৩৮ তম বিসিএস প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষা প্রস্তুতি আন্তর্জাতিকে, পার্ট – ১২
আজকের বিসিএস ভাইভায় জিকা ভাইরাস সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয়েছে
.
উত্তরে সহায়ক কিছু তথ্য
.
জিকা ভাইরাস
———–
-জিকা ভাইরাস ছড়ায় > এডিস মশা থেকে
এ পর্যন্ত সংক্রমণ হয়েছে > প্রায় ২৫ টি দেশে।
আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ > হালকা জ্বর, চোখ ব্যাথা, মাথা ব্যাথা।
আক্রান্ত হলে > শিশু অস্বাভাবিক ছোট মাথা নিয়ে জন্মাবে, বুদ্ধি প্রতিবন্ধী হবে চিকিৎসা বিজ্ঞানে যাকে ‘মাইক্রোসেফালি’ বলে।
জিকা ভাইরাসের নামকরনের ইতিহাস : ‘জিকা’ নামটি নেয়া হয়েছে উগান্ডার জিকা বন থেকে। ১৯৪৭ সালে হলুদ জ্বর নিয়ে গবেষণার সময় বিজ্ঞানীরা জিকা বনের একটি খাচায় একটি বানর রাখে। পরে এ বানরটি জ্বরে আক্রান্ত হলে বানরটির দেহে বিজ্ঞানীরা একটি সংক্রামক এজেন্টের অস্তিত্ব খুঁজে পান। পরবর্তীতে ১৯৫২ সালে এর নাম দেয়া হয় জিকা ভাইরাস। ১৯৫৪ সালে নাইজেরিয়ায় এক ব্যক্তির দেহে প্রথম এ ভাইরাস পাওয়া যায়
/
.
জিকার টিকা তৈরিতে একসঙ্গে কাজ করবে ব্রাজিল ও যুক্তরাষ্ট্র
/
ওয়াশিংটন, ৩০ জানুয়ারি (বাসস) : জিকা ভাইরাসের টিকা আবিষ্কারে একটি উচ্চ পর্যায়ের দ্বিপক্ষীয় কার্যক্রম শুরু করতে একমত হয়েছে ব্রাজিল ও যুক্তরাষ্ট্র । আমেরিকা মহাদেশে এ ভাইরাস দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে এবং এটা মাইক্রোসেফালি রোগের জন্য দায়ী।
ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট দিলমা রুসেফ ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা শুক্রবার জিকা ভাইরাস নিয়ে তাদের ‘অভিন্ন উদ্বেগ’ নিয়ে আলোচনা করেন।
হোয়াইট হাউস জানায়, ভাইরাসটি ঠেকাতে আরও আধুনিক প্রতিষেধক আবিষ্কার ও প্রযুক্তি ব্যবহারে নিজেদের জ্ঞান ও উন্নত গবেষণাকে কাজে লাগাতে এবং কার্যক্রম জোরদারে সমন্বিত প্রচেষ্টা গ্রহণের ব্যাপারে নেতৃবৃন্দ একমত হয়েছেন।
তারা আরো ব্যাপকভাবে সংক্রামক ব্যাধি মোকাবেলায় জাতীয়, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক সক্ষমতাকে অব্যাহত অগ্রাধিকার দেয়ার ব্যাপারেও সম্মত হয়েছেন।
রুসেফের কার্যালয় জানায়, দ্বিপক্ষীয় গ্রুপ টিকা তৈরি ও রোগনিরাময় সংক্রান্ত বিষয়ের উন্নয়নে একসঙ্গে কাজ করবে।
ডেঙ্গুর প্রতিষেধক নিয়ে ব্রাজিল’স বুতানতান ইনস্টিটিউট অব বায়োমেডিক্যাল রিসার্চ এবং ইউএস ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ যেভাবে সমঝোতার ভিত্তিতে কাজ করেছে তার ওপর ভিত্তি করেই জিকা ভাইরাসের প্রতিষেধক নিয়ে কাজ করবে ব্রাজিল ও যুক্তরাষ্ট্র।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, জিকা ভাইরাস সহজলভ্য হতে আরো কয়েক বছর লেগে যেতে পারে।
ল্যাটিন আমেরিকায় ছড়িয়ে পড়ছে জিকা ভাইরাস। এটি শিশুদের মস্তিষ্কে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। জিকা ভাইরাসবাহী মশা নিধনে রুসেফ দুই লাখ ২০ হাজার সেনা নিয়োগ করেছেন ব্রাজিলে। সে দেশে গত কয়েক বছরে ছোট মাথা নিয়ে বা ত্রুটি নিয়ে জন্মানো শিশুর সংখ্যা বেড়ে গেছে। তবে এটি জিকা ভাইরাসের কারণেই হচ্ছে কি না, তা নিয়ে শতভাগ নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
জিকা ভাইরাসের কারণে অনেক সময় স্নায়বিক বৈকল্য, দুর্বলতা ও পক্ষাঘাতও হতে পারে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংগঠন (ডব্লিউএইচও) গত বৃহস্পতিবার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে, আমেরিকা মহাদেশে ৩০-৪০ লাখ লোক জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে। বিশ্ব সংস্থাটি বলছে, ভাইরাসটি ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং এই আশঙ্কায় ‘জরুরি দল’ গঠন করা হচ্ছে। এর আগেই ল্যাটিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়া জিকা ভাইরাস নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে জরুরি পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানিয়েছিলেন একদল মার্কিন চিকিৎসাবিজ্ঞানী।
.
.
জিকা ভাইরাস সম্পর্কে জানুন
.
বর্তমানের আলোচিত এক ভাইরাসের নাম ‘জিকা’। বিশ্বজুড়ে বিস্ফোরক দ্রব্যের মতো ছড়িয়ে পড়ছে মশাবাহিত এই ভাইরাস। ভারত,পাকিস্তানসহ প্রায় ২০টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে জিকা ভাইরাস। বাংলাদেশে এখনও ছড়ায়নি জিকা। তবে থাকতে হবে সতর্ক।
.
নামকরণের ইতিহাস
‘জিকা’ নামটি নেওয়া হয়েছে উগান্ডার জিকা বন থেকে। ১৯৪৭ সালে হলুদ জ্বর নিয়ে গবেষণার সময় বিজ্ঞানীরা জিকা বনে একটি খাঁচায় একটি বানর রাখে। পরে বানরটি জ্বরে পড়লে তার দেহে একটি সংক্রামক এজেন্টের উপস্থিতি শনাক্ত করা হয়। ১৯৫২ সালে এর নাম দেয়া হয় জিকা ভাইরাস। এরপর ১৯৫৪ সালে নাইজেরিয়ায় এক মানুষের দেহে এই ভাইরাস পাওয়া যায়।
লক্ষণ
জ্বর, র্যাশ (চামড়ায় লাল ফুসকুড়ি), গোঁড়ালিতে ব্যথা, চোখ লাল হয়ে যাওয়া – জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে সাধারণত এ সব লক্ষণ দেখা দেয়। এছাড়া পেশীতে ও মাথায়ও ব্যথা হতে পারে৷ জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত প্রতি ৫ জনের মধ্যে একজনের অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
.
যেসব দেশে ছড়িয়েছে
২০১৫ সাল নাগাদ আফ্রিকা, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং দক্ষিণ ও মধ্য আমেরিকার কয়েকটি দেশে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের দুজন নাগরিকের শরীরেও এই ভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে।
যেভাবে ছড়ায়
এডিস ইজিপ্টি নামের মশার কামড়ের মাধ্যমে এই ভাইরাস মানুষের শরীরে প্রবেশ করে। ফলে মশার কামড় থেকে বাঁচার যে উপায়গুলো আছে, সেগুলো মেনে চললেই এই ভাইরাসের আক্রমণ থেকে বাঁচা যাবে।
ভ্যাকসিন নেই
এই রোগের চিকিৎসায় এখনও কোনো প্রতিষেধক আবিষ্কৃত হয়নি। ফলে সতর্ক থাকাটাই হবে সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ। অবশ্য এই রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার ঘটনা বিরল।
.
গর্ভবতী নারীরা বেশি সাবধান!
সম্প্রতি একটি বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারছেন না গবেষকরা। তাদের কারও মত হচ্ছে, কয়েকটি দেশে শিশুদের ‘মাইক্রোসেফালি’ রোগে আক্রান্ত হওয়ার কারণ জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত গর্ভবতী মা। এই রোগ হলে শিশুদের মস্তিষ্কের গঠন ঠিকমতো হয় না, ফলে শিশুর বুদ্ধি প্রতিবন্ধী হওয়া, শারীরিক বৃদ্ধি অস্বাভাবিক বা বিলম্বিত হওয়া থেকে শুরু করে অকালে মারা যাওয়ার আশঙ্কাও বেড়ে যায়। বৈজ্ঞানিকভাবে অবশ্য এটি এখনও প্রমাণ করা যায়নি।
সূত্র: ডিডব্লিউ
.
‘জিকায় আক্রান্ত হতে পারে ৩০-৪০ লাখ মানুষ’
.
আগামী এক বছরে উত্তর এবং দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোতে জিকা ভাইরাসে ত্রিশ থেকে চল্লিশ লাখ পর্যন্ত মানুষ আক্রান্ত হতে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা।
এর আগে বিস্ফোরকের মতো ছড়িয়ে পড়া এই ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সতর্কতা জারি করে সংস্থাটি।
.
এদিকে আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি জানিয়েছে, আগস্টে ব্রাজিলে অনুষ্ঠিতব্য অলিম্পিক গেমসের খেলোয়াড় ও কর্মকর্তাদের জিকা ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে বাঁচাতে সব রকম চেষ্টাই করবে সংস্থাটি।
বলা হচ্ছে, জিকা ভাইরাসের দ্বারা আক্রান্ত হলে তার কোনো চিকিৎসা নেই, প্রতিষেধকও নেই। তবে উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকার বিশটিরও বেশী দেশে দ্রুতগতিতে ছড়িয়ে পড়েছে এই রোগ।
এমন প্রেক্ষাপটে করনীয় ঠিক করতে সোমবার জেনেভায় জরুরি বৈঠক ডেকেছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান মার্গারেট চ্যান।
মার্গারেট চ্যান বলেন, এটি অত্যন্ত উদ্বেগজনক এবং প্রচণ্ড অনিশ্চয়তাও রয়েছে এনিয়ে। আমাদের খুব দ্রুত কিছু প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পেতে হবে।
চিকিৎসকেরা বলছেন, মশা-বাহিত জিকা ভাইরাস দ্বারা গর্ভবতী মায়েরা আক্রান্ত হলে শিশু বিকৃত মস্তিষ্ক নিয়ে জন্মাতে পারে।
কিন্তু তার কোনো উপসর্গ আগে থেকে দেখা যাবে না। ফলে গত কয়েকদিন ধরেই বিশ্বজুড়ে এক আতঙ্কের নামে পরিণত হয়েছে জিকা ভাইরাস।
কিন্তু গবেষকেরা বলছেন, জিকা ভাইরাসের প্রতিষেধক তৈরি করে মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে দশ বছরেরও বেশি সময় লাগতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্র বলছে, এ বছরের শেষ নাগাদ তারা মানুষের ওপর পরীক্ষা চালানোর জন্য একটি প্রতিষেধক প্রস্তুত করতে পারবে।
সূত্র: বিবিসি
ডব্লিউএইচওর হুঁশিয়ারি
.
দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ছে জিকা ভাইরাস : বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা
.
জিকা ভাইরাস ‘দাবানলের’ মতো ছড়িয়ে পড়ছে এবং এ বিষয়ে আলোচনার জন্য জরুরি বৈঠক ডেকেছিল বিশ্বস্বাস্থ্য সংগঠন বা ‘হু।’
‘হু’ প্রধান মার্গারেট চান বলেন, গত বছর আমেরিকায় এ রোগের উপস্থিতি ধরা পড়েছে এবং সেখানে রোগটি ‘দাবানলের’ মতো ছড়িয়ে পড়ছে। জিকা ভাইরাস নিয়ে বিশেষ ব্রিফিং’এ ‘হু’ প্রধান বলেন, এটি সত্যিই উদ্বেগজনক যে আমেরিকা মহাদেশের ২০টিরও বেশি দেশে জিকার উপস্থিতি ধরা পড়েছে। জিকা বিরোধী সুনির্দিষ্ট পরামর্শ দেয়ার জন্য সোমবার আবার বৈঠকে বসবে ‘হু’।
এ দিকে জিকা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ায় বিশ্বের সরকারগুলো উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছে। বিশ্বের যে সব এলাকায় এ জিকার প্রাদুর্ভাবের খবর পাওয়া গেছে সে সব এলাকায় গর্ভবতী মায়দের না যাওয়ার উপদেশ দেয়া হচ্ছে। জিকা বিরোধী কোনো টিকা নেই। এ ছাড়া, জিকা হলে তা সারানোর কোনো পদ্ধতিও এখনো জানা নেই।
এ ভাইরাসে আক্রান্ত গর্ভবতী মায়েদের সন্তানরা মাইক্রোসেফালি নামের মারাত্মক রোগ নিয়ে জন্মাতে পারে বলে জোরালো ধারণা করা হচ্ছে। আর এ জন্য জিকা বিশ্বে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। মাইক্রোসেফালিতে আক্রান্ত শিশুর মাথা আকারে স্বাভাবিকের চেয়ে ছোট হয়। এতে শিশুর মস্তিষ্কের পুরোপুরি বিকাশ সম্ভব হয় না। আর শিশুটি প্রতিবন্ধী হয়ে যায় এবং আজীবন নানা মারাত্মক সমস্যায় ভুগতে থাকে। মাইক্রোসেফালিতে আক্রান্ত শিশু অকালে মারাও যেতে পারে। এ রকম শিশু পরিবার এবং সমাজের জন্য দুঃসহ পরিস্থিতির সৃষ্টি করে।
১৯৪০’এর দশকে উগান্ডার জিকা নামের জঙ্গলে এ রোগের ভাইরাসকে বিজ্ঞানীরা প্রথম শনাক্ত করেন। সে থেকে এ রোগের নাম জিকা রাখা হয়। এডিশ মশার বিশেষ প্রজাতি জিকা ভাইরাস ছড়িয়ে থাকে। বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে সংস্থাটির মহাপরিচালক ড. মার্গারেট চ্যান বলেন, শঙ্কার মাত্রা ‘অতিমাত্রায় বেশি’।
‘গত বছর আমেরিকায় (দক্ষিণ আমেরিকা) ভাইরাসটি শনাক্ত হয়। এটা এখন বিস্ফোরকের মতো ছড়াচ্ছে। এখন পর্যন্ত ওই অঞ্চলের ২৩টি দেশে এ ভাইরাস ছড়িয়ে গেছে’, বলেন মার্গারেট চ্যান।
‘জিকা ভাইরাসের আগমনের পর থেকে কিছু অঞ্চলে অস্বাভাবিক মাথা নিয়ে জন্ম হওয়া শিশুর সংখ্যা ব্যাপকভাবে বেড়েছে। কিছু কিছু শিশু গুইলেন বেড়ে সিনড্রোম (জিবিএস) নিয়ে বেড়ে উঠছে’, যোগ করেন চ্যান।
জিবিএসের ফলে শিশুদের মধ্যে পক্ষাঘাতগ্রস্ততা দেখা যেতে পারে।
ডব্লিউএইচওর প্রধান বলেন, জিকা ভাইরাসের সঙ্গে জন্মগত ত্রুটি এবং স্নায়বিক বিভিন্ন রোগের সম্পর্ক এখনো স্পষ্টভাবে প্রমাণের বাকি। তবে এ থেকে এসব উপসর্গ দেখা দিতে পারে বলে ‘জোরালোভাবে সন্দেহ’ প্রকাশ করা – সূত্র : আইআরআইবি
জিকার ভ্যাকসিন পেতে অনেক সময় লাগবে : মার্কিন বিশেষজ্ঞ
জিকা ভাইরাস প্রতিরোধে ভ্যাকসিন পেতে বেশ কয়েক বছর সময় লেগে যেতে পারে। মার্কিন স্বাস্থ্য বিভাগের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বৃহস্পতিবার এ কথা বলেন। মশাবাহিত ভাইরাসটির ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়া নিয়ে উদ্বেগের মধ্যেই এমনটি জানালেন তিনি।
জিকার কোন চিকিৎসা কিংবা ভ্যাকসিন নেই। এ প্রেক্ষিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংগঠন বলছে, আমেরিকা মহাদেশজুড়ে জিকা ভাইরাস ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ছে। এ অঞ্চলের প্রায় ৪০ লাখ লোক জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে।
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর এলার্জি অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজ’র পরিচালক অ্যান্থনি ফসি বলেন, জিকা ভাইরাস ভ্যাকসিন তৈরিতে মার্কিন সরকার দুভাবে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা এ বিষয়ে বেশ আশাবাদী। তবু মনে করা হচ্ছে চলতি বছর এমনকি আগামী কয়েকবছরেও প্রতিষেধক আবিষ্কার সম্ভব নাও হতে পারে।
ইউএস সেন্টার্স ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশান (সিডিসি) গর্ভবতী ও গর্ভধারণে আগ্রহী নারীদের ল্যাটিন আমেরিকা ও ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে ভ্রমণে না যেতে সতর্ক করেছে।
জিকা ভাইরাস ১৯৪৭ সালে প্রথম ধরা পড়লেও এবারের মতো এতো ব্যাপকভাবে কখনই ছড়িয়ে পড়েনি। এখনও পর্যন্ত জিকা সম্পর্কে খুব কমই জানা গেছে।
উল্লেখ্য মশাবাহিত জিকা ভাইরাসে গর্ভবতী নারীরা আক্রান্ত হলে অপরিণত মস্তিষ্কের শিশু জন্ম নেয়।
দ্রুত জিকা ভাইরাসের টিকা আবিষ্কারে ওবামার তাগিদ
.
জিকা ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা উদ্ভাবনের তাগিদ দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। ভাইরাসটির দ্বারা সৃষ্ট রোগের চিকিৎসা, প্রতিষেধক ও পরীক্ষা ব্যবস্থা উন্নত করতে গবেষণা কার্যক্রমে গতি আনার আহ্বান জানান তিনি। গত মঙ্গলবার ওবামাকে জিকা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার কারণে সম্ভাব্য ক্ষতির বিষয়ে অবগত করান দেশটির শীর্ষস্থানীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা।
উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকার ২০টিরও বেশি দেশে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়েছে। অপেক্ষাকৃত ছোট মাথা নিয়ে শিশু জন্মের জন্য ভাইরাসটিকে দায়ী করা হচ্ছে। এমন অবস্থায় দক্ষিণ আমেরিকার বেশ কয়েকটি দেশের সরকার নারীদের এখনই গর্ভধারণ না করার পরামর্শ দিয়েছে। ভাইরাসটির বাহক মশা নিয়ন্ত্রণে এমনকি সেনা মোতায়েনের ঘোষণা দিয়েছে ব্রাজিল। স্বাস্থ্য বিজ্ঞানের পরিভাষায় শিশুদের এই অবস্থাকে ‘মাইক্রোসেফালি’ বলা হয়। মাইক্রোসেফালির সঙ্গে জিকা ভাইরাসের সম্পর্ক খুঁজে বের করতে যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকরা কাজ করছেন। যুক্তরাষ্ট্রের ৬০ শতাংশ মানুষ বাস করে এমন এলাকায় ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়তে পারে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
হোয়াইট হাউজ থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে জানানো হয়, জিকা শনাক্তকরণ ও প্রতিষেধক আবিষ্কারে গবেষণা কার্যক্রম গতিশীল করতে জোর দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট। ভাইরাসটি সম্পর্কে জনগণ যেন পর্যাপ্ত তথ্য পায় ও এর সংক্রমণরোধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারে সে নির্দেশও দেন ওবামা। গত সোমবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংগঠন সতর্ক করে দিয়ে জানায়, চিলি ও কানাডা বাদে উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের সব দেশেই ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়তে পারে।
.
.
পৃথিবী থেকে মশা নির্মূলে কী প্রভাব পড়তে পারে?
.
মশা এ পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়ঙ্কর প্রাণী, যার মাধ্যমে বিভিন্ন রোগে প্রতিবছর বিশ্বে দশ লাখেরও বেশি মানুষ মারা যায়। সম্প্রতি মশাবাহিত জিকা ভাইরাসের কারণে দক্ষিণ আমেরিকায়, বিশেষ করে ব্রাজিলে হাজার হাজার শিশু অপরিণত মস্তিষ্ক নিয়ে জন্মগ্রহণ করছে। এমন পরিস্থিতিতে ভাবা হচ্ছে, মশা নামক এই প্রাণীকে পৃথিবী থেকে চিরতরে নির্মূল করলে কী প্রভাব পড়তে পারে? কিংবা এই সিদ্ধান্ত ভুল কি-না?
তবে মশা নির্মূলের বিষয়ে বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন ধরনের কথা বলছেন। অনেকে বলছেন, ভয়াবহ রোগবাহী এই মশাকে নির্মূল করা উচিত। আবার অনেকে বলছেন, এতে হয়তো একটা এলাকায় ধ্বংস করা সম্ভব কিন্তু সারাবিশ্বে অসম্ভব তাছাড়া মশার জায়গায় তখন অন্য কোনো প্রাণী এসে আরও ভয়াবহ রূপ ধারণ করতে পারে।
তবে এ নিয়ে এখনও চলছে গবেষণা।
বিবিসি-র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রায় সাড়ে তিন হাজার প্রজাতির মশার অস্তিত্ব আছে বিশ্বজুড়ে। কিন্তু এদের অধিকাংশই মানুষের জন্য ক্ষতিকর কিছু নয়। অধিকাংশ প্রজাতিই ফুলের মধু ও শস্য দানার উপর নির্ভরশীল।
মাত্র ৬ শতাংশ নারী প্রজাতির মশাই শুধু মানুষের রক্ত পান করে। এদের মধ্যে অর্ধেক এমন প্যারাসিট বহন করে, যেগুলো মাুনষের বিভিন্ন রোগের কারণ। কিন্তু এই ১০০ প্রজাতির মশাই পৃথিবীর জন্য বড় বড় বিপদ বয়ে আনছে।
‘ইউনিভার্সিটি অব গ্রিনউইচ এর ন্যাচারাল রিসোর্স ইনস্টিটিউট’র গবেষক ফ্রান্সিস হকস মন্তব্য করেছেন, ‘এই মুহূর্তে পৃথিবীর অর্ধেক মানুষ মশাবাহিত রোগের হুমকিতে রয়েছে। মানব সম্প্রদায়ের দুর্দশার পেছনে তাদের অবর্ণনীয় ভূমিকা আছে।’
প্রতিবছর মশাবাহিত ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু ও হলুদ জ্বরের মতো রোগে আক্রান্ত হয়ে লক্ষ লক্ষ মানুষ মারা যায়, এদের বেশিরভাগই গরিব দেশের মানুষ।
কিছু প্রজাতির মশা জিকা ভাইরাস বহন করে। প্রথমে মনে করা হচ্ছিল, এ ভাইরাসের প্রভাবে হালকা জ্বর হতে পারে। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, এটি একটি অত্যন্ত ভয়াবহ ভাইরাস, যার প্রভাবে মাতৃগর্ভে থাকা অবস্থায় শিশুর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে! এরই মধ্যে দক্ষিণ আমেরিকায় বিশেষ করে ব্রাজিলে হাজার হাজার শিশু এ ভাইরাসের প্রভাবে অপরিণত মস্তিষ্ক নিয়ে জন্মগ্রহণ করছে।
মশার হাত থেকে নিস্তার পেতে মশারির ব্যবহার বাড়ানোর জন্য বহুদিন ধরেই জোর প্রচারণা চলে আসছে। কিন্তু একটি ধ্বংসাত্মক রোগ বহনকারী প্রজাতিকে ঠেকানোর জন্য মশারিই কী একমাত্র উপায় হতে পারে?
জীববিজ্ঞানী ওলিভিয়া হাডসন প্রায় ৩০ প্রজাতির মশাকে জীনগতভাবে পরিবর্তন করার পক্ষে। নিউইয়র্ক টাইমস-কে তিনি বলেন, ‘এটি করলে অন্তত দশ লক্ষ মানুষের জীবন বাঁচবে এবং এ মশাদের প্রজনন ক্ষমতা ১ শতাংশে নেমে আসবে। আমাদের অবশ্যই এসব প্রজাতির মশাদের চিরতরে ধ্বংস করতে হবে।’
.
ব্রিটেনে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় এবং বায়োটেক ফার্ম অক্সটেক যৌথভাবে পুরুষ প্রজাতির ‘এডিস এজেপটি’ মশাকে জীনগতভাবে পরিবর্তন করতে সক্ষম হয়েছে। এ প্রজাতির মশা ডেঙ্গু জ্বরের জন্য দায়ী এবং জিকা ভাইরাসের বাহক। পরিবর্তিত এ পুরুষ মশাটি এমন একটি জিন বহন করবে, যেটি সঠিকভাবে তাদের বংশবৃদ্ধিতে বাধা দেবে এবং এর ফলে সুস্থ মশক প্রজন্ম জন্মলাভ করবে না। যার প্রভাব পড়বে পরবর্তী প্রজন্মে। অর্থাৎ পরবর্তী প্রজন্মের মশাগুলো তাদের শরীরে কোনো রোগের জীবানু বহন করার ক্ষমতা অর্জনের আগেই মারা যাবে।
২০০৯ এবং ২০১০ সালে ব্রিটেনের কায়মান দ্বীপে জীনগতভাবে পরিবর্তিত নতুন এ প্রজন্মের অন্তত ত্রিশ লাখ মশা ছাড়া হয়েছে। এরপর পরিস্থিতির বিষ্ময়কর উন্নতি হয়েছে। অক্সিটেক তাদের এক প্রতিবেদনে বলেছে, নতুন এ মশাগুলো ছাড়ার পর কায়মান দ্বীপ ও আশপাশের অঞ্চলে মশার উৎপাদন ৯৬ শতাংশ কমে গেছে। ঠিক এ পরীক্ষাটিই এখন চলছে জিকা ভাইরাস আক্রান্ত ব্রাজিলে। দেশটিতে মশার উৎপাদন কমে গেছে ৯২ শতাংশ।
তবে ফ্লোরিডা ইউনিভার্সিটির পতঙ্গবিজ্ঞানী ফিল লুউনিবস মশার বিলুপ্তির কারণে ‘অনাকাঙ্খিত বহু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া’র আশঙ্কা করেছেন।
তিনি বলেন, ‘মশারা সাধারণত ফুলের মধু খায়, যেটি পরাগায়নের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন। পরিণত মশা পাখিদের অন্যতম প্রধান খাদ্য, লার্ভা থাকা অবস্থায় তারা মাছের অন্যতম প্রধান খাদ্য। এখন মশাদের যদি পরিপূর্ণ বিলুপ্তি হয়, তাহলে এসবের সাথে সাথে আরো বহু খাদ্যশৃঙ্খলের উপর তার প্রভাব পড়বে।’
যদিও অনেক গবেষক বলছেন, পরাগায়ন ও খাদ্য হিসেবে মশার উপযোগিতা অন্য কোনো পতঙ্গ সহজেই পূরণ করতে পারবে।
কিন্তু লুইনিবসের মত ভিন্ন। তিনি বলেন, ‘অন্য কোনো পতঙ্গ দ্রুত মশার স্থান নিতে পারবে, জনস্বাস্থ্যের দিক বিবেচনায় সেটি একেবারেই অবাঞ্চনীয়।’
তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেন, ‘যে পতঙ্গটি মশার প্রতিস্থাপক হবে, সেটি মশার চেয়েও ভয়ঙ্কর এবং দ্রুতগতিতে রোগ বিস্তার করতে পারে।’
বিজ্ঞান বিষয়ক লেখক ডেভিড কুয়োমেন মনে করেন, প্রাকৃতিক ধ্বংসযজ্ঞ থেকে মানব সম্প্রদায় ও প্রকৃতিকে রক্ষা করছে মশা। পরাগায়নের মাধ্যমে মশা উষ্ণমন্ডলীয় অঞ্চলে বনায়ন সৃষ্টিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে। অন্যথায় যেটি আদতে অসম্ভব ছিল।
মানবসৃষ্ট ধ্বংস থেকে বহু বিপন্ন প্রজাতিকে রক্ষা করেছে এসব বনাঞ্চল। অনেক বিপন্ন উদ্ভিদ ও প্রাণীর অস্তিত্ব টিকে আছে শুধু এসব বনাঞ্চলের কারণেই। ডেভিড কুয়োমেন সতর্ক করেছেন এই বলে যে, ‘শুধু মশা ছাড়া অন্য কিছু আগামী এক হাজার বছরের মধ্যে এসব প্রাণী ও উদ্ভিদের বিলুপ্তি ঠেকাতে পারবে না।’
কিন্তু মশার একটি প্রজাতিকে পুরোপুরি ধ্বংস করাটা ঠিক বৈজ্ঞানিক উপায় হতে পারে না। এর বিরুদ্ধেও সবাক অনেকে। অনেকে বলছেন, মশার একটি প্রজাতি মানুষের জন্য ক্ষতিকর। এজন্য পুরো প্রজাতিকে বিলুপ্ত করে দেওয়া হচ্ছে। অথচ মশার বহু প্রজাতি মানুষের জন্য ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।
অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির ‘ইউহিরো সেন্টার ফর প্যাকটিক্যাল ইথিকস’-এর জনাথম পুগ বলেন, একটি পুরো মশক প্রজন্মকে ধ্বংস করাকে আমরা নৈতিকতা বিরোধী বলে মনে করি।’
বিজ্ঞানীরা বলছেন, আমাদের মতো দুঃখ, যন্ত্রনা কিংবা আবেগ মশাদের নেই। তাই তাদের হাত থেকে মুক্তির উপায় খোঁজাটাই উত্তম হবে। কারণ তারাই রোগ-ব্যাধি ছড়ানোর অন্যতম কারিগর।
কিন্তু এবার মূল যে প্রশ্নটা সামনে এসেছে, সেটি হচ্ছে- এটি করলে জিকা, ম্যালেরিয়া বা ডেঙ্গুর মতো রোগ কতটা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে? হয়তো একটা নির্দিষ্ট এলাকায় বা শহরে এর সুফল পাওয়া যেতে পারে, কিন্তু এ বিশাল বিশ্ব কীভাবে এসব ভয়াবহ ব্যাধি থেকে মুক্তি পাবে?
মশাকে ঠেকানোর বহু অভিনব উপায় আবিষ্কৃত হয়েছে বিশ্বে। লন্ডনের কিউ গার্ডেনসের বিজ্ঞানীরা এক ধরনের সেন্সর আবিষ্কার করেছেন, যেটি মশার পাখার গতিবিধি বুঝে এটি কোন প্রজাতির মশা, তা বলে দিতে পারে। কিউ গার্ডেনস ইন্দোনেশিয়ার প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষদেরকে এ সেন্সরটি সরবরাহ করেছেন, যাতে মানুষজন বুঝতে পারে- কোনটি তাদের জন্য বিপজ্জনক। এ সেন্সর ব্যবহার করে পরবর্তী বিপর্যয়ের হাত থেকে নিস্তার পাওয়া সম্ভব।
এদিকে লন্ডন স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিনের বিজ্ঞানীরা মানুষের শরীরের ঘ্রাণে কীভাবে মশা আকৃষ্ট হয়, তা আবিষ্কার করেছেন। এর ফলে যে জীনের কারণে মশা মানুষের প্রতি আকৃষ্ট হয়, বিজ্ঞানীরা এর বিপরীত জীনসম্পন্ন মশা সৃষ্টি করতে পারবেন। এ আবিস্কারের ফলে এই সমস্যার বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধন করতে পারবেন বলে ধারণা করছেন বিজ্ঞানীরা।
জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মাধ্যমে যদি এমন ধরনের মশা সৃষ্টি করা যায়, যেগুলো রোগ জীবাণুবাহী প্যারাসিট প্রতিরোধী, তাহলেও সাফল্য পাওয়া যাবে বলে ধারণা করছেন বিজ্ঞানীরা।
তথ্যসূত্র ও ছবি: বিবিসি
.
Prothom-alo
0 responses on "৩৮ তম বিসিএস প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষা প্রস্তুতি আন্তর্জাতিকে, পার্ট - ১২"