১ম বিশ্বযুদ্ধ

প্রিলি, লিখিত ও ভাইভা

১ম বিশ্বযুদ্ধ – সংক্ষিপ্ত ও সহজ ইতিহাস
‘গ্রেট ওয়ার’ হিসাবে পরিচিত প্রথম বিশ্বযুদ্ধ বা WWI বা WW1, বিশ্বযুদ্ধ-১ একটি বৈশ্বিক যুদ্ধ যেটি ১৯১৪ সালের ২৮ জুলাই ইউরোপে শুরু হয় এবং ১১ নভেম্বর ১৯১৮ পর্যন্ত স্থায়ী ছিল। ৬০ মিলিয়ন ইউরোপীয়সহ আরো ৭০ মিলিয়ন সামরিক বাহিনী ইতিহাসের অন্যতম বৃহত্তম এই যুদ্ধে একত্রিত হয়। ৪ বছর স্থায়ী এই যুদ্ধে দেড় কোটি মানুষ প্রাণ যায় এবং ২ কোটি মানুষ আহত হয়, ৩টি সাম্রাজ্যের পতন হয়, নতুন রাষ্ট্রের জন্ম হয় এবং বিশ্বের মানচিত্রে বড় ধরনের পরিবর্তন আসে !
.
১ম বিশ্বযুদ্ধ | সংবাদ সংগঠন অ্যাসোসিয়েট প্রেসের ranking অনুযায়ী গত বিংশ শতাব্দির গুরুত্বপূর্ণ আটটি ঘটনার একটি হলো প্রথম বিশ্বযুদ্ধ। এই মহাযুদ্ধ সংঘটনের ফলে পরবর্তীতে একাধারে অনেকগুলো ঘটনা ঘটে। যেমন: বিশ্বজুড়ে বিষণ্নতা, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, হত্যাযজ্ঞ, স্নায়ুযুদ্ধ আর সাম্রাজ্যের পতন।
.
.
:: প্রেক্ষাপট ও সূচনা :
১ম বিশ্বযুদ্ধ | ১৯১৪ সালে অস্ট্রিয়ার যুবরাজ আর্কডিউক ফ্রানজ ফার্ডিনান্ডকে হত্যাই মূলত প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সূচনা করে। ১৯১৪ সালের ২৮ জুন বসনিয়ার রাজধানী সারায়েভো শহরে অস্ট্রিয়ার যুবরাজ আর্কডিউক ফ্রানজ ফার্ডিনান্ড এক সার্বিয়াবাসীর গুলিতে নিহত হন। অস্ট্রিয়া এ হত্যাকাণ্ডের জন্য সার্বিয়াকে দায়ী করে এবং ওই বছরের ২৮ জুন সার্বিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। এ যুদ্ধে দুদেশের বন্ধু রাষ্ট্রগুলো ধীরে ধীরে জড়িয়ে পড়ে। এভাবে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের (১৯১৪-১৯১৮) সূচনা হয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে একপক্ষে ছিল অস্ট্রিয়া, জার্মানি, হাঙ্গেরি, বুলগেরিয়া। যাদের বলা হতো কেন্দ্রীয় শক্তি। আর অপরপক্ষে ছিল সার্বিয়া, রাশিয়া, ব্রিটেনে, ফ্রান্স, জাপান, ইতালি ও আমেরিকা। যাদের বলা হতো মিত্রশক্তি।
.
.
:: যেভাবে বিশ্বযুদ্ধে মোড় নেয় :
১ম বিশ্বযুদ্ধ | যুবরাজ ফার্ডিনান্ড এর হত্যাকান্ডের পর সার্বিয়া একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে কিন্তু অস্ট্রিয়া একটি নিদৃষ্ট সময় বেঁধে দেয় প্রতিবেদন পেশ করার জন্য এবং বিচারের কিছু শর্ত বেঁধে দিয়ে তদন্ত কমিটিতে অস্ট্রো-হাঙ্গেরীয়ান সাম্রাজ্যের প্রতিনিধি নিয়োগের দাবী জানায়। কিন্তু সার্বিয়া এর সব শর্ত মানতে অস্বীকার করে। তখন জার্মান সম্রাট দ্বিতীয় উইলহেইম অস্ট্রিয়াকে সম্পুর্ন সমর্থন দেবার ঘোষনা দেয় এবং অস্ট্রিয়ান দাবীর সাথে সহমত পোষন করে। আক্রমানাত্মক পদক্ষেপ নেবার জন্য জার্মান সমর্থন অস্ট্রিয়ার জন্য ব্যাপক প্রয়োজনীয় ছিল, কিন্তু জার্মানী-অস্ট্রিয়ার এই যৌথ শক্তি’র উত্থানের বিপক্ষে জার্মানীর ২ প্রতিবেশী ফ্রান্স এবং রাশিয়া সার্বিয়ার পেছনে এসে দাড়ায়। এবং অস্ট্রিয়ার দ্বারা সার্বিয়া আক্রমনের পরপর ভিন্ন ভিন্ন চুক্তি অনুসারে জার্মানী-অস্ট্রিয়ার সাথে ফ্রান্স- রাশিয়া যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। অন্য একটি জার্মান-অটোমান চুক্তি অনুযায়ী রাশিয়া যুদ্ধে যোগ দিলে অটোমান সাম্রাজ্য জার্মানীর পক্ষে যুদ্ধে যোগ দেয়ার কথা ছিল, তাই অটোমান সাম্রাজ্যও যুদ্ধে যোগ দেয়! জার্মানী নিরপেক্ষ বেলজিয়াম আক্রমন করলে তখন পূর্ব চুক্তি অনুযায়ী ব্রিটেন জার্মানীর বিপক্ষে যুদ্ধে ঘোষনা করে! ১৯১৭ সালে রাশিয়ায় বলশেভিক ( কম্যুনিস্ট) বিপ্লবের ফলে রাশিয়া যুদ্ধ ত্যাগ করে। কিন্তু ফ্রান্স-ব্রিটেনকে রসদ যোগান দেয়ার অভিযোগে জার্মান সাবমেরিন যখন ৭টি যুক্তরাষ্ট্রের জাহাজ ডুবিয়ে দেয় তখন যুক্তরাষ্ট্র পর্যন্ত যুদ্ধে যোগ দিয়ে এটাকে বিশ্বযুদ্ধ রূপ দেয়! এবং মুলত এরপরই জার্মান পরাজয় নিশ্চিত হয়!
.
.
:: বিশ্বযুদ্ধের কারণ :
১। হাঙ্গেরিয়ান সাম্রাজ্যের যুবরাজ আর্চডিউক ফ্রানজ ফার্দিনান্দকে হত্যাই মূলত প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সূচনা করে।
.
২। তবে অস্ট্রিয়ার যুবরাজ হত্যাকাণ্ডই প্রথম বিশ্বযুদ্ধের একমাত্র কারণ ছিল না। অন্যতম একটি কারন বলে চিন্হিত করা যায়, নব্য ও উগ্র জাতীয়তাবাদের প্রসার! অস্ট্রো-হাঙ্গেরীয়ান সাম্রাজ্য, অটোমান সাম্রাজ্য ২টিই তাদের মানচিত্রের বিভিন্ন অংশে এবং মুলত বলকান অঞ্চলে জাতীয়তাবাদীদের দ্বারা আক্রান্ত হয়ে এলাকা হারাচ্ছিল। রাশিয়ার সম্রাট ( জার ) ধর্মীয় ( খ্রিষ্টান অর্থোডক্স ) ও ( স্লাভিক ) জাতীগত নৈকট্যের কারনে এবং রাশিয়ান নেতৃত্ব নিশ্চিত করতে ও জাতীয় “”প্রাইড”” সমুন্নত রাখতে সার্বিয়ানদের পাশে দাড়ায়। ১৮৭৮ এর যুদ্ধে জার্মানীর নিকট পরাজিত ফ্রান্স জাতীগতভাবেই জার্মানীর বিরোধীতাকারী ছিল! এবং আরো বেশী শক্তিশালী জার্মানী মানেই ফরাসী জাতি’র জন্য হুমকী! আর যেই হত্যাকান্ড নিয়ে এত কাহিনী সেটাও জাতীয়তাবাদীরই কাজ! অস্ট্রো-হাঙ্গেরীয়ান সাম্রাজ্যের দক্ষিনের একটি অংশকে সার্বিয়ার সাথে একীভুত করার লক্ষ্যেই এক উগ্র জাতীয়তাবাদী সার্ব বসনিয়াক, যুবরাজ ফার্ডিনান্ডকে প্রকাশ্য রাজপথে গুলি করে হত্যা করে!
.
৩। তাছাড়া উনিশ শতকে শিল্পে বিপ্লবের কারণে সহজে কাঁচামাল সংগ্রহ এবং তৈরি পণ্য বিক্রির জন্য উপনিবেশ স্থাপনে প্রতিযোগিতা এবং আগের দ্বন্দ্ব-সংঘাত ইত্যাদিও প্রথম বিশ্ব যুদ্ধের কারণ।
.
৩। কিছুক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপও এই যুদ্ধ শুরুর অন্যতম কারণ বলে বিবেচনা করা হয়। যেমন: জার্মান ডুবোজাহাজের অবাধ চলাচলের ফলে লুসিটানিয়া নামের একটি বৃটিশ যাত্রীবাহী জাহাজ ডুবে যাওয়া; এবং জিমারম্যানের একটি নোট, যেখানে লেখা ছিল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে জার্মানদের কূটচালের কথা। ভার্সাই চুক্তির ফলে জার্মান তার অধিকৃত অনেক এলাকা ছেড়ে দিতে এবং ক্ষতিপূরণ বাবদ অর্থ পরিশোধ করতে বাধ্য হয়। সেসময়ের মার্কিন রাষ্ট্রপতি উইলসন ভার্সাই চুক্তি সম্পাদন করেন কিন্তু তিনি সিনেটকে দিয়ে এটি অনুমোদন করাতে ব্যর্থ হন।
.
.
:: প্রভাব ও পরিনাম
১। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ফলে জার্মান, অ্যাস্ট্রো-হাঙ্গেরিয়ান, অটোমান ও রোমান সাম্রাজ্যের পতন ঘটে। ৩টি সাম্রাজ্যের পতন হয়, নতুন রাষ্ট্রের জন্ম হয় এবং বিশ্বের মানচিত্রে বড় ধরনের পরিবর্তন আসে
২। এই মহাযুদ্ধের ফলে মধ্যপ্রাচ্য ও ভিয়েতনামে ঔপনিবেশিক বিদ্রোহের সূচনা হয়।
৩। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ অ্যামেরিকানদের সংস্কার ও নৈতিক ধর্মযুদ্ধের বিশ্বাস ধ্বংস করে।
৪। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ফলে নারীর ভোটাধিকার নিষেধ এবং সুশীল সমাজের তিক্ত তর্কের একটি সুদূর প্রসারী প্রভাব দেখা দেয়।
.
.
:: ফলাফল:
১। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে দেড় কোটি মানুষ নিহত হয়। প্রায় এবং ২ কোটি মানুষ আহত হয়। এই মহাযুদ্ধে প্রায় ১৮৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রত্যক্ষ ও ১৫১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার পরোক্ষ খরচ হয়। যেটি ইতিপূর্বে ঘটিত যেকোনো যুদ্ধব্যায়ের চেয়ে অনেক বেশি।
২।৩টি সাম্রাজ্যের পতন ঘটে। রোমান সাম্রাজ্য ১৯১৭ সালে, জার্মান ও অ্যাস্ট্রো-হাঙ্গেরিয়ান সাম্রাজ্য ১৯১৮ সালে এবং অটোমান সাম্রাজ্য ১৯২২ সালে।
৩। অস্ট্রিয়া, চেক স্লোভাকিয়া, এস্তোনিয়া, হাঙ্গেরি, লাটভিয়া, লিথুনিয়া এবং তুরস্ক স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে ওঠে।
৪। অটোমান সাম্রাজ্যের অধীনে থাকা অধিকাংশ আরব এলাকা বৃটিশ ও ফরাসি সাম্রাজ্যের অধীনে আসে।
৫। ১৯১৭ সালে বলশেভিকরা রাশিয়ার এবং ১৯২২ সালে ফ্যাসিস্টরা ইতালির ক্ষমতায় আরোহন করে।
৬। এ যুদ্ধের অন্য ফল হলো: অ্যামেরিকানরা তুরস্কে গণহত্যা চালায় এবং ইনফ্লুয়েঞ্জায় বিশ্বব্যাপী ২৫ মিলিয়ন মানুষের মৃত্যু হয়। সূত্র: ডিজিটাল হিস্টোরি।
.
.
:: অজানা কিছু তথ্য
১। ময়দানে যখন শত্রুপক্ষ আর মিত্রপক্ষের যুদ্ধ চলছিল ঠিক তখন একদল সৈনিক খুব গোপনে শত্রুপক্ষের পরিখাগুলোর নিচে টানেল খুড়তে ব্যস্ত। প্রায় ১০০ ফুট নিচ দিয়ে এইসব টানেল খোড়া হয়েছিল বিভিন্ন যুদ্ধক্ষেত্রে। বেলজিয়ামের মেসিন রিজে প্রায় নয় লক্ষ পাউন্ডের এক্সপ্লোসিভ ফাটানো হয়েছিল। যার ফলশ্রুতিতে শত্রুপক্ষ একেবারে পর্যদুস্ত হয়ে পরে। আর সেই বোমা ফাটার আওয়াজ শোনা গিয়েছিল ১৪০ মাইল দূরে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন ডাউনিং স্ট্রিট থেকেও!
২। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ সাংবাদিকদের জন্য মোটেই সুখের ছিল না। জীবনের ঝুকি নিয়ে অনেক সাংবাদিক যুদ্ধক্ষত্রের সংবাদ সংগ্রহ করছিল। তবে ব্রিটিশ সরকার ব্যপারটা মোটেই ভালো চোখে দেখেনি, তাদের মনে হয়েছে এই তথ্য শত্রুপক্ষের জন্য সুবিধা হয়ে দাড়াতে পারে। আর তাই যুদ্ধক্ষেত্রে তাদের নিষিদ্ধ করে দেয়া হয়। নিষেধ অমান্য করলে শাস্তি ছিল মৃত্যুদন্ড পর্যন্ত!
৩। প্রথম বিশ্বযুদ্ধকালীন সময়ে প্রতি সপ্তাহে প্রায় ১২ মিলিয়ন চিঠি পাঠানো হত রণক্ষেত্রে। যুদ্ধশেষ হতে হতে মোট সংখ্যাটি দাঁড়ায় প্রায় ২০০ কোটি!
৪। যুদ্ধ মাঝেমাঝে কিছু কিছু গবেষণা ত্বরান্বিত করে। এই যেমন প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে বিজ্ঞানী ও শৈল্যচিকিৎসক হ্যারন্ড গিলিস যুদ্ধাহত সৈনিকদের ক্ষত ও অঙ্গহানি দেখে মর্মাহত হন। বিকৃত হয়ে যাওয়া মুখমন্ডল ও অন্যান্য ক্ষত সারানোর জন্য তিনি প্লাস্টিক সার্জারীর ধারণার প্রভূত উন্নতি সাধন করেন প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়।
৫। ব্লাড ব্যাংকেরও প্রভূত উন্নতি ঘটে যায় প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়টায়। সৈনিকরা নিয়মতি রক্তদানে অভ্যস্থ হয় এইসময়। লক্ষ লক্ষ আহত মানুষের জীবন রক্ষাত যেটি অনেক বড় ভূমিকা রাখে।
৬। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ অনেকটাই হয়েছিল পরিখায়। মূলত এই পরিখায় যুদ্ধ হবার জন্যই অনেক সৈনিকের প্রাণ বেচে গিয়েছিল। প্রতি ১০ জন ব্রিটিশ সৈনিকের ৯ জনই বেঁচে ফিরতে পেরেছিল এই যুদ্ধের ময়দান থেকে।
৭। যুদ্ধের দামামা বাজতেই দলে দলে দেশপ্রেমিক জনতা সৈনিকের কাতারে নাম লেখায়, যাদের অনেকেই ছিল কম বয়সী। সবচেয়ে কম বয়সী ব্রিটিশ সৈন্যর বয়স ছিল মাত্র ১২ বছর, তার নাম সিডনি লুইস। এই রকম হাজারো তরুণের আত্মত্যাগেই এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে।
.
.
:: ১ম বিশ্বযুদ্ধে :: একটি বিশ্লেষন
একটা বিষয় সব সময় মনে রাখা অত্যন্ত জরুরী যে, আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে কোন শত্রু-মিত্র নাই, আন্তর্জাতিক রাজনীতি’র মূলনীতিই হচ্ছে ক্ষমতা অর্জনের প্রতিযোগীতা এবং “”ব্যালেন্স অব পাওয়ার””! মানে, কোন রাষ্ট্রই চায় না অন্য একটা রাষ্ট্র এতটা শক্তিশালী হোক যেটি আগামীতে নিজেদের জন্য হুমকি হতে পারে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পটভুমি হিসেবে খুবই গুরুত্বপূর্ন আরেকটা মনে রাখার বিষয় হলো, জার্মানী-অস্ট্রিয়া এবং ইটালীর মাঝে ১৮৮২ সাল থেকে সামরিক জোট গঠনের চুক্তি বলবৎ ছিল, ১৯০২ এ সেটা নবায়ন হয়। এটার “”কাউন্টার ওয়েট”” হিসেবে ১৯০৪ সালে ব্রিটেন এবং ফ্রান্স যৌথ সামরিক চুক্তি করে।
.
১ম বিশ্বযুদ্ধ | এবার যুদ্ধের কারন ভাল করে বুঝার জন্য, আমরা তৎকালীন সময়ের দেশগুলোর অবস্থান কেমন ছিল সেটা দেখি :
মাত্র ১৮৭১ সালে জার্মানী একটি রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করলেও তৎকালীন সাম্রাজ্যবাদের যুগে ১৮৯৮ এ এসেই তাদের উচ্চাকাঙ্খী সম্রাট, কাইজার দ্বিতীয় উইলহেইমের মনে ইউরোপের বাইরেও সাম্রাজ্য স্থাপনের খায়েশ জাগে। অবশ্য জার্মান অর্থনীতি এবং সামরিক শক্তি সেই স্বপ্ন দেখার মত অবস্থানে ছিলও।
.
অপরদিকে রাশিয়ার সম্রাট দ্বিতীয় নিকোলাসও ক্ষয়িষ্ণু অস্ট্রো-হাঙ্গেরীয়ান সাম্রাজ্যের এলাকায় নিজ প্রভাব বিস্তারের দিকে নজর ছিল, এবং ঘরোয়া সমস্যা মানে তৎকালীন কম্যুনিস্ট বিপ্লব থেকে জনগণের নজর ফেরানোর জন্য এবং ক্ষমতা নিশ্চিতের জন্য একটি যুদ্ধজয় খুব ইতিবাচক মনে করে। এছাড়াও অস্ট্রিয়ার সুত্র ধরে সার্বিয়ায় জার্মান উপস্থিতি রাশিয়া একটি নিশ্চিত হুমকি স্বরূপ দেখে!
.
১ম বিশ্বযুদ্ধ | ভৌগলিকভাবে ইউরোপের বাইরে অবস্থিত একটি দ্বীপরাষ্ট্র ব্রিটেন, প্রচন্ড শক্তিশালী নৌ-শক্তির অধিকারী সাম্রাজ্যটা এবং নৌ- সামরিক শক্তি দ্বারা তৎকালীন সময়ের অর্থনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ সমুদ্রপথে একক আধিপত্য বিস্তার করে রেখেছিল এবং বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে থাকা এর কলোনিগুলোর সাহায্যে তৎকালীন বিশ্বে ব্রিটেন ছিল একক পরাশক্তি। জার্মান উত্থান ছিল তার চোখে নিজ শক্তির প্রতি হুমকি! এবং জার্মান দৃষ্টি ছিল ব্রিটেনকে চ্যালেঞ্জ করা!
.
১ম বিশ্বযুদ্ধ | অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরী ও অটোমান সাম্রাজ্য ২টি অতীতে প্রচন্ড শক্তিশালী কিন্তু সেইসময় পতনের মুখে থাকা শক্তি, জার্মানীর সাহায্যে তাদের হারানো ক্ষমতা ফিরে পাবার স্বপ্ন ছিলই। ফ্রান্স তখন, আফ্রিকার কলোনী থেকে প্রাপ্ত সম্পদের কারনে বেশ ভাল কন্ডিশনে থাকলেও একটি শক্তিশালী জার্মানী মানেই তাদের ভয়াবহ ক্ষতি।
.
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি এবং ভৌগলিক ও সামরিক শক্তি ব্যাপক থাকলেও তাদের নীতি ছিল যেকোন ইউরোপীয়ান ঝামেলার বাইরে থাকা।
.
:: বিশ্লেষন :
যুবরাজের হত্যার পর, জার্মানীর হিসাবে ছিল যে, সার্বিয়ার বিরুদ্ধে একটি সংক্ষিপ্ত, আঞ্চলিক যুদ্ধে বিজয়ের সম্ভাবনা আছে। তাই তারা অস্ট্রিয়াকে যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে সার্বিয়ায় হামলা করার অনুমুতি দিয়ে দেয়। যেটি হয় বিরাট ভুল!
.
জার্মানী অস্ট্রিয়াকে নজিরবিহীন সমর্থন দেয়ায় ভবিষ্যৎ জার্মান শক্তি’র সম্ভাবনায় আতংকিত ফ্রান্স এবং রাশিয়ার তরফ থেকে অনাকাঙ্খিত শত্রুতা ডেকে আনে!
.
রাশিয়া এবং ফ্রান্স সাথে সাথে যুদ্ধে যোগ দিলেও জার্মানী তাদের ভালই মোকাবেলা করছিল, কিন্তু ব্রিটেনের চোখে রাশিয়া এবং ফ্রান্সের তুলনায় একটি নতুন ও শক্তিশালী জার্মানী ছিল বড় হুমকী তাই তারা পূর্বের চুক্তি অনুযায়ী ও নিজেদের ক্ষমতার সুরক্ষিত করার জন্যই জার্মানীর বিপক্ষে যুদ্ধ ঘোষনা করে দেয়। ব্রিটেনের মত পরাশক্তির আগমন জার্মানীর জন্য ব্যাপক থ্রেট হয়ে দাড়ায়!
.
আভ্যন্তরীন রাজনৈতিক পরিবর্তনের মাঝেই রাশিয়া পরাজিত হয়ে যুদ্ধত্যাগ করে। ব্যাপক সৈন্য ও সম্পদের ক্ষয়-ক্ষতি ও কম্যুনিস্ট প্রোপাগান্ডাই সম্রাটের পতন ও রাশান পরাজয় নিশ্চিত করে!
.
ইতিমধ্যেই ৩ বছর ধরে চলা যুদ্ধে এবং শীতকালে রাশিয়ার অভ্যন্তরে আক্রমন করে ব্যাপক ক্ষতির শিকার জার্মান সেনাবাহিনী অদুরদর্শীতার পরিচয় দেয় আমেরিকান জাহাজে আক্রমন করে! জার্মান নৌ-বাহিনীর আক্রমন ঘুমন্ত দৈত্য যুক্তরাষ্ট্রকে যুদ্ধে ডেকে এনে চুড়ান্ত জার্মান পরাজয় নিশ্চিত করে! ( এমন স্ট্র্যা টেজিক ভুল জার্মানদের দ্বারাই সম্ভব তা আবারো প্রমানিত হয় ২য় বিশ্বযুদ্ধে )

লাইভ কোর্স অফারঃ https://eshikhon.com/pro-offer/

 

মন্তব্য করুন

স্যার, কিভাবে আপনাকে সাহায্য করতে পারি?

Click one of our representatives below

Customer Support
Customer Support

Syeda Nusrat

I am online

I am offline

Technical Support
Technical Support

Ariful Islam Aquib

I am online

I am offline