“৩৯ তম লিখিত প্রস্তুতিঃ অভিবাসী সংকট

অভিবাসী সংকট — কারণ, বর্তমান পরিস্থিতি, সমাধান:

::অভিবাসী ও উদ্বাস্তুঃ ইউরোপীয় দেশগুলোর জন্য এ বিষয়টা জরুরি। তারা উদ্বাস্তুদের গ্রহণ করবে, তবে অভিবাসীদের নয়। কারণ উদ্বাস্তু ও অভিবাসীদের জন্য আইনি প্রক্রিয়া ভিন্ন। উদ্বাস্তুরা কোনো দেশে পৌঁছালে তাদের সেখান থেকে দ্রুত নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর আন্তর্জাতিক বিধান নেই। যারা দেশের সামরিক সংঘর্ষ বা হত্যাযজ্ঞ থেকে প্রাণে বাঁচতে দেশ ছেড়েছে, তারাই উদ্বাস্তু। যেমনঃ দেশ ছেড়ে পালানো সিরিয়ার যুদ্ধবিধ্বস্ত জনগণ। আর অভিবাসী চিহ্নিত হয় যে দেশে যেতে চায় সে দেশের অভিবাসনের আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে। তাই অভিবাসীরা হলো পছন্দমতো দেশে উন্নত জীবনের আশায় পুনর্বাসিত হতে চাওয়া জনগণ। তারা যে দেশে আশ্রয় প্রার্থনা করে, সে দেশের অনুমোদনের ওপর নির্ভর করে তার সফলতা। যেমনঃ ইউরোপে কাজের সন্ধানে ছোটা নাইজেরিয়ার নাগরিকরা উদ্বাস্তু নয়, অভিবাসন প্রত্যাশী বলে গণ্য হবে।
উৎসঃ দৈনিক সমকাল।৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৫।
::বর্তমানে সবচেয়ে বড় অভিবাসী সংকটে পড়েছে ইউরোপ। গৃহযুদ্ধকবলিত সিরিয়া, ইরাক, লিবিয়া ও ওই অঞ্চলের দেশগুলো থেকে হাজার হাজার মানুষ নিরাপত্তা ও উন্নত জীবনের প্রত্যাশায় জীবন বাজি রেখে সহায়সম্বলহীন অবস্থায় ইউরোপের বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নিয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও জার্মানিসহ বেশ কয়েকটি দেশ অভিবাসীদের প্রতি সহমর্মিতা জানিয়েছে। সমুদ্র পাড়ি দিয়ে ইউরোপে আসার সময় অগণিত অভিবাসী প্রাণ হারিয়েছে। তা সত্ত্বেও অনেকেই এ পথে পা বাড়িয়েছে। কিন্তু এ সমস্যা কেবল ইউরোপের নয়। এ সংকট সমগ্র বিশ্ববাসীর। কয়েক বছর আগে এ সংকট শুরু হলেও বিশ্ববাসীর তা নজরে আসেনি। কিন্তু এর ঢেউ যখন ইউরোপে আছড়ে পড়ে তখনই বিশ্ববাসীর টনক নড়ে। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, এ অবস্থা চলতে থাকলে এ বছর আট লাখ শরণার্থী ইউরোপের দেশগুলোতে আশ্রয়প্রার্থী হবে এবং আগামী বছর আরও আট লাখ অভিবাসী ইউরোপে হাজির হবে। অভিবাসীদের দুঃখ-দুর্দশার কথা চিন্তা করে বর্তমানে ইউরোপীয় ইউনিয়ন যে এক লাখ বিশ হাজার অভিবাসীকে গ্রহণ করার উদ্যোগ নিয়েছে তা অতি নগণ্য অর্থাৎ সমুদ্রে শিশিরবিন্দু ছাড়া আর কিছুই নয়।
উৎসঃ দৈনিক সংগ্রাম।৫ অক্টোবর, ২০১৫।
::অভিবাসী সংকটের কারণঃ
♦ইউরোপীয় ইউনিয়নের সীমান্ত পর্যবেক্ষক সংগঠন জানিয়েছে, ২০১৫ সালে প্রায় ৩ লাখ ৪০ হাজারের বেশি অভিবাসী ও উদ্বাস্তু ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালি ও গ্রিসে পা রেখেছে। জাতিসংঘও এই সংখ্যা ৩ লাখের বেশি বলে মনে করে। গ্রিসে ২ লাখ ৩০ হাজার, ইতালিতে এক লাখ ১৫ হাজার এবং স্পেনে দুই হাজার ১০০। আফ্রিকা ও আরব উপসাগরীয় এলাকার বিভিন্ন দেশ থেকে মূলত যুদ্ধ, হত্যাযজ্ঞ এবং দারিদ্র্য থেকে মুক্তির লক্ষ্যেই অভিবাসী ও উদ্বাস্তুরা দেশ ছেড়ে পালাচ্ছে।
♦অভিবাসীর সংখ্যার দিক থেকে শীর্ষে রয়েছে সিরিয়ার শরণার্থীরা, এরপর আফগানিস্তানের যুদ্ধবিধ্বস্ত নাগরিকরা এবং তৃতীয় অবস্থানে প্রাণঘাতী সংঘর্ষে লিপ্ত ইরিত্রীয়ার অতিদরিদ্র নাগরিকরা। গত বছর ইউরোপে আসা অভিবাসন প্রত্যাশীদের অর্ধেকই ছিল ইরিত্রিয়া ও সিরিয়ার যুদ্ধবিধ্বস্ত মানুষ। ইরিত্রিয়া কর্তৃত্বপরায়ণ সরকারের অধীন এবং অতি দরিদ্র দেশ হওয়ায়, নিপীড়ন ও দারিদ্র্যের হাত থেকে বাঁচতে চেয়ে পালাতে বাধ্য হচ্ছে দেশটির দরিদ্ররা। চার বছরের গৃহযুদ্ধের কারণে ৪০ লাখেরও বেশি সিরীয় নাগরিক দেশ ছাড়া, যেটি গত ২৫ বছরের মধ্যে বিশ্বের সবচেয়ে তীব্র অভিবাসন সংকট সৃষ্টি করেছে।
♦নাইজেরিয়া, কসোভো ও পাকিস্তান থেকেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ ইউরোপে যাচ্ছে।
উৎসঃ দৈনিক সমকাল।৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৫।
♦বর্তমানে অভিবাসী সংকটের প্রধান উৎসমুখ হচ্ছে গৃহযুদ্ধকবলিত সিরিয়া ও ইরাক। তবে এ দুটি দেশের দুর্দশাগ্রস্ত মানুষ যে ইউরোপে কেবল অভিবাসী সমস্যার সৃষ্টি করছে তা নয়, আফগানিস্তান, সোমালিয়া থেকে অনেক মানুষ আগে থেকেই ইউরোপমুখী। ২০১১ সালে সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত ১ কোটি ২০ লাখ লোক বাস্তচ্যুত হয়েছে। এ বাস্তুচ্যুত মানুষের এক-তৃতীয়াংশ অর্থাৎ ৪০ লাখ এখন দেশের বাইরে শরণার্থী হিসেবে অবস্থান করছে। ইরাকে ২০১৩ সালের ডিসেম্বর থেকে গৃহহারা মানুষের সংখ্যা ৩০ লাখেরও বেশি।
উৎসঃ দৈনিক সংগ্রাম।৫ অক্টোবর, ২০১৫।
♦সিরিয়া ও ইরাকের বাস্তুচ্যুত মানুষের এক অংশের দেশত্যাগের পশ্চাতে রয়েছে সন্ত্রাসী জঙ্গিগোষ্ঠী আইএসের প্রসার ও সংগঠনটির নিপীড়ন ও হত্যাযজ্ঞ। যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়া থেকে আসা অসহায় মানুষেরা এতদিন তুরস্কে, জর্ডানে, লেবাননে, মিসরে এমনকি ইরাকের কুর্দি অধ্যুষিত এলাকায় আশ্রয় পেয়েছে।
::অভিবাসী প্রশ্নে ইউরোপে মতবিরোধঃ সিরিয়া ও ইরিত্রিয়া থেকে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে আসা ৪০ হাজার অভিবাসীকে সমানভাবে ইউরোপের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে দেওয়ার প্রস্তাব নিয়ে লুক্সেমবুর্গে ইইউভুক্ত ২৮টি দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীরা গত জুন, ২০১৫ তে আলোচনায় বসেন। পাশাপাশি ইউরোপের বাইরে বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে বসবাসরত ২০ হাজার সিরীয় নাগরিকের পুনর্বাসন নিয়েও আলোচনা হয়। কিন্তু সমঝোতার চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। ইইউর অন্য দেশগুলো আশ্রয়প্রার্থীদের দায়িত্ব সমানভাবে ভাগ করে নিতে রাজি না হওয়ায় পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দিয়েছে ইতালি। ফ্রান্স ও ইতালির সীমান্তে একটি রেলসেতুর নিচে অবস্থানকারী বেশ কয়েকজন অভিবাসীকে ইতালীয় পুলিশ জোর করে সরিয়ে দেয়। তারা ফ্রান্সে প্রবেশের চেষ্টা করলেও বাধা দেওয়া হয়। অভিবাসীদের সমবণ্টন প্রশ্নে কোনো অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি নেই বলে জানিয়েছেন লাটভিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রিহার্দস কোজলভস্কিস। আর ইইউর অভিবাসনবিষয়ক প্রধান দিমিত্রিস আভ্রামোপোলাস বলেন, আলোচনায় অগ্রগতি হলেও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। ঐচ্ছিক নয়, বাধ্যতামূলক ব্যবস্থা নিলেই ৪০ হাজার অভিবাসীকে ইইউর দেশগুলোয় ভাগ করে দেওয়ার ব্যবস্থা কার্যকর হবে।২০১৫ সালে অন্তত এক লাখ অভিবাসী ইউরোপে প্রবেশ করেছে। কেবল ইতালিতেই গেছে ৬০ হাজার অভিবাসী। ইইউর সীমান্তবিষয়ক সংগঠন ফ্রন্টেক্স এ হিসাব দিয়েছে। জার্মানি ও অস্ট্রিয়াসহ ইইউর কয়েকটি দেশ অভিবাসীদের ভাগ করে ইউরোপের দেশগুলোতে পাঠিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব সমর্থন করলেও অন্য দেশগুলোর যুক্তি, অভিবাসীরা যেতে আগ্রহী নয়—এমন দেশগুলোতে তাদের পাঠানো উচিত হবে না। যুক্তরাজ্য, ডেনমার্ক ও আয়ারল্যান্ড ওই অভিবাসী সমবণ্টন-ব্যবস্থার বাইরে থাকতে চায়। অভিবাসী সংকট নিরসন নিয়ে ফ্রান্স ও ইতালির সম্পর্কে কিছুটা উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য ইইউর নির্ধারিত আইনের প্রতি ইতালি যথাযথ মর্যাদা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে ফ্রান্স। জবাবে রোম বলেছে, অভিবাসীরা ইতালিকে কেবল ইউরোপে প্রবেশের একটি পথ হিসেবে ব্যবহার করে। অভিবাসীদের দায় ইইউর সব দেশ সমানভাবে না নিলে ইতালি বিকল্প পরিকল্পনা (প্ল্যান বি) বাস্তবায়নের হুমকি দিয়েছে। ওই পরিকল্পনা অনুযায়ী অভিবাসীদের সাময়িক ভিসা দেবে ইতালি। তাহলে ওই আশ্রয়প্রার্থীরা শেনজেন আইনের আওতায় ইতালির বাইরে ইউরোপের অন্যান্য দেশে যাতায়াত করতে পারবে। ইইউভুক্ত একেকটি দেশের জনসংখ্যা, মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) ও বেকারত্ব এবং ইতিমধ্যে আশ্রিত শরণার্থীসংখ্যা ইত্যাদি বিষয় বিবেচনা নিয়ে ৪০ হাজার অভিবাসীর সমবণ্টনের প্রস্তাব করা হয়েছিল। ওই পরিকল্পনায় ইতালি থেকে ২৪ হাজার এবং গ্রিস থেকে ১৬ হাজার অভিবাসীকে অন্যান্য দেশে পাঠিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়। সার্বিক বিবেচনায় ফ্রান্স ও জার্মানিতে ওই অভিবাসীদের ৩০ শতাংশের আশ্রয় পাওয়ার কথা ছিল। অন্য একটি প্রস্তাবে প্রায় ২০ হাজার শরণার্থীর পুনর্বাসনের কথা বলা হয়, যারা মূলত সিরিয়া থেকে পালিয়ে জর্ডান, লেবানন ও তুরস্কে আশ্রয় নিয়েছে।
উৎসঃ বিডিলাইভ২৪।১৮ জুন, ২০১৫।
::আশ্রয় দানে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর অনীহাঃ বর্তমানে বেশি আলোচিত হচ্ছে কোন কোন দেশ শরণার্থীদের আশ্রয় দেয়ার ব্যাপারে অনীহা প্রকাশ করছে। এসব দেশের তালিকায় আছে গৃহযুদ্ধকবলিত ইরাক ও সিরিয়ার নিকট প্রতিবেশী সৌদি আরব, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমান। শরণার্থীদের আশ্রয় দেয়ার ব্যাপারে এসব দেশের অনীহার বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী ব্যাপক সমালোচনার ঝড় উঠেছে। অবশ্য এসব দেশের বিরুদ্ধে সমালোচনার পেছনে যথেষ্ট কারণ রয়েছে।
প্রথমত, মধ্যপ্রাচ্যের এসব দেশের সম্পদের কোনো ঘাটতি নেই।
দ্বিতীয়ত, সিরিয়া ও ইরাকের নিকট প্রতিবেশী এসব দেশে শরণার্থীর পক্ষে পৌঁছানো সহজ ও কম ঝুঁকিপূর্ণ।
তৃতীয়ত, এসব দেশের সবাই সিরিয়ায় ক্ষমতাসীন বাশার আল আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে গৃহযুদ্ধে বিদ্রোহীদের সমর্থনে ‘ফ্রেন্ডস অব সিরিয়া’ নামের আন্তর্জাতিক কোয়ালিশনের সদস্য।
চতুর্থত, এসব দেশ প্রায়ই মুসলিম ভ্রাতৃত্ববোধের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করে থাকে। উপসাগরীয় এসব দেশ সিরিয়ার অসহায় মানুষের সাহায্যে হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে না কেনো তা বোধগম্য নয়।
তবে এ ব্যাপারে এসব দেশের যুক্তি এই যে, তারা কয়েক বছর ধরেই গৃহযুদ্ধকবলিত ইরাক ও সিরিয়ার শরণার্থীদের আর্থিক সহায়তা দিয়ে আসছে। সংযুক্ত আরব আমিরাত সরকার এক বিবৃতিতে বলেছে, যুদ্ধবিধ্বস্ত এসব দেশের জন্য তারা এ যাবৎ ৫৪০ মিলিয়ন ডলার মানবিক সহায়তা দিয়েছে এবং সেইসাথে তারা উত্তর ইরাক ও জর্ডানে শরণার্থী শিবির তৈরি করে দিয়েছে। কুয়েত বলেছে, আরব দেশগুলোর মধ্যে তারাই সিরিয়ার জন্য সবচেয়ে বেশি মানবিক সাহায্য দিয়েছে এবং বিশ্বের যে দশটি দেশ সবচেয়ে বেশি অর্থের যোগান দিয়েছে, কুয়েত তন্মধ্যে চতুর্থ। জাতিসংঘের শরণার্থী সংক্রান্ত হাইকমিশনের উপসাগরীয় প্রতিনিধি বলেছেন, সৌদি আরব এ যাবত ৫ লাখ সিরীয় অভিবাসী বা শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে। সৌদি সরকার তাদেরকে শরণার্থী না বলে ‘বিপদগ্রস্ত আরব ভাইবোন’ বলে সম্বোধন করছে।
এসব কথা বাস্তবে কতটা সত্য তা পর্যবেক্ষণের বিষয়। কিন্তু যেটা স্পষ্ট তা হলো, সিরিয়ার শরণার্থীদের ব্যাপারে এ দেশগুলোর উদাসীনতা দৃশ্যমান।
উৎসঃ দৈনিক সংগ্রাম।৫ অক্টোবর, ২০১৫।
::আশ্রয়দানে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর অনীহার কারণঃ নিস্ক্রিয়তা বা উদাসীনতার পেছনে আছে এ অঞ্চলের সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সংকট। সংশ্লিষ্ট এ দেশগুলো জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক কনভেনশনে স্বাক্ষর করেনি। তাই শরণার্থীদের আশ্রয় দেয়ার ব্যাপারে এসব দেশের কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। এ কারণে সৌদি আরব সিরীয়দের শরণার্থী বা অভিবাসী বলে আখ্যায়িত করছে না। সিরীয়দের গ্রহণ করার পথে উপসাগরীয় দেশগুলো যেসব রাজনৈতিক কারণ বিবেচনায় নিচ্ছে তা হলো এই জনগোষ্ঠীর সম্প্রদায়গত পরিচিতি এখানে শিয়া-সুন্নি বিভক্তির হিসাব গুরুত্ব পেয়েছে। সিরিয়া থেকে পালিয়ে আসা বেশিরভাগ মানুষই সুন্নি সম্প্রদায়ের, সেই বিবেচনায় তাদের প্রতি সৌদি আরবের সহানুভূতি রয়েছে, বিশেষ করে সন্ত্রাসী জঙ্গি গোষ্ঠী আইএসের বিরুদ্ধে সৌদিদের সামরিক অভিযানের প্রেক্ষিতে এই শরণার্থী আসার ক্ষেত্র প্রস্তুত করেছে। তবে এই শরণার্থীদের সাথে আইএস জঙ্গিরা ঢুকে পড়ে কিনা তা নিয়ে সৌদি আরবের আশঙ্কা রয়েছে। ইতোমধ্যে সৌদিরা দেশের অভ্যন্তরে জঙ্গিগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে। লেবাননে বিপুলসংখ্যক সুন্নি অভিবাসী বা শরণার্থীর আগমন শিয়া সংখ্যাগরিষ্ঠ সংগঠন হিজবুল্লাহকে ক্ষুব্ধ করে তুলবে কিনা তা নিয়ে কর্তৃপক্ষচিহ্নিত। সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমান, কুয়েত, কাতার ও বাহরাইনের মত উপসাগরীয় দেশগুলোতে মোট জনসংখ্যার অর্ধেকের বেশি বিদেশি নাগরিক। ওইসব দেশের ক্ষমতাসীনরা মনে করেন, আরও বিদেশি নাগরিক উপস্থিতি তাদের ক্রমহ্রাসমান তেল সম্পদের ওপর চাপ সৃষ্টি করবে এবং সেই সাথে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার প্রতিও তা হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে। বাহরাইনের শাসকরা সুন্নি হলেও সেখানকার বেশিরভাগ মানুষ শিয়া সম্প্রদায়ভুক্ত। ২০১১ সালে সেখানে গণবিক্ষোভ শুরু হলে বাহরাইন সরকার তা কঠোর হস্তে দমন করে। মুসলিম ভ্রাতৃত্ববোধের কথা ও মানবিকতার বুলি যতই ছড়ানো হোক না কেন, উপসাগরীয় শাসকদের কাছে রাজনীতিই সর্বাধিক বিবেচ্য বিষয়। সংকট তীব্র আকার ধারণ করলেও যে তারা পরিস্থিতি সামাল দেয়ার জন্য ভিন্ন কোনো পন্থা গ্রহণ করবেন, এমন মনে করার কারণ নেই।
উৎসঃ দৈনিক সংগ্রাম।৫ অক্টোবর, ২০১৫।
::ইউরোপের দেশুলোর ভূমিকাঃ খানিকটা চাপে পড়ে অভিবাসী বা শরণার্থী সমস্যা মোকাবিলায় ইউরোপের কয়েকটি দেশ এগিয়ে এসেছে। কিন্তু ইউরোপের দেশগুলোর ভেতরে এ নিয়ে যে উত্তেজনা ও টানাপোড়েনের সৃষ্টি হয়েছে, তা আগামী দিনগুলোতে আরও প্রকট আকার ধারণ করতে পারে। ইতোমধ্যে অষ্ট্রিয়া সরকার ঘোষণা করেছে যে, তারা জরুরি অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে অভিবাসীদের আশ্রয় দিচ্ছিল এবং তার দেশের মধ্য দিয়ে তাদের জার্মানিতে যাওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছিল। কিন্তু তা পর্যায়ক্রমে বন্ধ করে দেয়া হবে। কোটার ভিত্তিতে কোন দেশ কতজন অভিবাসীকে আশ্রয় দেবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৮টি দেশ এ ব্যাপারে ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেনি। জার্মানী, ফ্রান্স, ইতালি ও স্ক্যান্ডেনেভীর দেশগুলো অভিবাসীদের আশ্রয় দেয়ার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করলেও পূর্ব ইউরোপীয় দেশগুলো বিশেষ করে পোল্যান্ড, স্লোভাকিয়া, চেক, হাঙ্গেরী এবং কয়েকটি বাল্টিক দেশ শরণার্থীদের আশ্রয় দেয়ার ব্যাপারে অনীহা প্রকাশ করেছে। হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, অভিবাসীরা এসব দেশের নিরাপত্তার প্রতি হুমকি হয়ে উঠতে পারে। হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ওরবানের ভাষ্যানুযায়ী ‘মুসলিম অভিবাসীরা হাঙ্গেরির নিরাপত্তা, চিরায়িত খৃস্টান মূল্যবোধ ও পরিচয়ের জন্য হুমকি। এর আগে স্লোভাকিয়া বলেছিল, খৃস্টান ধর্ম গ্রহণে সম্মত হলে তারা কোটার ভিত্তিতে ২০০ জন অভিবাসীকে গ্রহণ করতে প্রস্তুত আছে। হাঙ্গেরির এসব বক্তব্য যে উগ্র ইসলাম বিরোধী মনোভাবের প্রকাশ তা বলার অপেক্ষা রাখে না। গত এক দশকের বেশি সময় ধরে এমনিতেই ইউরোপে ইসলাম বিরোধী জাতীয় চিন্তা-চেতনার উন্মেষ ঘটেছে। এখন এ ধরনের পরিস্থিতি এবং এ ধরনের বক্তব্য তাতে ইন্ধন জোগাবে মাত্র। এর প্রতিক্রিয়া যে অভিবাসী বা শরণার্থীর ওপর পড়বে, তা বোঝা দুষ্কর নয়। ইউরোপীয় ইউনিয়ন অভিবাসী সমস্যা কীভাবে মোকাবিলা করবে, সেটা একটা বড় প্রশ্ন। হাঙ্গেরীর প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, শরণার্থীদের ঠেকাতে তিনি দেশটির ১০৯ মাইল সীমান্তজুড়ে ইস্পাতের তৈরি ১৩ ফুট উচ্চতার দেয়াল তৈরি করবেন। সব রকমের দেয়াল অপসারণ করার অঙ্গীকার নিয়ে যে ইউরোপীয় ইউনিয়নের যাত্রা, সেই সংগঠনে দেয়াল তৈরি করার যে দাবি উঠেছে- তা সংগঠনটির নীতি ও আদর্শের পরিপন্থী। এযাবতকালের যে আলোচনা তা হচ্ছে, এ সংকটের দ্রুত সমাধানের উপায় খোঁজার চেষ্টা। এ কারণে অসহায় নিরপরাধ মানুষ তাদের সহায়-সম্পত্তি ও বসতবাড়ি ছেড়ে বেঁচে থাকার আশায় দেশ ত্যাগ করছে তার স্থায়ী সমাধান না করলে এই জোড়তালির সমাধান কোনো সুফল বয়ে আনবে না।
উৎসঃ দৈনিক সংগ্রাম।৫ অক্টোবর, ২০১৫।
::সংকটের দায়বদ্ধতাঃ বিশ্বের প্রথিতযশা রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মধ্যে অনেকেরই প্রশ্ন অভিবাসী সংকটের পেছনে কারা দায়ী? তাদের মতে, এই অভিবাসী সমস্যার জন্য পাশ্চাত্যরা; বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র তার মিত্রদের দায় অপরিসীম।
♦ইরাকের কথাই ধরা যাক, সাবেক প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনের কাছে জীবাণু ও পরমাণু অস্ত্র আছে এ অজুহাতের ধোঁয়া তুলে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা ইরাক আক্রমণ করে সাদ্দাম হোসেনকে উৎখাত করে দখলদারিত্ব কায়েম করে। কিন্তু এখন পর্যন্ত তারা ইরাকে কোনো জীবাণু অস্ত্র বা পরমাণু অস্ত্রের সন্ধান পায়নি। মার্কিন আগ্রাসন ও দখলদারিত্বের কারণে লাখ লাখ নিরপরাধ ইরাকী বেঁচে থাকার আশায় প্রতিবেশী আরব দেশসহ বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নিয়েছেন।
♦লিবিয়া ও আফগানিস্তানেও মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোটের বর্বর হামলার কারণে দেশ ত্যাগ করে অসংখ্য মানুষ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পাড়ি দিয়েছেন।
♦বর্তমানে সিরিয়ায় যে গৃহযুদ্ধ চলছে তাতে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা বর্তমান বাশার আল আসাদ সরকারের বিরোধীদের সমর্থন করছে এবং অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে সহযোগিতা করে চলেছে। অপরদিকে রাশিয়া সিরিয়ার ক্ষমতাসীন বাশার আল আসাদ সরকারকে সমর্থন করছে। বিদ্রোহীদের দমনে রাশিয়া সিরিয়ার ক্ষমতাসীন সরকারের কাছে বিপুল পরিমাণ অস্ত্রশস্ত্র ও আধুনিক যুদ্ধবিমান পাঠিয়েছে। রাশিয়ার সামরিক উপদেষ্টারা সিরিয়ার সরকারি বাহিনীকে নানাভাবে সহায়তা করছে। রাশিয়া দামেস্কের বিমানঘাঁটির আধুনিকায়ন ও সংস্কারের কাজে হাত দিয়েছে- যাতে অত্যাধুনিক জঙ্গিবিমান সহজে ওঠানামা করতে পারে। একদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা বাশার আল আসাদ বিরোধীদের সমর্থন করছে, অন্যদিকে রাশিয়া সিরিয়ার বাশার আল আসাদ সরকারকে মদদ দিয়ে চলেছে। এর ফলে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ আরও ধ্বংসাত্মক ও দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। এর প্রেক্ষিতে সিরিয়ায় রক্তপাত ও হানাহানি আরও বাড়বে। এমতাবস্থায় সিরিয়ার অগণিত নিরপরাধ মানুষ বেঁচে থাকার প্রত্যাশায় প্রতিবেশী আরব ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে অভিবাসী বা শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নেবে বা আশ্রয় নেয়ার চেষ্টা করবে। ফলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অভিবাসীরা শরণার্থী সংকট তীব্র আকার ধারণ করবে। সুতরাং চলমান বিশ্বে অভিবাসী সংকটের জন্য পাশ্চাত্যরা; বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা অনেকাংশে দায়ী তা সহজে অনুমান করা যায়।
উৎসঃ দৈনিক সংগ্রাম।৫ অক্টোবর, ২০১৫।
::মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে গৃহযুদ্ধে মদদ দেয়ার পেছনে পাশ্চাত্যের স্বার্থঃ
♦বিশ্লেষকদের মতে, মধ্যপ্রাচ্যের তেলসম্পদ কুক্ষিগত করা এবং অস্ত্রশস্ত্র বিক্রি করার মাধ্যমে শত শত কোটি ডলার হাতিয়ে নেয়া। সুতরাং মধ্যপ্রাচ্যে গৃহযুদ্ধ বন্ধ হোক, শান্তি ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরে আসুক এটা তারা চায় না।
♦ যুক্তরাষ্ট্রের বিশিষ্ট রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ ডায়ানা জনস্টোন অভিবাসী সংকটের কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে বলেছেন, এ মানবিক সংকটের জন্য পাশ্চাত্যরাই অনেকাংশে দায়ী। তিনি যুক্তি দিয়ে দেখিয়েছেন, কি করে পশ্চিমের রাজনীতি, তাদের প্রচারণা আর পররাষ্ট্রনীতি মিলে এই ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের কারণ হয়েছে। সম্প্রতি ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফেবিয়াসের বিরুদ্ধে তিনি অভিযোগ উত্থাপন করেছেন। প্যারিসের একটি আদালতে সিরিয়ার সাত নাগরিক ফেবিয়াসের বিরুদ্ধে অভিযোগ করছেন। পাঁচ পুরুষ ও দুই নারীর সবাই তাদের পরিবারের সদস্যদের হারিয়েছেন। তাদের দাবি, ফেবিয়াসের কারণেই তাদের পরিবারের সদস্যদের প্রাণ দিতে হয়েছে। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ ডায়ানা মনে করেন, একসময় হয়তো এ মামলা খারিজ করে দেয়া হবে। পশ্চিমা রাজনীতিবিদ ও সংবাদ মাধ্যম এ মামলাকে উপেক্ষা করেছে। ডায়ানা বলেন, পৃথিবীকে সাধারণ মানুষের বসবাসের অযোগ্য করে তোলার জন্য পশ্চিমা নেতারা দায়ী এবং এটা করে তারা পারও পেয়ে যাচ্ছেন। ইউরোপে অভিবাসী বা শরণার্থী সমস্যার জন্য তাদের দোষারোপ করে ডায়ানা ফেবিয়াসকে কট্টরপন্থী বলে আখ্যায়িত করে বলেন, ইসরাইলী নীতির সাথে তার একাত্মতার কারণে ফ্রান্স ইরানের সাথে পরমাণু চুক্তির ব্যাপারে সম্মত হতে বিলম্ব করে। সিরিয়ার বর্তমান পরিস্থিতির পেছনে ফেবিয়াসেরও হাত ছিল বলে ডায়ানা বিশ্বাস করেন। এই রাজনৈতিক বিশ্লেষক এসময় সিরিয়ার ওই সাত নাগরিকের নোটও তুলে ধরেন। সেই নোট বলছে,
১।২০১২ সালের ২৯ মে ফেবিয়াস ঘোষণা দেন ফ্রান্স সিরিয়ার শাসকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।
২।২০১২ সালের ১৭ মে ফেবিয়াস আবারও বলেন, সিরিয়ার স্বৈরাচারী শাসক প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের ক্ষমতায় থাকার কোনো অধিকার নেই।
৩।এরপর ২০১৩ সালের ১৩ মার্চ ফেবিয়াস পুনরায় বলেন, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্য যৌথভাবে সিরিয়ার বিদ্রোহীদের অস্ত্রের জোগান দেবে। তার এই ঘোষণার ফলে সিরিয়ায় অনেক বিদ্রোহী সংগঠন গড়ে ওঠে। তিনিই সিরিয়াই গৃহয্দ্ধু শুরু করার জন্য দায়ী এবং বিদ্রোহীদের সরকারের বিরুদ্ধে লড়তে তিনিই মদদ দিয়েছেন।
নিবন্ধে তিনি উল্লেখ করেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের ছত্রছায়ায় ফরাসী নেতারা লিবিয়া ও সিরিয়ার শাসনে পরিবর্তন আনতে চেয়েছেন। তারা মনে করেছেন, একনায়কতন্ত্র শাসনের পরিবর্তে গৃহযুদ্ধকবলিত সিরিয়া অনেক ভালো। ভোট দেয়ার অধিকারটি যেন মাথার ওপরের ছাদের চেয়ে বড় কিংবা কোনো সময় মাথার চেয়েও মূল্যবান। যুদ্ধের কারণেই শরণার্থী সমস্যা সৃষ্টি হয়।
♦পশ্চিমা মিডিয়া বা গণমাধ্যম তখনই তাদের ওপর মনোযোগ দেয়, যখন কোনো বিষয় তাদের অনুকূলে থাকে। ২০০৩ সালে ইরাকে মার্কিন সামরিক আগ্রাসনের ফলে এর চেয়ে বেশি সংখ্যক অভিবাসী দেশ ত্যাগ করলেও সে ব্যাপারে পশ্চিমা গণমাধ্যম তেমন কোনো গুরুত্ব দেয়নি। সে সময় সিরিয়াতেই ১ লাখের বেশি ইরাকী শরণার্থী আশ্রয় নিয়েছিল। ডায়ানা মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি জটিল আখ্যা দিয়ে বলেন, ইরাক ও সিরিয়ার পর জঙ্গিগোষ্ঠী আইএস এখন জর্দান ও লেবাননের নাগরিকদের হুমকি দিচ্ছে, আর তাদের হুমকিতে অনেক মানুষ খাদ্য ও নিরাপত্তার আশায় দেশ ছেড়ে উরোপের বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হচ্ছে। তিনি মনে করেন, একমাত্র বাশার আল আসাদই পারেন আইএসকে থামাতে। এখন আসলে উপায় দুটি- হয় আসাদ নয়, আইএস। তবুও পশ্চিমারা বলছেন, আসাদকে ক্ষমতা ত্যাগ করতেই হবে। তিনি বিশ্বাস করেন, পশ্চিমাদের এই একগুঁয়েমির কারণে ইউরোপীয় উপকূলে মানবতার ঢেউ আচড়ে পড়ছে।
উৎসঃ দৈনিক সংগ্রাম।৫ অক্টোবর, ২০১৫।
::ইউরোপ যাত্রার পথঃ অপেক্ষাকৃত ছোট পথে গ্রিসে যেতে তুরস্ক থেকে অধিকাংশ অভিবাসন প্রত্যাশী কস, চিওস, লেসবস ও সামোস দ্বীপে পৌঁছানোর চেষ্টা করে। তবে লিবিয়া উপকূল থেকে ইতালি যাওয়ার পথ অপেক্ষাকৃত দীর্ঘ ও বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। এদিকে প্রায় ২৮০০ কিলোমিটার দীর্ঘ পথ ভ্রমণের মাধ্যমে সিরিয়া থেকে শুরু করে উদ্বাস্তুরা তুরস্ক হয়ে মেসিডোনিয়া, সেখান থেকে সার্বিয়া, হাঙ্গেরি হয়ে জার্মানি যাওয়ার চেষ্টা করছে। তবে বেশিরভাগই রাবারের ডিঙ্গি বা কাঠের নৌকা দিয়ে প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে তুরস্ক হয়ে লিবিয়া যায়। সেখান থেকে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে প্রাথমিকভাবে গ্রিস ও ইতালিতে পৌঁছার চেষ্টা করে। এরপর এই দুই দেশ থেকে অনেকেই পশ্চিম বলকান অঞ্চলের পথ ধরে জার্মানি এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্যান্য উত্তরাঞ্চলীয় দেশে যেতে চায়। এ দীর্ঘ ভ্রমণে তারা প্রায়ই নিষ্ঠুর মানব পাচারকারী, দস্যুদের সহযোগিতা নিতে বাধ্য হয়। দরিদ্র মানুষগুলো এ সহযোগিতার জন্য বাধ্য হয়ে তাদের হাজার ডলার দিতে বাধ্য থাকে।
উৎসঃ দৈনিক সমকাল।৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৫।
::ঝুঁকিপূর্ণ ভূমধ্যসাগরঃ আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার মতে, ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে গিয়ে ২০১৪ সালের প্রথম ৯ মাসে অভিবাসীদের ৭৫ শতাংশই অর্থাৎ, ৩০৭২ জন প্রাণ হারিয়েছেন। ২৭ আগস্ট, ২০১৫ দূরে ভূমধ্যসাগরে ৫০০ জন ডুবে গেছে। ১৯ এপ্রিল, ২০১৫ ল্যাম্পেদুসা দ্বীপের কাছে জাহাজ ডুবে অন্তত ৮০০ জন প্রাণ হারায়। ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ অন্তত ৩০০ জন উত্তাল সাগরে ডুবে যায়। পূর্ব আফ্রিকা দিয়ে পার হতে গিয়ে অন্তত ২৫১ জন মারা গেছেন। যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তে প্রাণ হারিয়েছেন ২৩০ জন। এ ছাড়া ১৯৯৬ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ইউরোপের বহিঃসীমান্তে ২২ হাজার ৪০০ জন নিহত হয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তে ১৯৯৮-২০১৪ সালের মধ্যে প্রাণ হারিয়েছেন ৬ হাজার ২৯ জন।
উৎসঃ দৈনিক সমকাল।৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৫।
::সংকট মোকাবেলায় করণীয়ঃ
♦ইউরোপভিত্তিক এক সমাধানের প্রক্রিয়া অত্যন্ত ধীরগতিতে এগোচ্ছে। বলা হচ্ছে, এ সংকট সরল-সাদামাটা নয়, এর সঙ্গে আরও অনেক সংকট জড়িয়ে পাকিয়ে রয়েছে। তার ওপর ইউরোপীয় ইউনিয়নের কোনো দেশের পক্ষে একা তা মোকাবেলা করা সম্ভবও নয়। ভূমধ্যসাগরে উদ্ধার অভিযান চালানোর পক্ষে পর্তুগাল, নেদারল্যান্ডস ও ফিনল্যান্ড। তবে ইতালি নিজেদের উদ্ধার মিশন আকারে ছোট করে ফেলে। যুক্তরাজ্যও এ ধরনের উদ্ধার অভিযান সমর্থন করে না।
উৎসঃ দৈনিক সমকাল।৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৫।
♦শরণার্থীদের দুঃখ-দুর্দশার কথা বিবেচনা করে ২০১৫ সালে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশন এক লাখ চার হাজার শরণার্থীকে পশ্চিমা দেশে পাঠানোর পরিকল্পনা গ্রহণ করে। যেসব দেশ অভিবাসীদের গ্রহণ করতে চায় তার মধ্যে আছে জার্মানি, ফ্রান্স, কানাডা, বৃটেন, যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি, অস্ট্রেলিয়া, স্পেন, ব্রাজিল ও আয়ারল্যান্ড।
উৎসঃ দৈনিক সংগ্রাম।৫ অক্টোবর, ২০১৫।
♦সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধের অবসান করে সেখানে গণতান্ত্রিক উপায়ে সরকার গঠনের মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ শান্তি ফিরিয়ে আনলেই কেবল অভিবাসী সংকটের স্থায়ী সমাধান করা সম্ভব।—– তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেফ তাইপ এরদোয়ান।
♦ইউরোপের সবচেয়ে বড় অভিবাসী সংকট মোকাবেলা করতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সদস্য রাষ্ট্রগুলোকেই এগিয়ে আসতে হবে।— জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মেরকেল।

আরো পড়ুন:

মানবপাচার

রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় এর ভর্তি সংক্রান্ত তথ্য

বাংলাদেশ ভারত সম্পর্কঃ প্রেক্ষাপটঃ স্থলসীমান্ত চুক্তি 

 

Leave a Reply

স্যার, কিভাবে আপনাকে সাহায্য করতে পারি?

Click one of our representatives below

Customer Support
Customer Support

Syeda Nusrat

I am online

I am offline

Technical Support
Technical Support

Ariful Islam Aquib

I am online

I am offline