পাইয়াছে।
উৎসঃ সেভ দ্য চিলড্রেন’-এর একটি গবেষণা প্রতিবেদন।
::৫ হইতে ১৮ বছরের শিশু কোনো ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করিতে পারিবে না। ৫ হইতে ১৪ বত্সর অবধি শিশুশ্রমিক নিয়োগকর্তার জন্যও দণ্ডনীয় অপরাধ।
উৎসঃ জাতীয় শিশুনীতি-২০১১।
::বাংলাদেশে শিশুশ্রম বৃদ্ধির প্রবনতা একটি ছকে দেখানো হলোঃ
সাল———শ্রমিক(মিলিয়ন)———-হার(%)
১৯৯০-৯১———-৫.৮
——১১.৩
১৯৯৫-৯৬———৬.৫
—–১১.৬
১৯৯৯-২০০০—–৬.৯
—–১২.৯
২০০৭-৮————৭.৯
—–১৪.২
::বাংলাদেশে বর্তমানে মোট ৩৪ লক্ষ শিশু শ্রমে নিয়োজিত। এর মধ্যে ১৭ লাখ শিশু শ্রমে যুক্ত। বাকিগুলো অনুমোদন যোগ্য। তার মধ্যে ১২ লাখ ৮০ হাজার শিশু ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমে নিয়োজিত আর ২ লাখ ৬০ হাজার শিশু অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমে নিয়োজিত।
উৎসঃ বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।
::বাংলাদেশে শিশুশ্রমিকের সংখ্যা ৫-১৪ বছর বয়সী মোট শিশু জনসংখ্যার ১৯%, ছেলেশিশুদের ক্ষেত্রে এই হার ২১.৯% এবং মেয়ে শিশুদের ক্ষেত্রে তা ১৬.১%। অর্থনীতির খাত অনুযায়ী শিশুশ্রমিকদের বণ্টনের চিত্র হচ্ছেঃ কৃষি ৩৫%, শিল্প ৮%, পরিবহণ ২%, অন্যান্য সেবা ১০% এবং গার্হস্থ্যকর্ম ১৫%। কিন্তু পরিবহন খাতে শিশুশ্রমের ক্ষেত্রে লিঙ্গ বৈষম্য ব্যাপক। অর্থাৎ যেখানে ০.১% মেয়ে শ্রমিক সেখানে ছেলে শ্রমিক হলো ৩%। তবে শিশুশ্রম নিয়োগের প্রায় ৯৫%-ই ঘটে অনানুষ্ঠানিক খাতে। এদের জন্য সাপ্তাহিক গড় কর্মঘণ্টা আনুমানিক ৪৫ এবং মাসিক বেতন ৫০০ টাকার নিচে। মেয়ে শিশুশ্রমিকের মাসিক বেতন ছেলে শিশুশ্রমিকের তুলনায় গড়ে প্রায় ১০০ টাকা কম। বাংলাদেশের আনুমানিক ২০% পরিবারে ৫-১৪ বছরের কর্মজীবী শিশু রয়েছে। এই সংখ্যা শহুরে পরিবারগুলির জন্য ১৭% এবং গ্রামীণ পরিবারের জন্য ২৩%।
উৎসঃ বাংলাপিডিয়া।
::বাংলাদেশের ১৪ বছরের কম বয়সী ৬৩ লাখ শিশু গার্মেন্টস, বাসা বাড়িসহ বিভিন্ন সেক্টরে কাজ করে।দেশের শিল্প কারখানায় ৪০% শিশু কাজ করে।
উৎসঃ Asian Child Labour Report, UNICEF.
::ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ নগরীর ৪ টি ওয়ার্ড এর ১০ হাজার শ্রমজীবীকে বিশেষত সেবা দেয়ার লক্ষ্যে রিডিউসিং চাইল্ড লেবার প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। এর আওতায় ৫ হাজার শ্রমজীবী শিশু বিভিন্ন সুবিধা ভোগ করছে। ২০ টি শিখন কেন্দ্রের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা এই প্রকল্পের মাধ্যমে ২৫৬ জন শিশুকে ঝুঁকিপূর্ণ শ্রম থেকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। পাশাপাশি ১২-১৮ এর মধ্যে শিশুদের জন্য জীবন দক্ষতা প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। ফলে তারা শ্রম থেকে ফিরে আসার প্রক্রিয়ায় রয়েছে। অনেকে ফিরে এসেছেও। ২০১ জন শিশুকে আমরা এ র্পযন্ত কারিগরি প্রশক্ষণ দিয়েছি। এ বছর আমরা আরো প্রায় ১০০ শিশুকে আমরা এই প্রশিক্ষণ দিবো। ইতোমধ্যে ৫০০ পরিবারে আমরা জরিপ করেছি এবং প্রতি বছর প্রায় ১০০০ মানুষকে শিশুশ্রম সংক্রান্ত সচেতনতা সৃষ্টিতে সম্পৃক্ত করা হয়েছে।——- ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ পরিচালিত রিডিউসিং চাইল্ড লেবার প্রজেক্ট এর ব্যবস্থাপক রবার্ট কমল সরকার।
উৎসঃ দৈনিক সুপ্রভাত বাংলাদেশে। ২৩ এপ্রিল, ২০১৬।
::‘ঝুঁকিপূর্ণ কাজ থেকে শিশুদের সরিয়ে আনার লক্ষ্যে সরকার ২০১০ সালে জাতীয় শিশুশ্রম নিরসন নীতিমালা প্রণয়ন করেছে, আইএলও কনভেনশন ১৮২ সমর্থন করেছে, ৩৮টি কাজকে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ হিসেবে ঘোষণা করেছে।শুধু আইন বা শাস্তির ভয় দেখিয়ে শিশুশ্রম সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করা অসম্ভব শিশুশ্রম নিরসনে পরিবারিক সচেতনতা এবং সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে সমন্বয় বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।—— শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মো. মুজিবুল হক।
উৎসঃ দৈনিক কালের কন্ঠ।২০ এপ্রিল, ২০১৬।””
আরো পড়ুন:
বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস
বর্তমানে বিশ্বে আউটসোর্সিং তালিকায় বাংলাদেশ তৃতীয়
শিক্ষামন্ত্রীর কঠোর সমালোচনা করেছে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি
0 responses on "৩৭ তম লিখিত প্রস্তুতিঃ শিশুশ্রম ----- বিশ্ব ও বাংলাদেশ।"