৩৭ তম লিখিত প্রস্তুতিঃ ট্রাফিক জ্যাম — বিশ্ব ও বাংলাদেশ।

ট্রাফিক জ্যাম — বিশ্ব ও বাংলাদেশ:

::১৯৮০ সালের দিকে ফ্রান্সে একবার ট্রাফিক জ্যাম লেগেছিল প্যারিস থেকে লিয়নের পথে। ১১০ মাইল দৈর্ঘ্যরে রাস্তাটিতে যে জ্যাম লেগেছিল, পৃথিবীর ইতিহাসে এখন পর্যন্ত এত দীর্ঘ ট্রাফিক জ্যাম আর কোথাও লাগেনি। মস্কোতে ট্রাফিক জ্যামে পড়ে মানুষকে সবচেয়ে বেশি কষ্ট ভোগ করতে হয় শীতকালে। সংকীর্ণ পথ এবং প্রচণ্ড তুষারপাতের কারণে গাড়িগুলো সামনে এগুতেই চায় না। ২০০৫ সালে টেক্সাসের রাজধানী হার্ডসনে হারিকেন রিটার আঘাতের কারণে লেগেছিল ট্রাফিক জ্যাম। ওইদিন যারা রাস্তায় ছিলেন, তারা এমন জ্যামে আগে কখনোই পড়েননি। ২০১০ সালের ১৪ আগস্ট বেইজিংয়ের রাস্তায় ঘটেছিল এক অভূতপূর্ব ঘটনা। রাস্তাটি ছিল খানা-খন্দে ভরা। তারপরও গাড়ি চলাচল করত। কিন্তু ওইদিন একটি দুর্ঘটনা ঘটায় পেছনের গাড়িগুলো আটকে যায়। এভাবে পুরো ৬০ মাইল রাস্তায় আটকে পড়ে গাড়ি। থাকে টানা ৯ দিন। ২০০৯ সালের জুনে ব্রাজিলের সাও পাওলোতে লেগেছিল এক ভয়াবহ ট্রাফিক জ্যাম। এই জ্যামের বিস্তৃতি ছিল ২৯৫ কিলোমিটার। তাইপের রাস্তাগুলো এতই সংকীর্ণ যে, আমাদের ঢাকা শহরের মতো সারাক্ষণই মোটরগাড়ি আর মোটরসাইকেলের জ্যাম লেগেই থাকে। তবে ইচ্ছা করলেই আমরা ট্রাফিক জ্যামমুক্ত থাকতে পারি। এর জন্য প্রয়োজন একটু সচেতনতা।
উৎসঃ মানবকন্ঠ। ১৭ এপ্রিল, ২০১৬।
::চারশ বছরের পুরনো শহর ঢাকা। চার শতক ঊর্ধ্বশ্বাসে ঢাকা শহরের আয়তন প্রস্থে ও দৈর্ঘ্যে সমান্তরালভাবে বেড়েই চলেছে। রাস্তা-ঘাট, দালান-কোঠা, অফিস-আদালতও বেড়েছে ঢাকা শহরে। তথাপি পৃথিবীর অন্যান্য বিখ্যাত শহরের মতো আধুনিকতার ছোঁয়া এখানে লাগেনি বিশেষ একটা। শহর পত্তনের গোড়ার দিকে একমাত্র বাহন ছিলো ঘোড়ার গাড়ি। ৪০০ বছর পর সে গাড়ির অস্তিত্ব এখনও বিলীন হয়নি। সময় পরিবর্তনশীল। সময়ের বিবর্তনে তার সঙ্গে যোগ হয়েছে, রিকশা ভ্যান, ঠেলাগাড়ি, বেবিট্যাক্সি, টেম্পো, বাস, ট্রাক, মিনিবাস নানা মডেলের কার, জীপ, মাইক্রোবাস ইত্যাদি। চারশ বছর আগে বাহন ছিলো পশু। কিন্তু সে পশুর স্থান দখল করেছে এখন মানুষ। এমন আদিম, অসভ্য ও বর্বরোচিত যানবাহন উন্নত বিশ্বের কোথাও নেই। অথচ বাংলাদেশে এর ব্যাপক বিস্তার নগর জীবনকে বিষিয়ে তুলেছে। ঢাকা শহরকে ঠেলে দিয়েছে এক নৈরাজ্যের দিকে। এ নৈরাজ্য সৃষ্টি করেছে সীমাহীন যানজট। নগরবাসীর মন আর স্বাস্থ্যকে করছে কলুষিত। নগরীর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে করছে মারাত্মকভাবে ব্যাহত। শহরের মানুষ অসহনীয় যানজটের করাল গ্রাস থেকে মুক্তির আশায় প্রহর গুণছে। কিন্তু কেউ এর হাত থেকে নিস্তার পাচ্ছে না।
উৎসঃ দৈনিক সংগ্রাম।২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬।
::ঢাকা শহরে ট্রাফিক জ্যামের তীব্রতা সবচেয়ে বেশি থাকে অফিস বা স্কুল কলেজ শুরুর পূর্বের দুই ঘন্টা অর্থাৎ সকাল ৮টা থেকে ১০টাএবং অফিস ছুটির পরবর্তী তিন ঘন্টা অর্থাৎ বিকাল ৫টা থেকে রাত ৮টা। এই পাঁচ ঘন্টার ট্রাফিক জ্যাম কমাতে পারলে পরিস্থিত অনেকটাই সহনীয় হয়ে যাবে। এটা করার একমাত্র কার্যকর ও বাস্তবসম্মত উপায় হলো এই সময়ে রাস্তায় ব্যক্তিগত গাড়ি চালানোর উপর নিয়ন্ত্রন আরোপ। সকাল ৭ টা থেকে ৯ টা পর্যন্ত ব্যাক্তিগত গাড়ির চলাচল সম্পূর্ন বন্ধ করে দিলে রাস্তায় মোট গাড়ির পরিমান শতকরা ৯০ শতাংশ কমে যাবে। এই সময়ে পাবলিক পরিবহন ব্যবহার করে ঢাকার একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে খুব সহজে নিজস্ব গন্তব্যে পৌঁছে যেতে পারবে নগরবাসী। যাদের ব্যক্তিগত গাড়ি আছে তারা ৯ টায় যাত্রা শুরু করেও সাড়ে ৯ টার মাঝে ঢাকার যেকোন প্রান্তে পৌছে যেতে পারবে যদি জ্যাম কম থাকে। একইভাবে বিকাল ৫ টা থেকে সন্ধ্যা ৭ টা পর্যন্ত ব্যক্তিগত পরিবহন বন্ধ থাকলে অফিস ফেরত অধিকাংশ মানুষ পাবলিক পরিবহন ব্যবহার করে অনেক নির্বিঘ্নে বাড়ি ফিরতে পারবে। সন্ধ্যা ৭ টা থেকে আবার রাস্তায় নামতে পারবে ব্যাক্তিগত গাড়ি। ব্যক্তিগত গাড়ি চালানোর উপর এই নিয়ন্ত্রন আরোপের পাশাপাশি অফিস ও শিক্ষালয়ের সময়সূচী একটু সমন্বয় করে নিতে পারলে যানযটের প্রকোপ নিঃসন্দেহে অনেকাংশে কমে যাবে।
উৎসঃ বিডিনিউজ24.কম। ৬ আগস্ট, ২০১৫।
::বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ও প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. কৌশিক বসু বলেছেন, বাংলাদেশ খুব দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের অগ্রগতি অন্যান্য দেশের অনুসরণ করার মতো। ২০ বছর আগে দেখেছি ঢাকার রাস্তা ফাঁকা। এখন ট্রাফিক জ্যাম দেখে মনে হয় বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে।
::ঢাকার মানুষ প্রতিদিন গড়ে ২ ঘণ্টা ট্রাফিক জ্যামে ব্যয় করে। অর্থাৎ হিসাব করে দেখলে বছরে প্রায় ২৫ দিন একজন মানুষের জীবন থেকে কেড়ে নেয় ট্রাফিক জ্যাম। এরফলে যে অর্থনৈতিক ক্ষতি হয় তা হিসাব করলে দেখা যায় এর সংখ্যা বাংলাদেশের জিডিপির ৩%।
::২০০৯ সালে বিশ্ব ব্যাঙ্কের একটি বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ঢাকায় ৬০টি বাসের কোম্পানী আছে, যারা তাদের যাত্রাপথ ও সময়সূচী সারাক্ষণ পরিবর্তন করছে। বাস ড্রাইভাররা বেশি লাভের জন্যে বেপোরোয়াভাবে জোরে গাড়ি চালায়, এবং ধারণক্ষমতার চাইতে বেশি যাত্রী বাসে তোলে। আর বাসমালিকরা পেয়ে থাকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পৃষ্ঠপোষকতা। ঢাকার আয়তনের মাত্র ৭ শতাংশ জুড়ে আছে রাস্তাঘাট বা যাতায়াতের পথ। যেখানে প্যারিসে তা ২৫ শতাংশ, এবং ওয়াশিংটন ও শিকাগোতে তা ৪০ শতাংশ। ওদিকে, প্রতি বছর ঢাকায় রাস্তায় যোগ হচ্ছে, প্রায় ৩৭ হাজার ব্যক্তিগত ব্যবহার উপযোগী গাড়ি বা প্রাইভেট কার। ঢাকার অনেক অধিবাসী মনে করেন, এটি একটি ইতিবাচক দিক, দেশ যে অর্থনৈতিক উন্নতির পথে এগিয়ে চলেছে, এ হচ্ছে তার প্রমাণ। এর বাইরে রয়েছে পথচারীরা। ঢাকার এই ট্রাফিক জ্যামের কারণে প্রতি বছর ৩৮০কোটি ডলারের ক্ষতি হচ্ছে। ঢাকার মত মেগাসিটিগুলোতে ট্রাফিক সমস্যার সমাধান করা না গেলে দেশের উন্নতির পথে তা অন্তরায় হয়ে দাঁড়াবে।
::বিশ্বের সবচেয়ে যানজটপূর্ণ শহরের তালিকায় উপরের দিকেই রয়েছে ঢাকা। শীর্ষ ১০ যানজটপূর্ণ শহরের মধ্যে ঢাকার অবস্থান অষ্টম। নামবিওর তথ্যমতে, ট্রাফিক ইনডেক্সের শীর্ষ স্থানে রয়েছে ভারতের মুম্বাই। শহরটির স্কোর ৩৫০.৬। ৩২০.৫৫ স্কোর নিয়ে মিসরের রাজধানী কায়রোর অবস্থান তালিকায় দ্বিতীয়। ৩১৭.২৪ স্কোর নিয়ে কেনিয়ার নাইরোবি রয়েছে তৃতীয় স্থানে। যানজটবহুল শীর্ষ পাঁচ শহরের অন্য দুটিও ভারতে। এগুলো হলো— পুনে ও কলকাতা। শহর দুটির স্কোর যথাক্রমে ৩১৬.৯২ ও ২৯৯.৭৭ । ষষ্ঠ থেকে দশম স্থানে রয়েছে যথাক্রমে যুক্তরাষ্ট্রের মিয়ামি, ইরানের রাজধানী তেহরান, বাংলাদেশের ঢাকা, ব্রাজিলের হেসিফি ও যুক্তরাষ্ট্রের ডেনভার। এর মধ্যে ঢাকার স্কোর ২৮৬.৪।
উৎসঃ ট্রাফিক ইনডেক্স-২০১৫, নামবিও।
::ঢাকা শহরের যানজট ক্রমেই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ২০০৪ সালে মহাপরিকল্পনা (এসটিপি) গ্রহণ করা হলেও তার কোনো নির্দেশনাই বাস্তবায়ন হয়নি। বরং অপরিকল্পিতভাবে ফ্লাইওভার নির্মাণ করে যানজটকে স্থায়ী রূপ দেয়া হচ্ছে। এটা নিরসনে ঢাকায় দ্রুত গণপরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটাতে হবে। তা না হলে ১০ বছরের মধ্যে ঢাকা হবে বিশ্বের সবচেয়ে যানজটপূর্ণ শহর।—– অধ্যাপক ড. সারওয়ার জাহান। নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগ, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়।
::ঢাকা শহরের যানজটের মূল কারণ ছোট গাড়ি। অথচ এগুলোকেই প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। প্রতিদিন রাজধানীতে প্রায় ২০০ গাড়ি নামছে, যার ৯৫ শতাংশই ছোট গাড়ি। যানজট নিরসনের নামে একের পর এক ফ্লাইওভার নির্মাণ করে ব্যক্তিগত গাড়িকে আরো প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। এতে যানজট স্থায়ী সমস্যায় রূপ নিচ্ছে। অবস্থার পরিবর্তনে এসটিপি সংশোধন করা হচ্ছে। কিন্তু সদিচ্ছা না থাকলে এতেও কোনো সমাধান মিলবে না। উল্লেখ্য, বর্তমানে ঢাকা নগরীর অভ্যন্তরে যানবাহনের গড় গতি ঘণ্টায় মাত্র আট কিলোমিটার। রাস্তার স্বল্পতা, ব্যক্তিগত গাড়ির আধিক্য, যান চলাচলে বিশৃঙ্খলাই এর মূল কারণ। এসটিপি বাস্তবায়ন হলে ২০২৪ সালে গাড়ির গড় গতি হবে ঘণ্টায় ১৬ কিলোমিটার। তা না হলে গতি কমে হবে ঘণ্টায় পাঁচ কিলোমিটার। অর্থাৎ এসটিপি বাস্তবায়ন না হলে ঢাকা বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।—– অধ্যাপক ও পরিবহন বিশেষজ্ঞ ড. মো. শামছুল হক।
পুরকৌশল বিভাগ, বুয়েট।
::রাজধানীর সড়কগুলোয় অসহনীয় যানজট কমিয়ে আনতে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে। কিন্তু কোনো উদ্যোগই যানজট নিরসনে কাংক্ষিত ভূমিকা রাখতে পারছে না। ২০০৯ সালে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কের ক্রসিংগুলোয় চালু করা হয় অত্যাধুনিক ট্রাফিক সিগন্যাল বাতি। কিন্তু ঢাকা সিটি করপোরেশন ও ট্রাফিক পুলিশের মতবিরোধে সেই সিগন্যাল বাতিও কাজে আসেনি। এ পরিস্থিতিতে রাজধানীর যানজট নিরসনে ডিএসসিসি ও ডিএনসিসি ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ঢাকার ৬৫টি ট্রাফিক সিগন্যাল ইন্টারসেকশনে ‘টাইমার কাউন্টডাউন’ যন্ত্র বসায়। গত ২ বছর ধরে ‘টাইমার কাউন্টডাউন’ যন্ত্রটিও কাজে আসেনি। ফলে রাজধানীতে পরীক্ষামূলকভাবে চালু থাকা পরিবেশসম্মত ট্রাফিক সিগন্যাল ব্যবস্থা প্রকল্পের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য কাগজে-কলমেই থেকে গেল। ট্রাফিক পুলিশ সিটি করপোরেশনের বসানো এই টাইমার কাউন্টডাউন যন্ত্রটি অনুসরণ করছে না। রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে যানবাহন নিয়ন্ত্রণে ট্রাফিক পুলিশ এখনো হাত, বাঁশি, লাঠি, রশি ও বাঁশ ব্যবহার করছে।
উৎসঃ আমাদের সময়।৭ মে, ২০১৬।
::শুধু রাজধানীতেই প্রতিদিন ৫০টির মতো নতুন প্রাইভেটকার নামছে। যেটি মাসে গড়ে দেড় হাজার এবং বছরে তা কমপক্ষে ১৮ হাজারে দাঁড়ায়। রাজধানীর আয়তনের তুলনায় রাস্তা না বাড়লেও প্রতিনিয়ত ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা বাড়ছে। পাশাপাশি সংখ্যানুযায়ী এসব গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করার কথা থাকলেও তা করা হয়নি। ফলে প্রতিনিয়ত বাড়ছে নাগরিক দুর্ভোগ ও রাস্তায় বেরোলেই ভয়াবহ যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এসব অবৈধ কারপার্কিংয়ের স্থান রাজনৈতিক প্রভাবশালী ব্যক্তি ও স্থানীয় ক্ষমতাসীনদের নিয়ন্ত্রণ করার অভিযোগও রয়েছে।
উৎসঃ বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি।
::২০১৫ সালের আগস্টের হিসাব অনুযায়ী রাজধানীতে মোট নিবন্ধিত যান্ত্রিক যানবাহনের সংখ্যা ৯ লাখ ১৩ হাজার ৬২২। যার মধ্যে বাস ২৩ হাজার ১১৯ ও ১০ হাজার ৭ মিনিবাস সরাসরি গণপরিবহন হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। অন্যদিকে সরকারি তথ্যমতে, রাজধানীতে চলাচলকারী প্রাইভেটকারের সংখ্যা ২ লাখ ১৬ হাজার ৭২২, মাইক্রোবাসের সংখ্যা ৬১ হাজার ২৬৩, সরকারি ও বিভিন্ন বেসরকারী সংস্থার ব্যবহৃত জীপের সংখ্যা ২৭ হাজার ৯১। তবে এ সব যানবাহন সরাসরি গণপরিবহন হিসেবে বিবেচিত হয় না।
উৎসঃ বিআরটিএ।
::২০০৪ সালে প্রাইভেটকার নিবন্ধন দেয়া হয়েছে ৪ হাজার ৭৩৪, ২০০৫ সালে ৫ হাজার ৬৩৩, ২০০৬ সালে ৭ হাজার ৪০৩, ২০০৭ সালে ১০ হাজার ২৪৪, ২০০৮ সালে ১৩ হাজার ৭৪৯, ২০০৯ সালে ১৭ হাজার ৬৫৪, ২০১০ সালে ১৯ হাজার ৫৫৭, ২০১১ সালে ১১ হাজার ৪২৩, ২০১২ সালে ৮ হাজার ১৮৭, ২০১৩ সালে ৯ হাজার ২৩১, ২০১৪ সালে ১২ হাজার ৯৭২ ও ২০১৫ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ১১ হাজার ৯০৫। প্রাইভেট পরিবহন হিসেবে বিবেচিত যানবাহনের নিবন্ধনের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, রাজধানীতে প্রতিমাসে গড়ে প্রায় দেড় হাজার করে ব্যক্তিগত যানবাহন নতুন করে যোগ হচ্ছে।
উৎসঃ বিআরটিএ।
::ঢাকার রাস্তায় ট্রাফিক জ্যামে থেমে থাকা যানবাহনের দিকে একটু খেয়াল করলে দেখা যাবে থেমে থাকা গাড়ির ৯০ শতাংশই ব্যাক্তিগত পরিবহন অর্থাৎ প্রাইভেট কার, জীপ ও মাইক্রোবাস। পাবলিক পরিবহনের সংখ্যা হাতে গোনা। একটা সহজ হিসাব করা যাক। ১০০ জন যাত্রী পরিবহন করতে তিনটি পাবলিক বাসই যথেষ্ট। অথচ সমপরিমান যাত্রী পরিবহন করতে প্রাইভেট কার বা জীপ লাগবে ২৫ টি, মাইক্রোবাস অন্ততপক্ষে ১২। অর্থাৎ ব্যাক্তিগত গাড়ি দিয়ে খুব কম সংখ্যক যাত্রী পরিবহন হয়, কিন্তু দিনের গুরুত্বপুর্ণ সময়ে রাস্তার বেশিরভাগ অংশ দখল করে রাখে ব্যাক্তিগত পরিবহনগুলো। ঢাকায় মোট জনসংখ্যার সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ মানুষের ব্যাক্তিগত গাড়ি রয়েছে। অর্থাৎ, এই ৫ শতাংশ মানুষের জন্য ৯৫ শতাংশ মানুষকে প্রতিদিন ট্রাফিক জ্যামের যন্ত্রনায় ভুগতে হচ্ছে। শুনতে খারাপ লাগলেও এটাই নির্মম সত্য।
::কেন এই যানজটঃ বিশ্বের আধুনিক শহরগুলোর মতো রাজধানী ঢাকায় কোনো নির্ভরযোগ্য পরিবহন নেই। একটি আধুনিক বৃহদাকার শহরে থাকবে পরিকল্পিত প্রশস্ত রাস্তা, পাতাল ট্রেন এবং উন্নত জনপথ। হাতে গোনা দুয়েকটি প্রশস্ত সড়ক ছাড়া ঢাকায় এর কোনোটিই নেই। সংকীর্ণ রাস্তা দিয়ে একটা গাড়ি ঠাসাঠাসি করে কোনো মতে ঢুকলেও এদিক-সেদিক মোড় ঘুরানো যায় না, ফলে যানজটের সৃষ্টি হয়। কারণ রাস্তার সংকীর্ণতার কারণে অন্যান্য পরিবহন চলাচলে বাধাগ্রস্ত হয়। ঢাকা শহরের আয়তন ২০০০ বর্গ কিলোমিটার। ছোট-বড় মিলিয়ে রাস্তার দৈর্ঘ্যও প্রায় ২০০০ কিলোমিটার। কিন্তু আয়তন অনুযায়ী এই পরিমাণ রাস্তা যথেষ্ট নয়। এখানে প্রয়োজন মতো পরিকল্পনা মাফিক নতুন রাস্তা, সংযোগ সড়ক, বাইপাস ইত্যাদি নির্মিত হয়নি। সীমিত রাস্তার পুরোটা তবুও কাজে লাগানো যাচ্ছে না। কারণগুলোর মধ্যে যত্রতত্র যানবহান পার্কিং, রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি, ডাস্টবিন, হকার প্রভৃতি। তাছাড়া আছে বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতার কারণে মূল রাস্তা সংকুচিত হয়ে আসা। যানজটের আরো কারণ হলো শহরে শ্লথ ও দ্রুত গতির যানবাহনের মিশ্রণ। যানবাহন নিয়ন্ত্রণে দুর্বল ব্যবস্থাপনা ও ক্ষেত্র বিশেষে অক্ষমতা এবং সড়ক ব্যবহারকারীদের মাঝে আইনশৃঙ্খলা সম্পর্কে অজ্ঞতা ও তা না মানার প্রবণতা। তাছাড়াও এর কারণ বহুবিধ।
উৎসঃ দৈনিক সংগ্রাম।২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬।
::অপরিকল্পিত যানবাহনঃ যানজটের অন্যতম প্রধান কারণ অপরিকল্পিত যানবাহন। ঢাকা শহরে বর্তমানে লোক সংখ্যা আড়াই গুণ বাড়লেও আধুনিক যানবাহনের সংখ্যা প্রায় ৯০ লাখ।এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী ঢাকা শহরের মোট যানবাহন সংখ্যা ৫৫ লাখ। কেবল মাত্র রিকশার সংখ্যা বৈধ অবৈধ মিলিয়ে ৩০ লাখ। এর মধ্যে সিটি কর্পোরেশনের লাইসেন্স প্রাপ্ত রিকশার সংখ্যা ৮৯,৬০০ টি, ঠেলাগাড়ি ৩২০ টি ও ঘোড়ার গাড়ি ১০টি। যন্ত্রচালিত যানবাহনের সংখ্যা ১,৪৮,০০০টি। এত বিপুল সংখ্যক অবৈধ রিকশা অবাধে চলাচল করছে তবু কর্তৃপক্ষের এদিকে সামান্যতম দৃষ্টি নেই। অথচ রিকশা যানজটের আরেকটি বড় কারণ। ঢাকার রাজপথের ৭৩% দখল করে রাখে রিকশা, ৪.৪% বাস, ১৯.৭% কার, ০.৪% টেম্পো এবং ২.৫% বেবিট্যাক্সি। অন্য দিকে একজন যাত্রী রিকশায় চড়লে রাস্তা দখল করে ২১.৯ বর্গফুট, কারে ৭৫.৮ বেবিটেক্সিতে ১৭.৩৯, টেম্পোতে ৪.৯৫ এবং বাসে মাত্র ৮.৭ বর্গফুট। এ পরিসংখ্যান থেকে সহজেই বুঝা যায় রাস্তায় নির্ভরযোগ্য বাসের সংখ্যা বাড়লে যাত্রী প্রতি রাস্তা দখলের পরিমাণ কমে আসবে। ফলে যানজটনও উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাবে। বাস হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে কম ব্যয় বহুল এবং কার্যকর পরিবহন। ঢাকায় বাসের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করা প্রয়োজন। বর্তমানে ঢাকায় প্রয়োজন ৪০০০ বৃহদায়তন বাস। কিন্তু রয়েছে মাত্র ১৪০০ মাঝারি ও ছোট আকারের বাস এবং ৩০টি ডবল ডেকার। এর মধ্যে ১১০০ টি আবার লক্কর-ঝক্কর মার্কা। যেটি মেরামত করতে হয় প্রতিদিনই। এগুলো প্রায়ই পথের মাঝে বিকল হয়ে পড়ে। দখল করে নেয় পুরো রাস্তা। সৃষ্টি হয় যানজট। প্রয়োজনের তুলনায় বাসের সংখ্যা বাড়ছে না। অথচ একটি শহরে যানবাহন চলাচলের ৫০% সমাধান বাসে হওয়া উচিত। সেখানে হচ্ছে মাত্র ২২%, পক্ষান্তরে ৪৮% যাত্রী বহন করছে রিকশা, কার ৭% এবং বেবিট্যাক্সি-টেম্পো ৮%। প্রত্যাশিতভাবে বাসের সংখ্যা না বাড়ার কারণে দিনের পর দিন রিকশা আর বেবিট্যাক্সির সংখ্যা বেড়ে চলছেই। ১৯৯২ সালে নগরীতে বেবিট্যাক্সির সংখ্যা ছিলো ১৮ হাজার, সেই সংখ্যা ১৯৯৫ সালে এসে দাঁড়ায় ৪০ হাজারে এবং ৯৫ সালের শেষে এত বিপুল সংখ্যক রিকশা এবং বেবিট্যাক্সিকে নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যর্থতাই ঢাকার যানজটের অন্যতম প্রধান কারণ।
উৎসঃ দৈনিক সংগ্রাম।২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬।
::ফুটপাত দখলঃ ঢাকায় এখন মোট ফুটপাতের পরিমাণ ১৬৩ কিলোমিটার। কিন্তু তার ৯০ শতাংশের বেশি সিটি কর্পোরেশনের দখলে নেই। শহরের মোট লোক সংখ্যার ৬০% চলে পায়ে হেঁটে। এই হেঁটে চলা লোকগুলোর নিরাপত্তা এবং সুবিধার এটি সবচেয়ে উপেক্ষিত। কারণ ফুটপাতের বেশির ভাগ চলে গেছে হকার ও ভাসমান ব্যবসায়ীদের দখলে। ফুটপাত দখলের পর হকাররা এখন রাজপথের দিকে হাত বাড়িয়েছে। ফলে যানবাহন চলাচলের রাস্তা হয়ে পড়েছে সংকুচিত। এ কারণে সৃষ্টি হয়েছে ভয়াবহ যানজট। হকারদের ফুটপাত দখলের নেপথ্যে আমরাও অনেকটা দায়ি। আমাদের অনেকেই চাই ঘরের দাওয়ায় রিকশা, রিকশায় বসেই বাজার কিংবা অফিসের প্রবেশ মুখে কেনাকাটা এবং ইচ্ছামত যেখানে খুশি সেখানে বাস টেম্পু থেকে উঠানামা। এই অদ্ভুত অভ্যাসের কারণেই আজ আমরা রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যস্ততম বাজারের সংখ্যা উত্তরোত্তর বেড়েই চলেছে। কিছুকাল আগেও কলকাতাকে আবর্জনা ও হকারের শহর বলে ব্যঙ্গ-তামাশা করা হতো। বলা হতো পশ্চিমবঙ্গের বাম ফ্রন্ট সরকার ভোট ঠিক রাখার জন্য আবর্জনা পুষে গুদামজাত করছে। কিন্তু সেই কলকাতা আজ হকার মুক্ত হয়ে স্বচ্ছ সুন্দর হয়ে ভিন্নরূপ ধারণ করেছে। সিটি কর্পোরেশনের আওতাভুক্ত ২২টি সুপার মার্কেটসহ ৯০টি মার্কেটের মধ্যে কোনোটির নিজস্ব গাড়ি পার্কিং এর ব্যবস্থা নেই। তেমনি মহানগরীর ২৬টি কমিউনিটি সেন্টারেও একই অবস্থা। এসব জয়গার সম্মুখ ভাগ জুড়ে গাড়ি ও রিকশার ভিড় জমে। রাস্তার অর্ধেক দখল করে ফেলে। সৃষ্টি হয় ভয়াবহ যানজট।
উৎসঃ দৈনিক সংগ্রাম।২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬।
::সমন্বয়ের অভাবঃ রাস্তা নিয়ন্ত্রণ, নির্মাণ ও রক্ষণ এবং ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে কারো সঙ্গে কোনো সমন্বয় নেই। নগরায়ন ও রাস্তা নির্মাণে পরিকল্পনা করছে রাজউক, অধিকাংশ রাস্তা মেরামত, রক্ষণাবেক্ষণ, ফুটপাত তৈরি, রোড পার্কিং, সিগনাল পয়েন্ট সচল রাখা প্রভৃতি কাজ করছে সিটি কর্পোরেশন। আবার কিছু রাস্তা রয়েছে সড়ক ও জনপথ এবং বিআইডব্লিটিএ দফতরের অধীন। রেলগেটসমূহের ব্যবস্থাপনা রয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ের হাতে। রাস্তায় ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে আছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ। যানবাহনের রেজিস্ট্রেশন, ফিটনেস, রুট পার্মিট, চালকের লাইসেন্স প্রধান ও নগরায়নের দায়িত্বে আছে বিআরটিএ। পানি, ময়লা, গ্যাস, বিদ্যুৎ এবং টেলিফোনের লাইন গেছে রাস্তর পেটের ভেতর দিয়ে। সেগুলোর দায়িত্বে আছে ভিন্ন ভিন্ন প্রতিষ্ঠান। কর্তৃত্বধারী রক্ষণাবেক্ষণে নিয়োজিত এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কোন সমন্বয় নেই। কারো সঙ্গে কেউ সমন্বয় সাধন না করে রাস্তা কেটে, খুঁড়ে স্ব স্ব দায়িত্ব সম্পাদন করছে আলাদা টেন্ডারের মাধ্যমে। এর কুফল বহন করতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। একই জায়গাতে একের পর এক প্রতিষ্ঠানের কাটাকাটি-খোঁড়াখুঁড়ির ফলে যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। ফলে সৃষ্টি হচ্ছে লাগাতার যানজট।
উৎসঃ দৈনিক সংগ্রাম।২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬।
::নিয়ম শৃঙ্খলার প্রতি অশ্রদ্ধাঃ অধিকাংশ যান চালক এবং ব্যবহারকারীগণ আইনকে সর্বদা ফু দিয়ে চলেন। তাদের কাছে আইন লঙ্ঘন বীরত্বের সামিল। কিন্তু আইন ভঙ্গকারীদের পুলিশ শাস্তি আরোপে ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। এ ব্যর্থতা নগরীর যানজটকে করে তুলছে প্রকট থেকে প্রকটতর। রাস্তা-ঘাটে চলতে ফিরতে কেউ নিয়ম মানছে না। ট্রাফিক সংক্রান্ত আইন সর্বদা উপেক্ষিত হচ্ছে। কিন্তু এতে কারো কোন মাথা ব্যথা নেই। রাস্তায় বেপরোয়া গাড়ি চালনা, কার আগে কে যাবার মনোবৃত্তি, বিপজ্জনক ওভার টেকিং, রাস্তা অতিক্রমকারীদের জেব্রা ক্রসিংকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখানো প্রভৃতি মানসিকতার কারণে শহরে ট্রাফিক জ্যামের শেকড় গজিয়েছে। নগরীর যাতায়াতকারীদের ৮৫% ওভার ব্রিজ ব্যবহার কওে না। ওভার ব্রিজগুলোও পথচারীদের দখলে নেই। এগুলো দখল করেছে ভিখারী ও ফেরিওয়ালাগণ। কিন্তু কর্তৃপক্ষএ ব্যাপারে নির্বিকার। মতিঝিল এলাকাতে আগে রিকশা, ঠেলা গাড়ি চলাচল নিষিদ্ধ ছিলো। এরশাদ আমলেও নগরীর অভ্যন্তরে ট্রাক চলাচল সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ছিলো। কিন্তু সে নিয়ম-কানুন এখন অস্তিত্বহীন হয়ে পড়েছে। রিকশা, ট্রাক ও ঠেলা গাড়ি নিষিদ্ধ এলাকার সরু গলিতেও যখন তখন ঢুকে পড়ছে। সৃষ্টি হচ্ছে অসহ্য যানজট।
উৎসঃ দৈনিক সংগ্রাম।২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬।
::নগরায়নে অভাবঃ প্রতিদিন আমরা দুর্বিষহ যানজটের মুখোমুখি হচ্ছি। যানজট আমাদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে শিথিল করে দিচ্ছে। ঢাকার যানজটের কারণে মানুষের যে সময় নষ্ট হয়, আর্থিক মানদণ্ডে বার্ষিক সে ক্ষতির পরিমাণ ১৬০ কোটি টাকা। সম্প্রতি ঢাকা সমন্বিত পরিবহন সমীক্ষা রিপোর্টে এ তথ্য প্রকাশিত হয়। ঢাকা নগরীর যানজট সম্পর্কে বিশ্বব্যাংক সম্প্রতি এক রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, ঢাকাতে বর্তমানে যেভাবে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে তা যদি সমাধান না করা হয় তবে ঢাকা হবে ভবিষ্যতে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় যানজটের শহর। গাড়ি থেকে নির্গত কালো ধোঁয়া আমাদের পরিবেশকে দূষিত ও অসহনীয় করে তুলছে। এক জরিপে প্রকাশ, পরিবহন থেকে প্রতিদিন ১০০ কেজি সীসা নির্গত হচ্ছে যেটি স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি স্বরূপ। এ সীমা মানুষের মস্তিষ্কের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এর ক্ষতিকর প্রতিক্রিয়া স্থায়ী উপসর্গ হিসেবে দেখা দিতে পারে। এমনকি মানুষের মৃত্যুও হতে পারে। নিবন্ধে বলা হয়েছে সীসার বিষাক্ত প্রতিক্রিয়ার ফলে শরীরে অহেতুক দুর্বলতা, রক্তশূন্যতা ও বমি-বমি ভাবের সৃষ্টি হয়। নগরীতে চলাচলকারী গাড়ির ৩৬ শতাংশ কালো ধোঁয়া ছড়ায়। অথচ যানবাহনের কালো ধোঁয়া মানুষের শ্বাসকষ্টের সৃষ্টি এবং হৃৎপিণ্ডের স্বাভাবিক চলাচল ব্যাহত করে। এ কারণে নগরীতে নানা রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটে। তাই পরিবেশ অধিদপ্তর গত বছর বেবিট্যাক্সির লাইসেন্স না দেবার জন্য সুপারিশ করে। নিঃশ্বাসের সঙ্গে আমরা কালো ধোঁয়া ও সীসা গ্রহণ করছি। আমরা আয়ুও হারাচ্ছি। যানজটের কারণে আমরা প্রতিদিন কর্মস্থলে সঠিক সময়ে যেতে ব্যর্থ হচ্ছি। ট্রেন, বিমান, লঞ্চ ও দূরপাল্লার কোচ মিস করছি। পণ্য সামগ্রী পরিবহনে বিঘ্নতা ঘটেছে, রুগ্ন ব্যক্তিকে চিকিৎসার জন্য যথা সময়ে হাসপাতালে নিতে বাধার সৃষ্টি হচ্ছে। মোট কথা যার ফলে প্রতিদিন যানযট অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করছে। তাই ইউএনডিপির এক রিপোর্ট বলা হয়েছে, অতি-শিগগিরই যদি রাজধানীর যানজটের আশু সমাধান না করা হয় তবে তা সমাধানের পথ চিরতরে বন্ধ হয়ে যাবে এবং বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক জীবনে ধ্বংস নেমে আসবে। উৎসঃ দৈনিক সংগ্রাম।২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬।
::সমাধান কোন পথেঃ ঢাকা শহরের লোক সংখ্যা যে হারে বেড়ে চলেছে তাতে আগামী শতাব্দীর শুরুতে ঢাকা পৃথিবীর ৭/৮ টি মেগানগরীর একটিতে পরিণত হবে বলে বিশেষজ্ঞগণ মন্তব্য করেছেন। ত্বড়িত গতিতে ঢাকার যানজট সমস্যার সমাধান না করতে পারলে গোটা দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের কর্মসূচি বাধাগ্রস্ত হয়ে ভয়াবহ সমস্যা নিরসনের জন্য দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা জরুরিভাবে গ্রহণ করতে হবে। রাস্তায় চলাচলের জন্য কঠোরভাবে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। যানবাহনের ফিটনেস সার্টিফিকেট ও ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদান ও নবায়নে যুগোপযোগী নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে। তাছাড়া স্বল্প মেয়াদী ব্যবস্থাগুলোর মধ্যে ওয়ান ওয়ে পথ কার্যকর করার ব্যবস্থা করতে হবে। রিকশা ও ঠেলাগাড়ি নগরী থেকে সম্পূর্ণ রূপে উচ্ছেদ করে অধিক যাত্রীবহনযোগ্য পরিবহন ব্যবস্থার কথা চিন্তা করতে হবে। ঢাকার আশপাশের নির্মিতব্য বন্যা নিরোধ বাঁধ প্রকল্প দ্রুত শেষ করে তার উপর দিয়ে দূরপাল্লার ভারী ও দ্রুতগামী যান চলাচলের উপযোগী বাইপাস সড়কের ব্যবস্থা করলে ঢাকার যানবাহন ব্যবস্থা আধুনিকায়নে এক বিরাট পদক্ষেপের সূচনা হবে। তাছাড়া ভবিষ্যতে নগরীর বহির্ভাগ দিয়ে বাইপাস সড়কের পাশাপাশি হাল্কা সার্ভিস চালু এবং মাটির নিচে দিয়ে যানবাহন চলাচলের চিন্তা ভাবনা করা যেতে পারে, যেটি পার্শ¦বর্তী শহর কলকাতায় রয়েছে। ঢাকার যানজট সমস্যা সমাধানে সম্প্রতি বিশ্বব্যাংক ও এসকাপ একটি প্রস্তাব দিয়েছে। তারা ঢাকার যাতায়াত ব্যবস্থার সুষ্ঠুতা নিশ্চিত কল্পে ভৌত কাঠামো এবং প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়নে ১২ কোটি ২০ লাখ টাকা ঋণ দেবে। এর বাস্তবায়ন শুরু করতে হলে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে আরো কঠোর হতে হবে। প্রয়োজনে শাস্তির বিধান চালু করতে হবে। রাস্তার ক্রসিংগুলোতে জ্যাম বেশি হয়। কিন্তু ক্রসিং পুনঃনির্মাণ করতে হবে। নগরীর রাস্তায় রাস্তায় মিছিল মিটিং নিষিদ্ধ করে নির্দিষ্ট কোথাও এর ব্যবস্থা করতে হবে। নগরীতে বর্তমানে তিনটি বৃহৎ বাসস্ট্যান্ড রয়েছে কিন্তু বৈধ ট্রাকস্ট্যান্ড একটিও নেই। এদিকে নজর দেয়া জরুরি। ট্রফিক পুলিশের প্রশিক্ষণ এবং আধুনিক ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রপাতির ব্যবস্থা করতে হবে। ডিআইটিএস সমীক্ষায় আরো ৫১ কিলোমিটার নতুন রাস্তা নির্মাণের সুপারিশ করা হয়েছে। এ বিষয়টাও ভেবে দেখা প্রয়োজন। তাছাড়া পিক আওয়ার এবং পিক অফ আওয়ার বিবেচনায় রেখে ট্র্যাফিক সিগনালের টাইমিং নিয়ন্ত্রণ করা উচিত বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। রাস্তা ব্যবহারকারীদের সচেতন করার জন্য গণমাধ্যমে এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিশেষ কর্মসূচি নেয়া যেতে পারে। ঢাকাকে যানজট মুক্ত রাখতে হলে এগুলোর বাস্তবায়ন অত্যন্ত জরুরি ও বিকল্পহীন। যানজট সমস্যা এখনই দূর করতে না পারলে বিশ বছর পর ঢাকা একটা পরিত্যক্ত নগরীরে পরিণত হতে পারে। অর্থনৈতিক উন্নয়ন বন্ধ হয়ে নগর জীবনে স্থবিরতা নেমে আসবে। এর ফল হবে খুব ভয়াবহ। রাজধানীর প্রাণ স্পন্দন বন্ধ হয়ে মুখ থুবড়ে পড়ে যাবে। তাই যানজট সমস্যা নিরসনের মোক্ষম সময় এখনই কিন্তু যে সময় বয়ে যাচ্ছে নীরবে নিভৃতে।
উৎসঃ দৈনিক সংগ্রাম। ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬।

আরো পড়ুন:

বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়

মহাকাশে বাংলাদেশ

আউটসোর্সিংয়ের তালিকায় বাংলাদেশ তৃতীয়

মন্তব্য করুন

স্যার, কিভাবে আপনাকে সাহায্য করতে পারি?

Click one of our representatives below

Customer Support
Customer Support

Syeda Nusrat

I am online

I am offline

Technical Support
Technical Support

Ariful Islam Aquib

I am online

I am offline